somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হোক না কিছু পাগলামি।।।।

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:৩৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

কলেজ থেকে হলে নিজের রুমে ফিরতেই অর্নবের নাম্বারে একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল।রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে একজন বলল-
- আমি অনলাইনশপ থেকে বলছি,আপনি যে অর্ডার দুটো দিয়েছিলেন তা রেডি আছে।আমি কি এখনি আপনার ঠিকানায় ডেলিভারি করার জন্য লোক পাঠিয়ে দিব??
- হ্যা হ্যা,পাঠিয়ে দিন।কতক্ষণ লাগবে আসতে?
-এইতো স্যার, মাত্র ৩০ মিনিটের ভিতরেই আমদের লোক পৌছে যাবে।
- ওকে।ধন্যবাদ আপনাকে।
ফোনটা রেখে একটা তৃপ্তির নিঃস্বাস ছাড়ল অর্নব।অবশেষে তার প্লানিংটার প্রথম ধাপ বাস্তব হচ্ছে।সে কিছুদিন আগেই এই অর্ডার দুটো করেছিল।কিন্তু সন্দিহান ছিল ঠিক সময় এগুলো হাতে পাবে কিনা?নাকি আদৌ পাবে কিনা।অনেক সময়ই এই সব জায়গায় অর্ডার দিলে অর্ডারের মাল পাওয়াই যায় না।যাই হোক, অর্নব বাকিসময়টায় তার দুপুরের খাবার পাট টা চুকিয়ে নিয়ে অপেক্ষা করতে থাকল।

ঠিক ৩০ মিনিট পর ঠিক আবার অন্য একটা অচেনা নাম্বার থেকে ফোন আসল।অর্নব বুঝতে পারল লোকটা এসে গেছে।অর্নব ফোন রিসিভ করতেই লোকটা তার পরিচয় দিল।সাথেই অর্নব রুম থেকে বাইরে বের হল।নিচে নেমে লোকটার কাছ থেকে টাকা পরিশোধ এর মাধ্যমে তার জিনিস দুটো বুঝে নিল।এরপর রুমে ফিরে সে প্যাকেটা খুলে দেখল সব ঠিক আছে কিনা।যা অর্ডার করেছিল জিনিস গুলো সেইরকমই আছে,কিন্তু একটা প্রবলেম হল জিনসগুলো যে বক্সে আছে সেটা খুব আকর্ষনীয় নয়।বক্সটা আকর্ষনীয় না হলে ভেতরেএ জিনিসগুলোর মমুল্যটাই কমে যাবে।সে ক্ষানিক ভাবল,একটা আকর্ষনীয় বক্স কিভাবে ম্যানেজ করতে পারা যায়।তারপরই তার মাথায় বুদ্ধিটা আসল।আর সাথেই সাথেই মোবাইল বের করে সে বৃষ্টিকে ফোন দিলো-
-হ্যা শোন,তোকে আমি এবছর ভ্যালেন্টাইন্স ডে তে যে গিফটটা দিয়ে ছিলাম সেটা এখনো বক্স সহ আছে না।
বৃষ্টি বেশ ক্ষানিকক্ষণ চুপ রইলো, মনে হয় অর্নবের কথার আগা মাথা কিছুই বুঝতে পারেনি।ছেলেটা কে সে কখনই বুঝতে পারেনা।কখন যে কি বলে।সব সময়ই উল্টাপাল্টা কাজ করাই তার একমাত্র কাজ।তাই সেও এটাও কোন পাগলামি ভেবেই জবাব দিল-
-হ্যা আছেতো।কেন?
-ওইটার বক্সটা আমার লাগবে।আমি একজনের জন্য গিফট কিনছি,কিন্তু এর বক্সটা ভালোনা।দুরে পাঠাতে হবে।তাই ওই বক্সটা হলে ভাল হয়।
বৃষ্টি এবার রেগে গেল।এটা কি ধরনের কথা।তাকে গিফট করা হইছে একটা জিনিস,আবার তার বক্সটা সে নিয়ে অন্য কাউকে গিফট দিতে চাইছে।কি আশ্চর্যকথা!কিন্তু সে জানে তাকে এটা দিতেই হবে।কোনভাবেই ওর সাথে কথায় পারা যাবেনা।তাই রাগ সামলে বলল-
- কাকে গিফট দিবি?আর আমার গিফটের বক্স আমি দিব না।
-আরে দিব একজন কে।ওসব পরে শুনিস।আমি এখনি আসছি।তুই ওটা নিয়ে বের হ।
-না। আগে বল কাকে দিবি?
-তার নামটা শুনলে তোর ভাল লাগবেনা।সো তোর শোনার দরকার নেই।তুই ওটা নিয়ে বের হ তোর হলের গেটের সামনে।আমি এসে পরছি।
-কি বলছিস তুই এসব?তুই কাকে গিফট দিতে চাচ্ছিস?তুই আবার ওর সাথে যোগাযোগ শুরু করছিস?
-হ্যা।তাতে তোর কোন সমস্যা আছে?দেখ,সামনে ওর বার্থডে।আমি গিফট কিনে ফেলছি।কিন্তু ভাল একটা বক্সের অভাবে পাঠাতে পারছিনা।বাধ্য হয়েই তোকে ফোন করতে হয়েছে।আর ও তো আমার কাছে থাকেনা।গিফটটা পৌছাতেও দুদিন লেগে যাবে।তাই আমার হাতে একদমই সময় নাই।তারাতারি কর।
-একটা দীর্ঘনিঃশ্বাস ছেরে বৃষ্টি বলল,ওকে,নামছি।তুই আয়।
কিছুক্ষণ পরে বৃষ্টি হলের বাইরে আসল বক্সটা নিয়ে।দেখল অর্নব দারিয়ে আছে।বক্সটা অর্নবের হাতে দিয়েই সে গট গট করে কিছু না বলেই আবার চলে গেল।অর্নবও তাকে কিছুনা বলে তার হলে চলে গেল।

