somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

নেটে পরিচয়, প্রেম, অতঃপর

১৫ ই জুলাই, ২০০৭ সকাল ১০:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


ঘটনা ১
ইতির সাথে হাবিবের সম্পর্কের প্রায় ছয় মাস পর্যন্ত তাদের সামনাসামনি দেখা হয়নি, কথাও হয়নি। কারণ ইতি থাকে বাংলাদেশে আর হাবিব আমেরিকায়। তাদের পরিচয় হয়েছিল ইন্টারনেটের এক চ্যাট রুমে। পরিচয়ের প্রথম দিনেই আধঘণ্টা আলাপের পর ইতি বোঝে ছেলেটি খুব গুছিয়ে কথা বলতে পারে এবং বেশ দৃঢ় মনোবলের অধিকারী। আলাপ শেষে ইতি জানায় পরদিন সে একই সময় চ্যাট রুমে ঢুকবে। এবং সে তার প্রতিশ্র“তি রা করে। এভাবে কয়েক দিন আলাপের পর হাবিবের সাথে ইতির একটি বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক গড়ে ওঠে। তারপর চ্যাটের বাইরে ই-মেইলেও যোগাযোগ, স্টিল ছবির আদান-প্রদান থেকে ওয়েবক্যামে নিজেদেরকে লাইভ দেখা এবং শেষে ভয়েস চ্যাট পর্যন্ত। ইতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ইংরেজি বিভাগে পড়ছে। আর হাবিব সদ্য আইটি থেকে পাশ করে একটি কম্পিউটার ফার্মে চাকরি করছে। দু বছর আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ম্যানেজমেন্টে পাশ করে সে আমেরিকা চলে যায় আইটির উপর পড়তে। এভাবে মাত্র তিন মাসের মধ্যেই ইতি-হাবিবের বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্কটা পরিণত হয় প্রেমে। ধীরে ধীরে প্রেম গাঢ় থেকে গাঢ়তর হয়। অবশেষে দুজনে সিদ্ধান্ত নেয়, সারাজীবনের জন্য তারা স্থায়ী বন্ধনে আবদ্ধ হবে। দুজনের পরিবারকে জানায়। দু পরিবারে খোঁজখবর চলে। কিছু সমস্যা তৈরি হলেও শেষমেষ দু পই বিয়েতে রাজি হয়। এরপর কেবল হাবিবের সাত-সমুদ্দুর পাড়ি দিয়ে বাংলাদেশে আসার অপো। গত মে মাসে হাবিব বাংলাদেশে আসে। অতঃপর বিয়ে। এবং বর্তমানে ইতি-হাবিব দম্পতি আমেরিকায় বসবাস করছে।
ঘটনা ২
নাতাশা স্ট্যামফোর্ড ইউনিভার্সিটিতে বিবিএ পড়ছে। স্রেফ সময় কাটানোর জন্যই নেট চ্যাটিং শুরু করেছিল। কিছুদিন যেতেই এটা একরকম তার নেশায় পরিণত হয়। চ্যাট রুমে একটা মেয়ে ঢুকলেই ছেলেরা যেভাবে হুমড়ি খেয়ে পড়ে, আর কী সব যে লেখেÑপড়ে মজাও লাগে আবার মেজাজও খারাপ হয় তার। একটি নির্দিষ্ট চ্যাট রুমে ঢুকলে পিদিম নামের একটি ছেলে তার সাথে প্রায়ই আলাপ করতে আসে। ছেলেটি বুয়েটে পড়ে, গান গায়, মগবাজারে নিজেদের বাড়ি, পরিবারের ছোট ছেলেÑএইসব নানা খুঁটিনাটি জানা হয়ে যায় নাতাশার। ছেলেটিকে পছন্দ হয় নাতাশার। একদিন নিজ থেকেই মোবাইল নম্বরটি দিয়ে দেয়। তারপর নেটে, মোবাইলে সমানতালে নাদিমের সাথে কথাবার্তা-আলাপ চলে নাতাশার। একদিন দেখাও করে দুজন। বিষয়টি নিয়ে নাতাশার সাথে তার প্রেমিকের ঝগড়া বাঁধে। নাতাশার উত্তর, পিদিম জাস্ট আমার ফ্রেন্ড। কিন্তু তার প্রেমিক েেপ যায়। সম্পর্ক ছিন্ন করে নাতাশা, আসলে সে এখন পিদিমের সাথেই সম্পর্ক গড়তে চায়। পিদিম সবদিক দিয়েই ফিট। বুয়েটে