somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জীবনের গল্প: ভলিউম-১

১২ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১১:৩৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ছেলেবেলাটা আমার ছিল একটু অন্য রকম। হ্যাঁ, সবাই তাই বলবেন যে, আমার টাও অসাধারণ ছিল। কিন্তু বিশ্বাস করুন, আমারটা কোন ভাবেই অন্যদের সাথে মিলবেনা। কেউ বলতে পারেন যে, "আমারটাও তো কারো সাথে মিলবে না"। সেটা ঠিক আছে। কিন্তু আমারটা সত্যিই সবার থেকে আলাদা। প্রমান চান? ঠিক আছে, তাহলে আমার জীবনে ঘটে যাওয়া অসংখ্য রোমাঞ্চোকর ঘটনা গুলো থেকে একটা ঘটনা শোনাই।


তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি, সালটা ছিল ২০০০। কিন্তু দুষ্টমির এমন কোনোটা নেই যে যেটা আমার দ্বারা হয়নি। তবে হ্যাঁ, এগুলো কে ঠিক দুষ্টমি বলা যায় না, বলতে হবে অকাল পক্কতা। মানে বড়দের কাজ গুলো ভাল লাগতো এবং তা করতে ইচ্ছে করতো। আর আমি যাই ভাবতাম তাই করতাম। এজন্য সারাটা জীবনে অনেক মাশুল দিতে হয়েছে। হয়তো এখনো দিচ্ছি। যাই হোক, এখন মুল পর্বে আসা যাক।

সেভেনে পড়ার ঐ সময়ে আমি এবং আমার ঐ সময়ের কিছু বন্ধু মিলে একটা প্লান করি। প্লানটা হল যে, আমরা বাড়ি ছেড়ে অন্য কোথাও চলে যাব, আর কখনো ফিরবোনা। উল্লেখ্য যে, আমার বাড়ি রংপুর জেলার মিঠাপুকুর উপজেলা প্রপারে।আর আমার সাথে যারা ছিল, তারাও সেখানেরই। তারা হল যথাক্রমে সালমান (টিম লিডার), সোহেল, রিওন।

তো অবশেষে টিম লিডার এর ডাকে একটা মিটিং করা হল এবং সেখানে মিশনের লক্ষ্য-উদ্দেশ্য সম্পর্কে আলোচনা করা হল। মিটিং এর ফলাফলঃ
গন্তব্য হল ঢাকা; সেখানে গিয়ে ক্যাডার বা টপ টেরর হতে হবে। অদ্ভুত আইডিয়া! তো এটা কিভাবে সম্ভব হবে? একজন বলল। তখন টিম লিডার বলল, অতি সাধারন কর্ম। ওখানে গিয়ে মাস্তানি করতে হবে, এতে করে পুলিশের পাল্লায় পড়ে সোজা শ্বশুর বাড়ি আই মিন জেল, তারপর কোনো গড ফাদার আমাদের উদ্ধার করে তাঁর ডান হাত বানিয়ে নেবে। আর এভাবেই আমরা হয়ে উঠবো সফল ক্যাডার (বুঝেন তো, ছোট বেলার মস্তিষ্ক যা দেখে- শোনে তাই করতে চায়)।

এই গল্প শুনে তো আমি মহা খুশি। এটা সম্ভব কারন, আমার কানেও এধরনের কথা এসেছে। এছাড়া বাংলা ছিনেমাতেও এধরনের কাহিনী দেখা যায় (যেহেতু দিন দুনিয়ার কোনো কিছু সম্পর্কে তখন কোন ধারনা রাখতাম না, তাই বাংলা ছবির অনেক কিছুই সম্ভব মনে হতো)। সুতরাং প্লান টা খারাপ না। তো একজন বলল, আমরা যাব কিভাবে? লিডার বলল, তোমরা বাড়িতে যাও এবং যে যেখানে পাও টাকা ম্যানেজ কর। বাপের পাঞ্জবীর পকেট, প্যান্টের পকেট, তোষকের নিচে; অর্থাৎ যেখানে যা পাও নিয়ে রাত আট ঘটিকার মধ্যে নিরদ্রিষ্ট স্থানে জড় হও। অবশেষে মিটিং শেষ করে যে যার বাসায় চলে গেলাম আর টাকা সন্ধান করতে লাগলাম।


ঐ সময়ে এমনিতেই আমরা দারিদ্রতার চরমে ছিলাম, তাই তোষক, ড্রয়ার, সোকেচ ইত্যাদি সব খুঁজেও একটি টাকারও সন্ধান পেলাম না। রাতে খেয়ে নিলাম এবং ঐ সময়েই বাবা আসলেন। এসে পাঞ্জবী খুলে ফ্রেশ হতে চলে গেলেন, আর এই সুযোগে আমি তাঁর পাঞ্জবীর পকেট হাতড়াতে শুরু করলাম। ভাগ্য সুপ্রসন্ন হল। দেখি পকেটে অনেক টাকা। খুশিতে একেবারে বাকবাকুম হয়ে গেলাম। জাস্ট টাকাটা নিয়ে পকেটে ঢুকালাম, একবার দেখলামও না যে কত টাকা আছে। এর খানিক পরেই মানে বাবা খেতে খেতেই আমি ব্যাগ গুছিয়ে চুপি চুপি বাসা ত্যাগ করলাম। আই মিন পগার পার...............।

বাস স্ট্যান্ডের এক কোনে দাঁড়িয়ে গোল্ড স্টার সিগারেট টানছি(ঐ আমলে ওটাই ব্র্যান্ড এর মাল), ইতিমধ্যে বাকিরা চলে এলো। অতপর আমরা রওনা করার জন্য প্রস্তুত হয়ে গেলাম। এখন কথা হল, আমরা যদি মিঠাপুকুর থেকে চার জন এক সাথে ঢাকার বাসে উঠি তাহলে পরিচিত লোকজন সন্দেহ করবে। তো কি করা যায়?
টিম লিডারঃ আমরা আগে রিকশায় করে সামনের স্টেশনে যাই(আই মিন মিঠাপুকুর বাস স্ট্যান্ডের পরের বাস স্ট্যান্ড শঠিবাড়িতে), তারপর সেখান থেকে বাসে উঠবো, তাতে কেউ টেরও পাবেনা।
সবাই একমত হলাম ও তাই করলাম।

অতপর মহা উদ্যমে আমরা একটা ভ্যান ভাড়া করলাম ও শঠিবাড়ির উদ্দেশ্যে চললাম। এ রকম একটা ভয়াবহ অভিযানে আমাদের স্নায়ুবিক চাপ অনেক বেশি থাকাটা স্বাভাবিক ছিল, কিন্তু মজার ব্যাপার হল, আমরা কোনো ধরনের চাপই অনুভব করছিলাম না। এটা কেন যে হল তার উত্তর আজও খুঁজে পাওয়া যায়নি। যাই হোক, গন্তব্য আসাতে অবশেষে আমরা ভ্যান থেকে নেমে ভ্যান ওয়ালাকে বিদায় দিলাম।

