somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মুক্তিযোদ্ধা মোঃ ইসমাইল হুসেন

১৫ ই জুলাই, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

মৃত্যুর পরও মানুষ বেঁচে থাকে তার কর্মের মধ্যে। মুক্তিযোদ্ধের সংগঠক ও একজন সফল রাজনৈতিক ছিলেন মোঃ ইসমাইল হুসেন। স্বায়তশাসন, গণ-আন্দোলন ও স্বাধীনতা আন্দোলনে ছিলেন অগ্রণী সৈনিক। সততার প্রশ্নে ছিলেন আপোসহীন, আদর্শে ছিলেন অবিচল।

মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক প্লাট ফর্মে থেকে লড়ে গেছেন দেশ ও জাতির কল্যাণে। এই কীর্তিমান নেতা সফলতার মধ্যে দিয়েই কাটিয়ে গেছেন তার রাজনৈতিক জীবন। গত ২৮শে মে ছিল তার ১ম মৃত্যুবার্ষিকী। শ্রীমঙ্গল উপজেলার সিন্ধুরখাঁন ইউনিয়নের গবিন্দ গাঁও গ্রামে ১৬ই মার্চ ১৯৪৩ সালে এক মধ্যেবিত্ত পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। ছাত্রজীবন থেকেই ছিলেন সাহসী ও অন্যায়ের প্রতিবাদী। স্বাধীনতা যুদ্ধেও সাহসিকতার সহিত সংগঠিত করেছিলেন মুক্তিযোদ্ধাদের। যুদ্ধ পরবর্তী বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গড়ার প্রত্যয়ে রাজনৈতিক ও বিভিন্ন সামাজিক কর্মকান্ডে নিয়োজিত করেছিলেন নিজেকে। ১৯৭৪ সালে প্রতিষ্ঠা করেন শ্রীমঙ্গল উপজেলা যুবলীগ (তৎকালীণ থানা)। তিনি ছিলেন এর প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি। বাংলাদেশের ইতিহাসে কলংকিত অধ্যায় ৭৫-এ রাজনৈতিক পঠ পরিবর্তনের পর বহুবার তাকে কারাভোগ ও কারা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছিলো।


যার যন্ত্রনা ভোগ করেছেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত। জেল থেকে ছাড়া পেয়ে রাজনৈতিক সংগঠনের ভিত্তি মজবুত করে ১৯৭৬ সালে প্রথম বারের মতো শ্রীমঙ্গল থানা আ’লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। দীর্ঘ ৩০ বছর (বিভিন্ন সময়ে সম্মেলনের মধ্য দিয়ে নির্বাচিত হয়ে) এই পদে থেকেই দলের ও দেশের কল্যাণে কাজ করে গেছেন। রাজপথ কাঁপানো ওই নেতার বৈশিষ্ট ছিলো প্রাণস্ফুর্তি ও রাসবোধ। রাজনীতি জীবনের সাথী ও সহযোদ্ধাদের প্রতিতার মানবিক অনুভূতি ছিলো প্রখর। ৮০র দশকে শৈরাচার বিরোধী আন্দোলনে বহু মিথ্যা মামলায় কারাভোগ করেও আন্দোলন থেকে পিছপা হননি তিনি। বরং নেতা কর্মীদের মধ্যে উদভুত করন মন্ত্র ও প্রেরণা যুগিয়ে রাজপথে থেকে কাধেঁ কাধঁ মিলিয়ে আন্দোলন সংগ্রামে সংক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন।

১৯৯০ সালে জনগণের ভালোবাসা নিয়ে উপজেলা নির্বাচনে চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। শৈরাচার গোষ্ঠীর দ্বারা নির্যাতিত নিরীহ ও সংখ্যালঘু মানুষের পাশে থেকে প্রতিবাদের ঝড় তুলেছিলেন তিনি। সিলেট বিভাগ আন্দোলন, ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, শ্রীমঙ্গলে চা বোর্ড স্থাপন ও সিলেট শিা বোর্ড স্থাপন সহ প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতৃত্ব দিয়েছিলেন সামনের সারিতে থেকে। ২০০৬ সালে উপজেলা আ’লীগের সম্মেলনে জাতীয় নেতৃবৃন্দ, কাউন্সিলার ও ডেলিগেটরদের উপস্থিতিতে বিনা প্রতিদ্বন্ধিতায় সভাপতি নির্বাচিত হয়েছিলেন তিনি।


