somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে মুভি: জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ। নিজামী-মুজাহিদ গং-দের কবে বিচার হবে?

০৮ ই আগস্ট, ২০০৭ দুপুর ২:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

১। আমি কম্পিউটার সিটির রায়ানস থেকে ডিভিডি কিনি। টেলিভিশন চ্যানেলগুলো মাঝে মধ্যে আজকের সংবাদ পত্র বা টকশোতে ডাকে, কিছু বাড়তি অর্থ পকেটে আসে আর আমি ছুটে যাই রায়ানে। নতুন ছবির চেয়ে আমি খুঁজি পুরোনো ছবিগুলো। ৪/৫দিন আগে যেয়ে দেখি অনেক পুরোনো একটা ছবি, জাজমেন্ট অ্যাট নুরেমবার্গ। কিনতে এক সেকেন্ডও ব্যয় হয়নি আমার।
মনে আছে একসময় বিটিভিতে সাটারডে নাইট মুভিতে অনেক ভাল ভাল ছবি দেখাতো। এখন ডিভিডিই ভরসা। সে সময় এই ছবিটা দেখিয়েছিল এইটুকুই মনে আছে। আমি আবার দেখলাম, বলা যায় গভীর মনোযোগ দিয়ে দেখলাম।
ছবিতে দেখানো হয়েছে জার্মান বিচারকদের ট্রায়াল, যারা বিচারের নামে বিরুদ্ধবাদিদের বিভিন্ন ক্যাম্পে পাঠাতো। নুরেমবার্গে সত্যিই যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছিল। তবে মুভিটায় যে বিচারটি দেখায় তা সত্যি হলেও চরিত্রগুলো কাল্পনিক।
২. ১৯৪৩ সালের শেষ দিকে তেহরানে বসেছিল ত্রিপীয় নৈশ ভোজ সভা। ছিলেন স্টালিন, রুজভেল্ট আর চার্চিল। ৫০ হাজার থেকে ১ লাখ জার্মান অফিসারকে বিচার করার প্রস্তাব দিয়েছিলেন স্টালিন। আপত্তি জানান চার্চিল। তার কথা ছিল যে সব সৈন্য তার নিজ দেশের পে যুদ্ধ করেছে তাদের ঠান্ডা মাথায় ফাঁসিতে ঝুলানো ঠিক হবে না। এর পরিবর্তে যুদ্ধের জন্য যারা দায়ী তাদের বিচার করার প্রস্তাব দেন তিনি।
এরপরই ইউএস ট্রেজারি সেক্রেটারি হেনরি মর্গেনথাউ জুনিয়রের পরিকল্পনা অনুযায়ী বিচার বসে জার্মানিরই নুরেমবার্গে। বলা হয়েছিল যেখানে অপরাধ ঘটেছে সেখানেই বিচার হতে হবে। ১৯৪৫ এর ২০ নভেম্বর বিচার শুরু হয়। প্রায় ২শ যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করা হয়েছিল। ১৯৪৯ পর্যন্ত তা চলে।
৩। মুভিটা ৩ ঘন্টার। দেখতে বসলে কখন শেষ হবে টেরই পাওয়া যায় না। ছবির শুরুটা মার্কিন জাজ ডান হাওয়ার্ডের নুরেমবার্গ পৌছানোর মধ্য দিয়ে। এই চরিত্রে দুর্দান্ত অভিনয় করেছেন স্পেনসার ট্রেসি। যুদ্ধাপরাধী চার বিচারকের একজন ড. আর্নস্ট জেনিং (বার্ট লানকাসটার)। জুডি গারল্যান্ড ও মন্টোগোমারি কিফট ছোট্র দুই চরিত্রে অভিনয় করলেও তাদের অসাধারণ অভিনয়ের রেশ সহজে যায় না। আর আছে জার্মান অভিনেতা, অভিযুক্তদের পরে আইনজীবী হান্স রোলফ (ম্যাক্সিমিলিয়ান স্কেল), সেরা অভিনেতার অস্কার পেয়েছিলেন।
ড. জেনিং এর চরিত্রটি এমন ভাবে তৈরি তাতে প্রায় শেষ পর্যন্ত অভিযুক্ত হলেও সহানুভূতি তার দিকেই যায়। বিচার হয়েছিল মূলত দুটি ঘটনা নিয়ে। ঘটনা দুটি সত্যি। একটি হলো একজন হিটলার বিরোধীকে (মন্টোগোমারি কিফট) নপুংশক করা এবং আরেকটি হলো একজন ইহুদির সঙ্গে সম্পর্ক রাখায় জুডি গারল্যান্ডকে শাস্তি দেওয়া নিয়ে।
গল্পটা বলে মজা নষ্ট করতে চাই না। যারা দেখেননি জলদি দেখেন। শেষটা তো অসাধারণ, চমকে দিবে। জেনিং এর প্রতি সহানুভুতি কোথায় রাখবেন সেটাই তখন প্রশ্ন হয়ে দেখা দেবে।
জেনিং যখন স্বীকার করে নেয় যে সে অপরাধী, বিচার করে তাদের পাঠনোদের ক্যাম্পে কি করা হতো তা তাদের জানার কথা নয় বলে দায় এরাতে পারেন না। অভিযুক্তদের আইনজীবি তখন বলেছিলেন, জেনিং অপরাধ স্বীকার করে নেওয়ায় বাকি তিন বিচারকও দোষী হয়ে পড়বেন। দোষী যদি তারা হন, তাহলে হিটলারের সঙ্গে চুক্তি করায় রাশিয়াও দোষী, চার্চিল হিটলারকে এক সময় প্রশংসা করায় চার্চিলও দায়ী, আর দায়ী মার্কিণ পুজিবাদিরা, যারা হিটলারকে অস্ত্র বিক্রি করে লাভবান হয়েছিলেন। বিচার করলে সবাইকে করতে হবে। ছবিতে কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের একটা ডকুমেন্টারি বিচার কার্যের সময় দেখানো হয়।
(মনে আছে ওয়াশিংটনে আমি আর ডেইলি স্টারের ইনাম ভাই হলোকস্ট মিউজিয়ামে দীর্ঘ সময় কাটিয়েছিলাম)।
এই বিচারকরা আইন মেনে বিচার করেননি, বরং হিটলার কি চায় সে অনুযায়ী রায় দিতেন। (বাংলাদেশের সঙ্গে কিছু মিল খুঁজবেন না যেন)।
৪। ট্রায়াল রুমে প্রথমেই দেখায় বসে আছে অভিযুক্ত চার বিচারক। আমি ফ্যান্টাসিতে ঢুকে পড়লাম। আহা যদি এমন হতো বাংলাদেশে। ঐ চারজন যদি হতো গো আজম, নিজামী, আব্বাস আলী খান ও মুজাহিদ।
জার্মানীর চার বিচারক সরাসরি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। তারপরেও তাদের যাবজ্জীবন হয়েছিল। অপরাধ -তারাই নিরাপরাধদের বিচারের নামে ক্যাম্পে পাঠাতেন আর সেখানে তাদের ভাগ্যে কি ঘটতো তা তো সবারই জানা।
গো-নিজামী-মুজাহিদদের অপরাধ তো সে তুলনায় হাজারগুন বেশি। তাহলে তাদের কেন বিচার হবে না?
বুদ্ধিজীবি হত্যা, সাধারণ মানুষগুলোকে নির্বিচারে হত্যা বা অসংখ্য মা-বোনের সম্ভ্রম হানি, কোনটার দায় এড়াতে পারবে এরা?
সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের সেই গণআদালতের একজন দর্শক ছিলাম আমি। মনে আছে সেই দিনটার কথা। আশা ছিল সরকার নিশ্চই যুদ্ধাপরাধীদের সত্যিকার বিচার করবেন। কিন্তু উল্টো নাগরিকত্ব পেয়ে গেল গো.আজম।
দিন এখনো শেষ হয়নি। অতীত ছাড়া বর্তমান হয়না, ভবিষ্যতেরও বিনির্মাণ হয় না। মুজাহিদ যদি বলতে পারে গত ৩৬ বছরেও তারা মুক্তিযুদ্ধে তাদের অবস্থান মূল্যায়ন করেনি, তাহলে আমরা কেন বলতো পারবো না ওদের বিচার হোউক।
‘ওরা মানুষ হত্যা করেছে, আসুন আমরা জানোয়ার হত্যা করি’-আসুন আমরা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করি।

