somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমাদের ঠাকুরগাঁও ভ্রমন বৃত্তান্ত...

১৯ শে আগস্ট, ২০০৭ সকাল ১১:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বাবলু পরিবহন ছাড়ার সময় দেখা গেলো- ব্রেক ঠিকমতো কাজ করছে না। সব ঠিকঠাক করে রাত ১১ টার গাড়ী ছাড়লো- ১১.৩৮ মিনিটে। গন্তব্য ঠাকুরগাঁও। ২.০৭ মিনিটে কঠিন জ্যামে পড়লাম- অ্যালেংগাতে।

৩.৩৩ মিনিটে ফুড গার্ডেনে নামলাম আমরা, মোট ১৫ জন। ২/১ জন ছাড়া সবাই রাতের খাবার খেয়ে এসেছি। তবুও সবার জন্য রুটি আর সবজী দিতে বললাম। ১০ মিনিট পর বেয়ারা এসে বললো- সবজী নেই। বাধ্য হয়ে গরুর গোশতের কথা বললাম। গোশতের যা হাল !? ২ পিস গোশত আর ৪ পিস করে হাড্ডি। হাড্ডি পাল্টাতে বললে-এর ফেরত দেয়া হাড্ডি ওকে, ওরটা একে- এভাবে কিছুসময় চললো। বিরক্ত হয়ে কোনো রকমে উঠে পড়লো সবাই। এদিকে গাড়ী ছেড়ে দিচ্ছে। ১২ পিস রুটি, ৩/৪ বাটি গোশত, ১০ টা চা আর ২ লিটারের ১ বোতল পানির দাম গুনতে হয়েছে মাত্র ৪৭৬ টাকা।

ফুড গার্ডেন থেকে ৪.০৩ মিনিটে গাড়ী ছাড়লো। বাসে উঠেই শুরু হলো ফুড গার্ডেন এবং খাবারের আলোচনা, সমালোচনা। অবশেষে সবাই একমত হলো-
১.সিরাজগনজে বন্যার কারনে ঘাস নেই, ফলে গরুর শারীরিক অবস্থা ভালো না
২.হোটেলের নাম যেহেতু- ফুড গার্ডেন, সেহেতু খাবারের মধ্যে গার্ডেনের ময়লা আবর্জনা তো থাকবেই
৩.গোশতের সাথে দেয়া হাড্ডিগুলো- নিশ্চিত “চোষা হাড্ডি”, অন্য কারো খাওয়া...

৪.৪৫ মিনিটে শেরপুর পার হলাম। কী বিশ্রী রাস্তার অবস্থা ! ৬.৫৩ মিনিটে পার হলাম সৈয়দপুর। ৭.৪০ মিনিটে দিনাজপুরের দশমাইল যখন পার হচ্ছি- তখন সবার মধ্যেই অন্যরকোম এক অনুভূতি। এই সেই দশমাইল... ইয়াসমিন...পুলিশ কতৃক ধর্ষণ... পুলিশের গুলি... অনেকগুলো তাজাপ্রাণ...

শুক্রবার সকাল ৮.৩৫ মিনিটে ঠাকুরগাঁও পৌঁছলাম। ১০ টায় নাস্তা সেরে বড় একটা মাইক্রোবাস ভাড়া করে বেরিয়ে পড়লাম। গন্তব্য তেঁতুলিয়া। ঠাকুরগাঁও থেকে ৭৫ কিলো।তেতুলিয়ায় নেমে মিষ্টি সমুচা আর চা পান। ঝিরঝির বৃষ্টি। পাশেই মহানন্দা নদী। এপারে বাংলাদেশ, ওপারে ভারত। নদী থেকে পাথর তোলা আর আখ চাষই এখানকার মানুষের প্রধান পেশা।

