somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শয়তানের স্ট্র্যাটেজী

১৩ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ৯:৪৮
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

" আসসালামু আলাইকুম "
" বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম " ।
~~~~~~~~~~~~~~~ ~~~~~
শয়তানের স্ট্র্যাটেজী
শয়তান ব্যাপারটা যে খারাপ তা আমরা সবাই জানি, তাহলে প্রশ্ন
হচ্ছে আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা কেন শয়তান সৃষ্টি করলেন? সহজ ভাষায়
বলতে গেলে যদি খারাপ না থাকত তাহলে আমরা হয়ত ভাল
কোনটা জানতাম না। আর বিস্তারতি হচ্ছে যদি খারাপ
ব্যাপারটা না থাকত –তাহলে কোনো দাওয়ার কাজ থাকতনা,
ভাল কাজের ডাক ও খারাপকাজে বাঁধা দেওয়া লাগতনা, বিভিন্ন
খারাপ কাজের জন্য কামনা বাসনা এসবের জন্য
পরীক্ষা থাকতনা। আল্লাহ সুবহানাহু তাআলা আমাদের
সফলকাম হওয়ার সমস্ত উপাদান – কুরআন, নবী-রাসূল, বিবেক-বুদ্ধি,
ভালমন্দ বিচারের ক্ষমতা, ভাল এবং খারাপ উভয়ের পরিণাম
জানিয়ে দিয়েছেন; সোজা কথা বল এখন আমাদের কোর্টে। এরপরও কেউ
যদি শয়তানের পদাঙ্ক অনুসরণ করে তাহলে ভুলটা কার?
ব্যাপারটা অনেকটা এইরকম, বাংলা পরীক্ষা জানা সত্ত্বেও
আপনি ধর্ম পরীক্ষার প্রস্তুতি নিয়ে গেলেন এবং দুই পরীক্ষায়
ডাব্বা মারলেন ! আসল কথায় আসা যাক, শয়তানের
ব্যাপারে আমাদের কম বেশি সবার ধারণা আছে, মানব সৃষ্টির প্রথমদিন
থেকেই শয়তানের সাথে আমাদের এক চিরন্তন শত্রুতার সম্পর্ক,
যে আমাদের প্রতিনিয়ত সিরাতুল মুস্তাকিম থেকে বিমুখ করার চেষ্টায়
অনবসর। এই ব্যাপারে কুরআনে সূরাহ বাকারা ১৬৯ নম্বর
আয়াতে বলা হয়েছে “(শয়তানের কাজ হচ্ছে), সে তোমাদের (সব সময়) পাপ ও অশ্লীল কাজের আদেশ দেয়…” এই লেখার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে শয়তানের বিভিন্ন স্ট্র্যাটেজী দেখানো কিভাবে সে আমাদের ফাঁদে ফেলে। তার স্ট্র্যাটেজী গুলোকে আপনি “মাসলো’স হায়ারারকি” এর মত,
সে আমাদেরকে আস্তে আস্তে তার ছোট থেকে বড় লক্ষ্যে অর্জনে নিয়ে যাবে;
সময় ও ব্যক্তি বিবেচনায় আলাদা তবে লক্ষ্য এক – “পথভ্রষ্টতা”। ইবনুল কাইয়্যুম এর মতে শয়তান ছয়টি কৌশল অবলম্বন
করে মানুষকে ধ্বংস করার জন্য, ইসলামিক প্রতিষ্ঠান “আল কাউসার”
এর “হার্ট থেরাপি” কোর্স নোট থেকে পয়েন্টগুলো সংক্ষেপে আলোচনার
চেষ্টা করলামঃ

[১] কুফরী, শিরক এবং শত্রুতাঃ

অবিশ্বাস, আল্লাহর সাথে কাউকে শরীক করা এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের সাথে শত্রুতা এই তিনটি হচ্ছে শয়তানের জীবনের মূল উদ্দেশ্য।
শয়তান তার যথাসাধ্য চেষ্টা করে মানুষকে আল্লাহ এবং তাঁর
রাসূলের অস্তিত্বকে অস্বীকার করানোর জন্য এবং যার উপর মত্যু
বরণ করলে চিরস্থায়ী জাহান্নাম নিশ্চিত। কুরআনে এসেছে “…মূলত
যে কেউই আল্লাহর সাথে শরীক করবে, আল্লাহ তায়ালা তার ওপর জান্নাত
