somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাজার অতি লাভজনক এক ব্যবসার নাম- ১০

০৮ ই আগস্ট, ২০০৭ রাত ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রসঙ্গ: আমানত শাহ মাজার
*********************
শাহ্‌ আমানত বা আমানত শাহ-এর নাম শুনেছেন অনেকে । শুনা যায়,এই শাহ্‌ চট্টগ্রাম কোর্টে পেশকার-এর চাকরী করতেন। ছিল খুব সাদামাটা জীবন-যাপন । একদিন ঘটল এক আচানক ঘটনা । জমি-জমা সংক্রান্ত এক মামলার রায় হবে । বাদী-বিবাদী সকলেই উপস্থিত । আর মাত্র কয়েক ঘন্টা পরই মিমাংসা হয়ে যাবে । হঠাত্তই বাদী আবিস্কার করলেন বেখেয়ালে তিনি তার জমির দলিল আনতে ভুলে গেছেন । ভুলে গেছেন আরো সব প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র আনতে । তিনি এসেছেন সন্দ্বীপ থেকে । কয়েক ঘন্টার মধ্যে সেখান থেকে জরুরী এসব কাগজ-পত্র আনা কিছুতেই সম্ভব না । চরম হতাশ জমির মালিক একসময় কোর্ট চত্তরে কেঁদে ফেলেন । পেশকার শাহ্ আমানত সহানুভূতির হাত বাড়িয়ে দেন। সব শুনে তিনি তাকে ধৈর্য ধরতে বলেন। আল্লাহ একটা কিছু সাহায্য করবেন বলে বাদীকে শান্তনা দেন ।

এখানেই গল্পের আসল রহস্য। দশ মিনিটের মাথায় পেশকার শাহ আমানত মামলার বাদীর সামনে আবারো হাজির হলেন । তাঁর হাতে মামলা সংঙ্ক্রান্ত কাগজ-পত্র এবং জমির দলিল !

অবিশ্বাস্য হলেও এই ঘটনা সত্য বলে প্রচার পেয়ে যায় । শাহ আমানতের 'কেরামতির' কথা ছড়িয়ে পড়ে চারিদিক । ভ্ক্তকূল বাড়তে থাকে দিন দিন । তাকে বেষ্টন করেই থাকে তারা । একসময় তিনি আত্মগোপন করেন । কারণ,তিনি নাকি কখনই এভাবে নিজেকে প্রকাশ করতে চাননি ।

যাই হোক,তার দেখা আর কেউ পায়না বলে জানা যায় । কিন্তু মাজার ব্যবসায়ীরা বসে থাকেনা । চট্টগ্রাম কোর্টের কাছাকাছি জায়গায় তারা শাহ আমানতের মাজার গড়ে নেয় ! সেখানে এখন অভাবিত বাণিজ্য হয় তাদের ।


এক শবে বরাত রাতে (এই শবে বরাত রাত নিয়ে বিতর্ক আছে,কেউ কেউ বলেন 'শবে বরাত' বলে কিছু নেই । 'লায়লাতুল কদর' রাতের পক্ষে বর্ণীত কুরাআনের আয়াতগুলোই শবে বরাতের বেলায় ব্যবহৃত হয় । যা ভুল ।)
ইবাদত বন্ধেগী ছেড়ে বন্ধুরা চট্টগ্রাম শহরময় 'টো টো' করে ঘুরতে লাগলাম । গেলাম একসময় আমানত শাহ্-এর মাজারে !

মাজারতো নয় ! প্রাসাদসম চাকচিক্য। চকচকে মাজারের সবখানে জ্বলছে মোমবাতি । বিদ্যুতের ঝলমলে আলোতেও শত শত মোমবাতির আলো না হলে বোধহয় মাজারের ইমেজ বাড়েনা । যে বেচারা শাহ আমানত নিজেকে মানুষের ভিড় থেকে আড়াল করতে চেয়েছেন । তাঁর (তথাকথিত) মাজারে হাজার হাজার লোকের ভিড় । ব্যবসা কেমন রমরমা,মাজার গেটে সারিবদ্ধ ভিক্ষুক দলকে দেখলেই বোঝা যায় !

এখানে ঘটলো এক মজার ব্যাপার । এক বন্ধু দোয়েল মার্কা দু'টাকার একটা নোট দিল ভিক্ষুককে । অমনি তাবত্ত ভিক্ষুক তাকে ঘিরে ধরল । তাদেরও দিতে হবে । নইলে 'ভিক্ষুক বেষ্টন মুক্ত করা অসম্ভব'-এমনই ভাষ্য তাদের ! শেষে,বন্ধুরা মিলে প্রায় সবাইকেই অল্প-বিস্তর দিয়ে বন্ধুকে রক্ষা করি ! পরে জেনেছি,এসব মাজারে একজনকে দিলে নাকি সবাইকেই দিতে হয় । চমত্কার নিয়ম বটে !

অন্যএকদিন আমানত শাহ মাজার রোডে গিয়েছিলাম একটা কাজে । ফুটপাথ ধরে হাঁটছি । মেইন রোডের পাশে মাজারের বড় দান বক্স । পাশে বসা একজন খাদেম । গার্মেন্টস কর্মী এক ১৫-১৬ বছরের মেয়ে বক্সের মুখে একটি দশ টাকার নোট অর্ধেক ডুকিয়ে দিয়ে গেল । মেয়েটি দান বক্স পার হয়ে যেতেই, খাদেম সাহেব দশ টাকার নোটটি তার পকেটে পুরলেন । আমি পেছন দিকে ছিলাম বলে খেয়াল করলেন না ।


জানি,মাজারের যাবতীয় টাকা খাদেমরাই খায় ! তবু,সেদিন খুব কষ্ট পেয়েছিলাম । দশ টাকা কামাতে একজন গার্মেন্ট কর্মীর কতো ঘাম ঝরে ভেবে...। এ-দৃশ্য ভুলতে পারিনা।
সর্বশেষ এডিট : ০৮ ই আগস্ট, ২০০৭ ভোর ৪:০২
১৫টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×