somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ছোটগল্পের টিকে থাকা না থাকা

০৮ ই জুলাই, ২০০৭ দুপুর ২:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শিল্প-সাহিত্যের জগতে মাঝে মধ্যে কিছু মজার বিতর্ক বা আলোচনা তৈরি হয়। যেমন কবিতার দিন ফুরিয়ে আসছে, ভবিষ্যতে আর কবিতা লেখা হবে না। সিনেমার ব্যাপক প্রসারের পর মানুষের আর থিয়েটারে যাওয়ার প্রয়োজন থাকবে না। ফলে মঞ্চ নাটক লেখা হবে না, মঞ্চস্থও হবে না। টিভি মাধ্যমের বিস্ফোরণ ঘটার পর দর্শকরা সিনেমা হলে যাওয়া ছেড়ে দেবে। অতএব সিনেমার পতন সময়ের ব্যাপার মাত্র। ইন্টারনেটে বই পড়ার অভ্যাস তৈরি হলে লোকে আর বই কিনবে না। ইন্টারনেটের প্রসার আরেকটু গতি পেলে লোকে টিভি দেখা ছেড়ে দেবে। এ রকমই এক তর্কের বিষয় : ছোটগল্পের দিন ফুরিয়ে গেছে। লোকে এখন আর ছোটগল্প পড়তে চায় না। ভবিষ্যতে হয়তো আর ছোটগল্প লেখা হবে না।
অনেকে বলেন, সংবেদন গ্রহণ করার ব্যাপারে আমরা ক্রমে দৃশ্যনির্ভর হয়ে পড়ছি। অর্থাৎ বাইরের সংবেদন গ্রহণ করার কাজে আমরা যে অঙ্গগুলোকে ব্যবহার করি চোখই তার মধ্যে প্রধান হয়ে উঠছে। সংবাদপত্র, টিভি, ইন্টারনেটের বিকাশের সঙ্গে চোখের ব্যবহার কান, নাক, ত্বক, জিহ্বার চেয়ে তুলনামূলকভাবে বেড়ে গেছে। আমরা সংবাদপত্র ও বই পড়ি চোখ দিয়ে। টিভি দেখি, ইন্টারনেটেও কাজ করি মূলত চোখের সাহায্যে। চোখের আধিপত্য এতোটাই বেড়ে গেছে যে, একটা গল্প পড়ার পর এর চরিত্র, স্থান, সময়কে কল্পনা করে নেয়ার চিন্তা করতেও পাঠকরা রাজি নয়। তারা নাকি চান টিভিতে এর দৃশ নির্মাণ করে দেখানো হোক। একটি গান শোনার পর ইমেজগুলোকে কল্পনা করে নেয়ার কষ্ট লাঘব করতে তাই গানের দৃশ্যায়ন শুরু হলো। গান শোনার বদলে গান দেখার অভ্যাস গড়ে উঠতে থাকলো।
দৃশ্যকে প্রাধান্য দিতে নিউজপেপার হয়ে উঠলো পড়ানোর চেয়ে দেখানোর মাধ্যম। এখন ছবি সেখানে একটা বড় উপাদান। ভাবা হয়েছিল, টিভির প্রসারের পর রেডিওর মৃত্যু ঘণ্টা বেজে গেছে। লোকে আর বিনোদনের কাজে রেডিও ব্যবহার করবে না। কিন্তু বছর গড়াতে গড়াতে দেখা গেল, রেডিও আবার ফিরে এসেছে। বড় আকারের ট্রানজিস্টরের বদলে এটি এখন মোবাইল বিনোদনের মাধ্যম। পুরনো আমলের যন্ত্র বলে পরিচিত রেডিও শুধু আকারে পোর্টেবল (বহনযোগ্য) আর কনটেন্টে সমকালীন হয়ে নতুন প্রজন্মের কানে কানে জায়গা করে নিয়েছে। সঙ্গে জুটেছে আইপড, এমপি ফোর, মোবাইল ফোনের শ্রবণ যন্ত্র। এ দৃশ্য দেখলে বিশ্বাস করতে কষ্ট হয়, মানুষ সব কিছু চোখ দিয়েই আস্বাদন করতে চায়। অথবা চোখের দিকেই শিল্প-সাহিত্যের সব মনোযোগ কেন্দ্রীভূত হয়েছে।
দেখা যাচ্ছে, শিল্প-সাহিত্য আস্বাদনের ব্যাপারটি সৃষ্টিশীলতার মতোই কোনো পূর্বধারণা অনুসরণ করে চলছে না। ছোটগল্পের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। ছোটগল্প ফর্ম হিসেবে নিজের মৃত্যু ঘণ্টা বাজিয়ে দিয়েছে, এ কথা বলেছিলেন গল্প-উপন্যাসের লেখকরা। ইওরোপ-আমেরিকায় তো বটেই বাংলাদেশেও একটি সাপ্তাহিক পত্রিকার আয়োজনে লেখকদের অংশগ্রহণে একটি বিতর্কের আয়োজন করা হয়েছিল। বিতর্কের বিষয় ছোটগল্প কি মরে যাচ্ছে?
