somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অহেতুক রোমন্থন এবং একটি অনুধাবন...

১১ ই আগস্ট, ২০০৭ ভোর ৫:৪৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

এতটা বছর ধরে বন্ধু আমরা... হেসেছি, খেলেছি, গান গেয়েছি, আনন্দোন্মুখ হয়ে ভেসেছি তারুণ্যের জোয়ারে- কখন যে বাঁধা পড়ে গেছি বন্ধুত্বের বিনিসুতোয়... জানা নেই; শুধু ধীরে ধীরে জেনেছি- তোর আর আমার মাঝেই ছিল অদৃশ্য কোনো ব্যবধান- অনেকটা শেষের কবিতার ঐ "বন্ধনহীন গ্রন্থি"-র মতোই... আমাকে যেমন বন্ধুত্বের বেড়াজাল থেকে বেরোতে দিস্ নি, তোকে-ও তেমনি মুক্তি দিতে পারিনি ভালোবাসার বৃত্ত থেকে... অবশ্য পুরো ব্যাপারটাই অনেক ধোঁয়াশা, অলিখিত, অনুচ্চারিত.... আর একপাক্ষিক তো বটেই....... অন্তত আজ পর্যন্ত!

আজ হঠাৎ করেই অব্যক্ত কথাগুলো খাঁচা-ছাড়া হয়ে পড়েছে... বুকের নিরেট প্রাচীর ভেদ করে ওষ্ঠাগত যেন সব জমে থাকা অভিমানগুলো। এখনো মনে পড়ে- ক্যাফে-তে আড্ডা দিয়েছি ঘন্টার পর ঘন্টা, উন্মুক্ত চত্বরে দলবেঁধে হেঁটেছি ভরদুপুরে, সন্ধ্যায়, এমনকি মধ্যরাতেও... চারুকলার সামনে গলা ছেড়ে গান ধরেছি সমস্বরে-... ফ্রেন্ডশিপ ডে, ভ্যালেন্টাইনস ডে আর পহেলা বৈশাখে হারিয়ে গেছি উন্মাতাল জনস্রোতে... পাগলের মতো সারারাত নেচেছি বাচ্চুর কনসার্টে; তবুও দেখতে পাস্ নি হৃদয় জুড়ে অনুভূতির প্রলয় নাচন... একটি বারের জন্যেও!

মনে আছে, ক্লাস ফাঁকি দিয়ে কলা পাতায় গরম তেহেরী খেয়েছি, অবসরে লনে পা ছড়িয়ে, বাদামের খোসা জমিয়ে ঘাসের উপর ছোট ছোট টিলা বানিয়েছি আর তারই ফাঁকে মজার মজার গল্প ফাঁদা... শুধু রাগ হতো যখন গ্রুপের ডানপিটে হাসান-টা খেলাচ্ছলে তোর বেনী ধরে টান দিত আর মজা পেয়ে খিল-খিল হাসতি তুই; কিংবা রাস্তা পেরোতে গিয়ে রবি-টা যখন আলগোছে তুলে নিতো তোর হাত.... বিশ্বাস কর্... কি এক ঈর্ষাকাতরতায় আক্রান্ত আমি তখন- এতো কাছের হাসান-কে মনে হতো দু'চোখের বিষ, রবি হয়ে যেত যেন চক্ষুশূল.. আর ঐ বেনী? কোমল হাত? মনে হতো শুধু আমার... আমারই অধিকার... যে অধিকার ছেড়ে দিয়েছি... বহু কষ্টে.... বিদীর্ণ অন্তরে.... প্রচন্ড অনিচ্ছায়।

মনে আছে তোর? মেয়েদের হলের সামনের ফুটপাতের আড্ডায় যখন হাসতে হাসতে এলিয়ে পড়তি আমার কাঁধে? একবার-ও কি টের পেয়েছিস বুকের ভেতর হাতুড়ির বাড়ি? কিংবা লাইব্রেরির সামনে যখন বসতো আমাদের গানের আসর- সুমনের গিটারের হালকা সুরে আমাদের মাথা দোলানো? তোর এলোচুল পড়ন্ত বিকেলে আমার গাল ছুঁয়ে যেতো... তোর অজান্তেই...। কই, বুঝিস নি তো কোনো এক হৃদয়ের অনুরণন-... না, ছয়-তারের গিটারে নয়, বরং দমকা বাতাসে ওড়া একগোছা চুলের স্পর্শে!

