somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চট্টগ্রাম থেকে – ১৫ই জুন

১৯ শে জুন, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

(১৬ই জুন সকাল) : আমরা ঢাকায় ফিরে এসেছি । আমি খুব করে চাচ্ছিলাম আমরা যা দেখেছি তার একটি স্পষ্ট ছবি সবার কাছে তুলে ধরতে । কিন্তু সত্যিকারের একটা নরকের মাঝে তিনদিন থেকে এসে আমার মস্তিষ্কও কিছুটা বিধ্বস্ত । কত মানুষকে যে ফেলে এসেছি সে নরকের মাঝে, একা । এই আরামের জীবনে ফিরে আসার আগে প্রতিটি চোখের পানি যদি মুছে ফেলা যেত, প্রতিটি মুখে যদি দিয়ে আসা যেত একটুকরো হাসি, যদি বলা যেত আমরা আবার ফিরে আসবো তোমাদের মাঝে ! কত ভালোই না হত সেটা ।

মাঝরাতের আগে থেকেই বৃষ্টি শুরু হয়েছে; টিপটিপ করে নয় রীতিমতো ঝুম বৃষ্টি । যে মানুষগুলো স্মৃতিতে পাকাপাকিভাবে স্থান করে নিয়েছে ধ্বংসের বিভৎস কিছু ছবি আর নৃশংস কিছু শব্দ ; আমি নিশ্চিত তারা আজ সারারাত আর ঘুমাতে পারবে না । তারা তো আমাদের কাছে আর শুধুমাত্র ধ্বংসের শিকার কিছু মানুষ নয়, তারা আমাদের বন্ধু, ভাই ; এক ধরণের আগ্রহ আর ভালোবাসা নিয়ে আবার যাদের দেখা পাবার জন্য আমরা বসে আছি ।

লেবুবাগান সম্ভবত সবচাইতে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা গুলোর একটি । জল কাদায় মাখামাখি হয়ে যাবার প্রস্তুতি নিয়েই আমরা লেবু বাগান পৌঁছলাম কিন্তু কোন ত্রাণতৎপরতা দৃষ্টিগ্রাহ্য হলো না । অথচ একদিন আগেই, যখন মাথার উপর ছিল উজ্জল সূর্য, আমরা দেখেছি অনেক সংস্থা ত্রাণ নিয়ে এগিয়ে এসেছে । আজ কেউ নেই এর কারণ কি তাহলে এই যে বৃষ্টিতে ভেজাটা খুব স্বস্তিকর নয় ? যে মানুষগুলো হারিয়েছে তাদের আপনজন, তাদের সর্বস্ব; রোদ আর বৃষ্টি তো তাদের কাছে কোন ব্যাপার নয় ! তাদের সাহায্য প্রয়োজন এখনই এবং তা স্বল্পমেয়াদী নয়, দীর্ঘ সময়ের জন্য ।

গতকাল বিকেলে নূরজাহানের দেহ খুঁজে পাওয়া গেছে । ফাহিনূর আর তার ভাই অন্তত মর্যাদার সাথে চিরনিদ্রায় শুইয়ে দিতে পারবে তাদের মাকে । কিন্তু লেবু বাগানের শূণ্যতাটা আজ বড় বেশী লাগলো । গতকালও যেখানটা ছিলো সেনাবাহিনীর জওয়ান, অগ্নিকর্মী আর সাধারণ মানুষের পদচারণায় মুখর, আজ তাই পরে আছে রিক্ত, হতশ্রী চেহারা নিয়ে ।

