somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

কারও ভয়ার্ত আর্তি, কারও আশার আলো!

০৮ ই আগস্ট, ২০০৭ সকাল ৮:০১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সেদিন বন্ধুদের জন্য অপেক্ষা করতে করতে ইউনি লাইব্রেরিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বই পড়লাম ঘন্টাখানেক। প্রথমে সাইকোলজিতে ছিলাম, তারপরে রিলিজনে গেলাম। ইসলামের উপর বেশ কয়েকটা বই। ওগুলোই পড়ছিলাম। তারিক রামাদান, ক্যারেন আর্মস্ট্রং (ক্যাথলিক ব্রিটিশ), আর সাম ফয়সাল নামের একজনের বই--সবগুলোর নাম লিখে নিলাম। কিনার প্রচন্ড লোভ হলো, কিন্তু পকেট ফুটো। বইগুলো কিনতে লোভ হলো, কারণ বইগুলো ইসলামের পূর্নজাগরন নিয়ে। ওই ফয়সালের নামের ভদ্রলোকের বইটাই ধরুন, আমেরিকার ইতিহাসের কথা বলছিল। আমি খুবই কম জানি আমেরিকার ইতিহাস নিয়ে, বিস্তারিত জানতে আমাকে অতি অবশ্যই বইটা পড়তে হবে। তিনি বলছিলেন আমেরকিরার কথা যেখানে আরও দুইশ বছর আগেও ক্যাথলিকরা ঘৃণ্য ছিল। অথচ এখন? ওরা এখন বেশ প্রতিষ্ঠিত অবস্থায়, এবং আমেরিকার ক্যাথলিকরা ভ্যাটিকানের সিদ্ধান্তগুলো প্রভাবিত করছে। আমাকে, অন্যান্য ডানপন্থীদের প্রায়েই খোঁচা মেরে বলা হয়, পশ্চিমে বসে ইসলামের কথা কেন? আমি যেই পূনর্জাগরণ দেখি, সেখানে এটার সম্ভবনাই দেখি খুব করি--পশ্চিমে বসে ইসলামকে পূর্ণভাবে বুঝে, তারপরে পূর্বের দেশগুলোতে ইসলামকে প্রভাবিত করা। মানুষের চিন্তাভাবনা, চেতনাকে প্রভাবিত করা।


ভালো লাগছিল বইটা পড়ে, কারণ প্রায়েই মনে হয়, ইটস গোয়িং নোহোয়ার, এই পাথর নড়ার নয়। কিন্তু যখন সামগ্রিক দৃষ্টিপাত হয়, তখন বড় আশা জাগে। আশা জেগেছিল অনেক কুমু আপুর সাথে ছয় ঘন্টা আড্ডা মেরে। আশা জাগে যখন ব্লগে ব্লগে ঘুরে বেড়াই তখন! আমি নিকষ কালো অন্ধকার থেকে আশার আলো খুঁজে পাই আর মুচকি হাসি। জেনারেশন, ফ্যাশন, ট্রেন্ড একটা বড় ব্যাপার। বিশেষত যখন জ্ঞান চর্চা আর মিডিয়ার দৌড়াত্ব এত বেশি, শুধু সরাসরি ইনফ্লুয়েন্স ছাড়াও ইন ডাইরেক্ট ইনফ্লুয়েন্সের ক্ষেত্র প্রচুর। এখন যাদের বয়স ৩০/৪০ তাদের দৌঁড়াত্ব মিইয়ে আসবেই। পশ্চিমেও ২০-৩০ বছরের মুসলিমরাই ইসলামের ব্যাপারে বেশি সচেতন, ইসলাম সম্পর্কে হীনমন্যতা নেই, যা আগের জেনারেশনে ছিল। মুসলিমদের এখন পুরো নিজেস্ব একটা ক্ষেত্র তৈরি হচ্ছে, একটা সমান্তরাল বাস্তবতা তৈরি হচ্ছে... ক্ষেত্রে খুজতে খুজতে হয়রান হয়ে একসময় নিজেকে হারিয়ে ফেলতে হয় না। কিংবা, অন্য কারো ঘাড়ে পা রেখে উপরে উঠতে হয় না।


