আমার গলা নিচু হয়ে আসে, কাছে গিয়ে বসি তার বিছানার পাশে। রফিক তখনো বলছে, ‘১০০০ টাকায় মাস চালাই। এর মধ্যেই খাওয়া খরচ ও পড়ার খরচ মেটাতে হয়। আগে একটা টিউশনী করতাম এখন সেটাও নাই। বরিশালে যাওয়া আসার খরচ, আর মায়ের জন্য তো একটা কিছু নিতেই হয়। কই পাই এতো খরচ!’
আমি রফিকের চোখে জল দেখি। একটু থেমে রফিক আবার বলতে শুরু করে, ‘আমার খুব মন চায় মা-বাবাকে দেখতে যেতে। পারিনা বন্ধু ...’
রফিকের মতো এমন অসংখ্য উদাহরণ আছে আমাদের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে, যারা সীমিত অর্থে, কঠোর হিসাব করে, কষ্ট করে পড়াশুনাটা চালিয়ে নেয়। তাই বছরে একবারই তারা দেশের বাড়ি বেড়াতে যেতে পারে।
তিন ঘন্টায় হল খালি করতে হবে, এমন নির্দেশে অনেক শিক্ষার্থীই পকেটে বাসের ভাড়া আছে কিনা তা ভাবছে। কেউবা ভাবছে এতো রাতে যাবো কিভাবে? গাড়ী পাবো তো? মাসের চলছে ২৩ তারিখ। এসময় সবারই একটু টাকাপয়সার টানাটানি থাকে, কার কাছে হাত পাতবে? কে সাহায্য করবে? এ ভাবনাগুলো যখন শিক্ষার্থীর মনে উঁকি দেয় তখন তার কানে হয়তো জলপাই রঙের ট্যাংকের গর্জন বাজতে থাকে।
মেয়েদের অবস্থা তো আরো করুণ। এখনও মেয়েদের একা একা বাড়ি ফেরার পরিবেশ নেই অনেক ক্ষেত্রে, কিভাবে একা একা বাড়ি ফিরবে মেয়েগুলো? হাউজ টিউটররা কি হলের মেয়েদের গিয়ে একবারও জিজ্ঞেস করেছেন, কিভাবে তোমরা যাচ্ছো? হাউস টিউটররা কি তাদের নিজস্ব গাড়ি দিয়ে তাদের বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে দিতে পারবেন? একটি হলেও কি এরকম কোনো উদাহরণ দেখা যাবে?
কোনোপ্রকার সংবাদসূত্র ছাড়াই আমি হলপ করে বলে দিতে পারি তিন ঘন্টার মধ্যে হল ছাড়ার নিদের্শ দিয়েই কর্তৃপক্ষ খালাস। তার পরের হিসাব নিকাশ আর দুর্ভোগের বৃত্তান্ত পুরোটাই হজম করতে হবে অসহায় শিক্ষার্থীদের
লেখাটি একই সাথে সচলায়তনেও প্রকাশিত হয়েছে।