প্রিয় বান্ধবী - ৪
সকালে কখনই আমাদের আড্ডা দেবার সময় হতো না। দুপুরের আড্ডাটাও তেমন দীর্ঘ হতোনা। সন্ধ্যার পর ক্যাফেটেরিয়ায় আড্ডাটাই জমতো বেশী। ডিনার শেষে আমাদের আড্ডায় আরও অনেকেই যোগ দিত। সবার সাথে আলাপ, পরিচয় ও বন্ধুত্বের মাধ্যমে এক জম্পেস আড্ডা। একটু রাত হলে আড্ডাটা তখন পাশের টিভি রুমে হতো। লাইব্রেরীর রিজার্ভ স্টাডি রুমে, টেনিসকোর্টে, সিইসি’র লবী সবখানেই আমাদের আড্ডা চলতো। কোন নির্ধারিত টপিক ছিলনা আড্ডার বিষয় হিসেবে। সবচেয়ে মজা হতো লাওস, কম্বোডিয়া আর ভিয়েতনামের বন্ধুদের ইংরেজী বলা নিয়ে। কেউ কেউ “সাব কমান্ডকে” বলতো “সুব কমান্দ”। কেউবা “জিওগ্রাফী” কে বলতো “গিওগ্রাফী”। ক্লাশেও ওদের কথা শুনে আমরা বহু কস্টে হাসি চেপে রাখতাম। অ্যান (ভিয়েতনাম) টীচারের সাথে কথা বলার সময় আমার দিকে তাকিয়ে হেসে ফেলতো। অনেক সময় আমতা আমতা করে কিছুই বলতে পারতো না। খুব মজা লাগতো। ইনোসেন্ট একটা মেয়ে। লম্বা, ফর্সা। লজ্জা পেলে গাল দুটো টুকটুকে লাল হয়ে যেত।
আমাদের আড্ডার বিষয় ছিল দেশ, সমাজ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, রাজনীতি, ঘুষ ও চুরি থেকে ধর্ম লেখাপড়া, প্রেম, ভালবাসা, বিয়ে ইত্যাদি। কার কেমন ছেলে বা মেয়ে পছন্দ সে নিয়েও কথা হতো। অনেক বিষয় নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হতো। আড্ডা একবার শুরু হলে কখন শেষ হবে তার ঠিক ছিলনা। কারও সেটা খেয়াল থাকতো না। রাত ১২টা, ১টা, ২টা পাড় হয়ে গেলে তখন হুশ হতো সকালে ক্লাশ আছে। ঘুমাতে হবে। সময় কিভাবে কেটে যেত টের পেতাম না।
এআইটি’তে যে সকল মেয়েদের আমি বন্ধু বা ক্লাশেমট হিসেবে পেয়েছি তারা সবাই মন ও মননে অসাধারণ, ব্যক্তিত্বসম্পন্ন এবং নিজ গুনে সেরা। এআইটি’র শিক্ষা কার্যক্রম বা প্রোগ্রাম/কোর্স শুরুর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সবাই তারা নিজ নিজ দেশের প্রতিনিধিত্বকারী। সকলেই সেদিন স্টেজ শো’তে অংশ নিয়েছিল। আমি নিজেও ছিলাম একজন প্রতিনিধিত্বকারী। সৌন্দর্যের বিচারে তারা এআইটি’র সেরাদের সেরা। দৈবক্রমে চীনা মেয়েদের মধ্যে সবচেয়ে সুন্দরী মেয়েটি ছিল আমার ঘনিষ্ঠ বান্ধবী। ওর নাম ওয়েন্ডি। আমার ক্লাশমেট। এ্যাসাইনমেন্টের অনেক কাজ আমরা দুজন একসাথে করেছি।
ওর সৌন্দর্য ও ব্যক্তিত্বের প্রতি আমার ভাললাগার কথাটা আমি অকপটে ওকে জানিয়েছিলাম। প্রথমদিকে তার মধ্যে ছেলেদের সাথে মেশা বা তাদের সাথে কথা বলায় তেমন একটা আগ্রহ আছে বলে মনে হয়নি। এমন কী ওর নিজের দেশের ছেলেদের সাথেও খুব একটা কথা বলতো না। ভীষণ চাপা প্রকৃতিএ মেয়ে। কথা বলায় কেমন একটা জড়তা লক্ষ্য করেছি। এমনিতেও আচার-আচরণে ও ব্যবহারে ওয়েন্ডি ছিল অন্যদের চেয়ে একটু আলাদা। আর এই কারনেই ওকে বেশী ভাললাগতো।
চাইনীজ মেয়েদের সম্পর্কে আমার কখনই তেমন পজিটিভ ধারণা ছিল না। ভাললাগা রোগটা যেহেতু ছোঁয়াচে তাই ওকে কিছুতেই এড়ানো গেল না। ওর আকর্ষণীয় ফিগার, সুন্দর ও সুশ্রী চেহারা, সহজ ও সরল অভিব্যক্তি এবং বন্ধুত্বপূর্ণ মেলামেশায় আমি মুগ্ধ হলাম। ওয়েন্ডীর প্রতি আকর্ষণ ও মেলামেশা দিন দিন ঘনিষ্ঠ হলো। সবার চোখেই ব্যাপারটা সহনীয় পর্যায়েই ছিল। সেও কেন জানিনা তার কিছু বান্ধী ও আমি ছাড়া ক্যাম্পাসের আর কারো সাথে মিশতো না। সবাই ভাবতো ওয়েন্ডি ভীষণ অহংকারী। শুধু আমি জানতাম ও কী এবং কেমন ধরনের মেয়ে।
চলবে-