এর পর যা দেখলাম তা হল,
খুব আয়েশ করে একটা সিগারেট ধরানোর পর টিম লিডার আমাদের দিকে এগিয়ে আসলো আর বলল, "প্রথম পর্বের কাজ তো শেষ, এখন বল কে কত টাকা আনতে পারলে?"
ঠিক এ মুহূর্তে আমার চুরি করা টাকার কথা মনে হল। টাকাটা পকেট থেকে বের করে গুনছি, দেখি উপরে একটা দশ টাকার নোট এবং আরও কিছু টাকা। যাই হোক, গুনে টুনে দেখি মাত্র পঞ্চান্ন কি ষাট টাকা হয়েসে। আমার তো মাথায় হাত! ভাবলাম দুই আড়াইশত টাকা হবে, কিন্তু একি!
কি আর করা, লজ্জা সিক্ত অবনত মাথায় টাকাটা টিম লিডারের হাতে তুলে দিলাম। লিডার তো আকাশ থেকে পড়লো। বলল, এতো তোমার যাওয়ার ভাড়াই হবেনা। যাই হোক, বাকিদের কি অবস্থা?
সোহেল ও রিওন দু'জনেই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে রইলো। তখন লিডার বলল, "তোরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?" কিছু বল......
তারা বলল যে ওরা কোনো টাকা আনতে পারেনি। অনেক খোঁজা খুঁজি করেও কোনো টাকার সন্ধান পায়নি।
এই শুনে তো আমি আর লিডার দু'জনেই "থ" ! অনেক কথাই বলা হল, মিশন ক্যানসেল, হাবিজাবি কলকলাবি, এতটা দায়িত্বহীন যদি এখনি হয়ে যাস তবে তোদের কে দিয়ে কি আসা করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। তিন জনের মধ্যে শুধু আমি এনেছি ক'টা টাকা, তাও আবার সেটা দিয়ে যাওয়ার ভাড়াটাই হবেনা।
তো এখন কি করা যায়? লিডার আমাদের বলল, "তোমারা কি বাসায় ফিরে যেতে চাও?" আমরা সমস্বরে বলে উঠলাম, "না"। যেহেতু বাসা থেকে একবার বেরিয়ে পড়েছি সেহেতু বাসায় ফিরে যাওয়ার তো প্রশ্নই আসেনা। যে বাসা থেকে একবার বেরিয়ে এসেছি, সে বাসায় আর নয়। এখন কি উপায়?

উপায় আর কি? এখন আমার কাছে যা আছে তাই ভরসা। এখন প্রশ্ন হল, লিডারের কাছে আছে কত? তো সব টাকা গুনে দেখা গেল যে, মোট একশত সত্তুর টাকা হয়। আমরা বলে উথলাম,"মাত্র?"......... এই একশত সত্তুর টাকা দিয়ে কি ভাবে ঢাকা যাবো আমরা চার জন? তাছাড়া খাওয়া দাওয়ারও একটা ব্যাপার আছে।

দেখি কি করা যায়? লিডার বলল। অতপর বাসের জন্য অপেক্ষা করছি। যেতেতো হবে মফিজ গাড়িতে। অপেক্ষার পালা একসময় শেষ হল। জাকের(সম্ভবত) নামের একটা গাড়িতে উঠে পড়লাম।
শুরু হল আমাদের অভিযান।

চরম ভাল লাগা কাজ করছিল। মনে হচ্ছিলো আজ থেকে আমরা মুক্ত বিহঙ্গের কুহু কেকা। বোরিং পড়াশোনা, বাবা মায়ের কড়া শাসন, ছকে বাঁধা জীবনের আজ থেকে ছুটি। এখন থেকে আমাদের মন যা বলবে তাই আমরা করতে পারবো, কেউ বাঁধা দেয়ার নেই, কেউ আপত্তি করার নাই, আহ.........এইতো লাইফ।

গাড়ির কন্ট্রাক্টর এগিয়ে আসছে, ততক্ষণে আমরা বেশ কয়েকটা স্টপেজ পার হয়ে এসেছি।
কন্ট্রাক্টরঃ এই তোরা কই যাবি?
আমরাঃ জী ঢাকা যাব।
কন্ট্রাক্টরঃ ভাড়া দে।
লিডারঃ এই ন্যান(সত্তুর টাকা রেখে বাকি একশত টাকা দিয়ে বলল)।
কন্ট্রাক্টরঃ এই খানে তো মাত্র একশো টাকা।
আমরাঃ আমাদের কাছে আর নাই।
কন্ট্রাক্টরঃ আর নাই মানে? এইখানে তো কোনোমতে মাত্র একজনের ভাড়া চালিয়ে নেয়া যাবে,আর বাকিরা কি ফ্রী? মগের মুল্লুক পাইছো নাকি? বাকি টাকা বাইর কর, আর না হইলে নামায় দিব।
যাই হোক, নামানোর কথা বললেও পরে আর নামায় দেয় নাই।
এভাবে আরও অনেক কাহিনী বাসের মধ্যেই ঘটে যায়। এক পর্যায়ে বাস বগুড়ায় এলে কিছু যাত্রী নেমে যায়, তখন ঐ সিট গুলোতে সবাই বসে পড়ে।
আমাকে অবশ্য আগেই ড্রাইভার তাঁর পাশে বসিয়ে নিয়েছে।
আমি তার সাথে অনেক কথাও বলে ফেলেছি। এর ফলে যে লাভ টা হয়েছে তা হল, উনি(ড্রাইভার) বুঝতে পেরেছেন যে এরা সবাই ভদ্র ঘরের ছেলে কিন্তু কিছু একটা সমস্যা হয়েছে, যা আমি তাঁকে বানিয়ে বলেছি (সেটা না হয় আপনাদের নাই-ই বললাম) এবং তিনি সেটা বিশ্বাস করেছেন (বিঃ দ্রঃ আমি আবার ছলা কলা ভাল জানতাম কিনা)। তিনি এতটা আমাদের কে আপন করেছেন যে মাঝ পথে খাবার পর্যন্ত খাইয়েছেন।

এভাবেই কখন যেন আমরা গাবতলীতে এসে পড়লাম। কন্ট্রাক্টর এসে সবাইকে তুলে দিয়ে বলল, ঢাকা এসে গেছে, এবার নেমে যাও। আমরা বাস থেকে নামলাম, গাড়ির সবাই কে অনেক কৃতজ্ঞতা জানালাম ও দোয়া করতে বললাম। ড্রাইভার সাহেব ভালো ভাবে চলতে বললেন এবং কোনো টাকা লাগবে কিনা জিজ্ঞেস করলেন। আমরা বললাম, লাগবেনা (যদিও আমাদের টাকার দরকার ছিল, কিন্তু নিতে পারলাম না কারন এমনিতেই তাঁরা আমাদের জন্য অনেক কিছু করেছেন)। তিনি বললেন, কখনও যদি সমস্যা হয় তো এখানে এসে সরাসরি জাকের এর কাউন্টারে চলে আসবা আর আমার নাম বলবা(ওনার নামটা আমি ভুলে গেছি)। এই সব কথোপকথনের পর আমরা বিদায় নিলাম।


ফজরের আজান পড়ে গেছে অনেক আগেই। এখন প্রায় ভোর। সুন্দর একটা ভোর। চার বন্ধু মিরপুর রোডে গাবতলীকে পেছনে ফেলে হাঁটছি। সম্পূর্ণ নতুন জায়গা তাই বার বার অবাক হয়ে চারিদিকে তাকাচ্ছি। বড় বড় দালান কোঠা, প্রশস্ত রাস্তা যেন ছবির মত। সারা জীবন স্বপ্ন দেখতাম যে ঢাকায় যাব। তা আজ পুরন হল। এভাবে সাত পাঁচ ভাবতে ভাবতে যখন অন্যান্য দের দিকে তাকালাম, দেখি তারা সবাই সুপারম্যান হয়ে গেছে। মানে তারা তাদের পোটলা (লাগেজ) থেকে থেকে লুঙ্গি বের করে পেছনে বেঁধেছে, সুপার ম্যানের মত করে। তো আমি বললাম, ব্যাপার কি?
একজন বলল, আজ থেকে তো আমরা সুপার ম্যান তাই লুক টা এরকম করলাম এবং সবাই তাতে সায় দিল।

