মৃদু মন্দে মন্দারমণি
ছোট বড় নানা সাইজের নানা আকারের অজস্র অজস্র ঝিনুক ছড়িয়ে আছে সৈকতে৷ কুড়িয়ে নেওয়ার কেউ নেই৷ প্রতিটি ঢেউএর সাথেই আসছে আরও ঝিনুক৷ ছোট্ট নুড়ির মত দেখতে আস্ত ঝিনুকও দেখলাম কিছু কিন্তু অ্যাত্ত নরম! হাতে নেওয়ামাত্রই সেগুলো ভেঙে যায়৷ সৈকতে যদ্দূর ঢেউ আছড়ে পড়ছে, তদ্দূর অব্দি বালি ঠান্ডা, ভেজা ভেজা৷ আর তারপরেই শুকনো তপ্ত বালি৷ খালি পা রাখতেই মনে হল যেন ফোস্কা পড়ল পায়ে! এই তপ্ত বালিতেও কিছু মানুষ বসে আছেন৷ কেউ বা বেড়াতে এসেছেন, কেউ বা ওখানকারই লোক৷ দুজন মানুষকে দেখলাম খানিকটা বালি সরিয়ে তাতে প্লাষ্টিক বিছিয়ে জল ঢেলে দিয়েছেন দু-তিন গামলা৷ ছোট্ট, খুব ছোট্ট এক পুকুর যেন! তাতে কিলবিল কিলবিল করছে ভীষণ ছোট্ট সব মাছ, ইঞ্চিখানেক লম্বা সাপ৷ মানুষটি বসে বসে কিছু একটা বেছে আলাদা করছেন আর সেই আলাদা করে তুলে রাখা অতি ক্ষুদ্র মাছগুলি তুলে রাখছেন পাশেই রাখা প্লাস্টিকের গামলাভর্তি জলে৷ খানিক দাঁড়িয়ে বোঝার চেষ্টা করেও বুঝতে না পেরে জিজ্ঞেস করব ভেবেও কিছু বললাম না, একাগ্র মানুষটির মনযোগ নষ্ট করতে মন চাইল না বলে৷ ডাবওয়ালারা ভিজে গামছা গায়ে মাথায় জড়িয়ে দাঁড়িয়ে আছে গরম বালিতে৷ বিচের দিকে এগুনো যে কোন মানুষকে দেখেই এগিয়ে আসছে তারা সাইকেল নিয়ে, ডাব খান বাবু ডাব৷ ডাব খাবেন না? তবে বিয়ার খান! তোমরা বিয়ারও রাখো নাকি? জানতে চাইলে জবাব এলো, হ্যা ঁদিদি, রাখি৷ যা চান সবই পাবেন! কি চাই বলুন!
চারিদিকে তাকিয়ে দেখি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছেন বেশ কিছু মানুষ৷ কেউ বসে আছেন একেবারে জলের ধারটি ঘেঁষে, কোলে একেবারেই ছোট বাচ্চা৷ কর্তা গিন্নি দুজনেই জলের ধারে বসে আছেন৷ ঢেউ এসে ভিজিয়ে দিলে যেটুকু স্নান হয় ওটুকুতেই তারা খুশি৷ স্কুলপড়ুয়া তিনটি ছেলে নেমে গেছে অনেকটা জলে৷ ঢেউএর সাথে সাথে ওরা ডুবছে ভাসছে৷ মাঝে মাঝে দেখাও যাচ্ছে না ওদের৷ আবার দেখা যায়, ঐ যে! ওরা লাফাচ্ছে! আমার মনে হল, এভাবেই তো সমুদ্রে স্নান করতে এসে ডুবে যায় অনেকে৷ মাঝে মাঝেই খবরের কাগজে থাকে সেই সব খবর৷ কিন্তু ঐ বাচ্চাগুলোর কোনদিকে কোন খেয়াল নেই৷ বিশাল উঁচু উঁচু ঢেউএর মাথায় চেপে চেপে তার চলে যাচ্ছে দূরে আরও দূরে!