এবার বাংলাবান্ধা বন্দরের পথে। মাত্র ১৭ কিলো। ঠাকুরগাঁও থেকে ৯২ কিলো, ঢাকা থেকে ৫৩২। ৫/৭ টি ট্রাক, ৬/৭ জন বিডিআর জওয়ান। জিরো পয়েন্টে ছবি তুলে ফের রওয়ানা। আসার পথে কাজী এন্ড কাজী টি এস্টেট ঘুরে আসলাম। দৈনিক আজকের কাগজের সম্পাদক কাজী শাহেদ আহমেদের চা বাগান। এখানে ছোট ছোট কিছু বাংলো আর ডরমেটরি আছে। ঢাকা থেকে বুকিং দিয়ে গেলে আপনি থাকতে ফারবেন। এখানকার অতিথিদের জন্য দুটো নিয়ম আছে। ১. এটি ধূমপান মুক্ত এলাকা ২. এখানে আগত অতিথিদের জন্য নো মাছ, নো মাংশ। শুধুই সবজী। আমরা ২০০৫ সালে ‘সূর্য উতসব’ করেছিলাম এখানে। বিকেল ৪ টা নাগাদ ফিরে আসলাম ঠাকুরগাঁও। এসে এক বিয়েতে (আমাদের এক বন্ধুর বন্ধু) খাবার দাবার সেরে আবার দে ছুট।
এবারের গন্তব্য- দিনাজপুরের কান্তজীউ’র (এটিই সঠিক বানান) মন্দির। যার স্থানীয় নাম কান্তনগর মন্দির। এটি নির্মাণ করেন- দিনাজপুরের জমিদার মহারাজা প্রাণনাথ ও তাঁর পোষ্যপুত্র রামনাথ। সময় লেগেছে ৪৮ বছর (১৭০৪ থেকে ১৭৫২)। এটি ৩ তলা বিশিষ্ট, ৫০ ফুট বর্গাকৃতির। ইট দিয়ে বানানো। এ মন্দিরের সারা গায়ে অসাধারণ শিল্পকর্ম আছে। যার মধ্যে উদ্ভিদ, প্রাণীকূল, জ্যামিতিক নকশা, রামায়ণ ও পৌরাণিক দৃশ্যাবলী এবং সে আমলের সামাজিক ও অবসর বিনোদনের দৃশ্যাবলী। ১৯৬০ সালে কান্তজীউ’র মন্দিরকে ততকালীন সরকার কতৃক সংরতি প্রাচীনকীর্তি হিসেবে ঘোষনা করা হয়। ১৭৫২ থেকে ১৮৯৭ সাল পর্যন্ত এটি ছিলো ৫ গম্বুজ বিশিষ্ট। বর্তমানে একটি গম্বুজও নেই। ১৮৯৭ সালের ভূমিকম্পে গম্বুজগুলো ভেংগে যায়।
কান্তজীউ’র মন্দির দেখতে দেখতে সূর্য ডুবে। আমাদের মাইক্রো ঠাকুরগাঁয়ের পথে ছুটে। রাত ৮.৩০ নাগাদ মূসা ইব্রাহীমের বাসায় পৌঁছে একটু ফ্রেশ হয়ে নেই সবাই। রাতের খাবার সেরে আবার দৌড়াই বাস স্টেশন। এবার বাবলু নয়, হানিফ এন্টারপ্রাইজ। সবাই ভয়ানক কান্ত। বাস ছুটছে, ঢাকার পথে। আমার মনে হয়, ক- তো- দি- ন (আসলে মাত্র একদিন) আমার ছেলে আর তার মাকে দেখিনা...

২১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার মায়ের চৌহদ্দি

লিখেছেন শাওন আহমাদ, ১২ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩৫



আমার মা ভীষণ রকমের বকবকিয়ে ছিলেন। কারণে-অকারণে অনেক কথা বলতেন। যেন মন খুলে কথা বলতে পারলেই তিনি প্রাণে বাঁচতেন। অবশ্য কথা বলার জন্য যুতসই কারণও ছিল ঢের। কে খায়নি,... ...বাকিটুকু পড়ুন

ছেলেবেলার অকৃত্রিম বন্ধু

লিখেছেন ঢাবিয়ান, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৯

খুব ছোটবেলার এক বন্ধুর গল্প বলি আজ। শৈশবে তার সাথে আছে দুর্দান্ত সব স্মৃতি। বন্ধু খুবই ডানপিটে ধরনের ছিল। মফস্বল শহরে থাকতো। বাবার চাকুরির সুবাদে সেই শহরে ছিলাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণা!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১২ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:১৭



নীচে, আমাদের দেশ ও জাতি সম্পর্কে আমাদের ১ জন ব্যুরোক্রেটের ধারণাকে ( পেশগত দক্ষতা ও আভিজ্ঞতার সারমর্ম ) আমি হুবহু তুলে দিচ্ছি। পড়ে ইহার উপর মন্তব্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×