এসব নিয়ে হাসাহাসি করছি, এমতাবস্তায় হঠাৎ একটা গাড়ি এসে আমাদের পাশে থামল। তাকিয়ে দেখি পুলিশের পিক আপ। আমাদের কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়েই একজন বলল, "এই খাঁড়া"। সাথে সাথেই আমরা স্ট্যাচু অব লিবার্টি হয়ে গেলাম। হওয়ারই কথা। কারন, জীবনে প্রথম কোনো মেট্রোপলিটন পুলিশের সামনে দাঁড়িয়ে আছি। একটু উত্তেজনা আবার একটু ভয় ভয় ভাব কাজ করছে। আবার মনে হচ্ছে এটাই তো জেলে ঢোকার ভাল সুযোগ। আর একবার জেলে গেলেই তো ক্যাডার। কেয়া বাত। সুতরাং যা হচ্ছে হোক, বিন্দাস।

কেউ একজন বলল, ওদের সার্চ কর। কথা শুনে বুঝলাম যে এটা এস.আই। একজন আমাদের সার্চ করতে এগিয়ে আসলো। সার্চ করল কিন্তু কিছুই পেলনা। লোকটা বলল, স্যার, ওদের কাছে কিছু নাই। আর আমাদের বলল, এই তোরা চইলা যা। কিন্তু এস.আই ক্ষিপ্ত "না অইগুলানরে বান, হ্যারা নিশ্চয়ই কোনো অসাধু কামে ঘোরাঘুরি করতাছে। থানায় নিয়া চল তারপর দ্যাখতাছি, পিডানি দিলে হরহর কইরা সব বাইরইয়া আইবো"। কিন্তু আর এমন কিছু হল না। ওরা চলে গেল।
যাই হোক, এতক্ষণ পর ধড়ে প্রান ফিরে আসলো। শেষের দিকে ভয়ে একদম কলিজা শুকায় গেছিলো। এস.আই এর যা ক্ষোভ দেখলাম থানায় নিলে মাইরা একদম চ্যাপ্টা করে ফেলতো। সুতরাং যা হয়েছে ভালই হয়েছে, তাছাড়া এতো তাড়াতাড়ি জেলে ঢোকার দরকার কি? ঢাকা শহরে নতুন আসছি একটু ঘুরে ফিরে দেখি, তারপর না হয় ঐ সব ভাবা যাবে।

হঠাৎ করে খুব ক্লান্ত লাগা শুরু হল আমাদের। জোস যেন হঠাৎ একদম হাওয়া হয়ে গেল, বিশ্রাম দরকার। কিন্তু বিশ্রাম নেবো কোথায়? কোথাও তো ফাঁকা জায়গা দেখিনা, আর থাকলেও সেটা বিশ্রাম যোগ্য নয়। অবশেষে লিডারের বুদ্ধিতে একটা আট নাম্বার বাসে উঠে গেলাম। যত দূর মনে পড়ে আট টাকা ব্যয় করে শ্যামলী থেকে আসাদ গেট পেরিয়ে একদম সংসদ ভবনের সামনে এসে নামলাম। নামার পর মনে হল, বিশ্রামের জায়গা মনে হয় পাওয়া গেল। লিডারকে হাজারো ধন্যবাদ দিলাম। উল্লেখ্য যে, লিডার এর আগে একাধিক বার ঢাকায় এসেছিল এবং অনেক দিন পর্যন্ত থেকেছিল। তাই সে অনেক কিছুই চেনে জানে।
অতপর সংসদের মাঠে প্রবেশ করলাম (তখন মাঠে জনসাধারনের প্রবেশ উন্মুক্ত ছিল)। একদম সংসদের কাছে দেখি কিছু মানুষ। কাছে গিয়ে দেখলাম কিছু পুরুষ ট্রাউজার ও টি শার্ট এবং কিছু মেয়ে খুব টাইট ফিটিং পোষাক পরে অযথাই লম্ফ ঝম্ফ করছে। অবশ্য মেয়ে গুলোকে দেখে মজাই লাগছে। কি সুন্দর বডি ফিগার, শরীরের কি আর্ট! সিনেমার নায়িকাদের মত(বুঝেনিতো, অকাল পক্করা যা করে আরকি)। তো ভাবলাম, এতো সকালে এরা এখানে কি করছে? তখন লিডার গাম্ভীর্যের সহিত কহিলো, "এটাকে ইংলিশে বলে জগিং"। এরপর জগিং দেখার নেশায় মত্ত হয়ে আরেকটু কাছে যাওয়ার ছলা কলা করছি, এমন সময় একটা স্বাস্থ্যবান কুকুর "ঘেউ ঘেউ" শব্দে আমাদের তাড়া করবার উপক্রম হল। হঠাৎ করে কুকুর (তাও আবার অতিকায়) দেখে আমরা ভীম্রি খেয়ে পড়তে পড়তে সে বারের মত বেঁচে গেলাম, কারন কুকুরটা বাঁধা ছিল, শেকলে টান পড়াতে আর এগুতে পারেনি। যাই হোক, সুন্দরী দেখার শখ সে বারের মত মিটে গেল।

এবার আমরা মাঠের মাঝখানে এসে শোবার প্রস্তুতি নিচ্ছি। কিন্তু কিভাবে শোবো। মাঠের মধ্যে ঘাস, সেগুলো আবার হাল্কা ভেজা। কি করা যায়?
লিডারঃ তোমাদের যার যার লুঙ্গি বের কর তারপর বুঝতেই পারছো। গুড আইডিয়া। এরপর লুঙ্গি বিছিয়ে শুয়ে পড়লাম।
উপরে সাদা স্বচ্ছ আকাশ দেখতে দেখতে আর পাখির কিছির মিছির শুনতে শুনতে কখন যে ঘুমিয়ে গেলাম টেরও পেলামনা।
যেন এর আগে কখনো ঘুমাইনি। প্রশান্তির ঘুম।



এ দিকে, বাড়িতে সারা রাত না যাওয়াতে বাবা খোঁজ করার জন্য সকালে বের হল। হোটেলে গিয়ে নাস্তা সেরে কাউন্টারে টাকা দিতে গিয়ে তো টাস্কি খেয়ে গেল। পকেটে কোনো টাকা নাই। ঠিক তখনি বাবা বিষয়টা আঁচ করতে পারলো, ছেলে আমার টাকা হাওয়া করে দিয়েছে( এটা মোটামুটি কমন ছিল যে বাড়ির টাকা হারানো মানে সেটা আমি নিয়েছি)। কিন্তু ছেলেটা গেল কই? সারা রাত বাসায় এলো না!

যাই হোক, খোঁজ খবর নিয়ে জানতে পারলো যে, চার জন মিঠাপুকুর থেকে হাওয়া। আরও জানতে পারলো যে আমরা লাগেজ সহ আউট। অবশ্য মাঝে মধ্যেই এরকম হওয়াতে তাদের মাঝে চিন্তার তেমন কোনো ছাপ পড়লো না। গেছে হয়তো কোথাও! ক্ষুধা লাগলে ঠিকই চলে আসবে।
বিঃদ্রঃ উপরের এই কথা টুকু পরে জানতে পেরেছি।


