somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

দূর্নীতির শীর্ষে আলোচিত ডেসটিনি!!!

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৯:৫৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

পাগলা গারদে যে লোক সুস্থ ব্যাক্তির আচরন করে সেই আসলে পাগল ।
- সৈয়দ মুজতবা আলী


“ফিরে দেখা ২০১২” অথবা সমার্থক শিরোনাম নিয়ে বিগত বছরের ব্যাপক আলোচিত ঘটনাবলী নিয়ে বিশেষ অনুষ্ঠান, ফিচার, সংবাদ তৈরী করেছে সবকটি প্রতিষ্ঠিত সংবাদ মাধ্যম । শিক্ষা, সংষ্কৃতি, বানিজ্য, অর্থনীতি, রাজনীতি… .. ইত্যাদী সকল ক্ষেত্রে জাতীয় জীবনে প্রভাব বিস্তারী সেরা ঘটনাবলীর চুম্বক অংশ উঠে এসেছে সাংবাদিক বন্ধুদের অসাধারন উপস্থাপনায় ।

দূর্নীতির আলোচনায় চ্যাম্পিয়ন পদ্মা সেতুর পরেই যার নাম বলা ফরজ সে ডেসটিনি । পদ্মা সেতুর বিষয়টি আন্তর্জাতিক বলেই তাকে চ্যাম্পিয়ন সম্মাননা দেয়া । সর্বাধিক আলেচিত এবং চাঞ্চল্যতার প্রাবল্যের ক্রমানুসারে শীর্ষ অবস্থানটি সারা বছরজুড়ে একতরফা দখল করে ছিল ডেসটিনি-২০০০ লিমিটেড । অবশ্য শীর্ষস্থান দখলের এই দৌড়ে পুরষ্কার জেতায় ডেসটিনির অবদান শুধু তার নামটাই । একচ্ছত্র সহযোগীতা করেছে সংবাদ মাধ্যম ।

বিষয়টা ভিন্ন দৃষ্টিকোন থেকে মূল্যায়ন করব । পুরোটা পড়ে আপনার ভাবনার সাথে মিলিয়ে দেখার আমন্ত্রন রইল । সংবাদ মাধ্যমগুলো প্রতিনিয়ত দেশ-বিদেশের আনাচ-কানাচ থেকে বিভিন্ন খবর আমাদের সামনে তুলে ধরছেন । তাদের এই পেশাগত কর্তব্যের খাতিরে এবং কৌশলী পারদর্শীতার গুনবলে তিলবৎ খবর বিরাটকায় তাল বনে যায় । আবার অনেক জাতীয় গুরুত্বপূর্ন ঘটনা খবর হওয়ার সম্মানটুকুও পায়না । সুবিবেচক পাঠকমাত্রেই বিষয়টি জ্ঞাত এবং পরিলক্ষনযোগ্য ।


ফিরে দেখাঃ ডেসটিনি প্রোজেক্ট ।
২০০০ সালে রেজিষ্ট্রেশন নিয়ে ২০০১ থেকে কর্মকান্ড পরিচালনা করছে ডেসটিনি । অতিক্রম করল ১১টি বছর । তাদের ব্যাবসায়িক স্ট্রাটেজী হলো প্রচার-প্রসারের প্রয়োজনে সকল সংবাদপত্র, টিভি চ্যানেল… ইত্যাদী এড়িয়ে চলা । সেটা তারা যথার্থ করেছে । যদিও বিভিন্ন জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অনুষ্ঠানাদিতে তাদের আর্থিক অংশগ্রহন ছিল উল্লেখযোগ্য । এরই মধ্যে তারা ব্যাবসা-বানিজ্যের বিভিন্ন স্তরে শেকড় গ্রোথিত করে প্রতিষ্ঠিত করেছে ডেসটিনি গ্রুপ ।

সাধারন জনগনের কাছে পরিচিত হলেও ডেসটিনির প্রসারের তুলনায় প্রচার ছিল নামমাত্র । বর্তমান ব্যাবসায়িক পরিমন্ডলে কোন একটা কোম্পানীর জন্য ব্রান্ডিং অতিব গুরুত্বপূর্ন বিষয় । এই খাতে সকলের বাজেটও তাই সর্বাধিক । ডেসটিনি এই দৌড়ে শেষ দিক থেকে শীর্ষ অবস্থানে ছিল ।

