somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চিহ্ন ০০৫

০২ রা জুন, ২০০৭ রাত ১:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রহমান নিঃশব্দে নিচু টেবিলটার ওপরে ট্রেটা রেখে সোজা হয়ে দাঁড়ায়। কায়েস লক্ষ করলো, রহমান ভুলেও দিলনাজের মৃতদেহের দিকে তাকাচ্ছে না। কায়েসের চোখ চলে যায় মুস্তাফার দিকে, ছোকরা একেবারে হাঁ করে দেখছে দিলনাজের শরীরটাকে। শালা। কায়েস সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, সে মুস্তাফাকে পছন্দ করে না।

চেয়ারে বসে কায়েস একটু এলিয়ে দেয় শরীরটাকে। মনসুর ফৌজদার রহমানকে নিচু গলায় কী যেন বলেন, রহমান বেরিয়ে যায় ঘর ছেড়ে। মালিক রুমাল বার করে নিজের মুখ মোছে আবারও।

কায়েস চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করে গোটা দিনটার কথা।

মনসুর ফৌজদার আজ সবাইকে ডেকেছিলেন "জাহাজডুবি" নিয়ে কথা বলতে। জাহাজডুবি একটা মাঝারি দৈর্ঘ্যের টেলিফিল্ম, যার কাহিনী কায়েসের কীবোর্ড দিয়েই বেরিয়েছে। মনসুর ফৌজদার এর আগেও বেশ কিছু টেলিফিল্মের পেছনে টাকা খরচ করেছেন, সম্প্রতি শারমিন তাঁকে রাজি করাতে পেরেছে এই জাহাজডুবির প্রযোজনায়।

শারমিনের কথা মনে পড়তে কায়েস তাকালো দরজার দিকে। ওসিকে ফোন করতে এত দেরি হচ্ছে কেন ওর?

কায়েস নিজের বান্ধবীর কথা ভাবতে গিয়ে মনে মনে হোঁচট খায়। আজকে ফেরার পথে শারমিন তাকে একগাদা কথা শোনাবে। এভাবে দিলনাজ দুররানিকে দেখার মাশুল কায়েসকে গুনতেই হবে। শারমিন জাহাজডুবির পরিচালিকা, কিন্তু মাঝেমধ্যে সে কায়েসকেও পরিচালনার আওতায় নিয়ে আসতে চায়।

পাশে দাঁড়ানো মুস্তাফার দিকে একবার বিতৃষ্ণ চোখে তাকালো কায়েস। এখনো খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দিলনাজকে দেখছে বেওয়াকুফটা। এই ব্যাটা হবে জাহাজডুবির নায়ক। নায়িকা মিথিলার সাথে একটা ছোট্ট লাইফবোটে করে সাগরে ভেসে বেড়াবে সে গোটা সিনেমা জুড়ে। বাস্তব জীবনে এমন ঘটনা ঘটলে মিথিলার কপালে দুঃখই ছিলো।

রহমান ঘরে ঢোকে একটা ভাঁজ করা সাদা চাদর নিয়ে। তারপর দ্রুত হাতে সেটা খুলে ঢেকে দেয় দিলনাজকে। মুস্তাফার কণ্ঠ থেকে একটা হতাশ ঘড়ঘড়ে শব্দ বেরিয়ে আসে। মালিক ঘুরে দাঁড়িয়ে একবার দেখে নেয় মুস্তাফাকে।

কায়েস আবারও ঘটনাটার কথা ভাবে। সে আর শারমিন স্টাডিতে বসে কথা বলছিলো মনসুর ফৌজদারের সাথে, এমন সময় রহমান নক করে ঘরে ঢোকে। সোজা মনসুর ফৌজদারের পাশে গিয়ে কানে কানে একটা কিছু বলে। মনসুর ফৌজদার ভুরু কুঁচকে তাকান তার দিকে, তারপর শারমিনকে বলেন, "শারমিন, একটু এসো তো আমার সাথে।"

কায়েস শারমিনের দিকে তাকায় সপ্রশ্ন দৃষ্টিতে। শারমিন উঠে বেরিয়ে যায় মনসুর ফৌজদারের সাথে। কায়েস স্টাডির নিঃশব্দ পরিবেশে মিনিটখানেক বসে থেকে সিদ্ধান্ত নেয়, বেরিয়ে গিয়ে ড্রয়িংরূমে একটু বসবে সে। স্টাডির দরজা খুলে সে বেরিয়ে আসে, তারপরে কী মনে করে ড্রয়িংরুমের দিকে না গিয়ে সিঁড়ির দিকে এগিয়ে যায়। সিঁড়ি বেয়ে তখনও উঠছে রহমান, তার পেছন পেছন মনসুর ফৌজদার আর শারমিন। কায়েস অনুসরণ করে তাদের। কায়েসকে দেখতে পেয়ে মনসুর ফৌজদার কিছু বলেন না, শারমিন শুধু একটু পিছিয়ে পড়ে কায়েসের সঙ্গ ধরে ফিসফিস করে বলে, "তুমি আবার আসছো কেন?"

কায়েস গম্ভীর হয়ে বলে, "একমাত্র মূলধন নিয়ে আসছি।"

শারমিন চুপ করে যায়। কায়েসের প্রিয় বুলি এটা। তার একমাত্র মূলধন নাকি কৌতূহল।

তবে ঘরে ঢুকে এ দৃশ্যটা দেখার জন্য প্রস্তুত ছিল না কেউই। বিছানার ওপর নিঃসাড়ে পড়ে আছে দিলনাজ, আর সোফার উপর ঢলে পড়ে আছেন নিরুপমা ফৌজদার।

কায়েসের মনে পড়ে, সে সাথে সাথেই তাকিয়েছিলো মনসুর ফৌজদারের দিকে। ভদ্রলোক প্রচন্ড চমকে উঠেছিলেন।

কায়েস শারমিনের নার্ভের প্রশংসা না করে পারলো না। শারমিন একটা অস্ফূট শব্দ করে উঠলেও এগিয়ে গিয়ে দিলনাজের গায়ে হাত রেখে মৃদু ধাক্কা দিয়ে ডাক দিয়েছিলো, "দিলনাজ!"

মনসুর ফৌজদার স্ত্রী নিরুপমার দিকে ঝুঁকে পড়ে তাকে মৃদু গলায় ডাকছিলেন, "নিরু! নিরু!"

শারমিন দিলনাজের নাকের সামনে হাত ধরে বিবর্ণ মুখে উঠে দাঁড়িয়ে বলেছিলো, "শ্বাস পড়ছে না!"

মনসুর ফৌজদার তখন শুধু বলেছিলেন, "ওহ নো!"

শারমিন ফোন হাতে ঘরে ঢোকে। মনসুর ফৌজদারকে বলে, "স্যার, পুলিশ আসছে কিছুক্ষণের মধ্যে।"

মুস্তাফা ফ্যাকাসে মুখে বলে, "পুলিশ?"

...

(চলবে)

২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

One lost eye will open thousands of Muslims' blind eyes

লিখেছেন জ্যাক স্মিথ, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭



শিরোনাম'টি একজনের কমেন্ট থেকে ধার করা। Mar Mari Emmanuel যিনি অস্ট্রেলীয়ার নিউ সাউথ ওয়েলসের একটি চার্চের একজন যাজক; খুবই নিরীহ এবং গোবেচারা টাইপের বয়স্ক এই লোকটি যে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×