স্যার, ওঠেন। ভোর হয়ে গেছে। বস আপনাকে ডেকে পাঠিয়েছেন। স্যার, উঠবেন না? এই যে আপনার চা। স্যার ওঠেন, আপনার চা ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে।
মাত্র আড়মোড়া দিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলাম আর ওমনি শুনতে পেলাম কে যেন বলছে, "এই ওঠ, ওঠ বলছি, ওঠ; এইহানে ঘুমানি বাইর করতাছি, খারা"। চোখ মেলে দেখি, একটা পুলিশ আমাকে শাসাচ্ছে, দু'একটা চড় থাপ্পড়ও ফ্রীতে দিল। ঘোরের মধ্যে থাকাতে কতক্ষণ কোনো কিছুই বুঝতে না পেরে হ্যাবলার মত কনস্টেবলের দিকে তাকিয়ে থাকলাম। ঘোর কাটতেই আমি উঠে লুঙ্গি গুছিয়ে ব্যাগে ভরছি আর পুলিশটাকে বলতে শুনছি, "যত্ত সব টোকাই মোকাই দিয়া দ্যাশটা ভইরা গেল, কুনো শান্তি নাই হ্যাগো জ্বালায়"। একটু দূরে বাকিরা "থ" মেরে দাঁড়িয়ে আছে। ওদের উপর আমার ভীষণ রাগ হল। কাছে গিয়ে বললাম, স্বার্থপরের মত তোরা একাই কেনো চলে এলি? আমাকে ফাঁদে ফেলে কি মজা দেখা হচ্ছিলো?
লিডারঃ তোকে অনেক বার ডেকেছি, কিন্তু এতোটা বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলি যে তুই উঠিস নি। তারপর শান্ত হলাম এবং ভাবলাম, ওরা হয়তো ঠিকই বলছে। সত্যিই তো বেঘোরে ঘুমাচ্ছিলাম, না হলে কি আর এমন স্বপ্ন দেখি। আমি বললাম, কিযে সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছিলাম, ঈশ.!...........ভেবেছিলাম ক্যাডার বুঝি হয়েই গেছি! পরে স্বপ্নের ব্যাপারটা খুলে বলতেই ওরা হাসিতে ফেটে পড়লো।

"আমি এক যাযাবর
আমার নাই ঠিকানা ঘর
আমার মনে আমার ব্যাথা
তোমার কি খবর?"

সদ্য হিট হওয়া বিপ্লবের এই গানটি গাইতে গাইতে আমরা চার জন হাঁটছি। মানুষ আমাদের দিকে হা করে তাকিয়ে থাকে, তারা মনে হয় ভাবে, "পুরাণ পাগলে ভাত পায় না, নতুন পাগলের আমদানি"। কিন্তু আমরা ভাবছি, হিরো মনে হয় হয়েই গেলাম।

অতপর আমরা চরম ক্ষুধায় পতিত হলাম। তখন সাড়ে ন'টা কি দশটা বাজে। একটা সস্তা হোটেলে নাস্তা করতে গেলাম এবং ডাল ভাজি সমেত দু'টো করে পরাটা খেলাম। তৃপ্তি পেলাম মাগার ক্ষুধা পুরোপুরি মিটলো না। মনে হয় ত্রিশ টাকার মত বিল হল। টাকা দিয়ে বাইরে এলাম।
লিডারঃ এখন কাজের কথায় আসা যাক। আমরা বললাম, সেটাই বরং ভালো। কারন টাকা পয়সাও শেষ হয়ে আসছে।
লিডারঃ আদাবরে আমার এক ফুফাতো ভাই থাকে, সে অনেকটা ক্যাডার টাইপের; তার কাছে গেলে কিছু একটা হতে পারে। চল সেখানে যাই। সম্মতি দেয়া ছাড়া কোনো উপায় নাই। অবশেষে আদাবরে এসে অনেক খোঁজা খুঁজি করে তাকে পাওয়া গেল।
সে আমাদের সমস্ত কথা শুনলো। এরপর তার সাথে যেতে বলল।
আমরা চুপচাপ তাকে অনুসরণ করলাম। সে একটা টিন শেড বাড়িতে নিয়ে গিয়ে একটা রুম খুলে দিয়ে সেখানে রেস্ট নিতে বলে চলে গেল। ক্লান্ত আমরা কোনো কথা না বাড়িয়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
বিকেল বেলা ছেলেটি আসলো। লিডার বলল, কি খবর ভাই?
ছেলেটি বলল, এইডা ঢাহা শহর। চাইলেই এইহানে গুন্ডামিও করা যায়না, বুঝলা ভাই। আমি সব জায়গায় খবর লাগাই দিছি, তয় কিছু দিন টাইম লাগবো। লিডার বলল, টাইম না হয় লাগলো তাতে ক্ষতি নাই, কিন্তু এই কয় দিন খাব কি?
ছেলেটি বলল, তরা এতো ছোড যে অটোও চালাইতে পারবিনা।
তয় এক কাম কর, তোগোরে হোটেলের কামে লাগায় দেই। কয় দিন হোটেলে কাম কর, হ্যার পর আমি সব ব্যবস্থা কইরা ফালাইতাছি। তাইলে আইজ তরা এইহানে থাক, আর কাইল সকাল থাইকা কামে লাইগা যা, বলে সে চলে গেল(অবশ্য রাতের খাবারের ব্যবস্থা ঐ ছেলেটি করেছিল, তবে পরিমানে খুব কম)। আমরা খাওয়া দাওয়া করে সেদিনের মত ঘুমিয়ে পড়লাম।

রাতে ভালো ঘুম হওয়াতে খুব ভোরে ঘুম ভাঙল। বাইরে বের হয়ে পড়লাম আমরা। সবাই মিলে অনেক গবেষণা করলাম যে, এটা কি হল; আসলাম ক্যাডার হতে এখন দেখি হোটেলের ওয়েটারও না বরং হাড়ি পাতিল আর টেবিল মোছার কাজ করতে হবে। এটা কি কোনো কথা হতে পারে?
এই সব ভাবতে ভাবতে আমরা অলরেডি ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন থেকে অনেক পিছিয়ে গেছি। সোহেল ও রিওন তো বলেই বসলো, চল বাড়ি ফিরে যাই। আমি আর লিডার আবার একটু শক্ত গোছের কিনা তাই বললাম, এর শেষ না দেখে যাওয়াটা কি ঠিক হবে? তাছাড়া আমরা তো বাড়িতে কালার হয়ে গেছি কিন্তু তোরা দু'জন তো কিছু একটা বলে তোদের বাবা মা কে ব্যাপারটা কাটিয়ে দিতে পারবি কিন্তু আমরা কি করবো?

হোটেলে কাজ করার ভয়ে আমরা (বিশেষ করে সোহেল ও রিওন) আর ঐ টিন শেড বাড়িতে ফিরে গেলাম না। ধীরে ধীরে শ্যামলী হয়ে কল্যানপুরের দিকে যাচ্ছি। কিন্তু কেন যাচ্ছি তা কেউ জানিনা। আশ্চর্য ব্যাপার এটা যে, আমরা কেউ কাউকে জিজ্ঞাসাও করছিনা। তখনই আমার প্রথম সন্দেহ হল যে, পোলাপানের ক্যাডার হওয়ার স্বপ্ন এখানেই খতম, এরা এখন কোনো মতে বাড়িতে যেতে পারলে বেঁচে যায়। তাই কল্যাণপুরের দিকে যাচ্ছে, তারপর সুযোগ বুঝে বলবে, "বাড়িতে ফিরে গেলেই কি ভাল হয়না।"

এদিকে সকাল বেলা নাস্তা ও ধুমপান বাবদ বাকি টাকাও শেষ। পকেটে আর একটা কানা কড়িও নাই। বাড়ি যে যাব সে জন্য টাকা লাগবে, সে টাকাও বা কোথায় পাব? সব মিলিয়ে একটা বিদিকিস্তি অবস্থা। ক্ষুধা আবার বিপুল বেগে ঘনীভূত। পৃথিবীতে যত খাবার আছে সব খাবার সামনে এলেও যেন নিমেষেই শেষ হয়ে যাবে।