বাংলাদেশেও সেই স্রোতের ছোঁয়া লাগছে। আমি আমার পরিবার, বন্ধুমহল সব জায়গায় তাই দেখি। কারণ, বিশ্বের রিসেন্ট ইভেন্টস অবশ্যই। আমি সব সময় হিজাবকে একেবারে আল্লাহর নির্দেশ বলে পড়েছি বলে মনে পড়ে না, ছোটবেলায় কখনও না কখনও এমন সময় ছিল যখন ভালো লাগতো না। আমাকে সবচেয়ে বেশি মটিভেইট করতো তারাই যারা হিজাব নিয়ে টিটকারী করতো, আমি আরও শক্ত করে জড়িয়ে ধরতাম হিজাব। জবাব দেয়ার জন্য পড়াশোনা শুরু করা... এখন মুসলিমদের সেটাই হচ্ছে। কোন কারণ ছাড়াই প্রথম রাজাকার গালি খেলে, কিংবা মৌলবাদী ধর্মান্ধ গালি খেলে সেল্ফ ডিফেন্স ম্যাকানিজম শুরু হয়ে যায়। শুরু হয়ে যায় নিজেকে জানার প্রক্রিয়া। আগের জেনারেশন এত ডেসপারেইট যে না বুঝেই এই প্রক্রিয়া শুরু করিয়ে দেয়। ব্লগে আসার পরে ইসলাম আর ইতিহাস নিয়ে আমার পড়াশোনা অন্তত: দশ গুণ বেড়েছে। ৯/১১ এর পরে প্রথম গালি খেয়ে কত মুসলিম যে কুরআন পড়া ধরেছে! আমি যদি আমার স্কুলগুলোতে না যেতাম, যেই টিচার, ছাত্রীদের মুখোমুখি হয়েছি, তাদের না দেখতাম, তাহলে হয়তো কখনই নিজের বিশ্বাসকে এতটা ভালোবাসতে পারতাম না, এপ্রিশিয়েট করতে পারতাম না। হরাইজনটা এক চিলতে থাকতো। তাই, পথে কাটা বিছানো মানুষগুলোর প্রতি ভীষণ কৃতজ্ঞতা, চিন্তাভাবনাকে চ্যালেঞ্জ না করলে যতটা পথ এসেছি, ততটা কখনও আসতে পারতাম না।


আমার ছাত্রী (যার বাবা মা ভীষণ প্রগতিশীল চাইনীজ মুসলিম, সারা বাসায় একটাও কুরআন নেই, অথচ ও কুরআন পড়তে আগ্রহী হচ্ছে, ক্যাথলিক স্কুলে গিয়ে বেশ কিছু ডিসক্রিমিনেশনের মুখোমুখি হয়েছে তাই) সাথে বসে প্রায়েই বিশ্বের ইতিহাস, প্রেডিকশন আর থিওরীগুলো ডিকনস্ট্রাক্ট করি। আমি সব দেখে খুব নিশ্চিত হই, মানুষ সত্যিকারের সচেতন হচ্ছে। মুসলিমদের মধ্যেই ইসলামের ব্যাপারে ধারণার ডাইভার্সিটি বাড়ছে, ম্যাচুয়ারিটি বাড়ছে। ডাইভার্সিটি মানেই ডিভিশন নয়, ডিভিয়েশন নয়, কারণ ডাইভার্সিটি বাড়ার সাথে সাথে ম্যাচুয়ারিটি বাড়ছে, অ্যাপ্রিসিয়েশন বাড়ছে। এখন যেই জেনারেশনের দৌড়াত্ব, তাদের সংখ্যা কমবে তো অতি অবশ্যই, পরের জেনারেশন আসলে এখনকার জেনারেশনের ধ্যান ধারণার পঁচে যাওয়া অংশগুলো গ্রহন করবে না, ইতিহাসে সব সময় সেই মানুষগুলো ছিল, যারা আগের জেনারেশনের পঁচে যাওয়া চিন্তাভাবনা আলাদা করতে জানতো।
১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×