somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

লঙ্গরখানা এবং আল্লাহর রহমত

২৪ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ১০:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

গোলাম মোর্তোজা
আমরা এখন কী করব? কোথায় যাব? কী খাব? ছেলেমেয়েদের স্কুলে পাঠাব কীভাবে? খাওয়াবই বা কী? প্রশ্নগুলো খুলনার খালিশপুরের পাটকল শ্রমিকদের। সম্প্রতি পাটকলগুলো বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। বন্ধ হওয়ার আগের ১৪-১৬ সপ্তাহের মজুরি তারা পাননি। এই অসহায় শ্রমিক, তাদের পরিবার-পরিজনের সদস্যরা এভাবেই আমাদের প্রশ্নগুলো করছিল। ঢাকা থেকে আমরা যারা পরিষ্কার জামা-কাপড় পরিধান করে গিয়েছিলাম, তারা কেউই এ প্রশ্নের জবাব দিতে পারিনি। আমাদের দলে আমার মতো অতি সাধারণ সাংবাদিক ছাড়া কয়েকজন গুরুত্বপূর্ণ মানুষও ছিলেন। যেমন হামিদা হোসেন, ড. মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সিমিন হোসেন রিমি, অধ্যাপক শামসুল আলম প্রমুখ।
তারা কেউই শ্রমিকদের এই সাধারণ প্রশ্নের জবাব দিতে পারলেন না। সবাইকেই খুব অসহায় মনে হলো। খুলনায় গেলাম, ফিরে এলাম। পত্রিকায় লিখলেন মুহম্মদ জাফর ইকবাল, সিমিন হোসেন রিমি। কিন্তু প্রশ্নের উত্তর পাওয়া গেল না। উল্টো তারা আরো কিছু প্রশ্ন করলেন।
তাহলে কি প্রশ্নগুলোর উত্তর নেই? কিন্তু না, প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া গেছে। উত্তর দিয়েছেন আমাদের মাননীয় শিল্প উপদেষ্টা গীতিআরা সাফিয়া চৌধুরী। তিনি বলেছেন, 'কেউ না খেয়ে মরবে না, সবার ওপর আল্লাহর রহমত আছে।'
উত্তর শুনে নিজের মূর্খতার জন্যে নিজের গালে চপেটাঘাত করতে ইচ্ছে হলো!
চিরন্তন এই উত্তর আমরা শ্রমিকদের শোনাতে পারিনি। 'মুখ দিয়েছেন যিনি আহার দেবেন তিনি' বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষের মুখস্থ এ বাক্য। সেই ধারাবাহিকতায়ই তো আমাদের মাননীয় উপদেষ্টা 'আল্লাহর রহমত'- এর কথা বলেছেন। আমরা ছোট মানুষ হয়ে যে কথা বলতে পারিনি, তিনি বড় মানুষ হয়ে ঠিকই সে কথা বলতে পেরেছেন! এখানেই তার মহত্ত্ব। তিনি উপদেষ্টা আর আমরা সাধারণ মানুষ, সাংবাদিক, শিক্ষক...।
রাষ্ট্রক্ষমতায় যারা থাকেন, তাদের কাছ থেকে এমন মহান বাণী আমরা এই প্রথম শুনছি তা নয়। 'আল্লার মাল আল্লায় নিয়ে গেছে' শুনেছিলাম আলতাফ হোসেন চৌধুরীর মুখ থেকে। 'বাংলার মানুষ পেটুক, এরা একেকজন বছরে ১৮৩ কেজি চালের ভাত খায়' বলেছিলেন সাইফুর রহমান। 'আল্লাহর হুকুমে ঝড়ের কবলে পড়ে লঞ্চটি ডুবে গেছে'- কর্নেল আকবরের অমর বাণী। বর্তমান অর্থ উপদেষ্টাও বলেছেন, 'জ্বালানির দাম বাড়লে দ্রব্যমূল্যের ওপর তার প্রভাব পড়বে না।'
২.
'আল্লাহর রহমত' থাকলে যে পকেটে অর্থ থাকতে হয় না। ঘরে খাবার না থাকলেও সমস্যা হয় না। সমস্যা হয় না কাজ না
থাকলেও। এ কথা সাংবাদিক, শিক্ষকরা তো বুঝতে পারেনই নি, বিচারপতি হয়ে গোলাম রব্বানীও বুঝতে পারেননি। ফলে শ্রমিকদের খাওয়ানোর উদ্যোগের অন্যতম একজন হয়ে গেছেন তিনিও।
৩.
পত্রিকায় আবেদন জানানো হয়েছে। সাধারণ মানুষ, প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে অর্থ পাওয়া গেছে। স্বচ্ছতার সঙ্গে পত্রিকায় সেটা জানানো
হয়েছে। কী করা হবে এই অর্থ দিয়ে? চার-পাঁচ লাখ টাকা দিয়ে বিশ-বাইশ হাজার শ্রমিক পরিবারের জন্যে কী করা যায়? আসলে কিছুই করা যায় না। কয়েক দিন খাওয়ানো হয়তো যায়। সে কারণেই 'লঙ্গরখানা'র মাধ্যমে খিচুড়ি খাওয়ানোর উদ্যোগ।
লঙ্গরখানার মাধ্যমে খিচুড়ি খাওয়ালে সরকার এবং দেশের ভাবমূর্তি যে ধুলায় মিশে যায়, সেটা আবার আমরা বুঝতে পারিনি। জঙ্গি নিয়ে লিখে একবার জোট সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হয়েছিল! লঙ্গরখানা দিয়ে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ভাবমূর্তি নষ্ট করা হবে, দেশের ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হবেÑ আর যাই হোক এ কাজ তো চালাতে দেয়া যায় না। যেখানে 'আল্লাহর রহমত' আছে, সেখানে আবার লঙ্গরখানা কেন!
তাই অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে লঙ্গরখানা বন্ধ করে দিয়েছে প্রশাসন। খুলনায় অবস্থানকালীন দেখলাম বিভিনড়ব এজেন্সির কর্মতৎপরতা। সাদা পোশাকে ভিডিও ক্যামেরা হাতে ষড়যন্ত্রের গন্ধ খুঁজছিলেন তারা, যা ছিল দেখার মতো।
সাপ্তাহিক ২০০০ এর বিশেষ ইন্টারনেট সংষ্করনে প্রকাশিত এই প্রতিবেদনটি পুরো পড়তে চাইলে ক্লিক করুন এখানে।