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হচ্ছে। কখনো এখানে তো কখনো ওখানে দাঁড়িয়ে ব্যাপক গবেষনা করেও কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না। তো অবশেষে বাড়ি যাওয়ার ডিসিশনটাই ফাইনাল হল। গাবতলীতে দাঁড়িয়ে আছি, সামনে দেখি একটা বিরিয়ানীর দোকান, ভ্যানে করে রাইস আর ডিম বিক্রি হচ্ছে। সেই খাবারের মৌ মৌ গন্ধ ডাস্টবিনের দুর্গন্ধ কে ছাপিয়েও আমাদের নাকে এসে পৌঁছাচ্ছে। ক্ষিধে যেন আরও দ্বিগুণ বেগে আমাদের পেটকে আড়ষ্ঠ করে ফেলছে। খুব হায় হুতাস করছি আমরা। এমন সময় দেখি লিডার তার মানি ব্যাগ বের করে কি যেন খুঁজছে। এই দৃশ্য দেখে ঐ মুহূর্তে আমার মনে হল যেন বিনা পুলসিরাতে বেহেশ্তে যাচ্ছি।
অবশেষে মানি ব্যাগ থেকে পঞ্চাশ টাকা বের হয়ে আসলো। খুশিতে লিডার কে মাথায় নেব না ঘাড়ে ওঠাবো সবাই তাই ভাবছি। অতপর আমরা আর দেরি না করে দোকানটাতে গেলাম আর জিজ্ঞেস করলাম, প্লেট কত? লোকটি বলল, পচিশ টাকা প্লেট। বললাম দুই প্লেট দেন।
খাবার দিলে আমি আর লিডার একটা এবং সোহেল আর রিওন একটা প্লেট শেয়ার করলাম। বিশ্বাস করবেন না, খাবার যেন মধু ; নিমেষেই কোথায় যে চলে গেল টেরও পেলাম না। যাই হোক, টাকা দিয়ে চলে আসলাম গাবতলী বাস স্ট্যান্ডে।

এবারই ঘটলো লাইফের সবচেয়ে রোমাঞ্চকর ঘটনা।

চার জন মিলে অনেক চিন্তা ভাবনা করে অনেক গুলো আইডিয়া বের করলাম, তার মধ্যে আমার আইডিয়াটা সবার বেশ পছন্দ হল।
এই আইডিয়ার প্রথম পদক্ষেপ হল, আমরা যে কোনো একটা রংপুরের গাড়িতে উঠে যাব। এরপর কন্ট্রাক্টর যখন ভাড়া চাইবে তখন দেখা যাবে কি করা যায়? যদি হাইয়েস্ট খারাপ কোনো কিছু ঘটে, তাহলে হয়তো বাস থেকে নামিয়ে দেবে; মার তো আর দেবেনা। অবশেষে তাই করলাম। পড়ন্ত বিকেলে কোনো এক মফিজ গাড়িতে উঠে পড়লাম। যাচ্ছি তো যাচ্ছি। কন্ট্রাক্টর এখনো এসে টাকা চায়নি।
এদিকে আবার ঢাকা ছেড়ে চলে যেতেও অনেক খারাপ লাগছে। আজব শহর ঢাকা ছাড়ার দুঃখ টা সবচেয়ে বেশি লাগছিল আমার।
আমি আর লিডার হলে হয়তো থেকেই যেতাম, কারন অনেক কঠিন পরিস্থিতি মোকাবেলা করার অভিজ্ঞতা আমাদের আছে। কিন্তু সমস্যা হল বাকি দু'জন। তাছাড়া তারা আবার আমাদের মত এতটা বখে যায়নি। আর আমাদের ব্যাপারে আমাদের বাবা মা এতো ভাবেনা। কিন্তু ওদের বাবা মা সন্তানের শোকে এতক্ষণে হয়তো খাওয়া দাওয়া ছেড়ে দিয়ে বিলাপ করছেন। তাছাড়া এদের যদি আল্লাহ্‌ না করুক কিছু একটা হয়ে যায়, তার সম্পূর্ণ দায় ভার আমাদের ঘাড়ে এসে পড়বে। এ সব চিন্তা থেকেই মুলতঃ যাওয়ার ডিসিশন নেয়া।

গাড়ি যখন নবীনগরে, এমন সময় কন্ট্রাক্টর এসে ভাড়া চাইলো।
এমতাবস্থায় আমরা একে অন্যের মুখের দিকে তাকাচ্ছিলাম। আবার শোনা গেল, "কই যাইবা, ভাড়া দেও"।
লিডারঃ আসলে ভাই হয়েছে কি আমরা বড় একটা বিপদে পড়ে গেছি। বাড়ি রংপুরে, যেতে হবে কিন্তু কোনো টাকা পয়সা নাই যে ভাড়া দেব। কন্ট্রাক্টর বললঃ ঠিক আছে, মানুষের বিপদ আপদ আছে, সে জন্য একজন বা খুব বেশি হলে দু'জনকে নিয়ে যাওয়া যায় কিন্তু চারজনকে নিয়ে গেলে আমার চাকরী থাকবেনা। এই কথা শুনে আমরা পুরাই হতাশ, ঠিকই তো বলেছেন উনি। তবুও শেষ চেষ্টা হিসেবে আমরা সবাই মিলে আরেকবার বোঝানোর চেষ্টা করলাম কিন্তু কোনো কাজ হলনা বরং লোকটি আমাদের উপর রেগে গেল। শেষ পর্যন্ত চন্দ্রাতে এসে আমাদেরকে নামিয়ে দিল।

এখন কি করা যায়? ভাবতে ভাবতে হঠাৎ লিডার বলল, টাকা ছাড়া কোনো ভাবেই যাওয়া সম্ভব নয়। এরপর সে তার হাতের কেসিও ঘড়িটা খুলতে খুলতে একটা যন্ত্র পাতির দোকানের দিকে এগিয়ে চলছে। আমি বললাম, ভাই কি কর? সে বলল, "ঘড়িটা বিক্রি করে দেই, এতে যে টাকা হবে সেটাতে হয়তো যাওয়া সম্ভব"। একথা শুনে আমি আর চোখের পানি ধরে রাখতে পারলাম না। কতটা দ্বায়িত্ববান হলে এরকম উৎসর্গ করা যায়। সেই প্রথম থেকে সেই-ই আমাদেরকে বার বার হারিয়ে যাওয়া পথ খুঁজে দিচ্ছে। অথচ আমরা কিন্তু কেউ কাউকে কনভিঞ্চ করে এখানে আনিনি। সবাই স্বেচ্ছায় এসেছে।
যাই হোক, দোকানিকে ঘড়িটা দেখালে সে মাত্র পঞ্চাশ টাকা দিতে চায়। অথচ মার্কেটে এই ঘড়ির দাম রেট করা এবং ঘড়িটা ছিল অরিজিনাল কেসিও। এক দাম সাড়ে তিনশত। সাড়ে তিনশত না হোক সে তো না হলেও দেড়শ থেকে দুইশ টাকা দেবে। কিন্তু সে দিতে চায় পঞ্চাশ টাকা। এটা কিছু হল? বেশ কিছু দোকান দেখলেও এত সস্তায় বিক্রি করতে মন সায় দিলনা। তাহলে এখন কি করা যায়?

