somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সাহসী ছেলে

২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৪৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মনটা ভীষণ খারাপ রিফাতের। বিকেলে আজ সে খেলছে না। বন্ধু আকীবকে নিয়ে হাঁটতে বেরিয়েছে। এগলি ওগলি ঘুরছে মনের স্বাভাবিকতা ফিরিয়ে আনতে। কিন্তু পারছে না।
গত রাতে রিফাতের পাশের বাসার মাহমুদ ভাইয়াকে অফিস থেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। আন্টি বলেছেন, ভাইয়া নাকি পত্রিকায় কীসব সাহসের সঙ্গে ছেপেছেন। তাই পুলিশ তার ওপর অমন ক্ষেপেছে।
মাহমুদ ভাইয়ার সঙ্গে রিফাতের অন্তরঙ্গতা ছিলো। এজন্যই মাহমুদ ভাইয়ার অনুপস্থিতিতে ওর এতোটা খারাপ লাগছে। অবশ্য ভাইয়ার সাহসিকতার কথা শুনে একটি ঘটনা ওর বারবার মনে পড়ছে। কারও কাছে বলতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু বলবে কাকে? আকীবকে বিকেলে শোনাবে; এই সিদ্ধান্তটা ওর আগে থেকেই ছিলো।
বিকেলে আকবরের সঙ্গে দেখা হতেই রিফাত বললো, শোন্ আকীব! একদিন আমাদের ওপরতলায় পুলিশ এসেছিলো। আমি খুব ভয় পেয়েছিলাম। কেঁদেছিলামও। আমার সেই ভীরুতা দেখে মাহমুদ ভাই বলেছিলেন, ‘পুলিশ দেখে যদি এখনি ভয় পাও, তবে এদেশের জন্য লড়বে কেমন করে? কে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের দাবি আদায় করবে? গরিব-দুঃখীর মুখে হাসি কে ফোটাবে? মাহমুদ ভাইয়া বলেছিলেন, দেশটা বড়ই কঠিন। ভালোর জন্যই কষ্ট করতে হয়। সত্যের পথে মূল্য দিতে হয়। দুখীকে সুখ দিতেই রক্ত ঝরাতে হয়। প্রয়োজন পড়ে সাহসের। সাহসী হও, সাহসী।’

দুই.
‘অ্যাই বেয়াদব পোলারা’—এদিকে এসো।’ ওদের পেছন থেকে আওয়াজটা আসে। উফ! কী অভদ্র আচরণ—ওরা ভাবে। চেয়ে দেখে ডাস্টবিনের পাশে ক’জন লোক বসা। গায়ে ময়লা কাপড়। চুল উস্কখুস্ক। চেহারা বিদঘুটে নিজেদের আড়াল করে তারা কী যেন করছে। ‘আমরা এখানে আছি, এটা কাউকে বলিব না তো?’—একজনের ক্ষিপ্ত গলা। ওরা কিছু বোঝে না। কিছুই আঁচ করতে পারে না।
কিরে কথা কস্ না ক্যান? মাইর দিমু কইলাম’। লোকটি ফের বলে ওঠে। আকীব বুদ্ধি করে তাড়াতাড়ি উত্তর দেয় না, বলবো না।
আরেকজনের কর্কশ গলা। ‘সাবধান! পুলিশ জানলে কিন্তু মজা বোঝামু।’। আর আইবিনা এদিকে। যা, ভাগ্’।
ওরা চলে আসে। সবকিছু তালগোল পাকিয়ে ফেলে। রিফাত বলে, আচ্ছা, লোকগুলো ওখানে লুকিয়ে লুকিয়ে কী করছে। নিশ্চয় ভালো কিছু নয়। নইলে পুলিশকে বলতে না করল ক্যান্?
আকীব বলে, আমারও তাই মনে হয়। রিফাত! তুই কি বলতে পারবি। এখানে কোন প্রবাদটা খাটানো যাবে?
কোন্খানে? জিজ্ঞাসা রিফাতের।
এই যে, আমরা তো ওদের দেখিইনি, তবু ওরা না বলার জন্য আমাদের কেন ভয় দেখালো? কেনইবা শাসালো আমাদের?
রিফাত এবার বলে, কেন? প্রবাদটাতো তুইও জানিস্— ‘চোরের মন পুলিশ পুলিশ’। চল বাসায় ফিরে যাই। তাড়া দেয় আকীব। সন্ধ্যে ঘনিয়ে আসছে।
রিফাত রেগে বলে, কেন রে! ওদের ব্যাপারটা পুলিশকে না জানিয়েই চলে যাবি?
‘ওরে বাবা, তোর তো দেখছি অনেক সাহস। ওরা কী কী বলে দিয়েছে। সব কি ভুলে গেছিস।’ কথাগুলো আকীব বলে, শোনে রিফাত এবার সত্যি চটে যায়। খুব রাগ নিয়ে বলে আচ্ছা, মাহমুদ ভাইয়ার ঘটনাটাকে তুই কি শুধুই গল্প ভেবেছিস? তার কথা থেকে কী শিক্ষার কিছুই নেই? মাহমুদ ভাইয়া পত্রিকাতে সব সত্য বুক উঁচিয়ে বলেছেন। কাউকে ভয় পাননি। পুলিশকেও না। আর আমরা ছিঁচকে অপরাধীদের কেন ভয় পেতে যাব? তুই ইচ্ছে করলে চলে যেতে পারিস। তবে আমি আজ সাহসী হবো। ঠিক মাহমুদ ভাইয়ার মতো। যেন জেলে থেকেও ভাইয়ার আত্মাটা শান্তি পায়। ওই অপরাধীদের ধরিয়ে দেয়া চাই। আমি থানায় যাচ্ছি।’—বলে হন হন করে হাঁটতে আরাম্ভ করে রিফাত। পেছনে আকীবও ...।

