somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হাল ধরছেন ইউরোপের আয়রন লেডি

১৬ ই জুন, ২০০৭ রাত ৩:১৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

ব্লেয়ার যুগের দিন ফুরলো। রেটিংয়ের গড় প্লাস ৬০ থেকে ধপাস করে হিমাঙ্কের নিচে ৪০! নিজের বানানো মাত্রাতিরিক্ত প্রো-আমেরিকান নীতির শিকার নিজেই হলেন। ইউরোপে ছড়ি ঘোরানোর খেলটাও খতম। ব্লেয়ার এখন নিধিরাম সর্দার। তার সম্ভাব্য উততরসুরি গর্ডন ব্রাউন ক্রিজে পা রেখেই শুরু করবেন ইরাক যুদ্ধে ব্রিটেনের ধসে পড়া ইমেজ পুনরুদ্ধারের মিশন। অহেতুক খবরদারি করবেন না তিনি। ব্লেয়ারের পাদুকা জোড়া তাই ফাঁকাই আছে। তাতে নতুন করে কে গলাবেন কর্তৃত্বের পা? নতুন ফরাসি প্রেসিডেন্ট সারকোজি? উঁহু, নিজের দেশের ভেতরটা ঝামেলায় টইটম্বুর। একে তো বেকারত্ব অন্যদিকে খোদ জাতীয়তা নিয়ে টানাহেঁচড়া। গ্লোবাল ওয়ার্মিং, জ্বালানি সংকট ইত্যাকার বিষয় নিয়ে ইন্টারন্যাশনাল মিটিংয়ে হম্বিতম্বি করা সারকোজিকে দিয়ে সহসাই হবার নয়। আছেন ইতালির রোমানো প্রোদি ও স্পেনের লুইস রোদ্রিগুয়েজ। উনারা এখনো ম্যাচের হাল ধরার যোগ্যতা পাননি। নিজের দেশেই ইনজুরির ছড়াছড়ি। মতার বিচারেও তারা মিডলওয়েট। তবে? হ্যাঁ তবে একজন আছেন, যিনি পারেন ইউরোপকে নিয়ে ঘুরে দাঁড়াতে। ফিরিয়ে দিতে পারেন হারানো জৌলুস, আভিজাত্য ও মর্যাদা। ইতোমধ্যে বেশকবার প্রমাণ করেছেন অলরাউন্ডার হওয়ার যোগ্যতা তার আছে। তিনি জার্মানির চ্যান্সেলর এঞ্জেলা মার্কেল। ইউরোপের আয়রন লেডি।
৫২ বছর বয়সী মার্কেল জার্মানির চ্যান্সেলর হয়েছেন ২০০৫-এ। এ অল্প সময়ে যা করেছেন তাতে ‘দ্য গার্ল’ উপাধি কেবল তাকেই মানায়। গত দুবছরে জার্মানির নয়া অর্থনৈতিক বিপ্লবের নেতৃত্ব দিয়েছেন মার্কেল। অনেকের মতে যা এক নয়া শিল্পবিপ্লব।
ফ্রাঙ্কো-জার্মান সম্পর্কটাকে যথেষ্ট পরিমাণে মেরামত করেছেন এঞ্জেলা মার্কেল। এ চুক্তিটা ইউরোপের অন্যতম চালিকাশক্তি। তার সুবাদেই ইউরোপের ইউনিয়নের সাপেক্ষে প্যারিসের চেয়ে বেশি উচ্চারিত হয় বার্লিনের নাম। অফিসে বসার মাত্র এক মাসের মধ্যেই ইউরোপের বাজেট নিষ্পত্তিতে সবাইকে একহাত দেখিয়েছেন। রাশিয়ার সঙ্গে জার্মানিসহ গোটা ইউরোপের সম্পর্কে যে অসহিষ্ণুতাগুলো ছিল, সেগুলো ঝাঁকিয়ে তরল করেছেন। তবে সবকিছুকে ছাপিয়ে গিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে জার্মানির সম্পর্কে এক নতুন মাত্রা যোগ করে। মার্কেলকে নিয়ে আংশিক বিতর্কের সূত্রপাত সেখান থেকেই।