রুমে ফিরে বৃষ্টি কাঁদতে শুরু করল।সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা অর্নব তার সাথে এমন করছে।সে আবার তার পুরোনো গার্লফ্রেন্ডের সাথে যোগাযোগ শুরু করেছে,তাকে আবার গিফট ও পাঠাচ্ছে।ছেলেগুলো এমন কেন?এইতো কদিন আগে অর্নবের জন্মদিনে তার জন্য সে কতকিছু করল।আর সে কিনা আজ এমন একটা কাজ করতে পারল?আবাত তাকে গিফট করা একটা জিনিস নিয়ে গিয়ে অন্যকে গিফট দিবে।সে মনে মনে এবার কঠিন সিদ্ধান্ত নিল।অর্নবকে আবার ফোব দিল-
-হ্যা বৃষ্টি বল।
-শোন, তুই আর আমাকে জীবনেও ফোন দিবিনা।
-আচ্ছা।আর কিছু।
-সামনেই আমার জন্মদিন।তাতে কোন উইশও করবিনা আর কোন গিফট দেওয়ার ও ট্রাই করবিনা।
-সবই ঠিক আছে।খালি তুই আমারে ট্রিট দিস।তাতেই হইব।আমার জন্মদিনে তোরে বিশাল ট্রিট দিছি।ওইডা উশুল করতে চাই।আমি কিছু করব না।কথা দিলাম।
-দেখ,সবসময় ফাজলামো করবিনা।আমি তোকে কিছুই দিব না।আর তুই ও কিছু করবিনা আমার জন্য।এটাই ফাইনাল।
-যাক বাবা!এ কেমন করে হয়।আমার ট্রিট লাগবেই।অতশত বুঝিনা।
-না।কিচ্ছু দিব না।আর তুই আর আমাকে কখনো ফোন দিয়ে বিরক্ত করবিনা।তুই তোর পুরোনো গার্লফ্রেন্ডকে নিয়েই সুখী হ।বাই।
-ওকে।বাই।
ফোন টা রেখে অর্নব হাসতে হাসতে হেড ফোন টা কানে গুজে ঘুমিয়ে পড়ল।আর ওদিকে বৃষ্টি ফোন রেখে কাঁদতে কাঁদতে সেও একসময় ঘুমিয়ে পড়ল।

