somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

যাযাবরের দৃষ্টিপাত পড়ে মানুষ প্রেম করতে শিখেছে: সমরেশ মজুমদার

২৩ শে জানুয়ারি, ২০১৩ সকাল ৮:২৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :




সমরেশ মজুমদার। প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি ঔপন্যাসিক। পশ্চিমবঙ্গের মতো এ দেশের পাঠকের কাছেও সমান জনপ্রিয়। গত বুধবার বাংলাদেশ প্রতিদিন কার্যালয়ে এসেছিলেন তিনি। চায়ের কাপে ধোঁয়া উড়িয়ে বেশ কিছুক্ষণ জমিয়ে আড্ডা দেন। এ সময় তিনি কথা বলেন দুই বাংলার শিল্প-সাহিত্য নিয়ে। স্মৃতিচারণ করেন প্রয়াত কথাসাহিত্যিক কলম জাদুকর হুমায়ূন আহমেদকে ঘিরেও। তার সাক্ষাৎকার নিয়েছেন_ শেখ মেহেদী হাসান ও শামছুল হক রাসেল



কেমন আছেন?

সব মিলিয়ে ভালোই আছি। এর আগে এসেছিলাম গত বছর সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহে। তবে নতুন বছরে ঢাকা এসে এবার একটা পার্থক্য অনুভব করছি। আর সেটা আবহাওয়া। ঢাকার শীত বেশ উপভোগ করছি। তা ছাড়া এখানে এলে কোনো পার্থক্য মনে করি না। কারণ বাংলাদেশের পাঠকরা আমাকে খুব ভালোবাসে। এখানকার আতিথেয়তা আমাকে মুগ্ধ করে। মনে হয় নিজ শহর কলকাতাতেই আছি।



সামনে বাংলা একাডেমী ও কলকাতা বইমেলা, এবার কয়টি বই বের হচ্ছে।

একুশে বইমেলা বাংলাদেশের বৃহত্তম সাংস্কৃতিক উৎসব। বছরজুড়ে মানুষ এ মেলার জন্য অপেক্ষা করে। তারা বই কেনার জন্য টাকা গুছিয়ে রাখে। একুশের বইমেলা এলে পাঠকরা তাদের পছন্দের বই কিনে সারাবছর পড়ে। এর মাধ্যমে বাঙালির সৃজনশীল চর্চার খবর পাওয়া যায়। আমি ১৯৮৭ সাল থেকে বাংলা একাডেমীর বইমেলা দেখছি। বহুদিন যাবৎ বাংলা একাডেমীর বইমেলার মূল আকর্ষণ ছিল হুমায়ূন আহমেদ। তিনি বইমেলাকে ভীষণ জনপ্রিয় করে তুলেছিলেন। বাংলা ভাষার বহু পাঠক তিনি সৃষ্টি করেছেন। তাকে খুব মিস করছি। এ বছর কলকাতা বই মেলায় আমার সাতটি বই বের হচ্ছে।



হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে আপনার পরিচয় কিভাবে?

হুমায়ূন তো ছিলো বাংলা সাহিত্যের বাদশা। ১৯৮৭ সালে তার সঙ্গে আমার পরিচয়। সে তখন তরুণ, ক্ষীণ চেহারার। পোশাক সম্পর্কে উদার। শিক্ষকতার পাশাপাশি সবে লিখতে শুরু করেছে। বই বের হচ্ছে। পাঠক হুমায়ূনের বই কিনছে, পড়ছে। তারপর তো সে ইতিহাস সৃষ্টি করল। আমি একবার বাংলা একাডেমী বইমেলায় এসে খেয়াল করলাম, তার ভক্ত-পাঠকরা লাইন ধরে তার বই কিনছে। আর হুমায়ূন দাঁড়িয়ে অটোগ্রাফ দিচ্ছেন। আমিও ওই লাইন ধরে তার সামনে পেঁৗছে হাত এগিয়ে দিলাম অটোগ্রাফ দেওয়ার জন্য। তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরে বললেন_দাদা, আমাকে লজ্জা দিচ্ছেন।