সরাসরি লিংক: Click This Link
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জুলাই, ২০০৭ রাত ১০:২৫
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মাটির কাছে যেতেই..

লিখেছেন নতুন নকিব, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৮:৫৬

মাটির কাছে
যেতেই..


ছবি কৃতজ্ঞতাঃ https://pixabay.com/

ঠিক যেন
খা খা রোদ্দুর চারদিকে
চৈত্রের দাবদাহ দাবানলে
জ্বলে জ্বলে অঙ্গার ছাই ভস্ম
গোটা প্রান্তর
বন্ধ স্তব্ধ
পাখিদের আনাগোনাও

স্বপ্নবোনা মন আজ
উদাস মরুভূমি
মরা নদীর মত
স্রোতহীন নিস্তেজ-
আজ আর স্বপ্ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

টাকা ভাংতি করার মেশিন দরকার

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:১০

চলুন আজকে একটা সমস্যার কথা বলি৷ একটা সময় মানুষের মধ্যে আন্তরিকতা ছিল৷ চাইলেই টাকা ভাংতি পাওয়া যেতো৷ এখন কেউ টাকা ভাংতি দিতে চায়না৷ কারো হাতে অনেক খুচরা টাকা দেখছেন৷ তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

বেলা ব‌য়ে যায়

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ২৩ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩০


সূর্যটা বল‌ছে সকাল
অথছ আমার সন্ধ্যা
টের পেলামনা ক‌বে কখন
ফু‌টে‌ছে রজনীগন্ধ্যা।

বাতা‌সে ক‌বে মি‌লি‌য়ে গে‌ছে
গোলাপ গোলাপ গন্ধ
ছু‌টে‌ছি কেবল ছু‌টে‌ছি কোথায়?
পথ হা‌রি‌য়ে অন্ধ।

সূর্যটা কাল উঠ‌বে আবার
আবা‌রো হ‌বে সকাল
পাকা চু‌ল ধবল সকলি
দেখ‌ছি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পর্ণআসক্ত সেকুলার ঢাবি অধ্যাপকের কি আর হিজাব পছন্দ হবে!

লিখেছেন প্রকৌশলী মোঃ সাদ্দাম হোসেন, ২৩ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:২৭



ইন্দোনেশিয়ায় জাকার্তায় অনুষ্ঠিত একটা প্রতিযোগিতায় স্বর্ণপদক জিতেছে বাংলাদেশি নারীদের একটা রোবোটিক্স টিম। এই খবর শেয়ার করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন অধ্যাপিকা। সেখানে কমেন্ট করে বসেছেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেকজন... ...বাকিটুকু পড়ুন

আত্মস্মৃতি: কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ২৩ শে মে, ২০২৪ রাত ৮:১৪


কাঁটালতা উঠবে ঘরের দ্বারগুলায়
আমার বাবা-কাকারা সর্বমোট সাত ভাই, আর ফুফু দুইজন। সবমিলিয়ে নয়জন। একজন নাকি জন্মের পর মারা গিয়েছেন। এ কথা বলাই বাহুল্য যে, আমার পিতামহ কামেল লোক ছিলেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×