১২ দিন পরে - - - -
রাত ১২ টা বেজে ১ মিনিট।আজ বৃষ্টির জম্ম দিন।অর্নব এর মাঝে তাকে আর ফোন দেয় নি।সেও ফোন দেয়নি।সে না হয় একটু কঠিন কথাই বলে ফেলছে।তাই বলে আজ এমন দিনেও অর্নব তাকে ফোন দিয়ে উইশ পর্যন্ত করবেনা।অথচ প্রতিবছর তাকে সবার আগে সেই উইশটা করে।বৃষ্টি জানে,অর্নব তাকে আর ফোন দিবেনা।আরও ১০ মিনিট পার হয়ে গেল।সবাই একে একে উইশ করা শুরু করেছে।শুধু তার কোন খবর নেই।আবার চোখ দুটো জলে ভরে উঠছে তার।কত প্লান ছিল এই দিনটি কে ঘুরে।সারা দিন তার প্রিয় মানুষটির সাথে সময় কাটাবে।তার সাথে একসাথে ঘুরবে,খাবে,সিনেমা দেখবে। সে যখন একগুচ্ছ লাল গোলাপ হাতে নিয়ে এসে তাকে উইশ করবে তখন পৃথিবীটাই অন্য রকম হয়ে যাবে।অথচ একজন মানুষ সব কিছু নিমিষেই শেষ করে দিল সব কিছু।বৃষ্টি ঠিক করল কালকে সে কোথাও বেরই হবেনা।আরও সময় পার হয়ে গেলো কিন্তু তার ফোনের কোন নাম গন্ধ পাওয়া গেলোনা।

সকাল বেলা ঘুম বৃষ্টির ঘুম ভাংলো ফোনের রিংটোনে।ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে অর্নবের গলা পাওয়া গেল-
-তুই কি আমাকে ট্রিট দিবি আজকে?তাহলে আজকে তোর জন্য কিছুটা ফ্রি সময় রাখব বিকালের দিকে।
-কি আশ্চর্য ছেলে রে বাবা! কাল সারা রাতে উইশ করেনি ,এখনও ফোন করে উইশ না করে ট্রিট চাইছে।মেজাজ খারাপ হলেও বৃষ্টি ভাবল বদের হাড্ডিটা নিশ্চিত কোন সারপ্রাইজ দিবে।তাই সে বলল-
-ওকে,বিকাল ৪ টায় রেডি থাকিস।তোর পাওনা ট্রিট ফিরিয়ে দিবনে।
-ওকে।


