somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

প্রমথেশ দেব চৌধুরীঃ সমাজব্রতই ছিলো একমাত্র ধ্যান

০৪ ঠা আগস্ট, ২০০৭ সকাল ১১:৪৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জন্ম ও মৃত্যু চিরন্তন সত্য। তবুও মৃত্যুর পর কিছু মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে। তেমনি একজন প্রমথেশ দেব চৌধুরী। ফনি চৌধুরী নামেই পরিচিত ছিলেন সকল মহলে। তিনি ছিলেন একাধারে বহুগুণের অধিকারী। রাজনীতি, অর্থনীতি,ধর্মীয়নীতি, সমাজনীতি, সবকিছুতেই ছিলেন তিনি। ছিলেন কর্মউদ্যোমী, সুদৃঢ় সাংগঠনিক শক্তি, সৎ সাহস ও প্রখর স্মরণ শক্তির অধিকারী।

স্বাধীনতা সংগ্রামেও তার ভূমিকা ছিল একজন সফল সংগঠক হিসেবে। অসহযোগ আন্দোলন থেকে স্বাধীনতা সংগ্রাম ও পরবর্তী বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধের চেতনা, গণতন্ত্র, রাজনীতির সুষ্ঠু পরিবেশ নিয়েও চিন্তা করতেন তিনি। যুদ্ধ পরবর্তী স্বাধীন দেশে শরনার্থীদের পুনর্বাসন ও ত্রাণবিতরণেও বলিষ্ঠ ভূমিকা রেখেছিলেন। শ্রীমঙ্গল শহরের পোষ্ট অফিস রোডে ১৯৩৬ সালে ২১ শে আগষ্ট এক ঐতিহ্যবাহী পরিবারে জন্ম গ্রহণ করেছিলেন তিনি। ছাত্র জীবন থেকেই সমাজকর্মসহ সকল কাজের সাথে জড়িত থাকায় শিক্ষা ক্ষেত্রে বেশিদূর এগোতে পারেন নি। তবুও প্রাতিষ্ঠানিক জ্ঞান না থাকলেও, প্রকৃতিগত ও অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞানই তাকে আরোহণ করেছিলো খ্যাতির শীর্ষে।


একজন সফল ক্রীড়া সংগঠক ও সংস্কৃতিসেবী হিসেবে তার ব্যাপক পরিচিতি ছিলো। আজকের মতো নাট্যশিল্পের এতো উন্নতী ছিলো না যখন, তখন গ্রাম বাংলায় বসতো যাত্রাপালার ধুম, সেই সময়ের একজন অপেশাদার যাত্রাভিনেতা ছিলেন তিনি। জীবদ্দশায় তিনি তার সাধ্যমতো অন্যের সেবা করেছেন, সেবা করারা চেষ্টা করেছেন। তিনি ছিলেন আমৃত্যু একজন সেবাব্রতী, মানব কল্যাণমুখী, জাতি ধর্ম নির্বিশেষে কতো মানুষ যে তার কাছ থেকে উপকৃত হয়েছেন তার কোন সীমা নেই। নিজের চেষ্টায় তিনি বহু কন্যা দায়গ্রস্থ পিতা-মাতাকে দায় মুক্ত করেছেন। অনেক অভাবগ্রস্থ বিধবা ও অনাথ শিশুকে গ্রাসাচ্ছাদনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন।


নিজে না পাড়লে অন্যের কাছ থেকে এনে সাহায্য করেছেন গরিব অসহায় মানুষজনকে। মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য এই বাণীকে নিজ জীবনের আদর্শ হিসেবে বেছে নিয়েছিলেন তিনি। তাইতো অন্যের উপকার করে তিনি তৃপ্তি পেতেন, এতেই ছিলো তার আনন্দ। তিনি অনেকগুলো প্রতিষ্ঠানের চালিকাশক্তি ছিলেন। উপজেলার প্রতিটি সার্বজনীন দেবালয়ের সঙ্গে তিনি ছিলেন অতপ্রতোভাবে জড়িত। বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ শ্রীমঙ্গল শাখা, হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদের শ্রীমঙ্গল শাখার প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক ছিলেন তিনি। পরবর্তীতে এ’দুটি সংগঠনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সাহসিকতার সাথে। মৌলভীবাজার জেলা পূজা উদযাপন পরিষদ, সিলেট বিভাগীয় হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিষ্ঠান ঐক্য পরিষদ ও এদের কেন্দ্রীয় সংগঠনে তার পরিচিতি ছিলো শ্রীমঙ্গলের ফনিদা নামেই।