আবার আমি বললাম, এবার একটা কাজ করি, গাড়ির ভেতরে না উঠে ছাদে উঠি। তাহলে ব্যাপারটা ভিন্নও হতে পারে। যেই ভাবা সেই কাজ। এখনো সন্ধ্যা হয়নি, গোধূলী চলছে ঠিক এমনি এক সময়ে একটা গাড়ি এসে থামল, আর আমরা সেটার ছাদে উঠে পড়লাম। কিছুক্ষন পর বাস ছেড়ে দিল।হাওয়া খেতে খেতে হেলতে দুলতে এগিয়ে চললাম। এরপর প্রায় আধা ঘন্টা চলে গেল তারপর একজন ভাড়া নিতে এল। যথারীতি আবারও একি ডায়ালগ। কিছুতেই মানবেনা সে, অতপর লিডার তার হাত ঘড়িটা খুলে দিয়ে বলল, ভাই আমরা সত্যিই খুব বিপদের মধ্যে আছি, এই ঘড়িটা ছাড়া আর কিছু দেয়ার সামর্থ্য এই মুহূর্তে আমাদের নাই। অবশেষে বান্দার মন গললো। সে রাজী হয়ে গেল এবং পকেট খরচ স্বরূপ তাকে দশ টাকা ধরিয়ে দিল। এতেই আমরা অনেক খুশি হলাম। যাই হোক বাড়িতে যাওয়া পর্যন্ত আর চিন্তা করতে হচ্ছেনা।

দমকা বাতাসের ঝাপ্টা শরীরের কাপড়কে উড়িয়ে নিয়ে বাতাস ভেদ করে আমাদের গাড়ি এগিয়ে চলছে। বাসের ছাদে অনেকে শুয়ে পড়েছে, আমরাও শোয়ার যায়গা করার চেষ্টা করছি। তারপর এক সময় শুয়েও পড়লাম। প্রবল বাতাসে খুব আরাম হচ্ছিল, সেই আরামে কখন যেন ঘুমিয়ে পড়লাম। গাড়িও বিপুল বেগে এগিয়ে চলছে...............।

কার ডাকে যেন ঘুম ভেঙ্গে গেল। চোখ খুলে তাকিয়েই যা দেখলাম তা ছিল অসাধারন এক অভিজ্ঞতা। আমরা তখন যমুনা ব্রীজের উপরে। নিচে নদী ভরা স্বচ্ছ পানি। আর আকাশ ভরা তারার মেলা। মেঘ হীন স্বচ্ছ আকাশে যেন তারাদের হাঁট বসেছে। আবার সেই তারার আলো নদীর পানিতে মিশে একাকার হয়ে গেছে। এ রকম একটা দৃশ্য মানুষের মনকে যে কতটা ভাল করে দিতে পারে, না দেখলে তা কোনো ভাবেই রিয়ালাইজ করা সম্ভব না। কোটি কোটি তারা যেন তাদের আলোকে ছড়িয়ে দেয়ার প্রতিযোগিতা করছে। সপ্তর্ষি মন্ডল টাকে স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম। সাতটি তারা যেন কোনো এক মোহময় বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে তাদের সরব উপস্থিতি বিশ্বলোককে জানিয়ে দিচ্ছে। তারা দেখার মধ্যে যে একটা নেশা নেশা ব্যাপার আছে সেদিনই তা প্রথম বুঝতে পারলাম। আর তাই তারাদের সাথে সাথে আমিও হারিয়ে গেলাম দূর অজানায়..................।

হঠাৎ কি একটা গ্যাঞ্জামের কারনে ঘুমটা ভেঙ্গে গেল। দেখি লিডার হেলপারের সাথে বাকবিতন্ডায় ব্যস্ত। ব্যাপারটা একটু বোঝার চেষ্টা করলাম এবং যা বুঝলাম তাতে মেজাজ একদম চরমে উঠে গেল। স্টেশনটা ছিল বগুড়া, গাড়ির লাস্ট স্টপেজ নাকি এটাই। গাড়িতে ওঠার সময় কথা হল যে গাড়িটা রংপুরে যাবে আর এখন বলছে অন্য কথা। হেলপার কে ধরলে হেলপার বলল, আমাকে এ ব্যাপারে বলে লাভ হবেনা কারন আমি ভাড়ার ব্যাপারটা দেখি না, কন্ট্রাক্টরকে বলেন। কিন্তু তাকে খুঁজে পাওয়া গেল না। অনেককে ব্যাপারটা বললাম, কেউ কানেই তুললো না। হয়তো আমরা ছোট হওয়ার কারনে এরকমটা হল। অল্প কিছুক্ষনের মধ্যে গাড়ি ফাঁকা হয়ে গেল। অতএব আবারো ঝামেলায় পড়ে গেলাম।

এখন কি করা যায়? রাত তখন এগারটার মত বাজে। ওদিকে অনেক গুলো চায়ের দোকান খোলা। তো আমরা একটা চায়ের দোকানে গিয়ে বসলাম। অনেকেই চা খাচ্ছে। এটা দেখেও কেন জানি খুব লোভ হল। টাকা পয়সা না থাকলে মনে হয় এমনটাই হয়। লোভ সংবরণ করতে না পেরে অবশেষে অবশিষ্ট টাকার চা ও সিগারেট অর্ডার দেয়া হল। খুব মজা করে তা পান করলাম। খাওয়া শেষে আলোচনা শুরু হল যে এখন কিভাবে কি কারা যায়।

হঠাৎ করে খেয়াল করলাম যে ঢাকা থেকে অনেক কোচ এসে এই স্ট্যান্ডে যাত্রী নামাচ্ছে আবার সেটা রংপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাচ্ছে। এটা অবশ্য গাড়ির পিছনে 'ঢাকা-রংপুর' লেখা দেখে বুঝলাম। আরও খেয়াল করলাম যে প্রায় প্রত্যেকটা গাড়ির পিছনে গাড়ির ছাদে ওঠার সিঁড়ি আছে। তখন আমি উপস্থিত সবাইকে বললাম, যখন একটা বাস এসে যাত্রী নামিয়ে আবার ছাড়বে ঠিক সেই মুহূর্তে আমরা গাড়ির পিছনের সিড়িতে উঠে যাব, আর ঐ সিঁড়ি ধরে ঝুলতে ঝুলতে দিব্যি গন্তব্যে পৌছনো যাবে। এ জন্য অবশ্য আগে থেকে প্রস্তুত হয়ে থাকতে হবে। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লিডার বলে উঠলো, "ডান"। খুবই ভাল বুদ্ধি, একটু রিস্ক আছে কিন্তু এছাড়া আর উপায়ও নাই। অবশেষে সবাই রাজী হওয়াতে আমরা পজিশন নিয়ে ওঁৎ পেতে থাকলাম। এর কিছুক্ষণ পরেই একটি গাড়ি এসে দাঁড়াল। যাত্রী নামিয়ে জাস্ট ছেড়ে দিতেই আমরা দৌড়ে গিয়ে উঠে গেলাম। কোনো সমস্যাই হলনা। বরং পুরো ব্যাপারটা এখন অ্যাডভেঞ্চারাস হয়ে উঠেছে। গাড়ি সমানে টেনে যাচ্ছে। সিঁড়ি দিয়ে আমরা ইচ্ছে করলে ছাদে উঠতে পারতাম, কিন্তু তা করলাম না। কারন সেটা করলে ড্রাইভার ব্যাক মিররের সাহায্যে দেখে ফেলতে পারে। এভাবেই মহাস্থান গড় পর্যন্ত চলে এলে সেই স্ট্যান্ডে গাড়ি ব্রেক করা হল। আমরা ভাবলাম হয়তো যাত্রি নামাবে, তাই ঝুলেই থাকলাম, কারন স্ট্যান্ডে মানুষ নেই বললেই চলে, কেউ আমাদের দেখবেনা।
হঠাৎ একটা মানুষ এসে আমাদের বলল, এই তোরা কেরে? আর সঙ্গে সঙ্গে আমরা সেখান থেকে লাফ দিয়ে পগার পার। হেলপার কি যেন বলতে বলতে চলে গেল। এরপরেই গাড়িটি চলে গেল। অতপর জনমানব হীন এই নির্জন স্টেশনে আমরা চারটি প্রাণী পড়ে রইলাম।


