somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

এইসব দিন ও রাত

০১ লা জুন, ২০০৭ সকাল ১১:৪৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজকাল প্রায়ই তার রাত করে বাড়ি ফেরা। কোন কোন দিন প্রায় ভোরে , কোন দিন বা মাঝরাত্রি পার করে...
এডিটরুমের শীতলতায় কাটছাট ছাটকাট... সকাল থেকে রাত, কখনো বা মাঝরাত কখনো বা পরদিন সকাল অব্দি...

টেবলে ঠান্ডা হয় বারে বারে গরম করা খাবার, বাসি হয়। অবশেষে ভোররাতে তারা স্থান পায় রেফ্রিজারেটরে। শুকিয়ে রং হারায় হিমসাগর, চিমসে হয়। শুকায় পলিব্যাগে মুড়ে রাখা মুজাফফরপুরের লিচুরাও...

এই গরমেও আমার ঘরের পর্দারা থাকে টানা। বাইরের গরম বাতাস, ততধিক গরম ফ্যানের বাতাসে এদিক ওদিক ওড়ে তারা। আমি চমকে চমকে উঠি, ভয় পাই। জল খাই। ঘড়ি দেখি। দেশ থেকে পাঠানো প্রিয় মানুষের সংক্ষিপ্ত বার্তায় জানতে পারি, আমার সাথে জ্বীন আছে... যে নাকি আমাকে ছেঁড়ে কোথাও যায় না... যাবে না... সেজন্যেই কি আমি এমন চমকে চমকে উঠি? মনে হয় কে যেন আছে... ঐ জামডালে... কোকিলকন্ঠে তবে কি সেই ডাকে? কে জানে...

মাঝে মাঝে ঐ মাঝরাতেও চাতক দৃষ্টিতে আকাশে খোঁজার চেষ্টা করি মেঘ , কোথাও কি সে জমলো? এক টুকরো? নাহ...নীরব নিস্তব্ধ রাত... কেউ কোথাও নেই... মাঝে মাঝে শুনশান নীরবতা ভেঙে শুধু কুকুরেরা ডাকে, দলবদ্ধভাবে...

প্রেশার কুকারের তীব্র সিটি জানান দেয়, সেদ্ধ হয়ে গেছে মুশুর ডাল। পেছনের পুকুরে জলকেলি করে তিনটি হাঁস। একটা হাঁস একটু দূরে চলে যায় সাঁতার কেটে। জলেই মিলিত হয় অপর দুটি। বারে বারেই ডুব দেয় জলে, পাখনা নাড়িয়ে নাড়িয়ে ঝেড়ে ফেলে মিলনের চিহ্ন, জল... ফিরে আসে অন্যটি, একসাথে আবার তারা খেলা করে...

গামছপরা দুটি লোক দড়ি দিয়ে বেধে ফ্যালে জলের সমস্ত আগাছা, কচুরিপানা আর গাঢ় জমে থাকা শ্যাওলা, দেখা দেয় পরিস্কার টলটলে জল। এবারে কি তবে এই পুকুরটাও বুজিয়ে ফেলা হবে? পাশেই চলে ইমারত তৈরীর প্রস্তুতি, বড় ছাঁকনিতে অবিরাম ছাঁকা হয় বালি, সেই বালিতে মিশে যায় শ্রমিকের ঘাম, জমিমালিকের স্বপ্ন। শ্রমিক মেয়েটি কোমরে হিল্লোল তুলে এগোয় ইটের বোঝা মাথায় নিয়ে। কাজ থেমে যায় শ্রমিক পুরুষদের... সবকটি চোখ আটকে যায় ডুরে শাড়ি পরা ঐ কালো মেয়েটির দেহভঙ্গীমায়...

আমি আজকাল একটু স্বাস্থ্য সচেতন হয়েছি। খুঁজে পেতে কিনে আনি ওট, সুগারফ্রী চিনি। খাই না দুধ চা। লিকার চায়ে একটুশখানি সুগারফ্রী। দুধে ডোবা কর্নফ্লেক্স আমার ব্রকফাষ্ট। মাছের ঝোল, সেদ্ধ আনাজ বড়জোর চিকেন ষ্টু। নো রেডমিট! ব্যায়ামাগারে গিয়ে হাঁটি, যাতে নাকি মানুষে হাঁটে না, মেশিনই মানুষকে নিয়ে হাঁটে! উত্তাল মিউজিক চলে। কান ফাটানো শব্দে। বাজনার তালে তালে শীত্তকার করে নারী। জোরে, ক্রমশ আরও জোরে...বাড়তেই থাকে সেই কানফাটানো আওয়াজ। আমার চোখ স্থির সামনে রাখা প্লাজমা টিভিতে। আমি হাঁটতে থাকি নাকি আমাকে নিয়ে হাঁটে মেশিন! রিমোট হাতে আমি শুধু পাল্টাতে থাকি চ্যানেল।