* ছবির একটি কনসেনট্রেশন ক্যাম্পের, আরেকটি বাংলাদেশেরই একটি বধ্যভূমি। মৌলিক কি পার্থক্য আছে।
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ১০:৫৮
২৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ব্যাড গাই গুড গাই

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:০৩

নেগোশিয়েশনে একটা কৌশল আছে৷ ব্যাড গাই, গুড গাই৷ বিষয়টা কী বিস্তারিত বুঝিয়ে বলছি৷ ধরুন, কোন একজন আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নেয়া হয়েছে৷ পারিপার্শ্বিক অবস্থায় বুঝা যায় তার কাছ থেকে তথ্য পাওয়ার... ...বাকিটুকু পড়ুন

টান

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১১ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২২


কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর
বিচ্যুতি ঠেকা‌তে ছু‌টির পাহাড়
দিগন্ত অদূর, ছ‌বি আঁকা মেঘ
হঠাৎ মৃদু হাওয়া বা‌ড়ে গ‌তি‌বেগ
ভাবনা‌দের ঘুরপাক শূণ্যতা তোমার..
কোথাও স্ব‌স্তি নেই আর।
:(
হাঁটুজ‌লে ঢেউ এ‌সে ভাসাইল বুক
সদ্যযাত্রা দম্প‌তি... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরী

লিখেছেন সাজ্জাদ হোসেন বাংলাদেশ, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৯

স্বল্প আয়ের লক্ষ্যে যে স্কিলগুলো জরুরীঃ


১। নিজের সিভি নিজে লেখা শিখবেন। প্রয়োজন অনুযায়ী কাস্টোমাইজ করার অভ্যাস থাকতে হবে। কম্পিউটারের দোকান থেকে সিভি বানাবেন না। তবে চাইলে, প্রফেশনাল সিভি মেকারের... ...বাকিটুকু পড়ুন

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ১১ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:০৫

অহনা বলেছিল, তুমি হারাবে না
অহনা বলেছিল, আমি জানি আমি তোমাকে পেয়েছি সবখানি
আমি তাই নিশ্চিন্তে হারিয়ে যাই যখন যেখানে খুশি

অহনা বলেছিল, যতটা উদাসীন আমাকে দেখো, তার চেয়ে
বহুগুণ উদাসীন আমি
তোমাকে পাওয়ার জন্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিয়াল ফিলিস্তিনীরা লেজ গুটিয়ে রাফা থেকে পালাচ্ছে কেন?

লিখেছেন সোনাগাজী, ১১ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১০



যখন সারা বিশ্বের মানুষ ফিলিস্তিনীদের পক্ষে ফেটে পড়েছে, যখন জাতিসংঘ ফিলিস্তিনকে সাধারণ সদস্য করার জন্য ভোট নিয়েছে, যখন আমেরিকা বলছে যে, ইসরায়েল সাধারণ ফিলিস্তিনীদের হত্যা করার জন্য আমেরিকান-যুদ্ধাস্ত্র... ...বাকিটুকু পড়ুন

×