পড়ে, গান গাইতে পারে, দেখতে হ্যান্ডসাম, ঢাকায় নিজেদের বাড়িÑভবিষ্যতে বিয়ের জন্যও পাত্র হিসেবে পিদিম বেস্ট। নতুন গড়া সম্পর্ক নিয়ে উৎফুল্ল নাতাশা। আনন্দে কাটতে থাকে দিন। কিন্তু বিধি বাম। একদিন এক ফাস্টফুড শপে ডেটিং করতে গিয়ে এক পুরোনো স্কুল বান্ধবির সঙ্গে দেখা হয় নাতাশার। পিদিমের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। কিন্তু বান্ধবির সামনে পিদিম হঠাৎ খুব অপ্রস্তুত হয়ে যায়। সে রাত্রে নাতাশা বান্ধবিকে ফোন করে জানতে পারে, পিদিম তার পূর্ব পরিচিত। তার এক বান্ধবির সাথে পিদিমের সম্পর্ক ছিল। আরো জানায়, পিদিমের স্বভাব হলো কয়দিন পর পর গার্লফ্রেন্ড পাল্টানো এবং সে বুয়েটেও পড়ে না, একটি ডিগ্রি কলেজে পড়ছে।
ঘটনা ৩
দুই বছর ধরে প্রেম, অথচ দুজনের কেউ কাউকে সরাসরি দেখেননি। দেখেছেন, তবে সে কেবল ছবিতে, বাস্তবে নয়। শুনে হয়তো অনেকে গালে হাত দিয়ে বলবেন, ওমা, এই ইন্টারনেট-মোবাইলের যুগেও এমন প্রেম হয় নাকি? হয়, ইন্টারনেটের বদৌলতেই এমন প্রেমও হয়। যেমন ইমরুলের (ছদ্মনাম) েেত্র হয়েছে। নওজিয়ার সাথে ইমরুলের পরিচয় একটি বাংলা চ্যাট রুমে। পরবর্তীতে ইমেইল আদান-প্রদান। এর কদিন বাদেই ইমরুল পরিবেশবিজ্ঞানে পোস্ট গ্রাজুয়েট করতে দু’বছরের জন্য ইংল্যান্ড চলে যান। যাওয়ার আগে ইমরুল নওজিয়ার সাথে সামনাসামনি দেখা করতে চাইলে তার অনাপত্তিতে সেটা হয়ে ওঠেনি। ইংল্যান্ডে গিয়ে নিয়মিত ইমেইল-চ্যাটের মাধ্যমে নওজিয়ার সাথে যোগাযোগ অুণœ রাখে ইমরুল। ধীরে ধীরে তাদের মধ্যে একটি ভাল বন্ধুত্ব-সম্পর্ক গড়ে ওঠে। বছর খানেক বাদে প্রেম। ঠিক হয় পোস্ট গ্রাজুয়েটটা শেষ করে ইমরুল দেশে ফিরলে বিয়ে হবে। দু’বছর বাদে দেশে ফেরে ইমরুল। এসেই নওজিয়ার সাথে দেখা করতে চাইলেÑফ্যামিলি খুব রণশীল, একা একা বাইরে বেরুতে দেয় নাÑএসব বলে নওজিয়া ইমরুলকে নিরস্ত করে। মজা করে বলে, একেবারে বাসরঘরে আমার দেখা পাবে। যাহোক, পারিবারিকভাবে বিয়ে ঠিকঠাক হয়। একটি চাইনিজ রেস্টুরেন্টে বাগদান অনুষ্ঠানের আয়োজন হয়। নির্দিষ্ট দিনে ছেলে ও মেয়েপরে লোকজনে রেস্টুরেন্ট পূর্ণ। কিন্তু মেয়ে, মেয়ের মা-বাবার আসার নাম নাই। দেরিতে এসে মেয়ের মা-বাবা বলেন, মেয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে তাই বাসায় রেখে এসেছি। ছেলেপরে সবাই মনুণœ হলেও ইমরুলের দিকে চেয়ে মেনে নেয়। তাছাড়া নওজিয়ার ছবি তো তারা দেখেছেন, দেখতে চলনসই। হলুদের দিন লগন নিয়ে মেয়ের বাড়ি যায় ইমরুলের দুই বোনসহ অন্যান্যরা। কিন্তু হলুদ দিতে গিয়ে আবিষ্কার করেন, মেয়ে অস্বাভাবিক মোটা, সুমু কুস্তিগীরদের মতো শরীর। পরের ঘটনা বিয়ে ভেঙ্গে যায়। ইমরুলরা খোঁজখবর নিয়ে জানতে পারে, নওজিয়ার এটি এক ধরনের রোগ যা পুরোপুরি সারার নয়।