সে হঠাৎ করেই আমাদের সবাইকে ফাঁকি দিয়ে চলে গেল। আমি জানি এবার হুমায়ূনের লেখার জন্য হাজার হাজার পাঠক উন্মুখ থাকবে। ঢাকা ও আশপাশের মানুষ যারা নিয়মিত বইমেলায় আসতেন তারা উদগ্রীব থাকবে তার জন্য। এবার বইমেলায় তাকে পাচ্ছি না। সবার মাঝে একটা শূন্যতা নেমে এসেছে। তার আত্দার শান্তি কামনা করি।



বাংলা ভাষার সেরা রচনাসমূহ আমরা অন্যভাষার মানুষের কাছে যথাযথ তুলে ধরতে পারছি না। এ ব্যাপারে কি করা যেতে পারে?

বাংলা ভাষার সেরা রচনাসমূহ অন্য ভাষার মানুষের কাছে তুলে ধরার একমাত্র উপায় অনুবাদ করা। এ ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি উদ্যোগ নিতে হবে। যারা ভিন্ন ভাষায় দক্ষ তাদের দিয়ে বাংলা ভাষার সেরা রচনাগুলোর অনুবাদ করা যেতে যারে। আমাদের দুই বাংলার বিভিন্ন প্রকাশনা থেকে অনুবাদ বই বের হচ্ছে কিন্তু সেসব অনুবাদের মান নিয়ে নানা সময় প্রশ্ন ওঠে। প্রশিক্ষিত ভালো অনুবাদকেরও অভাব রয়েছে। তবে আমার বিশ্বাস বাংলা ভাষায় রচিত অনেক গুরুত্বপূর্ণ রচনা রয়েছে, যেগুলো সূচারু অনুবাদ হলে আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভ সম্ভব।



কিভাবে বাংলা বইয়ের আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টি করা যায়?

আন্তর্জাতিক বাজার সৃষ্টির জন্য প্রচারণা দরকার। বাংলা বইয়ের ক্ষেত্রে সেটি খুব বেশি হয় না। বাংলাদেশের বাইরে বহু মানুষ বাংলা বই পড়েন। নিউইয়র্ক, জার্মানি, কানাডাসহ পৃথিবীর নানা জায়গায় বাংলা বইয়ের মেলা হয়। সেখানে আমাদের প্রবাসীরা প্রচুর বই কেনেন। আমার মনে হয়েছে, বাংলাদেশে যত মানুষ বই পড়েন, তার চেয়ে তিন গুণ পাঠক বিদেশে রয়েছেন। তারা নিয়মিত বই পড়েন। বলতে পারেন তাদের প্রত্যেকের বাড়ি এক একটি পাঠাগার। কিন্তু আমরা তাদের কাছে আমাদের বই পেঁৗছে দিতে পারি না। তাদের হাতে আমাদের বই পেঁৗছে দিতে হবে। তাহলেই বিস্তৃত হবে পাঠকের পরিধি। বিশ্বের বড় বড় প্রকাশনী যেমন_ পেঙ্গুইন, রুটলেজ এদের আকর্ষণ করতে হবে। এ নিয়ে আমার একটি স্মৃতি রয়েছে।