ব্যাথার ওষুধ শরীরে জল ধরে রাখে... এই সব ব্যাথা বেদনাদের সাথে আমার বড় ভাব। পরকীয়া প্রেম। লুকিয়ে থাকে অভ্যন্তরে। কেউ দেখতে পায় না। শুধু আমি জানি, তারা আছে। এখানে ওখানে, শরীরের আনাচে কানাচে... ফোনের ওধারে ডাক্তার বন্ধু চিন্তিত হয়, বাড়লো কি ইউরিক অ্যাসিড? থাইরয়েড যেন অবিলম্বে চেক করি...

ভালো লাগে না...

এইসব কিছুই ভালো লাগে না...

জৈষ্ঠের এই দমচাপা গরমে মানুষ তো মানুষ ক্লান্ত কুকুরেরাও। রাস্তায় খানিকটা জমা জলে গা ডুবিয়ে পাশাপাশি পড়ে থাকে তিনটি কুকুর, চুপচাপ, শান্ত।

সবুজ জামগুলো সব কালচে হয়ে উঠেছে, আর ক'টা দিন। ব্যাস। লোক এসে গাছ ঝাঁকিয়ে পেড়ে নিয়ে যাবে সব জাম। গাছমালিকের কিছু নগদ প্রাপ্তিযোগ। গাছভর্তি তালও বোধ হয় বিক্রিই হয়ে গেল! আর জামরুলও। বাগানের মাঝে টানানো ঐ দোলনা আর নিস্তব্ধ দুপুরে কিশোরী মেয়েটির দোল খাওয়া শুধু উসকে দিয়ে যায় কিছু স্মৃতি...







১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

জলদস্যুরা কি ফেরেশতা যে ফিরে এসে তাদের এত গুণগান গাওয়া হচ্ছে?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ২:২৭


জলদস্যুরা নামাজি, তাই তারা মুক্তিপণের টাকা ফেরত দিয়েছে? শিরোনাম দেখে এমনটা মনে হতেই পারে। কিন্তু আসল খবর যে সেটা না, তা ভেতরেই লেখা আছে; যার লিংক নিচে দেওয়া হলো।... ...বাকিটুকু পড়ুন

মৃত্যু ডেকে নিয়ে যায়; অদৃষ্টের ইশারায়

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৭ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৩৯

১৯৩৩ সালে প্রখ্যাত সাহিত্যিক উইলিয়াম সমারসেট মম বাগদাদের একটা গল্প লিখেছিলেন৷ গল্পের নাম দ্য অ্যাপয়েন্টমেন্ট ইন সামারা বা সামারায় সাক্ষাৎ৷

চলুন গল্পটা শুনে আসি৷

বাগদাদে এক ব্যবসায়ী ছিলেন৷ তিনি তার... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। ঋণ মুক্তির দোয়া

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৭ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৪৯



একদিন রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম মসজিদে নববিতে প্রবেশ করে আনসারি একজন লোককে দেখতে পেলেন, যার নাম আবু উমামা। রসুল সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়াসাল্লাম তাকে বললেন, ‘আবু উমামা! ব্যাপার... ...বাকিটুকু পড়ুন

সভ্য জাপানীদের তিমি শিকার!!

লিখেছেন শেরজা তপন, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৫

~ স্পার্ম হোয়েল
প্রথমে আমরা এই নীল গ্রহের অন্যতম বৃহৎ স্তন্যপায়ী প্রাণীটির এই ভিডিওটা একটু দেখে আসি;
হাম্পব্যাক হোয়েল'স
ধারনা করা হয় যে, বিগত শতাব্দীতে সারা পৃথিবীতে মানুষ প্রায় ৩ মিলিয়ন... ...বাকিটুকু পড়ুন

রূপকথা নয়, জীবনের গল্প বলো

লিখেছেন রূপক বিধৌত সাধু, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২


রূপকথার কাহিনী শুনেছি অনেক,
সেসবে এখন আর কৌতূহল নাই;
জীবন কণ্টকশয্যা- কেড়েছে আবেগ;
ভাই শত্রু, শত্রু এখন আপন ভাই।
ফুলবন জ্বলেপুড়ে হয়ে গেছে ছাই,
সুনীল আকাশে সহসা জমেছে মেঘ-
বৃষ্টি হয়ে নামবে সে; এও টের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×