somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মাছ : এক অন্তহীন বিস্ময়

১১ ই জুলাই, ২০০৭ সকাল ১১:৫৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

জলজ প্রাণী মাছকে কেন্দ্র্র করে বিশ্বের বিভিন্ন জনপদে এতো বিচিত্র উপাখ্যান রচিত হয়েছে যে, মাছের প্রকৃতি ও রূপ-বৈচিত্র্য মানুষকে রীতিমতো ধাঁধাঁয় ঠেলে দিয়েছে। এটা সত্য, সমুদ্রের পানি থেকেই সব প্রাণীর সৃষ্টি। আবার সমুদ্রের রূপ-বৈচিত্র্যের সঙ্গেই মাছের রূপ-বৈচিত্র্যের টেক্কা চলে। সম্ভবত পানি-ঘনিষ্ঠতার সূত্র ধরেই মাছও অধিকাংশ লোকজ উপাখ্যানে পবিত্র বিবেচিত হয়েছে।
কৃশ্চিয়ানদের প্রাচীন বিশ্বাস মতে, লেভিয়াথান নামক প্রকান্ড এক মহাজাগতিক মাছ হচ্ছে এ মহাবিশ্বের প্রতীক এবং মাছটি তার পিঠের ওপরই এ পুরো ভৌত পৃথিবীর ভার বহন করছে। আবার জ্যোতিষশাস্ত্র মতে, মীন রাশির প্রতীক হচ্ছে মাছ। সঙ্গত কারণে এটা পানিরও প্রতীক। তাই মীন রাশির জাতকদের কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য মাছের বৈশিষ্ট্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রয়েছে বলে দাবি করা হয়।

এশিয়ার কিছু ধর্মীয় প্রার্থনার প্রথায় মাছের পুজো চলে এবং এসব ধর্মের পুরোহিতদের জন্য মাছ ভক্ষণ নিষিদ্ধ । আদিম অনেক সমাজে মৎস্যপূজার বিষয়টি একটি স্বাভাবিক ধর্মীয় অনুষঙ্গ ছিল। পেরুর ইন্ডিয়ানদের জালে প্রথমে যে মাছগুলো আসতো, সেগুলোকে তারা শুধু শ্রদ্ধাই করতো না, তারা বিশ্বাস করতো, পৃথিবীতে প্রথম মাছ সৃষ্টি করা হয়েছে এবং এ মাছই হচ্ছে অন্যান্য সৃষ্ট জীবের জননী।

প্রাচীন জীববিদ্যা বিশারদরা বিশ্বাস করতেন, মাছ হচ্ছে পানির স্বতঃস্ফূর্ত সৃষ্টি। সুমেরীয় একটি উপাখ্যান মতে, আদিম পানি থেকে সৃষ্ট প্রথম মাছটিই সভ্যতার শিল্পকলা শিক্ষাদানের জন্য মানুষের শিক্ষকে রূপান্তরিত হয়েছে। প্রাচীনকাল থেকেই বিশ্বের বিভিন্ন নদ-নদী ও সমুদ্র উপকূলবর্তী এলাকাগুলোয় অর্ধমানব ও অর্ধমাছ সম্পর্কিত কিংবদন্তি চালু হয়। সুমেরিয়ান দেবতা ইয়াহু হচ্ছে মৎস্য দেবতা । তার দেহের উপরিভাগ মাছের মতো, আর নিম্নাংশ মানবাকৃতির। অন্যদিকে প্রাচীন ইজিপশিয়ানরা বিশ্বাস করতো, মৎস্য দেবী রোমের অবিশ্রান্ত কান্নার ফসলই হচ্ছে নীলনদ।

হিন্দু দেবতা ব্রক্ষ্মা ও বিষ্ণু মাছের রূপ ধারণ করতে পারতেন। এ ধর্মমতে, প্রথম মানব মনুকে একটি মাছ বিশ্বের মহাপ্লাবন থেকে বাঁচানোর জন্য একটি জাহাজ নির্মাণের পরামর্শ দিয়েছিল।
মাছকে পবিত্র বা হালাল খাদ্য হিসেবে ভক্ষণ করা হয়। ইহুদিরা বিশ্বাস করে, কেয়ামত নিকটবর্তী হলে মুসা (আঃ) সুবিশাল মাছ লেভিথিয়ানকে ধরে ফেলতে সক্ষম হবেন এবং এ মাছ তিনি বিশ্বাসীদের মাঝে বন্টন করে দেবেন। তবে ইহুদিরা মাছ খাওয়া শিখেছে কৃশ্চিয়ানদের কাছ থেকে, যা পরবর্তীকালে তাদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসবে পরিণত হয়।