দ্রুত জমে ওঠা পানি নিষ্কাষণের ব্যবস্থা করতে বৃষ্টির মাঝেই মানুষগুলো বের হয়ে এসেছিলো । তখনই প্রথমবার পাহাড় ধ্বসে পড়ে এবং চাপা দেয় তাদেরকে । আর্তচিৎকারে ছুটে আসে আরো মানুষ আর এর পরপরই আরো তিনজায়গায় পাহাড় ধ্বসে জ্যান্ত কবর দিয়ে ফেলে সবাইকে । বেঁচে যাওয়ারা চিরজীবন বহন করে যাবে সেই দুঃসহ স্মৃতি, প্রিয়জনের বাঁচাও বাঁচাও চিৎকার । শত চেষ্টা করেও যাদের একজনকেও বাঁচানো গেলো না, শুধু খুঁড়ে বের করা গেলো তাদের প্রাণহীন দেহ ।

পুরো কাহিনী বলে ফেলাটা আমার পক্ষে সম্ভব নয়, এত নিষ্ঠুর বাক্য গঠনের মত শক্তিশালী আমি নই । যা বলতে পারছি তা পুরো ঘটনার কিছু টুকরো মাত্র ।

যাই হোক, আমার মনে হয় যাদের আসলেই সাহায্য প্রয়োজন তাদের কয়েকজনকে আমরা চিহ্নিত করতে পেরেছি । স্থানীয় সমাজও এ ব্যাপারে একমত । যৎসামান্য কিছু অর্থ দিয়ে এসেছি তাদের জিনিসপত্র কিনবার জন্য, আর কথা দিয়ে এসেছি ফিরে যাবার, ব্লগ কমিউনিটিকে নিয়ে নতুন করে তাদের জীবন গড়ে তুলবার । ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে আমরা যাইনি, সে জন্য সুসংগঠিত পেশাদার সংস্থা রয়েছে । আমরা শুধু কথা দিয়ে এসেছি দুঃখি কিছু মানুষকে তিনমাস পূর্ণ সহায়তা দেবার । বাড়ি ভাড়া, বাড়ির জন্য নিত্য প্রয়োজনীয় আসবাব ও দ্রব্যাদি, কাপড় এবং অবশ্যই প্রয়োজনীয় অর্থ সাহায্য আমরা দেব, যেন তারা ইত্যবসরে ভালো কোন চাকুরির খোঁজ করতে পারে । এই অন্ধকার সময়ে তাদের পাশে থাকাটা পরবর্তীতে মাথা তুলে দাঁড়াবার রসদ জোগাবে ।

ব্লগ কমিউনিটি এখন তাদের পরিবারের নতুন কিছু সদস্যকে পাবে, তাদের ছবি ও ইতিহাস যতটুকু সম্ভব আমরা উপস্থাপন করব । সম্ভবত এই প্রচেষ্টার সবচেয়ে বড় ফসল হবে একটি সংগঠিত ব্লগ কমিউনিটি, যারা পরবর্তীতে সাড়া দেবে আরো বড় দুর্যোগে, পাশে এসে দাঁড়াবে দুর্দশাগ্রস্থ মানুষদের । দুঃসময়ে হাতে হাত রেখে সান্তনা দেয়া, তাদের মনে এই অনুভূতির জন্ম দেয়া যে ‘আমি একা নই’, ভবিষৎতের বন্ধু হিসেবে পাশে পাবার আশ্বাসের চাইতে বড় সাহয্য আর কি হতে পারে ? হূমায়ূনের ভাইদেরকে দেখতে তৃতীয়বার হাসপাতালে যাবার পর প্রথমবারের মতো তাদের মুখে ফুটে উঠেছিলো এক টুকরো হাসি ; নিশ্চয়ই এই ভেবে যে তাদের পাশে থাকার মত কেউ আছে ।
সর্বশেষ এডিট : ১৯ শে জুন, ২০০৭ সন্ধ্যা ৭:০৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

পথ হারিয়ে-খুঁজে ফিরি

লিখেছেন সামিউল ইসলাম বাবু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১:৩৩


মনটা ভালো নেই। কার সাথে কথা বলবো বুঝে পাচ্ছি না। বন্ধু সার্কেল কেও বিদেশে আবার কেও বা চাকুরির সুবাদে অনেক দুরে। ছাত্র থাকা কালে মন খারাপ বা সমস্যায় পড়লে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×