তিন.
রিফাতের দেয়া তথ্য অনুযায়ী থানার ওসি গভীর রাতে ওদের ঝুপড়িতে হানা দেয়। বিপুল পরিমাণ মাদকদ্রব্য উদ্ধার করা হয়। ওই বদমাশরাও গ্রেফতার হয়। পরদিন পত্রিকাতে এটি লিড নিউজ হয়। তথ্য প্রদানকারী হিসেবে ওদের ছবি ছাপা হয়। সরকার ওদের পুরস্কারের ঘোষণা দেয়। গুলশান সেন্ট্রাল মসজিদ প্রাঙ্গণ পুরস্কার প্রদানের স্থান হিসেবে নির্ধারিত হয়।

চার.
ক’দিন বাদেই সেই কাঙ্ক্ষিত দিনটির আগমন ঘটে। ২৬ আগস্ট, ২০১০। পূর্ব ঘোষণা মতে নির্দিষ্ট সময়ে মাঠটি জনসমুদ্রে পরিণত হয়। মাঠের কানায় কানায় মানুষ ভরে যায়। সবার আশা একটাই, একনজর ছেলে দুটিকে দেখা। নিজেদের গর্বিত, ধন্য করা। এর মধ্যেই মন্ত্রী স্টেজে আসেন। ছেলে দু’জনের সঙ্গে কথা বলেন। সময়ের সংক্ষিপ্ত ব্যবধানে উপস্থিত হয় সেই কাঙ্ক্ষিত সময়। পুরস্কার নেয়ার পালা। সঞ্চালক ছেলে দু’জনের নাম ঘোষণা করেন। যেই না তারা পুরস্কার নিতে যাবে, তখনি সাংবাদিকরা তাদের অনুভূতি জানতে চান, মিডিয়াতে প্রচার করবেন। প্রথমেই রিফাত মাইক্রোফোন হাতে নিয়ে সবার কাছে দোয়া চায়, যেন ও মাহমুদুর রহমানের মতো সাহসী হয়ে দেশ ও জাতির সেবা করতে পারে। তার মুক্তির জন্যও দোয়া চায় সে। পরে আকীব রিফাতের অনুভূতিটাই আবার রিপিট করে। নতুন করে সে কিছু বলে না।

দ্রষ্টব্য : আমার লেখা এই শিশুতোষ গল্পটি মাহমুদুর রহমান জেলে থাকা অবস্থায় আমার দেশ পত্রিকার ছোটোদের পাতা এক্কাদোক্কা-তে ছাপা হয়।View this link এটি ২০১০ সালের কথা। লেখাটি মাহমুদুর রহমান-এর এই দুঃসময়ে আবারো প্রকাশ করা হলো। তবে এবার কাগজে নয়, ভার্চুয়াল জগতে।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১১:৫০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

রাফসান দ্য ছোট ভাই এর এক আউডি গাড়ি আপনাদের হৃদয় অশান্ত কইরা ফেলল!

লিখেছেন ব্রাত্য রাইসু, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫২

রাফসান দ্য ছোট ভাইয়ের প্রতি আপনাদের ঈর্ষার কোনো কারণ দেখি না।

আউডি গাড়ি কিনছে ইনফ্লুয়েন্সার হইয়া, তো তার বাবা ঋণখেলাপী কিনা এই লইয়া এখন আপনারা নিজেদের অক্ষমতারে জাস্টিফাই করতে নামছেন!

এই... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাঁচতে হয় নিজের কাছে!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৫ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৮

চলুন নৈতিকতা বিষয়ক দুইটি সমস্যা তুলে ধরি। দুটিই গল্প। প্রথম গল্পটি দি প্যারবল অব দ্যা সাধু।  লিখেছেন বোয়েন ম্যাককয়। এটি প্রথম প্রকাশিত হয় হার্ভার্ড বিজনেস রিভিউ জার্নালের ১৯৮৩ সালের সেপ্টেম্বর-অক্টোবর সংখ্যায়। গল্পটা সংক্ষেপে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×