আমরা যেখানটায় দাঁড়িয়ে ছিলাম তার একটু দূরে একটা আলো দেখতে পাচ্ছিলাম, তো আলো বরাবর এগিয়ে গেলাম। গিয়ে দেখি একটা ছোট হোটেল। রাতের বেলা ট্রাকের ড্রাইভাররা যাত্রা পথে এখানে ভাত খায়, তারপর আবার রওনা করে। যথারীতি হোটেলের পাশেই একটা পান বিড়ির দোকান।
অনেক বড় সময় পেরিয়ে গেল কিন্তু ধুমপান করা হয়নি। পকেটে তো আর অবশিষ্ট কিছু নেই যা দিয়ে সিগারেট টানবো। এদিকে আবার রিওনের নেশা চরমে উঠেছে। তার এখন টানতেই হবে। এরপর সে যা করল তা দেখে এই ভরা দুঃখের দিনেও হাসি আটকাতে পারলাম না।
সে পান বিড়ির দোকানটাতে গিয়ে দোকানদারকে বলল, "ভাই, একটা বিড়ি দেন না"।
দোকানদারের মুখ যে এত খারাপ তা জানলে মনে হয় রিওন না খেয়ে মরতো তবু তার কাছে এক ফোঁটা পানিও চাইতোনা।
দোকানদার বলল, "বিড়ি কি তোর বাপে অ্যাটেকোনা আসি মোক দিয়্যা যায়", যা ভাগ।
ব্যাচারার মুখের দিকে তাকানো যাচ্ছিল না, এতটাই শকড হয়েছে।

হঠাৎ আবার আমার চোখে পড়ল, একটা ট্রাক কেন জানি দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাকটা বডি লেভেলে লোডেড, উপরটা ঢাকা । মাথায় নতুন আইডিয়া আসাতে সবার কন্সেন্ট্রেশনে নক করলাম এবং প্ল্যান বললাম।
এবার প্ল্যান অনুযায়ী ওঁৎ পেতে থাকলাম।
কিছুক্ষণ পর দেখি দু'টো লোক হোটেল থেকে বেরিয়ে আসছে, দেখে মনে হচ্ছে এরাই হল ট্রাকের ড্রাইভার ও হেলপার। হলও তাই। ড্রাইভার ট্রাকে উঠে স্টার্ট দিল, হেলপারও উঠে গেল এবং গাড়ি ছাড়ার সাথে সাথেই আমরা পূর্বের ন্যায় আবারও ট্রাকটার উপর চড়াও হলাম আর সবাই উঠতে সক্ষম হলাম।

ট্রাকে উঠে বুঝতে পারলাম যে এটা পাথরের ট্রাক। উপরে কার্পেটের মত শক্ত একটা কাপড় না কি জানি দিয়ে ঢাকা। যাই হোক এটার কারনেই হয়তো পাথর গুলো আমাদের কোনো অসুবিধে করতে পারলো না। এরপর চারজনে সিরিয়ালি শুয়ে পড়লাম। শুয়ে শুয়ে আকাশ দেখা ছাড়া কোনো কাজ ছিল না। এমনিতেই সারা দিনের অ্যাডভেঞ্চারে ক্লান্ত আমরা সবাই। এভাবে কতক্ষণ যে আকাশ দেখেছি তা জানিনা।কখন যেন ঘুমিয়ে গেছি.........।

হেলপারের ডাকে ঘুম ভাঙল। ঘুম থেকে উঠে দেখি কেউ নাই। অতপর নিচে তাকিয়ে দেখি সবাই দাঁড়িয়ে আছে আমার অপেক্ষাতে। হেলপার বিড় বিড় করে কি যেন বলছে আমাকে। আমি সেদিকে কান না দিয়ে ট্রাকের কর্নারে এসে লাফিয়ে নিচে নামলাম। নেমেই সবাই হাঁটা ধরলাম। ড্রাইভার আর হেলপার আমাদের উদ্দেশ্যে কি যেন বলছে, সে দিকে আমাদের কান নেই।

এভাবে কিছুক্ষণ হাটার পর বুঝতে পারলাম যে আমরা বর্তমান প্রধান মন্ত্রী শেখ হাছিনার শ্বশুর বাড়ির এলাকায় এসে পড়েছি। ঐ স্ট্যান্ডটাকে ধাপ বলে। পরের স্টেশনটাই পীরগঞ্জ।
অনেক রাত। আশে পাশে একটা কুকুরও নাই। গহীন নির্জন। মাঝে মাঝে শুধু নাইট কোচ গুলো দ্রুত বেগে আমাদেরকে পাশ কাটিয়ে চলে যাচ্ছে।

হাটতে হাঁটতে দূরে একটা আলো দেখা গেলো। মনে হচ্ছে কোনো মুদি দোকান হবে। সাহস পেলাম সামনে এগিয়ে যাওয়ার। দ্রুত হেটে প্রায় আধা মাইল রাস্তা অতিক্রম করার পর আমরা সেখানে উপস্থিত হলাম। হ্যাঁ, ঠিকই ধরেছি। ওটা আসলেই একটা মুদি দোকান ছিল। যাই হোক, দোকানটাতে দাঁড়ালাম আর ওমনি ঘটলো আর এক কাহিনী।
এত রাতে একসাথে চারটা ছেলেকে দেখে দোকানদার একটু ঘাবড়ালো। মনে হল চটপট করে ক্যাশ বাক্সে তালা লাগাচ্ছে। এমন অবস্থা দেখে আমরা তাকে আশ্বস্ত করলাম যে, আমরা ক্ষতিকর কেউ না, আপনি নিশ্চিন্তে থাকতে পারেন। এরপর আমরা তাকে ঢাকা থেকে আসার ঘটনা গুলো বললাম। সে শুনে সহমর্মিতা প্রকাশ করলো। ও হ্যাঁ, আমরা তার কাছে সময় জানতে চাইলে সে বলল এখন দেড়টা বাজে।

আমাদের কাছে কোনো টাকা পয়সা নাই শুনে সে আমাদেরকে যথেষ্ট আপ্যায়ন করলো। চা বিস্কিট খেতে খেতে আমরা আলোচনা করছিলাম যে এখন কি করণীয়।
লিডারঃ সামনে অর্থাৎ পীরগঞ্জে আমার এক বোনের বাড়ি আছে, বাকি পথ টুকু হেঁটে গেলে রাতটা ওখানেই কাটিয়ে দেয়া যেতে পারে। আমি বললাম, ঠিক আছে। কিন্তু গোঁ ধরে বসে রইলো বাকি দু'জন। হাঁটতে হাঁটতে তাদের পায়ে নাকি ব্যথা ধরে গেছে, তারা আর এক চুল পরিমান নড়তেও রাজী না।
লিডারঃ তাহলে এখান থেকে বাড়ি অবধি যাব কিভাবে? তারা বলল, কিভাবে যাব জানিনা, তবে আমরা আর পারছিনা। লেও ঠ্যালা। এখন কি করা যায়?