হারাম করে দেবেন, আর তার (স্থায়ী) ঠিকানা হবে জাহান্নাম…” (সূরা মায়িদাহ, আয়াত ৭২)
[২] বিদাতঃ
প্রথম স্ট্র্যাটেজীতে বিফল হলে সে লেগে পরে ইসলামের মধ্যে নতুন
নতুন ইবাদতের মাধ্যম উদ্ভাবন করতে যা আল্লাহ এবং তাঁর রাসূল
আমাদের করতে বলেননি। শয়তান বিদাতকে পাপাচার এবং অবাধ্যতা থেকে বেশি পছন্দ করে, কারণ এইগুলোকে ইবাদতের মধ্যে ঢুকিয়ে দিয়ে সে ইসলামের অনুশীলন এবং অনুসারী উভয়কে ক্ষতি করার চেষ্টা করে। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন – “সবচেয়ে খারাপ বিষয় হল ইসলামে নতুন
ইবাদত পদ্ধতির উদ্ভাবন… এবং যে এইসব বিষয় আমাদের ইসলামের
মধ্যে ঢুকিয়ে দিল যা আমাদের মধ্যে বস্তুত নাই, তা প্রত্যাখ্যাত।”
[৩] বড় গুনাহঃ
শয়তান মানবজাতিকে শিরক, কুফর, বিদাত এসব করাতে ব্যর্থ হলে বড় গুনাহ করানোর চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে সে সবচেয়ে বেশি আগ্রহী হয়
স্কলারদের টার্গেট করতে, কারণ তাকে বড় গুনাহে লিপ্ত করার
মাধ্যমে তার অনুসারীদেরকে পথভ্রষ্ট করা; অর্থাৎ শয়তান তাকে নিজের
এজেন্ট হিসেবে ব্যবহার করে। বড় গুনাহের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে –
ব্যভিচার, মদ-গাজা সেবন, জুয়া খেলা, অহংকার, মিথ্যা ইত্যাদি। তবে আশার বানী শুনুন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন – “সমস্ত আদম সন্তানই হচ্ছে পাপী, কিন্তু উত্তম পাপী হচ্ছে সেই যে অনুতপ্ত হয়ে (ক্ষমা চাইল)”
[৪] ছোট গুনাহঃ

উপরের কৌশলে হতাশ হয়ে শয়তান ফাঁদ পাতে একজন মুমিনকে ছোট গুনাহে লিপ্ত করতে। কারণ ছোট গুনাহ গুলোও যদি একত্র করা হয় তা একজনের ধ্বংসের জন্য যথেষ্ট হতে পারে। অনেক মুসলিমই জাহান্নামে এসে পৌঁছবে শুধুমাত্র যে কারণে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) সেটাকে বলেন “মুহাকিরাত আল জুনুব” এর মানে হচ্ছে সেই গুনাহ গুলো যা আমরা সাধারণ ভাবেই
নিয়ে থাকি, ছোট ছোট গুনাহ কিন্তু ইসলামে নিষিদ্ধ। আর এজন্যই
রাসূলুল্লাহ (সাঃ) – “ছোট গুনাহ কে তুলনা করেছেন চিকন লাঠির সাথে,
যা একত্র করা হলে বড় আগুন তৈরি করা সম্ভব। [সাহীহ জামি]”

[৫] অনুমদিত কাজে ব্যস্ত রাখাঃ

এই কৌশলে আমরা অনেক মুসলিমই হয়ত ফেঁসে যায়, যেখানে শয়তান সাওয়াব বা গুনাহ কিছুই নেই এমন কাজে ব্যস্ত রাখার মাধ্যমে মানুষকে পথভ্রষ্ট করতে থাকে; আর মানুষ হয়ত সে ধোঁকা বুঝতেও পারেনা;
এবং আমরা আল্লাহর রেজামন্দি অর্জনে ব্যর্থ হতে থাকি।
এর কিছু উদাহারণ হচ্ছে – মোবাইলে গেমস খেলা, অযথা ফেসবুক
সময় নষ্ট করা, নভেল পড়া ইত্যাদি।

[৬] কম সাওয়াব হয় এমন কাজে ব্যাস্ত রাখাঃ

শয়তান এরপর ও হার মানতে রাজি নয়। সে এবার তার অস্ত্রকে অন্যভাবে ব্যবহার করে। নিশ্চয় আপনি চাইবেননা দুইটি কাজের মধ্যে সেই কাজটি বেছে নিতে, যা কম লাভজনক। শয়তান এই সুযোগটায় নেই, আর মুমিনদেরকে কম সাওয়াবের কাজটি সুন্দর করে ফুটিয়ে তুলে এর মধ্যে আমাদের ব্যস্ত রাখে। যেমন, নামাজ সময় মত আদায় না করে দাওয়ার