একটু উঁচু জায়গায় চটি রেখে এগিয়ে যাই জলের দিকে৷ ঝিনুক কোড়োতে কুড়োতে৷ দু'হাত ভরে ওঠে নিমেষেই৷ এত ঝিনুক এতো এতো ঝিনুক! এক সময় মনে হয় থাক, কী হবে! ক'টা ঝিনুক আমি সাজিয়ে রাখব? থাক ওরা এখানেই৷ সমুদ্র এখানে খুব কাছে ডাঙা থেকে৷ খুব খুব কাছে৷ বিছিয়ে আছে এক সাগর জল নিয়ে৷ শুয়ে আছে৷ ঘোলাটে জল নিয়ে ধুসর সমুদ্র বিছিয়ে আছে দৃষ্টিসীমার বাইরে অব্দি৷ এই সমুদ্রকে, এই বিছিয়ে থাকা বিস্তীর্ণ জলরাশিকে এখানে হাত বাড়ালেই ছোঁয়া যায়৷ সত্যি সত্যিই ছোঁয়া যায়! হাতে নেওয়া যায় আঁজলাভর্তি জল৷ যদিও নিমেষেই আবার তা গড়িয়ে নেমে যায় সাগরেই! একমুঠো বালি তুলে আনি আমি জলের ভেতর থেকে, মুঠো খোলার আগেই বালি নেমে যায় জলের সাথে ৷ আমি দেখতে পাই আমার হাতে ছোট্ট এক নুড়ি আর একটা ছোট্ট ঝিনুক, জ্যান্ত! আমি ওকে আবার জলেই ফিরিয়ে দিই, নুড়িটিকেও ৷ এই সমুদ্র গায়ে মেখে জলপরী হওয়া যায়৷ ঢেউ ভেঙে ভেঙে যদিও খুব বেশিদূর এগুতে পারি না আমি৷ ঢেউ আমাকে ঠেলতে ঠেলতে নিয়ে আসে ডাঙায়, যেন ফিরিয়ে দিয়ে যায় ৷ যেন বলে, ওরে কোথায় যাচ্ছিস, ডুবে যাবি যে! নোনা জলে জ্বালা করে ওঠে চোখ ৷
ছোট ছোট চারটি গ্রাম নিয়ে এই মন্দারমণি ৷ দাদনপাত্রবার, সোনামুই, মন্দারমণি ( চতুর্থ গ্রামের নামটি ভুলে গেছি)৷ পাশাপাশি ছোট্ট ছোট্ট সব গ্রাম, আগে সমুদ্রের কাছে ছিলনা বোধহয় এখন বেশীর্ভগ্টাই সমুদ্রে অল্প একটু অংশ পড়ে আছে বাইরে, তাও ক'দিন আছে বলা যায় না৷ সমুদ্রতীরবর্তী সব গ্রামে ছিল নোনা জলের ভেড়ি৷ "রোজভ্যালী'র মালিকেরা মন্দারমণিতে মাছের ব্যবসা করতে গেছিলেন বছর পাঁচেক আগে৷ সস্তার জমি কিনে মাছের ভেড়ি করলেন তারা৷ একটি দুটি ঘর তৈরী হল একটি গেষ্টহাউস মতন৷ যেখানে মাছ কিনতে আসা লোকজন এসে রাত্রিযাপন করতেন৷ সৈকতের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তাঁরা নিজেদের আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধবদেরও নিয়ে আসতে লাগলেন৷ ঘর বাড়তে লাগল গেষ্টহাউসের আর কিছুদিনের মধ্যেই সেই গেষ্টহাউস রূপ নিল এক চারতারা হোটেলের৷ সমুদ্রের একেবারে ধার ঘেঁষে দাঁড়িয়ে সেই হোটেল৷ মাছের ব্যবসা করতে আসা রোজভ্যালী সেখানে শুরু করল হোটেলব্যবসা৷ দেখাদেখি সেখানে দাঁড়িয়ে গেল আরও কিছু হোটেল, কটেজ৷ রমরমা ব্যবসা৷ কোন হোটেলে, কটেজে একটি ঘরও খালি থাকে না সেখানে এখন জানাল গার্ডেন রিট্রিট নামের রঙচঙে কটেজের কেয়ারটেকার কাম ম্যানেজার বিশুবাবু৷
পাঁচখানা ঘর নিয়ে পাঁচমাস আগে হয়েছে এই গার্ডেন রিট্রিট কটেজ৷ রাস্তার ধারে খনিকটা জায়গা গোল করে ঘিরে নিয়ে মাথায় খড়ের ছাউনি দিয়ে রিসেপশন কাম সিটিংপ্লেস৷ পাশেই একটা লম্বাটে ঘরমত জায়গা, তারও মাথায় খড়েরই ছউনি৷ চারপাশ আদ্ধেকটা ঘেরা৷ কাঠের খুঁটির উপরে দাঁড়িয়ে আছে এই খাওয়ার ঘরের ছাউনি৷ খাওয়ার ঘরের পাশেই ডানধার ধরে একের পর এক ছোট ছোট এক কামরার ঘর, কটেজ৷ সাথে একফালি বাথরুম৷ সারি দিয়ে একের পর এক ঘর, শেষমাথার ঘরখানিতে আমরা ঠাঁই নিয়েছিলাম একবেলার জন্যে৷ এই ঘরের পেছনে কাজ চলছে আরও পাঁচখানি ঘরের৷ তবে এই ঘরগুলি ইটের৷ কাজ প্রায় শেষ হয়ে এসেছে, লাল ইটের ঘরগুলি প্রায় তৈরী ৷
(চলবে)
পুরোনো ধর্মের সমালোচনা বা ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত করেই নতুন ধর্মের জন্ম
ইসলামের নবী মুহাম্মদকে নিয়ে কটূক্তির অভিযোগে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের মামলায় জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী তিথি সরকারকে পাঁচ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে তাকে এক বছরের জন্য সমাজসেবা অধিদপ্তরের অধীনে প্রবেশনে পাঠানোর... ...বাকিটুকু পড়ুন
ডেল্টা ফ্লাইট - নিউ ইয়র্ক টু ডেট্রয়ট
আজই শ্রদ্ধেয় খাইরুল আহসান ভাইয়ের "নিউ ইয়র্কের পথে" পড়তে পড়তে তেমনি এক বিমান যাত্রার কথা মনে পড়লো। সে প্রায় বছর দশ বার আগের ঘটনা। নিউ ইয়র্ক থেকে ডেট্রিয়ট যাবো,... ...বাকিটুকু পড়ুন
ল অব অ্যাট্রাকশন
জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন
চরফ্যাশন
নয়নে তোমারি কিছু দেখিবার চায়,
চলে আসো ভাই এই ঠিকানায়।
ফুলে ফুলে মাঠ সবুজ শ্যামলে বন
চারদিকে নদী আর চরের জীবন।
প্রকৃতির খেলা ফসলের মেলা ভারে
মুগ্ধ হয়েই তুমি ভুলিবে না তারে,
নীল আকাশের প্রজাতি... ...বাকিটুকু পড়ুন
নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?
১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন