আমার ছোট ছেলে এবং জনৈক দারোগার ছেলে একই ক্লাসে পড়ে। দু’জনের বìবন্ধুত্বের কারণেই দারোগার ছেলের জন্মদিনে গিয়েছিলাম তার বাসায়। বাসায় ঢুকেই আমার চোখ উল্টানোর মতো অবস্থা।
তার বেশ বড় সরকারি বাসায় ড্রইংরুম, দামি সোফা, টিভি, ফিন্সজ, ডেকসেটসহ আরো দামি দামি বেলুন-ফেস্টুন দিয়ে সাজানো। আর খাবারের জোগান দিচ্ছে বগুড়ার বিখ্যাত একটি হোটেল। একজন কৃষি কর্মকর্তার বউ হিসেবে সত্যিই আমি দারোগার আয়োজন দেখে অবাক। রাত ১০টার দিকে সব অতিথি বিদায় নিলে দারোগার বউ আমাকে নিয়ে বসলেন। আস্তে আস্তে বলতে শুরু করলেন, তার ছেলের জন্মদিনে ৭০ হাজার টাকা খরচ।
তার সংসারে প্রতি মাসে অনেক টাকা খরচ। দুই দেবরের পড়াশোনা বাবদ ৮ হাজার, শাশুড়ির হাতখরচা ৩ হাজার, আমার আম্মাকে দেই ৫ হাজার, আমার ছোট দুই বোন এবং ছোট ভাইয়ের পড়াশোনা বাবদ দিতে হয় ১০ হাজার টাকা। তার কথা শুনে আমি আরো অবাক হচ্ছি।
তারপর বললেন, ছেলের লেখাপড়া বাবদ মাসে ৪ হাজার এবং ছোট ছেলের পেছনে ২-৩ হাজার টাকা খরচ। এদিকে আপা, আমার সংসার খরচও প্রায় ১৫ হাজার টাকা। সবকিছুর যা দাম। এরপর দারোগার বউ আমাকে গয়না দেখানো শুরু করলেন। এবার আমার তৃতীয়বার অবাক হওয়ার পালা। এক আলমিরা বোঝাই জামদানি, বেনারসি, কাতান শাড়ি। বিভিন্ন ধরনের প্রায় ৪০ ভরি সোনার গয়না, তারপর সোফাসেট দেখিয়ে বললেন, ওটা ঢাকা থেকে অর্ডার দিয়ে এনেছি ৬০ হাজার টাকায়।
ছেলের বায়নায় ক’দিন আগে ৩৮ হাজার টাকা দিয়ে ডেকসেট কিনেছি। এখন বলছে, কম্পিউটার কিনে দাও জন্মদিন উপলক্ষে। বলুন তো আপা এত টাকা কোথায় পাবো? আমার শ্বশুরের তো কিছুই ছিল না। উনি চাকরি করে দেশে জমি কিনেছেন। বাড়ি করলেন, ভাই-বোনের লেখাপড়া শেষ করিয়ে বিয়ে দিলেন।
এদিকে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি রাত প্রায় ১২টা বাজে। আমি বিদায় নিলাম। রিকশায় ফিরছি আমার কানে বাজছে দারোগা সাহেবের বউয়ের কথাগুলো।
দারোগা সাহেব একজন এসআই। আমার স্বামী কৃষি বিভাগের একজন প্রথম শ্রেণীর কর্মকর্তা। কিন্তু আমি বুঝতে পারলাম না, পুলিশের একজন এসআই কিভাবে চাকরি করে এত কিছু করতে পারেন? অল্পক্ষণেই বুঝতে পারলাম এসব অবৈধ টাকা। দৈনিক পেপারে যেমন দেখি পুলিশের এসআইদের চুরি-ছিনতাই করার খবর।
ছেলেকে বললাম, বাবা তুমি আর ওদের সাথে মিশবে না এবং ওদের বাসায় যাওয়ার বায়না ধরবে না। কারণ আমি চাই না, আমার ছেলে এ রকম একজনের বাসায় যাক এবং তাদের সাথে মিশে সেও নষ্ট হোক।
সর্বশেষ এডিট : ২৬ শে আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ১:০৫