somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেড়ানোর জায়গা

৩১ শে মে, ২০০৭ রাত ১১:৫৬
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকদিন কোথাও বেড়াতে যাওয়া হয় না ৷
সেই কবে থেকে আমি আর উমা প্ল্যান করছি
কখনো পুরী তো কখনো দীঘা৷ নিদেনপক্ষে
মুর্শিদাবাদ কিন্তু যাওয়া আর হয়ে উঠলো না
এখন অব্দি৷ আজকে হঠাত্ উমা এসে বলল,
কোথায় যাবি বলছিলি, নিচের মুদির দোকানে
টিকিট দিচ্ছে, তিনমাস পরের ডেটের টিকিট ৷
আসলে, যে কোন জায়গার টিকিট পাঁচশো
টাকায় দিচ্ছে ৷ আমি একটু অবাক হলাম,
মুদির দোকানে টিকিট দিচ্ছে? উমা বলল,
হ্যাঁরে, দেখে এলাম যে ৷ আরও বললো,
আমি যেতে পারবো না, তুই ঘুরে আয় ৷
ওকে জিজ্ঞেস করলাম, কেন ? তো বলল,
মবিনের শরীরটা ভালো নেই, তাই যাব না ৷

খুব অবাক হলাম, মবিনের শরীর ভালো নেই?
সে কি! মবিন মারা গেছে সেও তো দু বছর
মুখে কিছু না বলে ওর সাথে নিচে গেলাম
টিকিট আনতে৷ টিকিট তো আনতে যাচ্ছি
কিন্তু যাবটা কোথায়? উমাই নাম বলল
একটা জায়গার, আমি বহু চেষ্টা করেও
তার নাম উচ্চারণ করতে পারছি না,
বললাম, ওখানে কি আছে সেখানে?
ওটা নাকি একটা পাহাড়ি শহর, ঠান্ডা ৷
খুব সুন্দর সুন্দর পাহাড়ি ঝর্ণা আছে,
নদী আছে, পাহাড়ের গায়ে সব কটেজ,
তাতে থাকার ব্যবস্থা ৷ শুনে ঘাবড়ে গেলাম
একটু, সে নিশ্চয়ই বেশ খরচের ব্যপার রে,
আমি বোধহয় এখন পেরে উঠব না রে, উমা
অভয় দিল, বলল, আরে আরে এখন তো নয়,
এখন শুধু টিকিট কিনে রাখ, যাওয়া তো
তিনমাস পর! আর যাবি যখন, তখন
একবার মাজারে ঘুরে আসিস ৷ মাজার?
উমা বোঝাল, ওখানে এক মাজার আছে,
পীরের দরগাহ ৷ সেখানে সব মানত পূর্ণ হয়,
ওখানকার পানিতে সব রোগ সারে,
আমি যেন ওর জন্যে এক বোতল পানি
মনে করে নিয়ে আসি, আর মানত করি
মবিনের জন্যে৷ টিকিটের পয়সা পকেটে
আছে কি না, আপাতত, দেখতে আমি
হাত ঢোকাই পকেটে৷ নিজেই অবাক হই,
খুব, ও মা! এই জিনসটা কখন পরলাম?