২০১২, ফেব্রুয়ারী শেষ হতে কয়েকদিন মাত্র, এক রহস্যময় প্রোপাগান্ডার সূচনা ।

প্রথম আলো এবং দৈনিক যুগান্তরের শিরোনাম লাল করে ফুটল ডেসটিনির ব্রান্ডিং কলি । ভিত্তি বাংলাদেশ ব্যাংকের একটি খসড়া প্রতিবেদন । প্রতিদিন… সপ্তাহের পর সপ্তাহ… মাসের পর মাস…। সাথে আরও দু-তিনটি পত্রিকা ঠেস মূলের ভূমিকা নিল । প্রতিদিন শিরোনাম হওয়া ডেসটিনিকে আর অবহেলা করতে পারল না টিভি চ্যানেলগুলো । তারাও কোমর বেঁধে নেমে পরলেন । তবে ATN –ভ্রাতৃদ্বয়ের কোমর বেশী শক্ত করে বাঁধা ছিল ।

সকালের নাস্তায় গুরুত্বপূর্ন আইটেম যাদের সংবাদ শিরোনাম, সপ্তাবাদে তাদেরও বদহজম হওয়া শুরু করল । রাস্তার পাশে চায়ের দোকানে রসালো অড্ডায় কয়েকদিনেই ডেসটিনির কষ অবধি শেষ হয়ে গেল । আর কত ? পাবলিকের আরও কাজ আছে আবারও প্রমানিত হলো । কিন্তু; ওনাদের কাছে ডেসটিনির রস যেন রামের তীর, শেষ হতে চায়না ।

এই সম্মিলিত উপযুপরি প্রচারনায় বাধ্য হয়ে ডেসটিনির নামে মামলা ঠুকে দিল দুদক । দুদক যে মামলা করেছে তা আবার ডেসটিনির দেয়া তথ্য-উপাত্তের উপর ভিত্তি করে । সকল পরিচালকদের বিরুদ্ধে মামলা হলেও শুধুমাত্র মোঃ রফিকুল আমিন এবং আলহাজ্ব মোঃ হোসেন –কে কারান্তরীন রাখা হয়েছে এবং প্রধান আসামী লে.জে.মোঃ হারুন-অর-রশীদ (সাবেক সেনা প্রধান) শর্ত-সাপেক্ষ জামিনে আছেন ।

বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে বিপাকে নিমজ্জিত সরকার বাহাদুরের গোদের উপর জন্ম নিল ডেসটিনি ফোঁড়া । শুধুমাত্র ডেসটিনিকে ঠেকানোর জন্য সমবায় আইনে পরিবর্তন প্রস্তাব হলো যাতে প্রতিবাদের ঝড় উঠল বাংলাদেশের সকল সমবায়ী সমিতির পক্ষ থেকে । তড়িঘড়ি করে কোম্পানী আইনে “প্রশাসক নিয়োগ” সংক্রান্ত প্রস্তাব ব্যাবসায়ী মহলকে প্রতিবাদ-মিটিং-বিকল্প প্রস্তাবনায় ব্যাস্ত করে ফেলল ।

তাদের ব্যাবসায়িক প্রক্রিয়া ব্যাতিক্রমী এবং সহজবোধ্য না হওয়াতে ব্যাপকভাবে সমালোচিত । এই প্রক্রিয়ার ব্যাবসায়ে জনগনের প্রতারিত ও ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কায় তটস্থ সকল বোদ্ধারা । তদুপরি বিগত ১২ বছরে কোম্পানীর বিরুদ্ধে কোন গ্রাহক বা কর্মচারী একটি মামলা তো দূরে থাক একটা অভিযোগও করেনি ।

তারা বরং উল্টোটা করলেন । মামলা প্রত্যাহার, বন্ধ ব্যাংক একাউন্ট খুলে দেয়া, ষড়যন্ত্রকারীদের খুঁজে বের করার আবেদন জানিয়ে মহামান্য রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, সকল সংসদ সদস্য, জেলা প্রশাসকদের নিকট স্মারক লিপি দিয়েছে । মানব বন্ধন, গন অনশন, সংবাদ সম্মেলন করে বারংবার বলে যাচ্ছেন তারা মোটেই ক্ষতিগ্রস্ত নয়, কোন পরিচালকদের বিরুদ্ধে তাদের কোন অভিযোগ নেই ।

উল্লেখ্য, সচরারচর মানব বন্ধন ইত্যাদী কর্মকান্ডে প্রায় সকলকেই সাড়ে সতেরজন ভাড়াটে অংশগ্রহনকারীকে নিয়ে সফল (!) করতে দেখা যায় । আসলে সবাই ব্যাস্ত । এক প্যাকেট বিরিয়ানী বা পঞ্চাশ টাকার জন্য এখন লোক খুঁজে পাওয়া দায় । তবে ডেসটিনির সকল প্রতিবাদী কর্মকান্ডে হাজার হাজার ডিস্ট্রিবিউটরের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহন সত্ত্বেও কোনটি সংবাদ হওয়ার যোগ্যতা রাখেনি ।