আপনার সেই স্মৃতিটা বলুন।

আমার একটি বই আছে 'গর্ভধারণী'। যা পরবর্তেিত 'লিফস অব ব্লাড' নামে অনুবাদ হয়। বইটির অনুবাদ প্রকাশের জন্য নিউইয়র্কের একটি প্রকাশনী আগ্রহ দেখায়। আমি নিউইয়র্ক গেলাম। তাদের সঙ্গে কথা হলো। চা খেতে খেতে প্রকাশক বললেন_ 'আপনার বই তো কেউ পড়বে না। এটা তো ব্রিটিশ ইংরেজিতে অনুবাদ। নব্য আমেরিকানরা ব্রিটিশ ইংরেজি পছন্দ করেন না।' আমি নিজেই চিন্তা করলাম, আসলেই তো আমেরিকান ও ব্রিটিশ ইংরেজির মধ্যে ভাষা ও শব্দগত তফাৎ রয়েছে। অনেক শব্দের উচ্চারণগত কারণে লেখার ভাবও পরিবর্তন হয়ে যায়। দেখুন না, আমরা গাড়ি চালাই ডান দিকে বসে, তারা বাম দিকে বসে। এক পর্যায়ে ওই প্রকাশক আমার বইটি প্রকাশ করে। তারা 'লিফস অব ব্লাড' বইখানি ক্যাম্পেইনের জন্য বিভিন্ন স্টলে রেখেছিল কিন্তু সেরকম সাড়া পাইনি।



বাংলাদেশের লেখকদের মধ্যে কাদের লেখা আপনি পড়েন?

এখানে আমার অনেক প্রিয়জন রয়েছে। সৈয়দ শামসুল হক, হাসান আজিজুল হক, সেলিনা হোসেন, ইমদাদুল হক মিলন, আনিসুল হক এদের লেখা নিয়মিত পড়ি। প্রয়াতদের মধ্যে সৈয়দ ওয়ালী উল্লাহ, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, মাহমুদুল হক আমার প্রিয়। অন্যদিকে আজও আমি 'চাঁদের অমাবস্যা', 'খোয়াবনামা' কিংবা 'জীবন আমার বোন' মন দিয়ে পড়ি। এসব লেখা আজীবন থাকবে। হুমায়ূনের হঠাৎ প্রয়াণ আমাদের বিশেষ ক্ষতি করল। শামসুর রাহমান আমার প্রিয় বন্ধু। তার লেখা আজীবন মানুষ পড়বে। আমি বেলাল চৌধুরী, রফিক আজাদের কথাও বলতে চাই। সৈয়দ শামসুল হক, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শামসুর রাহমান, বেলাল, রফিক এরা বাংলা সাহিত্যকে অনেক দিয়েছেন। সেই ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে হবে। তাহলেই এগিয়ে যাবে বাংলা সাহিত্য।



বাংলা বইয়ের সম্পাদনা ও প্রকাশনার মান আপনার কেমন মনে হয়।

আমাদের বইয়ের সম্পাদনার মান দুর্বল। এর মূল কারণ অনেক লেখক ও প্রকাশক আছেন, যারা কেবল বইমেলাকে কেন্দ্র করে বই লেখা ও প্রকাশনায় ব্যস্ত থাকেন। অনেক প্রকাশনা সংস্থার নিজস্ব কোনো সম্পাদনা বোর্ড, নির্বাচক থাকে না। তারা খ্যাতিমান কোনো লেখকের বই পেলে হুড়মুড়িয়ে ছেপে দেন। কেবল কিছু সরকারি ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানের প্রকাশনাসমূহ বিশেষজ্ঞের হাতে রিভিউ করানো হয় এবং তাদের মতামত সাপেক্ষে বই ছাপা হয়। তারা সম্পাদনার ব্যাপারটি নজর রাখে। কিন্তু বাইরের প্রকাশকরা বিষয়টি গুরুত্ব দেন না। এর ফলে অনেক বড় লেখকের বই অযত্নে পাঠকের কাছে চলে যায়। বিশ্বের বড় বড় প্রকাশনা সংস্থা বই প্রকাশের আগে রিভিউ, সম্পাদনা করে থাকেন। তবে দুই বাংলায় প্রকাশনা মান দিনে দিনে বাড়ছে।



এ বছর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের নোবেল জয়ের শতবর্ষ পালিত হচ্ছে।

এটি আমাদের জন্য অত্যন্ত গৌরবের ব্যাপার। কারণ বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথের হাত ধরে 'গীতাঞ্জলি' কাব্যের মাধ্যমে নোবেল এসেছিল। রবীন্দ্রনাথ তো বাঙালির অন্যতম শ্রেষ্ঠ সম্পদ। তার সম্পর্কে বলে শেষ করা যাবে না।



তার কোন রচনাগুলো আপনার সবচেয়ে টানে?