সামজ-সচেতনও মানবিক মূল্যবোধই তাকে উদ্বুদ্ধ করেছিলো এতসব সামাজিক কর্মকান্ডের সাথে নিজেকে জড়িত রাখতে। যা নিরোধ, চু শিবির এ সবই যেন ছিলো তার নিজের চিকিৎসা। আশির দশকের প্রথমদিক থেকে ২০০৫ দীর্ঘ ২৫ বছর শ্রীমঙ্গলে চু শিবির পরিচালিত হয়েছে তারই প্রত্য তত্ত্বাবধায়নে। বাংলাদেশ জাতীয় যা নিরোধ সমিতি (নাটাব) শ্রীমঙ্গল এর তিনি ছিলেন প্রতিষ্ঠাতা সম্পাদক। নাটাব কেন্দ্রীয় কমিটি কতৃক তিনি তার সেবার পুরষ্কার স্বরূপ আজীবন সম্মাননা পদকে ভূষিত হয়েছিলেন। তিনি রামকৃষ্ণ সেবাশ্রমের সঙ্গে জড়িত ছিলেন ছোটকাল থেকেই। প্রতিদিনই তাকে একবার না একবার তাকে মিশনে আসতেই হতো। বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় পরপর তিনবার রামকৃষ্ণ সেবাশ্রম পরিচালনা পরিষদের সাধারণ সম্পাদক নির্বচিত হয়েছিলেন তিনি। তার কর্ম কুশলতা, নিষ্টা ও সততাই তাকে এ পদলাভের যোগ্য করে তুলেছিলো।

মৃত্যুর দু’দিন আগে নাটাব কতৃক আজীবন সম্মাননা পদক গ্রহণের জন্য ঢাকা গিয়েছিলেন তিনি। উঠেছিলেন ঢাকা রামকৃষ্ণ মিশনের ২নং গেষ্ট রুমে। মিশনকে ভালোবাসার নিদর্শন স্বরূপ শেষ শয্যা পেতেছিলেন রামকৃষ্ণ মিশনেই। এই নির্ভিক সমাজসেবী ৬৮ বছর বয়সে তার বর্ণাঢ্য জীবনের ইতি টেনেছিলেন সফলতার সাথেই। তিনি এমন একজন মানুষ ছিলেন যার নিজের কোন কাজ না থাকলেও তিনি থাকতেন সর্বদা কাজে ব্যস্ত। নিজে বিয়ে করেন নি, নিজের কোন চাকুরী ছিলোনা, ছিলোনা কোন ব্যবসা। তবুও সারাণই থাকতেন কর্মতৎপর। সমাজব্রতই ছিলো তার একমাত্র ধ্যান। আর এর যথার্থ প্রমাণ দিয়েছিলেন তিনি মৃত্যুর মধ্যে দিয়েই। তার মৃত্যুতে কেঁদে ছিলো পরিবার-পরিজন ছাড়াও বহু হিতাকাঙ্কি, আত্মজন। সেদিন তার মৃত্যু সংবাদ শুনে সিলেট, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, কমলগঞ্জ থেকে ছুটে এসেছিলেন তার হিতৈষীরা, সমাজ ব্যক্তিত্ত্বরা জানিয়েছিলো শেষ শ্রদ্ধা। ধর্ম-বর্ণ, শত্রু-মিত্র ভেদাভেদ ভুলে সবাই শরীক হয়েছিলো শব যাত্রায়। যে কারো বিপদে-সংকটে, উৎসবে যোগ দিয়ে সহযোগিতার হস্ত প্রসারিত করে প্রমাণ করতেন, তিনি একজন শুভানুধ্যায়ী। তিনি ছিলেন প্রকৃতপইে সত্যিকারের নেতা।

তার মৃত্যুতে মৌলভীবাজার জেলা তথা গোটা সিলেট বিভাগের সাংগঠনিক, ধর্মীয়, সামাজিক ও সাংস্ড়্গৃতিক অঙ্গন থেকে যে উল্কার পতন হয়েছিলো, এই অভাব আজো পূরণ হয়নি। অপূর্ণই থেকে গেছে তার রেখে যাওয়া স্থানটি। আজ ৪ঠা আগষ্ট তার দ্বিতীয় মৃত্যু বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করছি তাকে। আমি তার আদর্শ অনুসরণ করার জন্য নতুন নেতৃত্বের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। আজ তিনি নেই, আছে তার কর্ম। তার কর্মের মাঝেই বেঁচে আছেন তিনি অজস্র মানুষের হßদয়ে। তিনি আজ নেই কিন্তু তার আদর্শ ও সেবা পরায়ণ আমাদের উৎসাহীত করবে। তিনি আমাদের অনুপ্রেরণা হয়ে বেঁচে থাকবেন যুগে যুগে। মানব ধর্মকেই জীবনের ব্রত মনে করে তিনি নিজে যে পথ বেয়ে চলেছিলেন তার সেই পথ অনুসরন করে এগিয়ে যাবে আমাদের নতুন প্রজন্ম, তার শুভানুধ্যায়ী, অনুসারী ও শথির্থরা। তার কর্মযজ্ঞই আমাদের মধ্যে দীর্ঘদিন চালিকা শক্তি হিসেবে কাজ করবে। তিনি থাকবেন চিরকাল আমাদের স্মরণে- অর্ঘেø।


৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×