somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গণতন্ত্রে নারী-পুরুষ নেই

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১০:১২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সৌদি আরবের এক সাহসী নারী ওয়াজেহা আল-হায়দারের একটি লেখায় তাঁর প্রগতিশীল চিন্তা-চেতনা দেখে বিস্মিত হয়েছিলো বিশ্ব বিবেক। বিশ্ববাসী আনন্দিত হয়েছেন বোধের বিকাশ দেখে। পুরুষদের জন্য সৌদি আরবে ৭ কিংবা ৮ বছরের মেয়েকে বিয়ে করা জায়েজ আছে। ৮ বছর বয়সী একটি মেয়ের স্বপক্ষে তার একটা প্রচার অভিযান ছিল, যে মেয়েটির বিয়ে হয়েছিল ৫০ বছর বয়সী প্রৌঢ়ের সঙ্গে। ইউটিউব-এ দেখিয়েছিল শিশু বিয়ের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলার জন্য। স্থানীয় এক লেখিকা ওই ভিডিওটি নিয়ে একটি প্রতিবেদন লিখলে সিএনএন সেটি নিয়ে নেয়। ফলে বিয়েটির পরিসমাপ্তি ঘটে এবং ছোট্ট বালিকাটি মুক্তি পায়।
ওয়াজেহা সৌদি পুরুষদের বহুগামিতা নিয়ে তীব্র কটাক্ষ ও প্রতিবাদ করেছেন। মুসলমান অধ্যুষিত দেশগুলোর নারী সমাজে এ রকম ওয়াজেহাদের সংখ্যা বৃদ্ধি পেলে ফতোয়াবাজ এবং পুরুষতন্ত্রে নারীকে ব্যক্তি সম্পত্তি ও পণ্য?করার প্রবণতা কমে যেতে বাধ্য। বাংলাদেশে উগ্র ধর্মান্ধ পুরুষরা জঙ্গী হয়ে ওঠে, আর প্রগতিশীল পুরুষরা কর্তা হয়ে ওঠে - নারীকে দু’পক্ষই পণ্যের মতো ভেবে দূরে সরিয়ে রাখে কিংবা জীবিত রেখে প্রতি মুহূর্তে মৃত্যু ঘটাতে থাকে। অর্থাৎ নারীকে মানুষের মর্যাদা দিতে কখনই চায় না।
বর্তমান বিশ্বে মুসলমান অধ্যুষিত দেশসমূহে নারীরা অন্ধকারের অতল গহ্বরে আজও অবস্থান করছে। তাদের এই অন্ধকারের পাতালে ঠেলে দেয়া হয়েছে দীর্ঘদিন আগেই। তাদের আলোর জগতে আসা নিষিদ্ধ। তাই পুরুষ কর্তৃক পুরুষতান্ত্রিক সমাজের উগ্র ধর্মান্ধ মানুষদের হাতের ক্রীড়নক কিংবা সাময়িক চাহিদার পণ্য তারা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে জানা যায়, বিয়ে, হিল্লা বিয়ে, তালাক, যৌতুক, স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্ক, প্রেম, এনজিওতে কাজ করাসহ বিভিন্ন অজুহাতে বাংলাদেশে ১৯৭৫ এরপর হতে ফতোয়াবাজির ঘটনা আজও চলছে।
আত্মহত্যা করেছেন নারী। নারী নির্যাতনকারী ফতোয়াবাজরা কখনও পাথর ছুড়ে মারা, কখনও দোররা মারার ঘটনা চালিয়ে যাচ্ছে। হাইকোর্টের ঐতিহাসিক রায় আজও পরিপূর্ণ কার্যকর হলো না।