রবীন্দ্রনাথের সব লেখাই আমি পড়ি। তার ছোটগল্পগুলো আমার প্রিয়। আমি ২১ বছর বয়সে যখন 'শেষের কবিতা' পড়ি তখন তো রোমাঞ্চে থাকতাম। মনে মনে অমিত রায় হয়ে গিয়েছিলাম। রাতে স্বপ্ন দেখতাম। অনেক ডায়ালগও মুখস্থ হয়ে গিয়েছিল। তখন ভাবতাম, কি অসাধারণ লেখা। কিন্তু ৫৫ বছর বয়সে 'শেষের কবিতা' পড়ে আমি দেখলাম এর কাহিনী পুরটাই কাল্পনিক। চরিত্রগুলো বানানো। তিনি এই বানানো চরিত্রগুলো পাঠককে বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন। তিনি যেমন লিখেছেন, 'তব দয়া করে ধুতে হবে জীবন আমার', 'আমার এ জীবন ধুতে হবে মুছতে হবে' কিংবা 'দিনের সব তারাই আছে রাতের আলোর গভীরে'। এ সব কথাগুলো তিনি পাঠকদের বিশ্বাস করাতে পেরেছিলেন



'কালি ও কলম', 'কল্লোল'গোষ্ঠীরা এ বিষয়ে কিছু পরিবর্তনের কথা তুলেছিলেন।

হ্যাঁ। এসব নিয়ে কল্লোলগোষ্ঠীরা একটা আন্দোলন গড়ে তুলেছিল। তারা চেষ্টা করেছিলেন, বানানো কোনো লেখা লিখবেন না। ওই সময় রবীন্দ্রনাথ প্রেমেন্দ্র মিত্রের 'ফাঁক' গল্পটি পড়ে ক্ষুব্ধ হয়েছিলেন। এর বিপরীতে রবীন্দ্রনাথ 'তিন সঙ্গী', 'ল্যাবরেটরী', 'শেষ কথা' লিখেছিলেন। কিন্তু সিরিয়াস পাঠকরা তা গ্রহণ করেননি। কারণ তিনি তো অত্যন্ত মননশীল লেখক ছিলেন। তবে রবীন্দ্রনাথের গান সবাইকে আকর্ষণ করেছিল। তার অন্যান্য রচনা যতখানি পঠিত হয়, তার চেয়ে গানই বেশি প্রচারিত।

১৯৬১ সালে রবীন্দ্র জন্মশতবর্ষে তাকে বিরোধিতা করা হয়েছিল। তাতে রবীন্দ্রনাথের কিচ্ছু আসে যায়নি। বরং তার পাঠক দিন দিন আরও বৃদ্ধি পাচ্ছে। রবীন্দ্রনাথের গান বাংলার শ্রমজীবী মানুষ পর্যন্ত শোনে। শান্তিদেব ঘোষ, হেমন্ত মুখ্যোপাধ্যায়, দেবব্রত বিশ্বাস, কনিকা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রমুখ শিল্পী রবীন্দ্রনাথের গানকে জনপ্রিয় করেছেন। যেমন যাযাবরের 'দৃষ্টিপাত' পড়ে মানুষ প্রেম করতে শিখেছে। রবীন্দ্রনাথের গান শুনে মানুষ নিজেকে চিনতে ও ভাবতে শিখেছে। এ জন্য তার 'গীতাঞ্জলী'র চেয়ে 'গীতবিতান' আমার ভীষণ প্রিয়।



একটু পেছনে ফেরা যাক; আপনার লেখালেখির শুরুটা কিভাবে?