পকেটে পাঁচশো টাকার দুটো নোট,
তাতে তো দুটো টিকিট হবে! তাইলে
কে কে যাবে? উমাকে বলতেও সংকোচ
হচ্ছে, কিন্তু না বললেও নয় ৷ আরে!
উমা যে আজ সবজান্তা! সে বললো,
দুটো টিকিটই কাট নারে বাবা৷ তোর
আর সুমেরুর ৷ কোথাও তো যাসনি দুজনে৷
এই ফাঁকে ঘুরে আয় ৷ মাথা নেড়ে নেড়ে
সায় দিই, পকেটের ঐ দুটো নোট দিয়ে,
দুখানা টিকিট কাটি ৷ ভয়ে ভয়ে
আবার জিজ্ঞেস করি, যদি যেতে না পারি
তাইলে এই টিকিটের কি হবে? উমা বললো,
এখানে এরা টিকিট বিক্রি করে শুধু,
ফেরত নেয় না, অবশ্য তুই না গেলে
টিকিট দুটো ষ্টেশনে গিয়ে ফেরত দিয়ে দিস,
কোন অসুবিধা হবে না ৷ উমা চলে যায় ৷
আমি একটু অবাক হই, প্লেনের টিকিট
ষ্টেশনে গিয়ে ফেরত দেব! তাকিয়ে দেখি
পাশেই মাংসের দোকান৷ আমি এখানে
মাংসের দোকান কবে হল ভাবতে ভাবতে
বাড়ির পথে হাঁটতে থাকি ৷ যে সিঁড়িটা
দিয়ে উঠছি সেটা আমার বাড়ির সিঁড়িই তো?
হ্যাঁ ৷ নয়তো আবার কি৷ সিঁড়ি বেয়ে উঠতে
থাকি উপরে৷ যে ফ্লোরে এসে সিঁড়ি শেষ
সেখানে আমার ফ্ল্যাট নেই! গেল কোথায়?
খুঁজতে থাকি ৷ লম্বা এক করিডোর দিয়ে
এমাথা ওমাথা হেঁটেও নিজের ফ্ল্যাট খুঁজি ৷
খুঁজে না পেয়েও বুঝতে পারি না যে
ভুল বাড়িতে ঢুকেছি ৷ করিডোরের দুপাশে
সব বন্ধ দরজা, যার একটামাত্র পাল্লা খুলে
এক ভদ্রলোক বেরিয়ে আসেন আর
আমাকে চিনতে পারেন ৷ তুমি এখানে?
আমি অসহায় ভাবে বলি, আমার ফ্ল্যাট!
তিনি বলেন, তুমি তো এক বছর আগেই
এই বাড়ি ছেড়ে চলে গেছ, ভুলে গেলে নাকি?


সামনের সিঁড়ি ধরে নিচে নেমে গিয়ে
ডানদিকের রাস্তা ধরে গেলেই নাকি
আমি আমার বাড়ি পেয়ে যাব, ঠিকঠাক;
বলে দিলেন সেই ভদ্রলোক৷ আমি নেমে
হাঁটতে হাঁটতে যেখানে পৌঁছুলাম; সেটা
একটা ছোট্ট রেলষ্টেশন ৷ যেখান থেকে
খেলনা ট্রেনের মত দেখতে ট্রেনগুলো
হুঁশ হাঁস বেরিয়ে যাচ্ছে ৷ সেই ট্রেনে
কোন মানুষ নেই ৷ আমি একটা ট্রেনে
চেপে বসি ৷ ভাবনা চলতে থাকে, উমা!
আমাকে হিল ষ্টেশনের টিকিট কেটে দিল,
আমার গরম জামা-কাপড় লাগবে না?
আর আমি বেড়াতে যাব ,আমার শপিং
করা লাগবে না? উমা অবশ্য বলে দিয়েছে
এই ব্লু জিনসটার সাথে একটা লেবুরঙা কুর্তা
খুব ভাল লাগবে, আমি নিজের মনেই ভাবি,
উমাকেই বলব, আমার শপিং করে দিতে,
এখনও তো আমার তিনমাস সময় আছে ৷

ট্রেন থেকে নেমে সামনে বেঁকে থাকা
একটা রাস্তা দেখতে পাই, কোথায় যাচ্ছি?
সে চিন্তা আর মাথায় নেই, এগিয়ে যাই
ঐ রাস্তায় আমি এঁকে-বেঁকে যাই ৷ আরে!
আমার বাড়ি এই রাস্তার শেষ মাথায়?
কি যে হচ্ছে আমার কে জানে ৷ ঘরে ফিরে
ওকে দেখতে পাই না ৷ এখনও বাড়ি ফেরেনি ৷
আমার মাথা ফেটে যাচ্ছে যন্ত্রনায় ৷ আজকাল;
রোজ ও দেরী করে বাড়ি ফেরে৷ রাত বাড়লে,
ঘুমিয়ে পড়ি ৷ টুংটাং ঘন্টা বাজে দরজায় ৷