গৃহবধূ শাহিদাকে হিল্লা বিয়েতে বাধ্য করার বিষয়ে সুয়োমটো রিট মামলায় বিচারপতি গোলাম রব্বানী ও বিচারপতি নাজুমন আরা সুলতানার সমন্বয়ে গঠিত সুপ্রিমকোর্টের হাইকোর্টে বিভাগীয় বেঞ্চ একটি যুগান্তকারী রায় প্রদান করে। আদালত ফতোয়াবাজিকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ গণ্য করে অবিলম্বে আইন প্রণয়নের জন্য জাতীয় সংসদের প্রতি সুপারিশ করে। ঐতিহাসিক রায়টিতে ফতোয়াবাজিকে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ করা হয় যে, অননুমোদিত ব্যক্তি বা ব্যক্তিদের দ্বারা ফতোয়া দেয়াকে, এমনকি যদি তা বাস্তবায়িত নাও হয়, শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে সংসদে আইন করা হোক। ওই সুপারিশে পরিবর্তন আনা হয়েছে ফলে ওই সুপারিশকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না আমাদের মতো ধর্মভীরু সমাজে। ফলে ফতোয়াবাজদের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে, প্রাণ দিতে হচ্ছে অসংখ্য নারীকে। সেদিনের রায়ে বলা হয়েছিল, ফতোয়ার অর্থ হচ্ছে আইনগত মতামত। বাংলাদেশের আইন ব্যবস্থায় মুসলিম এবং অন্য সব প্রচলিত আইন সংক্রান্ত প্রশ্ন উত্থাপিত হলে মতামত দেয়ার ক্ষমতা একমাত্র আদালতের ওপর ন্যস্ত রয়েছে। রায়টিতে আরও সুপারিশ করা হয়: ‘সংবিধানের ৪১ (১) অনুচ্ছেদের আওতায় আইন, জনশৃঙ্খলা ও নৈতিকতাসাপেক্ষে ধর্মীয় স্বাধীনতা নিয়ন্ত্রণকারী আইনের প্রস্তাব।’ নারীমুক্তি নিয়ে, নারীর অধিকার নিয়ে অনেক নারীবাদী, সমাজবিজ্ঞানী কতই - না লাফঝাঁপ করে বেড়াচ্ছেন। বিত্তশালী পরিবারের নারীরা, ফতোয়াবাজদের শিকার হতে হয় না যাদের, তারা সরকারি প্রশাসন সংসদ ভবন, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান আলোকিত করে থাকেন বটে, কিন্তু নির্যাতিত নারীদের পাশে কেউ দাঁড়াতে চান না।
আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারের কাছে জাতির অনেক প্রত্যাশা ছিল কারণ গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের প্রাণ হলো ব্যক্তি স্বাধীনতা, ব্যক্তির অপরিসীম বিকাশ, নারীর অপ্রতিহত সামাজিক গতিবিধির দ্যুতি, স্বাধীনতা, মানবাধিকার, মানুষের মূল্যবোধ ও সার্বিক স্বাধীনতা প্রতিষ্ঠার সার্বিক কার্যক্রম বাস্তবায়ন। ইসলাম, খ্রিস্টান কিংবা হিন্দু মৌলবাদ কোনোটাই বাঙালি জাতির কাছে এবং গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে স্থান পেতে পারে না। আজকের বিশ্বে প্রমাণিত, মোল্লাতন্ত্র এবং উগ্রবাদ কোনও রাষ্ট্র বা জাতিকে অগ্রসরমানবতার পথ থেকে সরিয়ে নেয় এবং অন্ধকারে ঠেলে দেয়। রাজনীতিকরা যথাসময়ে সচেতন না হওয়ায় খেসারত দেয়া শুরু হয়েছে নতুন প্রজন্মকে। কুরআন এবং রসুল (সাঃ)-এঁর আদর্শকে মেনে চললে কোনো মুসলমান ফতোয়াবাজ কিংবা জঙ্গী হয়ে দেশের মানুষের প্রাণ কেড়ে নিতে পারে না এবং সমাজে তথাকথিত রাজনৈতিক ইসলাম নিয়ে মিথ্যাচারের পথ ধরে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করতে পারে না। ঠিক তেমনি গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতেও কোন নারী-পুরুষ নেই। আছে শুধু মানুষের মূল্যবোধ ও মানবতা।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×