আমার বয়স তখন ২২ কি ২৩। তখন থিয়েটার করতাম। বলতে পারেন অভিনয় নিয়ে মেতে থাকতাম। আমাদের গ্রুপের জন্য একবার একটা স্ক্রিপ্টের প্রয়োজন পড়ল। তা আমার এক বন্ধু বলল 'তুই লেখ, চেষ্টা করলে ভালো কিছু করতে পারবি।' বন্ধুর কথায় সায় দিয়ে নাটক লিখলাম। কিন্তু সেটা মনঃপূত না হওয়ায় আমাকে গল্প লিখতে বলল। যে কথা সে কাজ। আমিও নাটকটিকে গল্পে রূপান্তরিত করলাম। প্রথমে দেশ পত্রিকায় ছাপানোর জন্য পাঠালাম। কিন্তু ছাপানো হয়নি। মনটা ভেঙে গেল। আমার লেখা না ছাপানোর কারণে সে বন্ধু ওই পত্রিকার সম্পাদকের চৌদ্দগোষ্ঠী উদ্ধার করল। অবশেষে কাগজে ছাপালাম। সেখান থেকে আমাকে ১৫ টাকা দেওয়া হলো। আমি তো মহাখুশি। বন্ধুরাও পারে তো আমাকে মাথায় তুলে ফেলল। ওই টাকা নিয়ে সবাই মিলে গেলাম কফি হাউসে। এরপর বন্ধুরাও বলল, 'তুই আবার লেখ, তাহলে আবার টাকা পাবি।' আমিও কফি খাওয়ার লোভে আবার লিখলাম। এবার দেওয়া হলো ৫০ টাকা। সেখান থেকে ২৫ টাকা খরচ করে কফির সঙ্গে জলখাবারও খেলাম। বলতে পারেন কফির দাম মেটাতেই লেখালেখি শুরু করি। লিখলে টাকা পাব এ নেশাতেই লেখা এগিয়ে চলল। মাঝে মাঝে মনে হয় সত্যিই কি আমি টাকার টানেই লিখি? নাকি মনের টানে?



কোনটি সেরা-মাধবীলতা নাকি দীপাবলি?

আমার কাছে এর ব্যাখ্যা ভিন্ন ভিন্ন সত্যি কথা বলতে কি দুটো দুই জায়গায় অবস্থান করছে। কেউ কেউ বলে থাকেন 'কালবেলা' আমার সর্বাধিক পঠিত উপন্যাস। আবার কেউ বলেন 'সাতকাহন'। আমার মনে হয় এর উত্তর সাতকাহনই হবে। এ উপন্যাসটি আমার জীবনের অভূতপূর্ব সাড়া এনে দিয়েছিল। এটি বেরুনোর পর পশ্চিমবঙ্গ এবং বাংলাদেশ থেকে অনেক পাঠক আমাকে চিঠি লিখেছেন। তারা তাদের মতামত দিয়েছেন। এমনকি কোনো কোনো মেয়ে জানিয়েছে, তারা দীপাবলি হতে চায়। তাদের আদর্শ সাতকাহনের দীপাবলি। এটিই তো একজন লেখকের বড় পাওয়া। অন্যদিকে মাধবীলতা চরিত্রটি পুরুষদের মনে বেশি দাগ কেটেছে। কারণ এই চরিত্রটি কাল্পনিক। আর কাল্পনিক বা ছায়াকে পুরুষরা বেশি পছন্দ করে। যে কোনো ছায়া পুরুষের মনে বেশি দাগ কাটে। তাই মাধবীলতা চরিত্রটি পুরুষের কাছে বেশি গ্রহণযোগ্য। অন্যদিকে দীপাবলি চরিত্রটি বাস্তব ও সংগ্রামী। যেটা মেয়েদের ক্ষেত্রে বেশি প্রযোজ্য। তাই তো তারা একে আদর্শ হিসেবে নিয়েছে।



শুনেছিলাম 'উত্তরাধিকার', 'কালবেলা' ও 'কালপুরুষ' এর ধারাবাহিকতায় আরও একটি উপন্যাস লিখছেন। যার নাম দিয়েছেন 'মৌষলকাল'_ পাঠকরা এটি কবে পাবে?