গত জুনে এ রকমই একটি বিতর্কের দেখা মিললো বৃটেনের ইনডিপেনডেন্ট পত্রিকার একটি লেখায়। লিখেছিলেন আল কেনেডি। তার মতে, প্রকাশক ও সমালোচকরা ছোটগল্পকে গুরুত্ব দেন না। বুক শপগুলোতে ছোটগল্পের বই রাখা হয় খুব অযতেœ। বিশ্ব জুড়ে ছোটগল্পের বই প্রকাশের হার কমে গেছে আশঙ্কাজনক হারে। একক লেখকের বই হিসেবে প্রকাশিত না হয়ে এটি এখন সঙ্কলন হিসেবেই বেশি নজরে আসছে। ছোটগল্প এতোটাই নিগৃহীত যে, একে বলা যায়, সাহিত্যের দুঃখী এতিম সন্তান। অন্যদিকে কবিতার বই প্রকাশের ব্যাপারেও প্রকাশকদের অনীহা যথেষ্ট। কবিতার বই কোথাও খুব বেশি বিক্রি হয় না। সীমিত পাঠকের মধ্যেই তার চাহিদা। কিন্তু তারপরও আদি ফর্ম হিসেবে কবিতা বোদ্ধা আর সমালোচকদের কদরের বস্তু। আর এ কারণেই, নানা ফেস্টিভাল আর আসরে কবিরা সমাদরে আপ্যায়িত হন। পুরস্কার, ভক্ত-শ্রোতা তাদের ব্যস্ত রাখে। সহজেই মিলে যায় সেলিব্রেটির তকমা।
অবস্থা বাংলাদেশেও প্রায় একই রকম। প্রতি বছর এখানে ছোটগল্পের বই বের হয় বটে। কিন্তু সংখ্যায় সেগুলো খুবই কম। অধিকাংশের লেখকরাই তরুণ। নিজেেেদর ফিকশন চর্চার অর্ধ দশক বা এক দশক পার করার পর একটি গল্পের বই প্রকাশিত হওয়া মোটামুটি রুটিন কর্মসূচি। বইটি কতো কপি বিক্রি হবে বা সমালোচকরা কতোটা মূল্যায়ন করবেন তা প্রধান বিবেচনায় থাকে না। এখানে খুব কম লেখকই উপন্যাস বা নিদেনপক্ষে নভেলা দিয়ে যাত্রা শুরু করেন। যারা আজীবন ছোটগল্পের ফর্মেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তারা তো ছোটগল্প লেখেনই। আর ভবিষ্যতে যারা উপন্যাস লিখবেন তারাও ছোটগল্প লেখার মধ্য দিয়ে গদ্যে হাত মকশো করেন। বাজারে নিজের চাহিদা তৈরি করেন। সমালোচকদের কাছে গ্রহণযোগ্যতা বাড়ান। তারপর একসময় পুরোদস্তুর ঔপন্যাসিক হিসেবে যাত্রা শুরু করেন।
