বন্ধু গণে তর্ক করিতাম দিনের পর দিন রাতের পর রাত, গভীর রাত নয়, প্রথম প্রহরের আগমনঅবধি। কি না থাকিত সেই তর্কের মাঝে , কি না বলোতো? কেবল থাকিত না বিদ্যালয়ের পাঠ , কিন্তু দেখা যাইতো পরের দিন ক্লাশ এ সবচেয়ে খাড়ুস স্যারটির পরীক্ষা থাকিত, দূর তোয়াক্কা কে করিত। আড্ডার সময় আড্ডা আর পড়ার সময় পড়া। যথাসময়ে যথা কাজ করিবার নীতি সর্বেক্ষেত্রে না মানিতে পারিলে এই ভাবিয়া খুশিতো হইতে পারিতাম যে আড্ডার সময়টাতে তো মারিতে পারিতাম আড্ডা। দিনের শেষ আড্ডা কালে হাতে হাতে টুপিটি অঙ্গুলের উপর ঘুরিত কারণ ঐ আড্ডা এশার নামায পড়িয়া মসজিদ হইতে বাহির হইবার পরেই শুরু হইতো। মাঝে মাঝে আমার ডানের বাড়ীখানায় ক্লাশের সবচেয়ে পড়ুয়া সহপাঠীটির ঘরে আর বামের বাড়ীটিতে ক্লাশের সবচেয়ে ভালো ছাত্রীটির ঘরে আলোর ঝলক বাড়িতে দেখিতাম, দেখিতাম সেখানে জানালা দিয়ে ঢুকছে জ্ঞানপরীর দল। আর আমরা সর্বজ্ঞানী আড্ডার আসরে মাঝে মাঝে কলোনীতে আজ কোন মেয়েটা কি করিয়াছে তাহার আলোচনায় মুখরিত হইতাম।
রাতে ঘরে ফিরিলেই আবার মনে হইতো প্রেসটিজ রক্ষা করিতে হইবে , কাশে অটুট রাখিতে হইবে প্রথম স্থান। পড়িতে বসিতাম রাত জাগিয়া, গল্পের বই আসিয়া কাঁদিয়া লুটাইতো পায়। তাহাকেও খুশি করিতাম। এমন করিয়া তাই রাতের প্রহর একটা দুটো বিদায় লইতো কিন্তু আমার চোখের পাতা দুটি একে অপরকে সঙ্গমের সুযোগ পাইতো না।
আহা! কি সুন্দর কাটিত সেই সব দিন। সেই কৈশোর। আজ কাশের পরীক্ষা নেই। প্রথম হইবার প্রেসটিজ প্রবলেম নাই। সেই কলোনীর আড্ডার স্থলগুলোতে আমি বা আমরা নাই। আড্ডা নেই। আছে কেবল রাত জাগার অভ্যেস খানি একান্ত আপন হইয়া।
১০/৫/০৭