সাংবাদিক বন্ধুগন যা দেখাতে চাইছেন তার অন্তরালে কিছু আছে বৈকি ! খোলাসা করতে চলুন কিছু উত্তর আবিষ্কার করিঃ
১. শুধুমাত্র নির্দিষ্ট কয়েকটা সংবাদ পত্র ও টিভি চ্যানেলের ডেসটিনির ব্যাপারে অতি আগ্রহের কারন কি ? তাদের কাছে যুদ্ধাপরাধের বিচার, পদ্মা সেতু… ইত্যাদী বিষয় একটানা পাঁচ দিন শিরোনাম হওয়ার সুযোগ পায়না । কোন রহস্যময় যোগ্যতায় ডেসটিনি একটানা নয় মাস তাদের শিরোনাম লাল করে ?

২. বাংলাদেশের সাংবাদিকতার ইতিহাসে আর একটা বিষয় পাওয়া যাবে কি যেটা এভাবে প্রায় বছরব্যাপী একটানা শিরোনাম হয়েছে ?

৩. ডেসটিনিকে নিয়ে আগ্রহী সংবাদ মাধ্যমগুলোর স্বত্বাধিকারগনের মধ্যকার আত্বীয়তা কি ?

৪. এই বছরব্যাপী প্রচার-প্রোপাগান্ডাতে “ডেসটিনি” যেভাবে সর্বমহলের নজরে এসেছে এটা কি অন্তরালে ডেসটিনির ব্রান্ডিং পাথ ? সংবাদপত্রগুলোর বিরুদ্ধে ডেসটিনির দায়েরকৃত মানহানী মামলার কোন অগ্রগতি না থাকার অন্য কি কারন থাকতে পারে ? এতগুলো স্বতঃস্ফূর্ত বিশাল মানব বন্ধনে সাংবাদিক ভাইদের উপস্থিতি থাকলেও কার ইশারায় খবরগুলো প্রচারিত হয় না ?

৫. কোন আইনী ক্ষমতাবলে, কে ডেসটিনির একাউন্ট এতদিন বন্ধ রেখেছে ?

৬. ফাঁক-ফোঁকর রয়েছে, মামলা হতে পারে এরকম উপকরন দুদককে ডেসটিনির কর্তাব্যাক্তিরা কেন সরবরাহ করেছেন ?

৭. বাকী পরিচালকগন দুদককে এমন কি সুবিধা দিয়ে গ্রেফতার এড়িয়ে গেলেন যেটা উর্ধ্বতন তিনজন দেয়ার ক্ষমতা রাখলেন না ?

৮. কোন মামলায় প্রধান আসামীর জামিন হলেও পরবর্তীদের জামিন না পাওয়ার আইনী রহস্য কি ?

৯. “প্রশাসক নিয়োগ” সংক্রান্ত প্রস্তাবটি বাতিল করা প্রমান করে; সিদ্ধান্তটি ভুল ছিল, তবে কোন গোপন শক্তির প্রভাবে ডেসটিনি নিয়ে সরকারযন্ত্রে এই অতি ব্যাস্ততা ?

১০. সংবাদ মাধ্যমগুলোর একযোগে ধারাবাহিক প্রচারের পরেও কোন গ্রাহক বা স্টেক-হোল্ডারদের রফিকুল আমিনীয় সম্মোহন না ভাঙ্গার কারন কি ?

১১. প্রায় ৪৫ লক্ষ ডিস্ট্রিবিউটরের একজনেরও ডেসটিনির বিরূদ্ধে অভিযোগ নাই, তাহলে কার স্বার্থে এই মামলা-হামলা ?


চিন্তাশীলদের ধন্যবাদ । কেননা আপনারা ৪৫ লক্ষ জীবনের গুরুত্ব দিয়েছেন -ব্লগার তানভীর মোরশেদ
সর্বশেষ এডিট : ২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ১০:০৪
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭



অনেক দিন পর আমি আজ এই হোটেলে নাস্তা করেছি। খুব তৃপ্তি করে নাস্তা করেছি। এই হোটেল এর নাম বাংলা রেস্তেরা। ঠিকনা: ভবেরচর বাসস্ট্যান্ডম ভবেরচর, গজারিয়া, মন্সীগঞ্জ। দুইটি তুন্দুল রুটি আর... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

×