বৃটেন বা আমেরিকার বিখ্যাত প্রকাশক বা সম্পাদকরাও অনেক সময় নতুন লেখকদের ছোটগল্প লিখে হাত মকশো করার পর উপন্যাসে হাত দিতে পরামর্শ দেন। কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়তো এ পরামর্শ কাজে লাগতে পারে। কিন্তু অনেক সময় ছোটগল্পকে আলাদা ফর্ম হিসেবেই বিবেচনা করা হয়। অনেকের মতে, উপন্যাসের সঙ্গে ছোটগল্পে দক্ষতা অর্জনের কোনো সম্পর্ক নেই। ছোটগল্প আলাদা আর্ট ফর্ম। এটি লেখার পদ্ধতি আলাদা, একই সঙ্গে সৃষ্টি প্রক্রিয়াটি অন্য আর্ট ফর্মের মতো সফেসটিকেটেডও। এ কারণে এ ফর্মটি পৃথিবী শ্রেষ্ঠ লেখকদের মনোযোগ পেয়েছে। গদ্য শিল্পীদের মধ্যে খুব কম লেখকই আছেন যারা স্মরণীয় কোনো ছোটগল্প লেখেননি।
বাংলা ভাষায়ও অনেক লেখক আছেন যারা উপন্যাস লিখে ততোটা সাফল্য না পেলেও ছোটগল্পে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছেন। আল কেনেডির ভাষায়, ছোটগল্প লেখককে খুব সতর্কতার সঙ্গে ভাষা ব্যবহার করতে হয়। গল্পটি আকারে ছোট বলে, সীমিত পরিসরেই ভাষার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করতে হয়। আখ্যান বা কাহিনীকে তীক্ষèভাবে তুলে আনতে হয়। কোনো বিচ্যুতি ঘটলে সহজেই তা পাঠকের চোখে পড়ে। কিন্তু উপন্যাসে স্পেস অঢেল। সেখানে ভাষা বা আখ্যানের তীক্ষèতায় কোথাও কমতি পড়লে গল্পের পরবর্তী ভাগে তা শোধরানোর সুযোগ থাকে। আর বড় আকারের প্রেক্ষাপটে পাঠক হয়তো এ ধরনের বিচ্যুতিকে এড়িয়ে যেতে পারে।
ছোটগল্পে পাঠকের কাছ থেকে বাড়তি মনোযোগ প্রত্যাশা করা হয়। পাঠক হয়তো একটি উপন্যাস পড়ার মতো দীর্ঘ সময় দেয় না গল্প পড়তে গিয়ে কিন্তু যতোটুকু দেবে ততোটুকু যেন ওই গল্পটিকে ঘিরেই থাকে তা বিশেষ প্রত্যাশিত থাকে। মনোযোগী পাঠকও একে সাদরে গ্রহণ করছেন। এর প্রতি পাঠকের এমন একটি সম্পর্ক তৈরি হয়েছে যাকে বলা যায় প্রেমের সম্পর্ক।
আল কেনেডির আরেকটি কথা বিশেষ আকর্ষণীয়। তিনি বলেন, সাইজ ডোন্ট ম্যাটার বলে যে কথাটা আছে তা আসলে ভুল। সাইজ আসলেই একটা ম্যাটার। যা আকারে ছোট তাকে গুরুত্বপূর্ণ না ভাবাটাই স্বাভাবিক। আকারে বড় যা তাকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়াটাই নিয়ম। কিন্তু একটা বুলেটের কথা ভাবুন। আকারে এটি ছোটই বটে। কিন্তু সেটি যদি প্রচ- গতিতে তীক্ষè পথে আপনার মাথার দিকে ছুটে আসে তবে সেটাকে অগুরুত্বপূর্ণ ভাবাটা কতোটা সম্ভব হতে পারে?