খ্রিস্টীয় প্রতীকবাদে মাছ যিশু খ্রিস্টেরই প্রতিনিধিত্ব করে। প্রাচীন রোমানদের ভূগর্ভস্থ সমাধিতে প্রায়ই মাছের ছবি আঁকা থাকতো। গৃক ভাষায় মাছের প্রতিশব্দ হচ্ছে ইচথাস। প্রাথমিক যুগের কৃশ্চিয়ানরা এই ইচথাস শব্দটির মাঝে এমন একটি অর্থবহ মনোগ্রাম তালাশ করে নিয়েছিল Ñ যা ছিল তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল প্রতিপাদ্য। আর তা হচ্ছে Ñ যিশু খ্রিস্ট, ঈশ্বরের পুত্র, রক্ষাকারী।

অন্যদিকে পঞ্চদশ শতকের একটি ফ্রেঞ্চ বাইবেলের প্রচ্ছদে একটি সুদৃশ্য ছবি অঙ্কিত ছিল। ছবিতে দেখানো হয়েছে, যে অতিকায় মাছটি নূহ (আঃ)-কে গিলে ফেলেছিল, সেটি তাকে ডাঙায় উগড়ে দিচ্ছে। কেলটিক জনগোষ্ঠীর কাছে কিছু সুনির্দিষ্ট মাছ পবিত্র বিবেচিত হতো। তাদের বিশ্বাস ছিল, ট্রাউট মাছ ভবিষ্যৎ ব্যক্ত করতে পারে, রোগ নিরাময়ের ক্ষমতা রাখে। পশ্চিমি বিশ্বের অনেক জেলে সম্প্রদায় এখনো বিশ্বাস করে, পানির উপরিতল দিয়ে কাটলফিশের সাতরানোর অনিবার্য কারণ আসন্ন ঝড় ছাড়া আর কিছুই নয়। আয়ারল্যান্ডের কৃষকরা মনে করে, কার্প মাছে স্বর্গীয় বিদ্যুৎ রয়েছে। এখনো তারা আরোগ্য কামনায় জন্ডিস রোগীর পায়ের তলায় কার্প মাছ ছোয়ায়। তারা আরো বিশ্বাস করে, এ মাছ অন্যান্য মাছেরও রোগ সারিয়ে দেয়। তারা এ মাছকে মাছের চিকিৎসক মনে করে।

বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলের মতো আমাদের দেশেও মাছ নিয়ে কিছু কুসংস্কার চালু রয়েছে। চট্টগ্রামের মানুষ এখনো বিশ্বাস করে, গর্ভবতী নারী কোটার সময় লইট্যা মাছের ঠোঁট হাত দিয়ে ছিঁড়লে ঠোঁটকাটা সন্তানের জন্ম নেয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাইবেরিয়ায় গর্ভবতী নারীর মাছ ভক্ষণ নিষিদ্ধ। তাসমেনিয়ার জনগণ পাল্লা দিয়ে মাছ মাপে না। অন্যদিকে আফ্রিকার বান্টু উপজাতি মাছ মোটেও খায় না। আবার ফ্রান্সের সিন নদীর তীরবর্তী লোকেরা জনডরি নামক মাছ এবং আইরিশরা স্কেটস নামক লম্বা লেজওয়ালা চেপ্টা মাছ খায় না। বিশ্বের আনাচে-কানাচে মাছ নিয়ে অনেক কিংবদন্তি চালু রয়েছে। মাছ হারানো আংটি ফেরত দেয়,Ñ এ জাতীয় গল্প বিশ্বের সব প্রান্তেই প্রচলিত।
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

গাজার যুদ্ধ কতদিন চলবে?

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৮ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৩

২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরাইলে হামাসের হামলার আগে মহাবিপদে ছিলেন ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু৷ এক বছর ধরে ইসরায়েলিরা তার পদত্যাগের দাবিতে তীব্র বিক্ষোভে অংশ নিয়েছিলেন৷ আন্দোলনে তার সরকারের অবস্থা টালমাটাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্যামুয়েল ব্যাকেট এর ‘এন্ডগেম’ | Endgame By Samuel Beckett নিয়ে বাংলা ভাষায় আলোচনা

লিখেছেন জাহিদ অনিক, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৮



এন্ডগেম/ইন্ডগেইম/এন্ডগেইম- যে নামেই ডাকা হোক না কেনও, মূলত একটাই নাটক স্যামুয়েল ব্যাকেটের Endgame. একদম আক্ষরিক অনুবাদ করলে বাংলা অর্থ হয়- শেষ খেলা। এটি একটা এক অঙ্কের নাটক; অর্থাৎ... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রায় ১০ বছর পর হাতে নিলাম কলম

লিখেছেন হিমচরি, ২৮ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১

জুলাই ২০১৪ সালে লাস্ট ব্লগ লিখেছিলাম!
প্রায় ১০ বছর পর আজ আপনাদের মাঝে আবার যোগ দিলাম। খুব মিস করেছি, এই সামুকে!! ইতিমধ্যে অনেক চড়াই উৎরায় পার হয়েছে! আশা করি, সামুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×