বর্তমান সময়ে কিশোর-কিশোরী, তরুণ-তরুণী থেকে শুরু করে অনেক আধুনিক মনস্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধাও ইন্টারনেটে চ্যাটিং করে থাকেন। কেন তারা চ্যাটিং করেন? দেশের জনপ্রিয় কবি নির্মলেন্দু গুণের কথাই ধরা যাক। এক সময় তিনি নিয়মিত চ্যাটিং করতেন। এবং আমরা দেখেছি কবি তার নেট চ্যাটিং-বন্ধুদের সাথে আদান-প্রদান করা শব্দমালা সাজিয়ে কী চমৎকার গদ্য কবিতা লিখেছেন। এই প্রসঙ্গে কবি বলেন, চ্যাটিং করাটা আমার কাছে অন্যকে আবিষ্কারের মতো। এর মাধ্যমে আমি বিভিন্ন দেশের নারীদের সাথে পরিচিত হয়েছি, তাদের সংস্কৃতি, ভাষা, ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পেরেছি।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ফার্মেসিতে পড়–য়া রিংকি নিয়মিত চ্যাট করেন। তিনি বলেন, আমি নতুন নতুন মানুষের সাথে মিশতে, পরিচিত হওয়ার জন্যই চ্যাট করি। তবে প্রযুক্তি খুব সহজ হওয়ায় মানুষ এর অপব্যবহারও করে। যেমন, চ্যাট রুমে কোন মেয়ে ঢুকলেই অনেক ছেলেরা বাজে বাজে কথা লিখে পাঠায়। অশ্লীল প্রস্তাব করে। ভাবতে খুব অবাক লাগে যে তাদের মনমানসিকতা, রুচি কোথায় গিয়ে ঠেকেছে।
জেরিন আলম সদ্য পড়াশুনা শেষ করে একটি ব্যাংকের চাকরিতে ঢুকেছেন। তিনি জানালেন, সময় পেলে তিনি মাঝে মাঝে চ্যাট করেন। বিয়ে করার জন্য ভালো ছেলে পেতে এটিই তার কাছে সহজ উপায় মনে হয়েছে। বললেন, অ্যারেঞ্জ বিয়ের বিষয়টাই আমার ভাল লাগে না। চিনি না জানি না, এমন একজনকে বিয়ে করার কোনো মানে হয় না। জীবনসঙ্গী বেছে নেয়ার জন্য ভালো মতো কথা বলে, নিজেদের ভালো লাগা, মন্দ লাগাÑসব ব্যাপারগুলো মিললে তবেই না কাউকে বিয়ে করা। কিন্তু নেটে তো অনেকে নিজের সম্বন্ধে মিথ্যে পরিচয় দেয়। এখানে কি কাউকে সহজে বিশ্বাস করা চলে? এ প্রশ্নের উত্তরে জেরিন বললেন, হ্যাঁ, এটা বাস্তব। আমার মতে নেটে চ্যাটিং যারা করেন এর এইট্টি পার্সেন্টই নিজের সম্বন্ধে মিথ্যে বলে, বাকি টুয়েন্টি পার্সেন্ট বলা যায় নিজেকে সঠিক রূপে উপস্থাপন করে। তবে নেটে পরিচিত হয়ে কারো সাথে সম্পর্ক করার েেত্র সামনাসামনি দেখা করে, কথা বলে, সময় নিয়ে এ সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত।



১৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফিরে এসো রাফসান দি ছোট ভাই

লিখেছেন আবদুর রব শরীফ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৩৮

রাফসানের বাবার ঋণ খেলাপির পোস্ট আমিও শেয়ার করেছি । কথা হলো এমন শত ঋণ খেলাপির কথা আমরা জানি না । ভাইরাল হয় না । হয়েছে মূলতো রাফসানের কারণে । কারণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

কুমীরের কাছে শিয়ালের আলু ও ধান চাষের গল্প।

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৭ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:৪০



ইহা নিউইয়র্কের ১জন মোটামুটি বড় বাংগালী ব্যবসায়ীর নিজমুখে বলা কাহিনী। আমি উনাকে ঘনিষ্টভাবে জানতাম; উনি ইমোশানেল হয়ে মাঝেমাঝে নিজকে নিয়ে ও নিজের পরিবারকে নিয়ে রূপকথা বলে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×