ও আমার দিকে তাকায় না, কথা বলে না ৷
আমি আবার এসে শুয়ে পড়ি ৷ যন্ত্রবত্ ৷
মিষ্টি একটা পাহাড়ি গন্ধ এসে লাগে নাকে ৷
স্নায়ু অবশ করা একটা গন্ধ ৷ ওদিকে
পাশ ফিরে ও শুয়ে আছে, বুঝতে পারি
ও মদ খেয়ে এসেছে ৷ এভাবে কি রোজ
রোজ ও মদ খেয়ে বাড়ি ফেরে, আর এসে
পাশ ফিরে শুয়ে থাকে? ঠান্ডা ৷ আমি ওকে
জিজ্ঞেস করি, তুমি কি মদ খেয়েছ?
ও কোন কথা বলে না ৷ আমি ওকে ধরে
আমার দিকে ফিরিয়ে দিতেই সেই গন্ধটা
স্পষ্ট টের পাই, এতক্ষণ যেটা হালকা
আবছা ছিল, টয়ট্রেনে, জিনসের পকেটে ৷
মনে হল এই গন্ধটা আমি আজকাল
রোজ পাই৷ আমি জোরে জোরে চেঁচাই,
তুমি মদ খেয়ে এসেছ৷ আবার আজকে ৷
এবার ওর শার্টের কলার ধরে ওকে
আর গোটা ট্রেনকে ঝাঁকুনি দিতে থাকি ৷
ও কোন কথা বলে না ৷ কোন কু উউউ,
ঝিকঝিক আসেনা কানে; এই রাতে ৷
আমার বেড়াতে যাওয়ার ট্রেন আজকাল
কোন কথা বলে না আর আমার সাথে।



( জিকো'র নির্বাচিত দু:স্বপ্ন পড়ে অনুপ্রাণিত হয়ে এই লেখাটি ব্লগে দিলাম, এই লেখাটি রোহণ কুদ্দুসের 'সৃষ্টি' তে প্রকাশিত।)
সর্বশেষ এডিট : ০১ লা জুন, ২০০৭ রাত ১২:১০
৬টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কাঁচা আম পাড়ার অভিযান

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৩ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:৩২



গাজীপুর জেলার জয়দেবপুরের বাড়ীয়া ইউনিয়নের দেউলিয়া গ্রামে আমার প্রায় ৫২ শতাংশ জমি কেনা আছে। সেখানে ছোট একটি ডোবা পুকুর, অল্প কিছু ধানের জমি আর বাকিটা উঁচু ভিটা জমি। বেশ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমরা কেন এমন হলাম না!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ৯:৪১


জাপানের আইচি প্রদেশের নাগোইয়া শহর থেকে ফিরছি৷ গন্তব্য হোক্কাইদো প্রদেশের সাপ্পোরো৷ সাপ্পোরো থেকেই নাগোইয়া এসেছিলাম৷ দুইটা কারণে নাগোইয়া ভালো লেগেছিল৷ সাপ্পোরোতে তখন বিশ ফুটের বেশি পুরু বরফের ম্তুপ৷ পৃথিবীর... ...বাকিটুকু পড়ুন

অভিমানের দেয়াল

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৪ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:২৪




অভিমানের পাহাড় জমেছে তোমার বুকে, বলোনিতো আগে
হাসিমুখ দিয়ে যতনে লুকিয়ে রেখেছো সব বিষাদ, বুঝিনি তা
একবার যদি জানতাম তোমার অন্তরটাকে ভুল দূর হতো চোখের পলকে
দিলেনা সুযোগ, জ্বলে পুড়ে বুক, জড়িয়ে ধরেছে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আমাদের গ্রামে মুক্তিযুদ্ধের প্রস্তুতি

লিখেছেন প্রামানিক, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১:৩১



২৬শে মার্চের পরে গাইবান্ধা কলেজ মাঠে মুক্তিযুদ্ধের উপর ট্রেনিং শুরু হয়। আমার বড় ভাই তখন ওই কলেজের বিএসসি সেকেন্ড ইয়ারের ছাত্র ছিলেন। কলেজে থাকা অবস্থায় তিনি রোভার স্কাউটে নাম... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিকেল বেলা লাস ভেগাস – ছবি ব্লগ ১

লিখেছেন শোভন শামস, ১৪ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৫


তিনটার সময় হোটেল সার্কাস সার্কাসের রিসিপশনে আসলাম, ১৬ তালায় আমাদের হোটেল রুম। বিকেলে গাড়িতে করে শহর দেখতে রওয়ানা হলাম, এম জি এম হোটেলের পার্কিং এ গাড়ি রেখে হেঁটে শহরটা ঘুরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×