somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সোনালি রঙের চা

০১ লা মে, ২০১৩ রাত ২:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আজ সারাটা দিন একঘেয়েমিতে কাটলো, কেন যেন কোন কিছু ভাল লাগছে না অর্পার। শেষ বিকেলে বারান্দায় দাঁড়িয়ে খুব চা খেতে ইচ্ছে করে তার। কিন্তু সমস্যা দেখা দেয় তখনি, যখন সে চা বানাতে জানে না। তার কাছে চা বানানো পৃথিবীর সবচাইতে জটিলতম কাজটির একটি। আর যে ভাল চা বানায়, সে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ রাঁধুনি। কবে কোন একদিন সে চা বানিয়েছিল, পরে দেখা গেছে সে চা পান করা বিষ খাওয়ার চেয়েও কঠিন। এরপর থেকে অর্পার মনে আতঙ্ক, সে কোনদিনও ভাল চা বানাতে পারবে না। এ বাসায় চা বানায় অন্তু। অর্পার খুব ইচ্ছে অন্তুকে নিয়ে একটা চায়ের দোকান দিবে। দোকানের নামও সে ঠিক করে ফেলেছে, “এক কাপ চা”।
মাঝে মাঝে অন্তুও এসব হাস্যকর কথায় সায় দেয়। অন্তু আর তৃনা চা বানাবে। তৃনাও অসাধারন চা বানায়। ছাত্রজীবনে মাঝে মাঝে তৃনার কারনে চা খেতে হত। অনেকদিন তৃনার হাতের বানানো চা খাওয়া হয়নি। তাই এখন আর সে বুঝতে পারে না কে বেশি ভাল চা বানায়, অন্তু নাকি তৃনা? আজ অন্তু চা বানানোর মুডে নেই।
আগে অর্পা চা, কফি এসব খেত না। বলা যায় খেতে পারতো না। গরম কাপে ঠোঁট পুড়ে যেত তার। চা তার কাছে ছিল বিভীষিকা। সে বুঝতে পারতো না এই বিদখুটে (?) গরম পানীয় মানুষ কি করে খায়। বিয়ের পর অনেক কিছুর সাথে চা পানেও এসেছে তার বৈপ্লবিক পরিবর্তন। সারাদিনে কিছুক্ষন পর পরই চা খেতে ইচ্ছে করে। হয়ত গল্পের বই পড়ছে, একপর্যায়ে তার মনে হয়- ইস! এক কাপ চা হলে খুব ভাল হতো। ফেসবুকে বন্ধুদের সাথে চ্যাট করছে, তখনও চায়ের নেশায় পেয়ে বসে তাকে। রোজ বিকেলে তার গাছগুলোকে পরিচর্যা করার পর যখন সামনের ফ্ল্যাটের বাচ্চাটার সাথে দুষ্টামি করে তখনও এক কাপ চায়ের জন্য তৃষ্ণা জাগে। ইদানিং চায়ের উন্মাদনায় এর বিকল্প ব্যবস্থা করে নিয়েছে সে। ছোটবেলা অর্পা যখন বাবাকে কফি খেতে দেখত, তখন থেকেই কফির ঘ্রান তার খুব পছন্দের। তার কাছে কফি বানানোটাও সহজ মনে হয়। এই সময়ে তাই প্রায়ই অর্পার হাতে কফির মগ দেখা যায়।

আজ কেন জানি চা খেতে ইচ্ছে করছে। চায়ের এমন তৃষ্ণা চা পাগল মানুষ ছাড়া হয়ত আর কেউ বুঝবে না। কিচেনে গিয়ে কফি বানাতে গিয়েও লেবু দেখে তার মাথায় একটা চিন্তা খেলা করে যায়। চায়ের লিকার করে কাপে লেবুর ফোঁটা পরতেই পানীয়টা সোনালি বর্ণ ধারন করে। মুগ্ধ চোখে অর্পা তাকিয়ে থাকে। লেবু চায়ের অদ্ভুত সুন্দর রঙের দিকে তাকিয়ে তার মনটা ভাল হতে থাকে। কম্পিউটারের সামনে বসা অন্তুকে চা দিয়ে নিজের কাপটা নিয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়ায় অর্পা। চারদিকে অন্ধকার নেমে এসেছে। আসে পাশের ফ্ল্যাটগুলোর দিকে তাকায় সে, প্রায় বাসায় টিভি চলতে দেখা যাছে, গরমের সময় জানালা খোলা থাকে বলে টিভি স্ক্রিনের আলো চোখে পড়ে বেশি। অর্পার টিভি দেখতে ভাল লাগে না। ও বুঝতে পারে না এত্ত বিরক্তিকর হিন্দি সিরিয়াল কি অপরিসীম ধৈর্য নিয়ে মেয়েরা দেখতে পারে! আর ছেলেদের আছে ক্রিকেট খেলা! একটা বল নিয়ে লুফোলুফি খেলা ঘণ্টার পর ঘণ্টা কি করে দেখে? ছোট্ট পরিবারের সব সুখ অর্পার কাছে এখন বোঝার মত মনে হয়। ওর মনে হয় ও যদি একান্নবর্তী পারিবারে থাকতো, তাহলে বেশ হতো। অন্তত সবার সাথে গল্প করে সময়টাতো কাটতো।

চায়ের কাপটার দিকে তাকিয়ে তৃনাকে ফোন করে সে। কেন জানি তৃনার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করছে তার। ইদানিং কারো সাথেই কথা বলতে ভাল লাগে না তার, শুধু তৃনা বাদে। মনে মনে গুছিয়ে নেয় কি কি বলবে, চায়ের কথা তো অবশ্যই বলবে। কথা গুছাতে গুছাতে মনটা খুশিতে চঞ্চল হয়ে উঠে।
কল রিসিভ করেই তৃনা বলে, “ আমি তোকে এক মিনিট পর কল দেই?”
“আচ্ছা”- বলে অর্পা লাইন কেটে দেয়। অর্পার গুছানো কথাগুলো এলোমেলো হয়ে যায়। ভাবে, তৃনা এখন কি করছে? কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছে? না কি বাসার বাইরে আছে? কারো সাথে কি গল্প করছে? ঠিক এক মিনিট পর তৃনা কল করবে। সময়জ্ঞান ওর অনেক প্রখর। এক মিনিট অ-নে-ক সময়। হয়ত আর এক মিনিট পর যতটা উচ্ছ্বাস নিয়ে সে কথা বলতে চাইছে, ততটা উচ্ছ্বাস নাও থাকতে পারে। এমনকি কথা বলার ইচ্ছাটাও তো মরে যেতে পারে। এসব ভাবতে ভাবতে অর্পা তার মোবাইলটি সোফায় রেখে লেবু চায়ে চুমুক দেয়। তারপর...। তারপর লেবু চায়ের সোনালি রঙের দিকে মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে থাকে আর অপেক্ষায় থাকে মোবাইলের রিং টোন শোনার...।
সর্বশেষ এডিট : ২৫ শে মে, ২০১৩ রাত ২:৫০
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×