অবশ্য বলবার কি-ই বা ছিল আমার? রবি যে দিন তোর হাতে চিরকুট গুঁজে দিয়েছিল সবার অলক্ষ্যে- আড়চোখে ঠিকই দেখেছিলাম... অতটা বুকে লাগে নি তখন, যতটা লেগেছিল তোর আরক্ত মুখ দেখে। কই, কখনো তো মুখ ফুটে বলি নি কিছই... কখনো তো বলিনি ভালোবাসি তোকে! কখনো কি শুনেছিস? টের পেয়েছিস, নীলা?

এরপর কেমন যেন দূরে সরে গেলি তোরা- তুই আর রবি। আমাদেরকে দেয়ার মতো সময় হতো না তোদের। যাও বা দিতি, তা যেন নিজদের কিছুটা পরখ করে নিতে কোলাহলের বৃত্তে। সারাটা সময় জুড়ে তোর আর রবির চঞ্চল, চকিত চাহনির নীরব কথোপকথন দৃষ্টি এড়াতো না আমার... শুধু আমার ছলছল চোখ তোর দৃষ্টি এড়িয়ে যেত... বার বার।

তারপর থেকে নিজের মাঝেই ক্রমাগত গুটিয়ে গেছি আমি... সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে। ব্যস্ততার নাম করে নিরুদ্দেশ হয়ে যাই যখন-তখন। দেখলি না, তোর বিয়ের কার্ড দেয়ার জন্য-ও খুঁজে পেলি না আমায়!

অন্তর্মুখী মানুষের আবার ভালোবাসা কি, বল্ তো? এদের ভালোবাসতে নেই... ভালোলাগা-ও ভুলে যেতে হয় অতি দ্রুত... নইলে কোন রাজপুত্র এসে জয় করে নেয় স্বপ্নের রাজকন্যাকে... দিন-দুপুরে... প্রেমময় দু'চোখের সামনে। বামুন হয়ে আমৃত্যু হৃদয়ে জ্বলতে থাকে বেদনার দাবানল... এটাই নিয়তি বুঝি!

তোর তাতে কি? কখনো বুঝবি না... প্লাবিত কষ্টগুলোর উৎসই হলো জমাট-বাঁধা ভালোবাসা!
হাসান সকালে বলে গেলো আজ তোর বিয়ে।
সুখ থাক্ তুই।।
সর্বশেষ এডিট : ২২ শে আগস্ট, ২০০৭ রাত ৩:৪১
১৯টি মন্তব্য ১টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

**অপূরণীয় যোগাযোগ*

লিখেছেন কৃষ্ণচূড়া লাল রঙ, ২৮ শে মে, ২০২৪ ভোর ৫:১৯

তাদের সম্পর্কটা শুরু হয়েছিল ৬ বছর আগে, হঠাৎ করেই। প্রথমে ছিল শুধু বন্ধুত্ব, কিন্তু সময়ের সাথে সাথে তা গভীর হয়ে উঠেছিল। সে ডিভোর্সি ছিল, এবং তার জীবনের অনেক কষ্ট ও... ...বাকিটুকু পড়ুন

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্যাঙ দমনের নেপথ্যে এবং রাষ্ট্রীয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের সমন্বয়

লিখেছেন আরেফিন৩৩৬, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৫৭


ব্যাঙ দমনের বাংলায় একটা ইতিহাস আছে,খুবই মর্মান্তিক। বাংলাদেশে বহুজাতিক কোম্পানির কোন সার কেনা হতো না। প্রাচীন সনাতনী কৃষি পদ্ধতিতেই ভাটি বাংলা ফসল উৎপাদন করতো। পশ্চিমবঙ্গ কালক্রমে ব্রিটিশদের তথা এ অঞ্চলের... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

×