কাজ করা অথবা মা-বাবার সাথে ব্যবহার খারাপ কিন্তু নফল ইবাদতে বেশ পারদর্শী। শয়তানের সর্বশেষ স্ট্র্যাটেজী – সবধরণের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে শয়তান এখন অন্যদের ব্যবহার করে যাতে তারা মুমিনদের বিরুদ্ধে গীবত,
মিথ্যা ইত্যাদি রচনা করতে থাকে। এর মাধ্যমে সে মুমিনদের চরিত্রে আঘাত
আনে এবং তাদের সামাজিক ভাবে দূর্বল প্রতিপন্ন করার দ্বারা তাঁর
অন্তরকে বিশৃঙ্খল করে তোলার চেষ্টা করে। এবং শয়তানের লক্ষ্য
থাকে মুমিনদেরকে কনফিউজ করা এবং অন্যদেরকে তাঁর কাছ থেকে উপকার নিতে বাঁধা সৃষ্টি করা। উদাহারণ হিসেবে বলা যায়, মক্কার
কাফেররা যখন রাসূলুলাহ (সাঃ) এর বিরুদ্ধে বিভিন্ন অপবাদ দেওয়ার চেষ্টা করতে থাকে। স্ট্র্যাটেজীতো জানলেন, এখন দেখুন আল্লাহ সুবহানাহু
তাআলা কুরআনে আমাদের কি বলেছেন – “হে মানুষ, তোমরা যারা ঈমান এনেছো, কখনো শয়তানের পদাংক অনুসরণ করো না; তোমাদের মধ্যে যে কেউই শয়তানের পদাংক অনুসরণ করে (সে যেন জেনে রাখে), সে (অভিশপ্ত শয়তান) তো তাকে অশ্লীলতা ও মন্দ কাজেরই আদেশ দেবে…” [সূরা নূর, আয়াত ২১] সত্যি বলতে মুমিন বান্দা সর্বদা শয়তানের
সাথে যুদ্ধে লিপ্ত, জন্ম থেকে তাঁর মৃত্যু পর্যন্ত; এবং এটা তাঁর নিজেরই দায়িত্ব ইসলামের সঠিক নির্দেশাবলী মেনে চলতে থাকা এবং ঈমান নিয়ে মৃত্যুবরণ করা। আল্লাহ আমাদের অভিশপ্ত শয়তানের সমস্ত রকম পদাংক ও প্ররোচনা
থেকে বেঁচে থাকার তওফিক দিন। আমিন।

Collected from ইসলামের বানী।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

সেঞ্চুরী’তম

লিখেছেন আলমগীর সরকার লিটন, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৪


লাকী দার ৫০তম জন্মদিনের লাল গোপালের শুভেচ্ছা

দক্ষিণা জানালাটা খুলে গেছে আজ
৫০তম বছর উকি ঝুকি, যাকে বলে
হাফ সেঞ্চুরি-হাফ সেঞ্চুরি;
রোজ বট ছায়া তলে বসে থাকতাম
আর ভিন্ন বাতাসের গন্ধ
নাকের এক স্বাদে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ভণ্ড মুসলমান

লিখেছেন এম ডি মুসা, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:২৬

ওরে মুসলিম ধর্ম তোমার টুপি পাঞ্জাবী মাথার মুকুট,
মনের ভেতর শয়তানি এক নিজের স্বার্থে চলে খুটখাট।
সবই যখন খোদার হুকুম শয়তানি করে কে?
খোদার উপর চাপিয়ে দিতেই খোদা কি-বলছে?

মানুষ ঠকিয়ে খোদার হুকুম শয়তানি... ...বাকিটুকু পড়ুন

আসবে তুমি কবে ?

লিখেছেন সেলিম আনোয়ার, ২০ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:৪২



আজি আমার আঙিনায়
তোমার দেখা নাই,
কোথায় তোমায় পাই?
বিশ্ব বিবেকের কাছে
প্রশ্ন রেখে যাই।
তুমি থাকো যে দূরে
আমার স্পর্শের বাহিরে,
আমি থাকিগো অপেক্ষায়।
আসবে যে তুমি কবে ?
কবে হবেগো ঠাঁই আমার ?
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×