৫২ বছর বয়সী মার্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছেন ২০০৫-এ। এ অল্প সময়ে যা করেছেন তাতে ‘দ্য গার্ল’ উপাধি কেবল তাকেই মানায়। গত দুবছরে জার্মানির নয়া অর্থনৈতিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন মার্কেল। অনেকের মতে যা এক নয়া শিল্পবিপ্লব।
ফ্রাঙ্কো-জার্মান সম্পর্কটাকে যথেষ্ট পরিমাণে মেরামত করেছেন এঞ্জেলা মার্কেল। এ চুক্তিটা ইউরোপের অন্যতম চালিকাশক্তি। তার সুবাদেই ইউরোপের ইউনিয়নের সাপেক্ষে প্যারিসের চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় বার্লিনের নাম। অফিসে বসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই ইউরোপের বাজেট নিষ্পত্তিতে সবাইকে একহাত দেখিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানিসহ গোটা ইউরোপের সম্পর্কে যে অসহিষ্ণুতাগুলো ছিল, সেগুলো ঝাঁকিয়ে তরল করেছেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। মার্কেলকে নিয়ে আংশিক বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই।
স্পিজেল অনলাইন মার্কেলকে নতুন টনি ব্লেয়ার বলে শিরোনাম করেছিল। তাতে অবশ্য জনপ্রিয়তার রেংকে চিড় ধরেনি। শুধু বুশ কিছুটা আহাদিত হয়ে ইউএস-ইইউ সম্মেলনে মার্কেলকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছিলেন। সমালোচকদের ভাষায় মার্কেল সেই সম্মেলনে কিছুটা ব্লেয়ারসুলভ আচরণ দেখিয়েছিলেন। হয়তো বুশের সঙ্গে হাসিমুখে সম্পর্কন্নোয়নের কথা বলাতেই। তারাই বলে বেড়াচ্ছেন, ব্লেয়ার যুগের পতন চাইলেও ঠেকানো যাচ্ছে না।
অথচ মার্কেল মতায় এসেছেন বুশের বিদায়লগ্নে। হোয়াইট হাউসের হোমরা-চোমরারা এখন জার্মানি, ব্রিটেনসহ সবখানেই নিন্দিত। এ অবস্থায় সম্পর্কের উন্নয়ন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী আগ্রাসনকে ইঙ্গিত করে না। উল্টো মার্কেলের উপস্থিত বুদ্ধিরই তারিফ করতে হয়। কারণ তিনি ভালো করেই বোঝেন, অর্থনীতি আর পরিবেশ যাই হোক না কেন, এগিয়ে যেতে হলে মার্কিনিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। আর বুশের যেহেতু এখন স্লগ ওভার চলছে তাতে বিতর্কিত ইসুগুলো একপাশে সরিয়ে বাকিগুলোতে যতোটা সম্ভব সুবিধা আদায় করছেন মার্কেল।
মার্কেল ব্লেয়ারের চেয়ে অনেকখানিই ভিন্ন। তাকে আর যাই হোক, কেউ পা-চাটা বলে গাল দিতে পারবে না। শুধু ব্যক্তিত্বের জন্য নয়, উপস্থিত বুদ্ধিতেই তিনি সমালোচনা টপকে যাবেন। কেননা, ‘ওয়ার অন টেরর’-এর মতো অস্পষ্ট ও বিতর্কিত ইসুকে পাশ কাটিয়ে মার্কেল সুচারুভাবে অর্থনীতিকেই আসন্ন চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করেছেন। নাফটা চুক্তির মতো তিনি বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন একটি ট্রান্স-আটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তির (টাফটা)। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার চেয়ে ইউরোপে একটি শুল্কমুক্ত মুক্তবাজারের দিকেই তার ঝোঁক বেশি।
মার্কেলের টাইমিংটাও অসাধারণ। এমন সময়ে চ্যান্সেলর হয়েছেন যখন জার্মানি বিশ্বের সবচে বড় রফতানিকারক ও তৃতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ (যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পর)। ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন জার্মানির দিকে তথা এঞ্জেলা মার্কেলের দিকেই তাকিয়ে আছে। এই লৌহ মানবীই পারেন কেবল জার্মানিকে ইউরোপের ইঞ্জিন বানাতে। তাকে অনুসরণ করে রোদ্রিগুয়েজ ও সারকোজিরাও পারেন অর্থনীতির নতুন আইডিয়া নিয়ে সামনে এগোতে। আর মার্কেল জানেন একজন মানুষ ঠিক কতোটা উঠতে পারে আবার কতোটা নামতে পারে। কিন্তু সর্বোপরি তিনি ভালোকরেই বোঝেন, কী করে হাতের কাছে থাকা সোনালী মুহূর্তগুলোকে আঁকড়ে ধরতে হয়।