তারপরও অনেক লেখক-পাঠক মনে করেন, ছোটগল্প আসলেই ফুরাতে বসেছে। এ ক্ষেত্রে ছোটগল্পের শৈল্পিক আবেদন ফুরানোর কথা হয়তো বলা হয় না। বেশি করে বলা হয় এর বাণিজ্যিক দিকটির কথাই। এর পেছনে যুক্তি অনেক।
ফর্ম হিসেবে উপন্যাসের জনপ্রিয়তা সবকিছুকে ছাড়িয়ে একেবারে শীর্ষে পৌছেছে। আশি থেকে একশ পৃষ্ঠার ছোট উপন্যাস বা নভেলা থেকে একহাজার পৃষ্ঠার দীর্ঘ উপন্যাস কোনো কিছু থেকে বিমুখ হচ্ছে না পাঠক। উপন্যাসের বিক্রি যদি লাখে লাখে হয় তবে ছোটগল্পের বিক্রি শ’য়ের কোঠাতেই স্থির। বাণিজ্যিক সাফল্যের কারণে লেখকরা বিশেষ মনোযোগী উপন্যাসের দিকেই। চলতি পথে কোনো পাঠকের হাতে ডা ভিনচি কোড বা হ্যারি পটার থাকা স্বাভাবিক দৃশ্য, কোনো গল্পের বই যেন ততোটাই অস্বাভাবিক। হয়তো দৈনন্দিন জীবনের ব্যস্ততা ও কান্তি ভুলিয়ে উপন্যাস পারে সহজে আরেকটি কাল্পনিক জগতের সন্ধান দিতে।
উপন্যাস জীবনের একটি সম্পূর্ণ কাহিনীর ভেতর পাঠককে হারিয়ে যেতে দেয়। অথবা উপন্যাস খানিকটা সাশ্রয়ীও। স্টিভেন স্পিলবার্গ পরিচালিত টারমিনাল মুভির এমেলিয়া ওয়ারেন চরিত্রটির কথা বলা যায় এ প্রসঙ্গে। ভিক্টর নেভ্রোস্কিকে সে জানায়, ইতিহাসের পপুলার বইগুলো তার খুব পছন্দ কারণ এ বইগুলোর দাম কম। পৃষ্ঠা সংখ্যা বেশি। অনেকদিন ধরে পড়া যায়।
যদি গল্প সঙ্কলনের বাইরে গল্পের তেমন কোনো জায়গা না থাকে তবে গল্পের ভবিষ্যৎ কি? কোথায়, কিভাবে প্রকাশিত হবে এগুলো? উত্তরটা অনেক কঠিন আবার খুব সহজও। ছোটগল্পের মতো পোর্টেবল ফর্মের উপযুক্ত জায়গা সাময়িকী। ছোটগল্পই একমাত্র ফিকশন যার জায়গা সাময়িকীতে হতে পারে। পশ্চিমের সাহিত্য সাময়িকীগুলোতে ছোটগল্পের জন্য বিশেষ একটা জায়গা ছিল। এখন যা স্থান বরাদ্দ আছে তাকে সামান্য বললেও কম বলা হয়। বার্ষিক একটি বা দুুটি শর্ট স্টোরির বিশেষ আয়োজন চোখে পড়ে বটে কিন্তু তাতে বিখ্যাত লেখকদেরই আধিক্য। অথচ ছোটগল্প ফর্মটার বিকাশ শুরু হয়েছিল সাময়িকীর দিকে বিশেষ লক্ষ্য রেখে। এখন সাময়িকীগুলোর মুখ্য কাজ হয়ে দাড়িয়েছে বইয়ের মার্কেট প্রমোশন। একটি ছোটগল্প, মরূদ্যানের একখ- উদ্যান ধীরে ধীরে কল্পনায় পরিণত হতে চলেছে।
বাংলাদেশেও একই ঘটনা, প্রবন্ধ বা প্রবন্ধ ধরনের লেখা প্রকাশ করার ব্যাপারে সাময়িকীগুলোর যতোটা আগ্রহ ততোটাই অনাগ্রহ ছোটগল্প নিয়ে। পশ্চিমের কায়দার এখানেও ছোটগল্পকে ঠেলে একেবারে কোনায় চাপিয়ে দেয়া হয়েছে। বাকি থাকলো বছরের ঈদ সংখ্যা আর লিটল ম্যাগাজিন। ঈদ সংখ্যাগুলোতে উপন্যাস নামধারী আধা উপন্যাসের কদর যতো সম্পূর্ণ ছোটগল্পের কদর ততোটাই কম। কারণ পাঠককে উপন্যাস পড়ানোর মুলা দেখিয়ে বিক্রি বাড়ানোই প্রধান বাণিজ্যিক উদ্দেশ্য।
ছোটগল্পের জায়গা কমে যাচ্ছে, এটা তাহলে সত্য ঘটনা। অভিযোগ, পাঠক গল্প পড়তে চায় না। এ অভিযোগ কে করেছেন আর কিভাবেই বা এটি মর্যাদা পেয়েছে তা এক গবেষণার বিষয়। পাঠকরা গল্প পড়েন। যে পাঠক সাময়িকী বা সাহিত্য পত্রিকার রাশভারি বিষয় নিয়ে ভাবেন না, সে নিয়ে আগ্রহ নেই যার, তিনিও কিন্তু এক অবসরে গল্পটি পড়েন অথবা পড়বেন বলে ভাবেন। কিন্তু সাময়িকীগুলো দেশে-বিদেশে গল্পের জন্য জায়গা বরাদ্দ করতে আগ্রহী নয়। লেখক আর বইয়ের প্রমোশনই শেষ কথা। এ অবস্থা দেখে গত বছর বুকার প্রাইজ পাওয়া কিরণ দেশাই বলেছিলেন, লেখকদের কাছ থেকে এমন এক আচরণ প্রত্যাশা করা যেন তারা ক্রিয়েটিভ আর্টিস্ট নন। একেকজন পারফর্মিং আর্টিস্ট।
অবস্থা দেখে দেখে ছোটগল্পকারদের হতাশ হওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে। তাই আল কেনেডি তার লেখায় একটু কটাক্ষের সঙ্গে লেখককে ছোটগল্প লেখার পরামর্শ দিয়েছেন। বলেছেন, আড়াই হাজার শব্দের চেয়ে বড় কোনো গল্প লিখবেন না। লিখলে কোথাও এর জায়গা হবে না। অদ্ভুত আচরণ, বিরক্তিকর ডিটেইলস দেবেন না তাহলেও এর জায়গা হবে না। ছোটগল্প আকারে বড় হলে তুলে রাখুন সঙ্কলনগুলোর জন্য। সঙ্কলনে প্রকাশিত হলে ভালো। ভাগ্য ভালো থাকলে পুরস্কারও জুটে যেতে পারে। উপন্যাসের জন্য ডাক পেতে পারেন। কিন্তু ছোটগল্পের বই? বিক্রি হবে না।
ছোটগল্পের আকার নিয়ে বিস্তর কথাবার্তা অতীতে হয়েছে, এখনো হয়। রবীন্দ্রনাথও বলেছেন। সাহিত্যে বড়গল্প বলে যে অতিকায় প্রাণীর দেখা মেলে তাকে তিনি প্রাগৈতিহাসিক প্রাণীর সঙ্গে তুলনা করেছেন। বলেছেন, এর মাথার চেয়ে লেজ বড়। আবার রবীন্দ্রনাথই নষ্টনীড়ের মতো বড় আকারের ছোটগল্প লিখেছেন।
লিও টলস্টয়ের ইভান ইলিচের মৃত্যু বা ক্রয়েটজার সোনাটা আকারে বড়। আবার ছোট আকারের গল্পও বিস্তর। ইদানীং কেউ কেউ ছোটগল্প ও উপন্যাসের ভেদ রেখা ঘুচিয়ে গল্পকে শুধু ফিকশন বলতে আগ্রহী। তারা বলছেন আইডিয়ার কথা। আইডিয়া অনুসারে ফর্ম নির্ধারিত হবে। গল্প না উপন্যাস তা নির্ধারণ করার কি প্রয়োজন। ফিকশন শব্দটাই তো যথেষ্ট।
বিতর্ক যতোই থাকুক ছোটগল্প লেখা চলছে। আকারে ছোট-বড় সব রকমের কাজ হচ্ছে। কারণ লেখকরা লিখছেন। সাহিত্যের এ এনডেঞ্জারড প্রজাতিটি টিকে আছে লেখকদের বিশেষ ভালোবাসার কারণে। ঠিক কবিতার মতো। লেখকদের বিশেষ ভালোবাসার কারণেই এর অগ্রযাত্রা অব্যাহত আছে। লেখকরাও গল্প লিখে গর্বিত হচ্ছেন। শিল্প সৃষ্টির সুখ আস্বাদ করতে পারছেন।
সৃষ্টিশীলতা অনেক সময়ই পক্ষপাতিত্বের ব্যাপার। বাজার যা চায়, জনরুচি যেদিকে দৌড়ায়, প্রকাশকরা যাকে উৎসাহিত করেন তার দিকে সে না-ও যেতে পারে। আবার গেলেও পুরোপুরি আত্মসমর্পণ না-ও করতে পারে। ফলে মৃত্যু ঘণ্টা বাজার পরও ছোটগল্প টিকে আছে। হয়তো আরো বহুকাল টিকে থাকবে।
২১টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

×