আসলে 'উত্তরাধিকার', 'কালবেলা' ও 'কালপুরুষ' আমার লেখালেখি জীবনে ওতপ্রোতভাবে মিশে গেছে। এই উপন্যাসত্রয়ীর জনপ্রিয়তা ও পাঠকদের ভালোবাসা মাথায় রেখে 'মৌষলকাল' লিখছি। এখানে মহাভারতের কুরুক্ষেত্রের পর যে প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছিল তা তুলে ধরেছি। আরেকভাবে বলতে গেলে পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন সমস্যা ও রাজনৈতিক বেড়াজাল তুলে ধরেছি এখানে। বামফ্রন্টের পরাজয় ও তৃণমূল কংগ্রেসের উত্থান এবং বর্তমান প্রেক্ষাপটে রাজনীতির অবস্থানকে তুলে ধরেছি। পহেলা বৈশাখে পাঠকদের হাতে পেঁৗছে যাবে এটি। বলতে পারেন, 'মৌষলকাল' উপন্যাসটি হবে আরেকটি ড্রিমপ্রোজেক্ট। সবচেয়ে বড় কথা, 'কালবেলা'র সেই মাধবীলতার চরিত্রটি এখানে পাওয়া যাবে। কিন্তু পাঠকরা পাবেন প্রায় ৭০ বছর বয়সী সেই মাধবীলতাকে। আরও অনেক চরিত্রই এখানে পাওয়া যাবে যেটা কালবেলারই অংশ। তবে সবাই এখন বয়সের ভারে নূ্যব্জ।



বর্তমান প্রজন্মের লেখা কেমন লাগে?

আমি খুঁজে খুঁজে তরুণদের লেখা পড়ি। তাদের লেখার সঙ্গে ভাবনা বিনিময় করি। তরুণদের লেখায় সাধারণ মানুষের ঘামের গন্ধ পাই। চারপাশের মানুষের কথা জানতে চাই। তবে তথ্যমূলক সাহিত্য আমাকে প্রভাবিত করে না। এবং তাতে আমার আসক্তি নেই। ধরুন, রবীন্দ্রনাথের 'গোরা' উপন্যাস আজও অনেক পাঠক অর্ধেক পড়ে বাকিটুকু পড়েন না। যে 'চতুরঙ্গ' পড়ে না, সে আবার 'শেষের কবিতা' পড়ে। আবার বহু পাঠকই হুড়মুড়িয়ে তার ছোটগল্প পড়ে। তরুণদের লেখায় আমি নানা বৈচিত্র্য খুঁজে পাই। তাদের লেখায় খুঁজে পাই ছন্দ। তাদের বিভিন্ন বিষয়ে আগ্রহ দেখে আমার ভালো লাগে। এ আগ্রহের মাত্রাকে বাড়াতে হবে। আমি বিশ্বাস করি, তরুণদের হাত ধরে আমাদের সাহিত্য অনেক এগিয়ে যাবে। সবচেয়ে বড় কথা এ প্রজন্মের ওপর আস্থা রাখতে হবে। সুযোগ দিতে হবে তাদের। তাহলেই তারা এগিয়ে যাবে নানা বৈচিত্র্যতার ছোঁয়ায়।

আপনাকে ধন্যবাদ!

তোমাদেরকেও ধন্যবাদ। সেই সঙ্গে বাংলাদেশ প্রতিদিনের সব পাঠককে আমার আন্তরিক শুভেচ্ছা।

তথ্যসূত্র : বাংলাদেশ প্রতিদিন
৪টি মন্তব্য ৪টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×