পরে আমি আর লিডার সিদ্ধান্ত নিলাম, আমরা যাবই; তারা যাক আর না যাক। এই বলে হাঁটা শুরু করে দিলাম। দোকানদার শুধু আমাদের কাহিনী দেখছে, কিছু বলছেনা। অতপর দোকানকে পেছনে ফেলে আমরা দু'জন হাঁটতে থাকলাম, প্রায় অনেক দূর চলেও এলাম, কিন্তু তারা আর এলো না। ভেবেছিলাম হয়তো শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে আমাদের অনুসরণ করবে। তো তারা যখন এলো না, তখন আর আশা করে লাভ নাই। অনেক দায়িত্ব পালন করা হয়েছে, আর এখন তো বাড়ি কাছাকাছি, তো এবারের মত ওদের দায়িত্ব ওরাই নিক।

অনেক হাঁটার পর আমি লিডার কে বললাম, "ভাই, আর কত দূর?" লিডার বলল, ঐ যে দূরে আলো গুলো দেখা যাচ্ছে, ঐ বাড়ি গুলোই আমার বোনের বাসা। মনে হচ্ছিলো খুব বেশি দূরে না, কিন্তু হাঁটতে গিয়ে যেন আর পথ ফুরোচ্ছেনা। প্রায় এক ঘন্টার বেশি সময় হাটার পর আমরা পীরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে এসে পৌঁছলাম। এরপর বাস স্ট্যান্ড থেকে পশ্চিম দিকের রাস্তা ধরে ঐ বাড়ির দিকে এগিয়ে চললাম। এবারও প্রায় পনের মিনিট হাঁটার পর ঐ বাড়িতে এসে পউছলাম।তখনই শুরু হল আরেক বিপত্তি।


কোথা থেকে একঝাঁক কুকুর এসে আমাদের ঘিরে ফেললো। পুরো চীৎকার চেঁচামেচিতে পরিবেশ গরম করে ফেললো। লিডার জোরে জোরে তার বোনকে ডাকতে শুরু করলো। যাই হোক, একটু পরেই তার বোন এসে আমাদেরকে রক্ষা করলো।
বোনঃ তুই এত রাতে?
লিডারঃ সে অনেক কাহিনী বোন।
বোনঃ ঠিক আছে কাহিনী পরে হবে ভেতরে আয়।
উল্লেখ্য যে লিডারের বোনের বাসায় ঐ সময়ে কন্সট্রাকশনের কাজ চলছিলো। তাই ছোট্ট একটা রুমে ওরা হাজবেন্ড ওয়াইফ দুই ছেলেমেয়ে নিয়ে থাকে। কিন্তু কপাল ভালো যে ঐ দিন দুলাভাই বাড়িতে ছিল না।
বোনঃ যা তোরা হাত মুখ ধুয়ে আয়, তোর দুলাভাই না আশাতে অল্প কিছু ভাত বেঁচেছে, সেগুলোই খা। এখন এত রাতে আর কি করবো।
লিডারঃ না না বোন, কিছু করতে হবে না। আমাদের খিধে নেই। জাস্ট হাত মুখ ধুয়ে শুয়ে পড়ি।
এরপর হাত মুখ ধুতে গেলাম, এসে দেখি খাবার একেবারে রেডি, আর না করার উপায় নাই।
বোনঃ চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তোদের অবস্থা, নে নে খেয়ে নে, বেশি কথা বলতে হবেনা।
কি আর করা, অগত্যা আমরা খাওয়া শুরু করলাম। শুধু আলু ভর্তা, একটা ডিম ভাজি আর এক বোল (মাঝারি সাইজের)ভাত।
কি আর বলবো, ক্ষুধার্ত হায়েনা যখন অনেক দিনের ক্ষুধা নিয়ে হরিণ শাবক দেখে, তখন যে অবস্থা হয়, আমাদেরও সে অবস্থা। এক বোল ভাত যে কোন দিক দিয়ে হারিয়ে গেলো অন্য মানুষ বোঝা তো দূরে থাক নিজেরাই বুঝতে পারলাম না।
এ রকম একটা মারদাঙ্গা ক্ষিধে দেখে তো আপা একদম টাস্কিত। তাই খাওয়া শেষ হলে সে জিজ্ঞেস করলো, তোদের কাহিনীটা কি বলতো।
লিডারঃ আপা, আসলে আমরা খেলতে এসেছিলাম ভাড়াটে খেলোয়াড় হিসেবে। তো যে দলের হয়ে খেলতে এসেছি, সেই দলটা জিততে পারেনি। আর হায়ারিং এর টাকাও দেয় নি। অবশেষে তাদের সাথে বারগেইন করলে তারা আমাদের আটকে রাখে। পরে রাত এগারটার দিকে ছেড়ে দেয়। তখন আমরা ভয়ানক বিপদে পড়ে যাই। তাছাড়া আমাদের কাছে ভাড়াই নাই যে আমরা বাড়ি যাব। উল্লেখ্য যে, ঐ সময়ে লিডার খুব ভাল ক্রিকেট খেলতো, প্রায়ই ওকে বিভিন্ন এলাকা ভিত্তিক টিম হায়ার করে নিয়ে যেত। এটা শুধু ওর আত্মীয় স্বজন নয় বরং পুরো মিঠাপুকুর জানে।অবশেষে রাত আর না বাড়িয়ে আমরা ঘুমিয়ে পড়লাম।

ঘুম যখন ভাঙল তখন ঘড়িতে সাড়ে ন'টা বাজে। আপা খাওয়ার জন্য বড় ভাগ্নেকে আমাদের ডাকতে পাঠিয়েছেন। পরে হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম। মাথাটাই খারাপ হয়ে গেল আয়োজন দেখে। সকাল বেলা দুলাভাই এসে শোনে যে আমরা এসেছি, তৎক্ষণাৎ তিনি বাজারে গেলেন। আর আপা সকাল থেকেই বিরামহীন ভাবে রান্না করে এত আয়োজন করলেন।
যাই হোক, তৃপ্তি ভরে খেলাম সবাই। খেয়ে একটু রেস্ট করলাম। তারপর বিদায়ের জন্য আপার কাছে গেলাম। আপা অনেক করে থাকতে বললেও আর তাদের কে কষ্ট দিতে মন সায় দিচ্ছিলো না। এমনিতেই বাড়ির কাজ চলায় অনেক কষ্টে মষ্টে তাদের রাত যাপন করতে হচ্ছে। সুন্দর ভাবে বিদায় নিলাম, বিদায় বেলায় আপা ভাড়া বাবদ চল্লিশ টাকা দিলেন। এরপর আমরা মিঠাপুকুরের উদ্দেশ্য বেরিয়ে পড়লাম।

পীরগঞ্জ বাস স্ট্যান্ড পর্যন্ত ভাগ্নে এগিয়ে দিয়ে আসলো। এরপর সেখানে চা সিগারেট খেয়ে ভাগ্নেকে বিদায় জানিয়ে আমরা বাসে উঠে পড়লাম। তখন থেকেই মনের ভিতর একটাই চিন্তা যে বাকি দু'জনের কি হল!? এর মধ্যেই কন্ট্রাক্টর ভাড়া নিতে আসলো, আর এই প্রথম আমরা কন্ট্রাক্টর কে টাকায় ভাড়া দিলাম। অবশেষে ঘন্টা খানেকের মধ্যেই আমরা মিঠাপুকুরের এরিয়ায় ঢুকে পড়লাম............।


শেষ কথাঃ
সোহেল ও রিওন ভোর অবধি ঐ দোকানেই বসে ছিল। দোকানদার তাদের সময় কাটানোর জন্য তাদের প্রতি সহানুভূতি শীল হয়ে সারা রাত সাথে ছিল এবং চা সিগারেট ফ্রি তে খাইয়েছে। পরে ভোর বেলা পত্রিকার গাড়িতে তুলে দিলে তারা মিঠাপুকুরে চলে আসে।



সমাপ্ত



৩টি মন্তব্য ৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। রোড জ্যাম ইন ভিয়েতনাম

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৫ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৭



আমার ধারনা ছিল জটিল জ্যাম শুধু বাংলাদেশেই লাগে । কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিল । ভিয়েতনামে এরকম জটিলতর জ্যাম নিত্য দিনের ঘটনা । ছবিটি খেয়াল করলে দেখবেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×