তিনি তার দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে সমাজের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কাজ করে গেছেন। ব্যক্তি জীবনকে তুচ্ছ মনে করে কষ্ট ও ত্যাগের মধ্য থেকে রাজনৈতিক জীবনকেই বেঁচে নিয়েছিলেন তিনি। তার কন্ঠ থেকে আগুনের ফুলকি ছোড়ার দৃশ্য যারা দেখেছেন, নানা মত নানা দলের সবাই বিস্মিত- আভিভূত হয়েছেন। এক অসাধারণ বক্ত ছিলেন তিনি। দীর্ঘ রাজনৈতিক পথ পরিক্রমায় তিনি কখনও দল বদল করেননি তিনি। বিভিন্ন আন্দোলনে ইসমাইল হোসেনের অংশগ্রহণে কানায় কানায় ভরে যেত মিছিল।

এমনই বলিষ্ঠ এবং সৎ রাজনৈতিক নেতা এখন খুবই দুর্লভ, টাকা ও গাড়ি বাড়ির পিছনে ছুটা এখন রাজনৈতিকদের কালচার হলেও ইসমাইল হোসেন ছিলেন তার ব্যতিক্রম। তার জনপ্রিয়তার প্রমাণ ছিলেন তিনি নিজেই। আজীবন সংগ্রামী এই বীর শেষ পর্যন্ত হার মানলেন মৃত্যুর কাছে। রাজনৈতিক জীবনে একজন সফল রাজনৈতিক ছিলেন তিনি, এবং সফলতার মধ্যে দিয়েই ৬৩ বছর বয়সে ইহলোক ত্যাগ করেছিলেন এই মহান নেতা। ১৯৯৮ সালে প্রথম তার ডায়াবেটিকস রোগ ধরা পড়লেও, নিয়মিত চিকিৎসার মধ্যে দিয়ে মৃত্যুর আগে পর্যন্ত রাজনৈতিক ও সামাজিক কর্মকান্ড একদিনের জন্যও স্থবির রাখেননি তিনি। ২০০৬ সালে তার শরীরে ধরা পড়ে দুরারোগ্য ব্যধি ক্যান্সার। তখনও তিনি বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা গড়ায় ছিলেন অন্ন। প্রতিদিন তার বাসায় আসা দলীয় ও বিভিন্ন দলের নেতাকর্মীদের কাছ থেকে শান্তনা গ্রহণের পরিবর্তে, তাদেরকে প্রেরণা যুগিয়েছেন পরবর্তী নির্বাচনের জন্য।


সর্বশেষ চিকিৎসার উদ্দেশ্যে ভারত গমণের প্রাক্কালেই সেইদিন তার বাসায় হাজার হাজার নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে আহ্বান জানিয়েছিলেন সকলকে, সম্মিলিত ও আন্তরিকভাবে কাজ করে সোনার বাংলা গড়ার জন্য। ২০০৬ সালের ২৮ মে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ভারতের মাদ্রাজে মৃত্যু বরণ করেন তিনি। রাজনীতি করার সুবাধে আজীবন দেশ ও দেশের জনগণকে নিয়ে স্বপ্ন দেখা এই নেতাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছিলো আমার। তাই আজ তার প্রথম মৃত্যু বার্ষিকীতে গভীর শ্রদ্ধার সহিত স্মরণ করছি তাকে। দেশের বর্তমান রাজনৈতিক প্রোপটে তার মতো সৎ ও আদর্শীক রাজনীতিবিদের খুবই প্রয়োজন ছিলো আজ।

তার রেখে যাওয়া স্থান আজও অপুর্ন থেকে গেছে। এখনও প্রতিটি আন্দোলন সংগ্রামে নেতাকর্মীরা অনুভব করেন তার শূন্যতা। তাইতো জীবনাবসানের মধ্যে দিয়ে অস্তমিত নন তিনি, নিত্য অদিত হচ্ছেন তার সংগ্রামী সাথীদের হৃদয়ে।
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×