ফোনটা রেখে বৃষ্টি একটা আনন্দের হাসি দিল।
পাগলটা তাহলে ইচ্ছে করেই এই পাগলামি করেছে।ইচ্ছে করেই এ কদিন ফোন দেয়নি।একটা সারপ্রাইজ দিতেই এই অবস্থা।কিন্তু তারপরও মন থেকে মানতে পারছেনা ও ওর আগের গার্লফ্রেন্ডের বার্থডেতে গিফট দিয়েছে।যাই হোক সে এরপর ক্লাশে চলে গেল।কিছুক্ষণ পর অর্নব ও ক্লাশে আসল।কিন্তু ভুলেও একবারও বৃষ্টির দিকে তাকাচ্ছেনা।ক্লাশ শেষ হল দুপুরের পরে।তারপর যে যার হলে চলে গেলো। ক্লাশের ফাকে অবশ্য বৃষ্টি কয়েকবার টেক্সট করেছিল।কিন্তু অর্নব এর কোনই জবাব দেয়নি।
যাইহোক ক্লাশ শেষে বৃষ্টি হলে ফিরে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে অর্নবকে ফোন দিল সেডি হয়েছে কিনা?সে জানালো যে সে রেডি।তারপর দুইজনই ক্যাম্পাসে এসে রিক্সা ঠিক করল তাদের পরিচিত রেস্তোরাঁয়।যেখানে অর্নবও তার বার্থডেতে বৃষ্টিকে ট্রিট দিয়েছিল।কিন্তু রিক্সায় উঠেই অর্নব এমন একটা ভাব নিল যেন বৃষ্টিকে চিনেইনা।বৃষ্টির প্রচন্ড মেজাজ খারাপ হল।কিন্তু কিছু বলল না।দেখতে দেখতে রিক্সা রেস্তোরাঁতে চলে আসল,কিন্তু সারাটা পথে অর্নব কোন কথাই বলল না।এমনকি বৃষ্টির দিকে ফিরেও তাকালো না,সারাক্ষণ অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলো। রিক্সা থেকে নেমে সোজা দুজনেই রেস্তোরাঁর ভিতরে ঢুকে গেলো। একটা ফাকা টেবিল দেখে বসে পড়ল।একটু পরে ওয়েটার অর্ডার নিতে আসলে বৃষ্টি মেনু কার্ডটা অর্নবের দিকে নিঃশব্দে বাড়িয়ে দিল।অর্নবও চুপচাপ ওয়েটার কে অর্ডার দিয়ে মোবাইলে ফেসবুক গুতাতে থাকল।বৃষ্টির ধৈর্যের বাধ ভেঙে যাচ্ছে প্রায়।সে প্রায় হাতের নাইফটা ছুড়ে মারতে যাচ্ছিল, এরি মধ্যে ওয়েটার খাবার নিয়ে আসলে বৃষ্টি দুজনের প্লেটে খাবার তুলে দিয়ে প্রথম কথা বলল-
-তুই কি বোবা হয়ে গেছিস?এমন করার মানেটা কি?এখানে যে আরেকটা মানুষ আছে সে দিকে নজর আছে তোর?
- দেখ,আমি এখানে শুধু খেতে আসছি।আমার পাওনা রকটা জিনিস উশুল করতে আসছি।কারও সাথে কথা বলতে বা সময় কাটাতে আসি নাই।খাওয়া শেষ হলেই সোজা রিক্সায় হলে চলে যাব।তারপর একটা ঘুম।
কথা গুলো এক নিঃশ্বাসে বলে অর্নব তার খাওয়া শুরু করে দিল।যেন সে অনেক দিনের উপোস।হঠাৎ খাবার দেখেই তাই চারদিকে কোন ভ্রুক্ষেপ না করেই খাওয়া স্টার্ট করল।
বৃষ্টি একটা নিঃশ্বাস ছেড়ে বলল- আচ্ছা।খাওয়া শেষ কর। তারপর চলে যা।
সে শুধু চেয়ে চেয়ে অর্নবের খাওয়া দেখে গেলো।অর্নব নিচের দিকে চেয়ে খেয়েই যাচ্ছে।কিছুক্ষণের মধ্যেই সে তার খাওয়া শেষ করল।কিন্তু বৃষ্টি কিছুই মুখে দিল না।খাওয়া শেষে অর্নব বলল-ট্রিটের জন্য ধন্যবাদ।তুই কি আমার সাথে একসাথেই ফিরবি?
বৃষ্টির প্রচন্ড কান্না পাচ্ছে।সে অনেক কষ্টে তা আটকে রেখেছে।সে শুধু বলল-না তুই চলে যা।আমি একাই যেতে পারব।অর্নব আর কিছু না বলেই রেস্তোরাঁ থেকে বের হয়ে সোজা রিক্সা নিয়ে চলে গেলো।বৃষ্টি কিছুক্ষণ মাথা নিচু করে বসে থেকে বিলটা পরিশোধ করে রিক্সা নিয়ে সোজা হলে এসে পরল।তখন প্রায় সন্ধা।এসেই রুমের দরজা আটকিয়ে বালিশে মুখগুজে কাঁদতে কাঁদতে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়ল।