স্পিজেল অনলাইন মার্কেলকে নতুন টনি ব্লেয়ার বলে শিরোনাম করেছিল। তাতে অবশ্য জনপ্রিয়তার রেংকে চিড় ধরেনি। শুধু বুশ কিছুটা আহাদিত হয়ে ইউএস-ইইউ সম্মেলনে মার্কেলকে উষ্ণ অভিবাদন জানিয়েছিলেন। সমালোচকদের ভাষায় মার্কেল সেই সম্মেলনে কিছুটা ব্লেয়ারসুলভ আচরণ দেখিয়েছিলেন। হয়তো বুশের সঙ্গে হাসিমুখে সম্পর্কন্নোয়নের কথা বলাতেই। তারাই বলে বেড়াচ্ছেন, ব্লেয়ার যুগের পতন চাইলেও ঠেকানো যাচ্ছে না।
অথচ মার্কেল মতায় এসেছেন বুশের বিদায়লগ্নে। হোয়াইট হাউসের হোমরা-চোমরারা এখন জার্মানি, ব্রিটেনসহ সবখানেই নিন্দিত। এ অবস্থায় সম্পর্কের উন্নয়ন কিন্তু দীর্ঘমেয়াদী আগ্রাসনকে ইঙ্গিত করে না। উল্টো মার্কেলের উপস্থিত বুদ্ধিরই তারিফ করতে হয়। কারণ তিনি ভালো করেই বোঝেন, অর্থনীতি আর পরিবেশ যাই হোক না কেন, এগিয়ে যেতে হলে মার্কিনিদের সঙ্গে সুসম্পর্ক রাখতেই হবে। আর বুশের যেহেতু এখন স্লগ ওভার চলছে তাতে বিতর্কিত ইসুগুলো একপাশে সরিয়ে বাকিগুলোতে যতোটা সম্ভব সুবিধা আদায় করছেন মার্কেল।
মার্কেল ব্লেয়ারের চেয়ে অনেকখানিই ভিন্ন। তাকে আর যাই হোক, কেউ পা-চাটা বলে গাল দিতে পারবে না। শুধু ব্যক্তিত্বের জন্য নয়, উপস্থিত বুদ্ধিতেই তিনি সমালোচনা টপকে যাবেন। কেননা, ‘ওয়ার অন টেরর’-এর মতো অস্পষ্ট ও বিতর্কিত ইসুকে পাশ কাটিয়ে মার্কেল সুচারুভাবে অর্থনীতিকেই আসন্ন চ্যালেঞ্জ প্রমাণ করেছেন। নাফটা চুক্তির মতো তিনি বারবার গুরুত্ব দিয়েছেন একটি ট্রান্স-আটলান্টিক বাণিজ্য চুক্তির (টাফটা)। মধ্যপ্রাচ্যের অস্থিরতার চেয়ে ইউরোপে একটি শুল্কমুক্ত মুক্তবাজারের দিকেই তার ঝোঁক বেশি।
মার্কেলের টাইমিংটাও অসাধারণ। এমন সময়ে চ্যান্সেলর হয়েছেন যখন জার্মানি বিশ্বের সবচে বড় রফতানিকারক ও তৃতীয় অর্থনৈতিক সমৃদ্ধশালী দেশ (যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের পর)। ইউরোপের অন্য দেশগুলো এখন জার্মানির দিকে তথা এঞ্জেলা মার্কেলের দিকেই তাকিয়ে আছে। এই লৌহ মানবীই পারেন কেবল জার্মানিকে ইউরোপের ইঞ্জিন বানাতে। তাকে অনুসরণ করে রোদ্রিগুয়েজ ও সারকোজিরাও পারেন অর্থনীতির নতুন আইডিয়া নিয়ে সামনে এগোতে। আর মার্কেল জানেন একজন মানুষ ঠিক কতোটা উঠতে পারে আবার কতোটা নামতে পারে। কিন্তু সর্বোপরি তিনি ভালোকরেই বোঝেন, কী করে হাতের কাছে থাকা সোনালী মুহূর্তগুলোকে আঁকড়ে ধরতে হয়।
সর্বশেষ এডিট : ১৬ ই জুন, ২০০৭ রাত ৩:২৩
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

ক- এর নুডুলস

লিখেছেন করুণাধারা, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৫২



অনেকেই জানেন, তবু ক এর গল্পটা দিয়ে শুরু করলাম, কারণ আমার আজকের পোস্ট পুরোটাই ক বিষয়ক।


একজন পরীক্ষক এসএসসি পরীক্ষার অংক খাতা দেখতে গিয়ে একটা মোটাসোটা খাতা পেলেন । খুলে দেখলেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×