বৃষ্টির ঘুম ভাঙল ফোনের শব্দ শুনে।দেখে অর্নবের ফোন।ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১১ টা বাজে।ফোনটা দেখেই প্রচন্ড রাগ হল বৃষ্টির। একে একে ৪ বার ফোনটা বেজে গেলো কিন্তু বৃষ্টি ফোন ধরলোনা।তার কোন ইচ্ছে নেই ফোনটা ধরার।আবারও ফোন করেছে।শেষমেশ বিরক্ত হয়েই ফোন ধরেই ঝাঝালো কন্ঠে বলল -ফোন দিছিস কেন?তোরে না বলছি আমারে আর ফোন দিবিনা।তোর পাওনাতো আমি মিটাইয়াই দিলাম।আর কি চাস?
-হুম।আমার পাওনা পাইছি।কিন্তু তোর একটা জিনিস আমার কাছে আছে সেটা নিয়ে যা।
-আমি এত রাতে হলের বাইরে আসতে পারব না।আর তোর সাথে আমার কোন সম্পর্কও নেই এখন আর।সো,তুই চলে যা।
-সম্পর্কযে নাই সেটা আমিও জানি।তাই তোর যে জিনিসটা ছিলো সেটা দিয়ে যাইতে আসছি।
-আমি এখন নামতে পারব না।পরে দিস কিছু দেওয়ার থাকলে।
-না।পরে পারব না।এখনি নাম।দিয়েই চলে যাব।
-বিরক্তিশুরেই বলল, আচ্ছা দাড়া।আসতেছি।

গেটের বাইরে এসে দেখে অর্নব হাতে দুইটা প্যাকেট হাতে দাঁড়িয়ে। অর্নবের কাছে আসতেই বলল-দুইটা মিনিট দেরি করাব।তোর জন্য ভুল বসত কালকে তোর ফেভারিট চকলেট কেকের অর্ডার দিয়ে ফেলছিলা।সেইটা কটা হলেই তোর জিনিস তোকে দিয়ে চলে যাব।
তারপরে বৃষ্টিকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে একটা প্যাকেট খুলে অর্নব চকলেট কেকটা বের করে ওদের হলের সামনের বাধানো উচু জায়গাটাতে রেখে তাতে ২২ টা মোমবাতি সাজিয়ে দিয়াশলাই দিয়ে ধরিয়ে দিয়ে বৃষ্টির হাতে একটা চাকু ধরিয়ে দিয়েই বলল-ঝটপট ফু দিয়ে কেটে ফেল।তাহলেই তোর জিনিস টা তোকে দিয়ে আমি বিদায় হতে পারি।আর আমার কুৎসিত মুখটাও তোর দেখা লাগবেনা।বলেই অর্নব হাসতে শুরু করল।
বৃষ্টি চোখ কটমট করে কিছু বলতে যাচ্ছিল।কিন্তু তার আগেই অর্নব ওর হাত টা ধরে মাথা টা নিচু করে ফু দিয়ে সবগুলো মোম্বাতি নিভিয়ে দিয়ে কেকটা কেটে ফেলল।তারপর একপিচ তুলে ওর বৃষ্টির মুখের মধ্যে ঢুকিয়ে দিল।বৃষ্টি অপ্রস্তুত ছিল,তাই কেকটা ওর মুখের চারপাশে লেপটে গেলো।বৃষ্টি পুরো ঘটনাটাই বোকার মত দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখে গেলো।মুখ দিয়ে কিছু বলতে পারল না।তারপর হঠাৎই অর্নব ওর হাতের অন্য প্যাকেটটা বৃষ্টির হাতে ধরিয়ে দিয়ে এক পিচ কেক তুলে নিয়ে হন হন করে হাটা শুরু করল।বৃষ্টি কিছুই বলতে পারল না।তার আগেই সে ক্যাম্পাসের গেটের কাছে চলে গেছে।সে কেবল অর্নবের পথের দিকে চেয়েছিল।তার সম্বিৎ ফিরে পেলো যখন অর্নব গেটের কাছ থেকে অদৃশ্য হয়ে গেল।তারপর সে তার হাতের প্যাকেট আর কেকটার দিকে আরও কিছুক্ষণ বোকার মত চেয়ে থাকল।তারপর তার চোখ পড়ল কেকের লেখাটার উপর।এতক্ষণ সে খেয়াল করেনি।কেকটাতে খুব সুন্দর করে লেখা-"হ্যাপি বার্থডে টু মাই পাগলি।"বৃষ্টির চোখদুটো আবারও ছলছল করে উঠল।তবে এবার আনন্দের বহিঃপ্রকাশ ঘটল তাতে।তারপর সে তার হাতের প্যাকেটার দিকে তাকালো।দেখল একটা রেপিং পেপারে মোড়া গিফট বক্স আছে তাতে।কতক্ষণ এভাবে ছলছল চোখে চোখে তাকিয়ে থাকল।তারপর দেখল যে আশেপাশের মেয়েরা ওর দিকে তাকিয়ে আছে।আশেপাশে তাকিয়ে দেখল যে ভাজ্ঞিস এই সময়ে ওর ক্লাশের কেউ বাইরে নেই।তাহলে লজ্জার ব্যাপার হয়ে যেত।তারপর দ্রুত সে কেকটাকে আবার প্যাকেটিং করে হাতে নিয়ে হলের ভিতরে চলে গেলো।

রুমে ফিরে বাকি প্যাকেটটা খুলতেই রংঙিন কাগজে মোড়ানো গিফট বক্সটা বেরিয়ে এল।
তারপর রেপিং পেপারটা খুলতেই বৃষ্টি বিশ্ময়ে অভিভুত হল।সে কিছুদিন আগে যে বক্সটা ওকে দিয়েছিলো সেটাতেই কিছু একটা প্যাকেট করে আজ ওকে দিয়েছে।বক্সটা কখুলতেই দেখল তাতে সুন্দর দুইটি জিনিস সাজানো।একটি দারুন নেকলেস আর একটি অতিসুন্দর ব্রেসলেট।বৃষ্টির যে কি পরিমান আনন্দ হল তাও নিজেও জানেনা।এক নিমেষেই সে অন্য জগতে হারিয়ে গেলো।যেখানে শুধু আনন্দগুলোই ওকে ছুতে পারে।এই কদিন যে কষ্টগুলো ও পেয়েছে একনিমেষেই সব ঊরে গেলো।ছোখ ভরা জল নিয়েই ভাবল বৃষ্টি, তারমানে পাগলটা ওর আগের গার্লফ্রেন্ডেকে গিফট দিবে যে বলেছিল সেটা ইচ্ছে করে ওকে বোকা বানানোর জ্ন্য আর রাগানোর জন্য।তাকে নতুন করে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্যই পাগলটা এতসব কিছু করেছে।
চোখ দিয়ে অনবরত আনন্দের আশ্রু ঝরতেই থাকল।এমন সময়ে হঠাৎ ওর মোবাইলে একটা টেক্সট আসল।খুলতেই দেখল অর্নব ওকে একটা ভয়েচ মেইল করেছে what'sapps এ।খুলতেই সে শুনতে পেল অর্নবের মিষ্টি কন্ঠ-

"যদি কিছু পাগলামি জীবনের সব কষ্টগুলোকে
ছাপিয়ে অনাবিল আনন্দের সাগরে ভাসাতে পারে।তবে হোক না কিছু পাগলামি।আমার পাগলিটার শুভ জন্মদিনের শেষ মুহূর্তের এই একটু পাগলামিটুকু যদি তাকে অনাবিল আনন্দ দিয়ে আজকের দিনটাকে তার জীবনের শ্রেষ্ঠ দিনে পরিনত করতে পারে তাহলে বারে বারে এমন পাগলামি করতে ক্ষতি কি!!!! "
টেক্সটা বারবার শুনতে থাকল বৃষ্টি আর চোখ থেকে অবিরাম আনন্দ আশ্রু গড়িয়েই যেতে থাকল।সে বিশ্বাসই করতে পারছেনা শেষ পর্যন্ত এই জম্মদিনটা তার জীবনের শ্রেষ্ঠ জন্মদিন হয়ে রইলো।সত্যিই,এমনসব পাগলামি না থাকলে জীবনটা বর্ণহীন হয়ে যেত।কিছু পাগল আর পাগলামি আছে বলেই জীবনটা এত সুন্দর।


৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আইনের ফাঁকফোকর-০৩

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪২

যেকোনো চাকরির নিয়োগের পরীক্ষা চলছে। সেটা পাবলিক সার্ভিস কমিশন, বিভিন্ন সংস্থা, বিভাগীয় কমিশনার, জেলা প্রশাসক বা উপজেলা পর্যায়ের কোনো কার্যালয়ে হতে পারে। এই নিয়োগ পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র ফাঁস হতে পারে। একজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

গল্পঃ অনাকাঙ্ক্ষিত অতিথি

লিখেছেন ইসিয়াক, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ দুপুর ১:১২

(১)
মাছ বাজারে ঢোকার মুখে "মায়া" মাছগুলোর উপর আমার  চোখ আটকে গেল।বেশ তাজা মাছ। মনে পড়লো আব্বা "মায়া" মাছ চচ্চড়ি দারুণ পছন্দ করেন। মাসের শেষ যদিও হাতটানাটানি চলছে তবুও একশো কুড়ি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগে বিরোধী মতের কাউকে নীতি মালায় নিলে কি সত্যি আনন্দ পাওয়া যায়।

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:১৮

ব্লগ এমন এক স্থান, যেখানে মতের অমিলের কারণে, চকলেটের কারণে, ভিন্ন রাজনৈতিক মতাদর্শের কারণে অনেক তর্কাতর্কি বিতর্ক কাটা কাটি মারামারি মন্তব্যে প্রতিমন্তব্যে আঘাত এগুলো যেনো নিত্য নৈমিত্তিক বিষয়। ব্লগটি... ...বাকিটুকু পড়ুন

সিকান্দার রাজার চেয়ে একজন পতিতাও ভালো।

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ৮:০৭

সিকান্দার রাজা কোকের বোতল সামনে থেকে সরিয়ে রাতারাতি হিরো বনে গেছেন! কিন্তু তাকে যারা হিরো বানিয়েছেন, তারা কেউ দেখছেন না তিনি কত বড় নেমকহারামি করেছেন। তারা নিজেদেরকে ধার্মিক বলে দাবি... ...বাকিটুকু পড়ুন

ব্লগার'স ইন্টারভিউঃ আজকের অতিথি ব্লগার শায়মা

লিখেছেন অপু তানভীর, ০৪ ঠা মে, ২০২৪ রাত ১১:০৫



সামুতে ব্লগারদের ইন্টারভিউ নেওয়াটা নতুন না । অনেক ব্লগারই সিরিজ আকারে এই ধরণের পোস্ট করেছেন । যদিও সেগুলো বেশ আগের ঘটনা । ইন্টারভিউ মূলক পোস্ট অনেক দিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×