somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমি একজন পিপড়া বলছি।

২২ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমি একজন রানী পিপড়া। এই বিশ্ব চরাচরে কত অজানারে। কত কিছুই বা জানিবে মানব। আজ তোমাদের সাথে আমি রানী পিপড়া। আমার জীবনে কিছু কথা শেয়ার করবো। কথা গুলো গল্প আকারে না, কথা আকারেই থাকবে। গল্প আমি বলতে বা বানাতে জানি না। তাছাড়া তোমাদের মানুষের মতো আলসেমি করে আমার এক মুহূর্ত কাটাবার জো নেই, যে গল্প বানাবো। তোমরা ইয়া বিরাট সাইজ এর মানুষ, আমাদের নিয়ে কখনও না ভেবে পারো নি, কারণ তোমাদের চিন্তার সীমানা ছাড়িয়ে আমাদের বুদ্ধির খেল অনেক সময় ই আমরা দেখিয়েছি। আমার এক স্বজাতি আর্জেন্টাইন পিপড়ারা ইউরোপে ৩৭৫০ মাইল দীর্ঘ কলোনি ঘর বানিয়েছিলো তাদের জন্য। তোমরা টাস্কিত হয়েছো! আমাদের কারণে তোমরা মানুষেরা প্রতি বছর মেডিকেল বাবত ৫ বিলিয়ন ডলার খরচ করো। আমরাই প্রতি বছর ৭৫০ মিলিয়ন ডলারের কৃষিখাত নষ্ট করে দেই। কি করবো বলো, তোমাদের কাছে নষ্ট করে দেয়া, আর আমাদের কাছে আমাদের জীবন রক্ষা করা। অথচ আমাদের শরীরের ওজন করে, প্রতি পাউন্ড যখন ৪০ ডলারে বিকিয়ে দাও, কিই বা করার থাকে আমাদের। ইন্ডিয়া, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, ম্যক্সিকো, বার্মা ইত্যাদি দেশের খাটাশ মানুষ আমাদের কি রসিয়ে রসিয়েই না খায়। আমাদের ডিম থেকেও তোমাদের চোখ সরেনি। তোমরা আমাদের মেরে মেরে জুসের সাথে মিশিয়ে খাও, তরকারীতে লবণ দেয়ার মতো করে আমাদের ডেলে দাও। কি নির্মম তোমাদের মন, অথচ ভাবো না ঘরে আমাদেরও বোনেরা থাকে, রাজ কুমারেরা থাকে, কুমারী রাজকন্যা থাকে, থাকে আমাদের নিজ স্বজাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা কারী আর্মি বাহিনী।

যাইহোক আমার বা আমাদের গল্প বলতে গিয়ে তোমাদের সাথে আর নাই বা লড়তে গেলাম। এই যে আমি রানী, আমার রানী হয়ে উঠার কথা আজ তোমাদের বলি। আমার মা রানী কোন এক সময়ে কোন এক রাজপুত্র পিপড়ার সাথে আকাশে মিলিত হয়ে মাটিতে নেমে এসে বানিয়েছিলেন আমাদের ঘর। সেই ঘর বানাতে গিয়ে তার সাথে মিলেছে আরও বেশ কজন রানী পিপড়া। সবাই মিলে ঘর বানানো শেষ হলেই তাদের কাজ ছিল ডিম পাড়া, আর নিজের পিঠের পাখা টা আস্তে আস্তে খেয়ে খেয়ে জীবন বাঁচিয়ে রাখা। সেকি অসহ্য জীবন, দিনরাত একটাই কাজ ডিম পাড়া, যখন কলোনিতে প্রথম ব্যাচের মেয়ে পিপড়া গুলো একটু স্বাবলম্বী হয় তখন মা রানী পিপড়ার কষ্ট একটু কমে। তারাই দায়িত্ব নেয় পরবর্তী লাভ্রা গুলোকে বাঁচিয়ে রাখার। খাবার জোগাড় করা, শীত, তাপ, পানি, দুর্যোগ থেকে রক্ষাকরা সব কাজ তারাই নিজেদের কাঁধে তুলে নেয়। মা রানী পিপড়া শুধু কমান্ড দেয় বসে বসে। সব ডিম থেকে আমাদের মতো কুমারী রাজকন্যার বা রাজপুত্রের জন্ম হয় না। আমাদের জন্মের জন্য অপেক্ষা করতে হয়। কখনও কখনও সেটা বেশ দীর্ঘ সময় ৫/৬ বছর বা তারও বেশী। তাছাড়া আমাদের স্বজাতে প্রচুর পরিমাণে গোত্র গুষ্টি আলাদা করা। তোমাদের মানুষের মতে, পিপড়া জাতির ২২০০০ এর বেশি প্রজাতি আছে। আর ৩ মার্চ ২০১০ পর্যন্ত তোমরা আবিষ্কার করে ফেলেছো ১২৫৬৫ প্রজাতি। সেটা আবার কম্পিউটারে ওয়েবসাইট বানিয়ে ডাটাবেইজ করে রেখছো। আমাদের নিয়ে তোমাদের এতো আধিখ্যেতা দেখলে মাঝে মাঝে হাসি পায়। দুনিয়ায় যা মানুষ আছে সবাইরে নিয়েই হয়তো এতো ভাবো না। হাহাহাহা। ওরে আমাদের হাসি কান্নাও আছে রে, আছে দেখার জন্য চোখ। তবে আমাদের এক জোড়া এন্টেনা থাকে যা দিয়ে অনুভব করি। তোমাদের ভালোবাসার শেই-পের হৃদয়ের মতো আমাদের হৃদয় না। আমাদের হৃদয় লম্বা নল! তাই এতো অহেতুক ভালোবাসায় ফাঁস লেগে মরে যাই না। না হলে রাজ কুমারদের দুঃখেই আমরা মরে যেতাম, আর ঘর সংসার করতে হতো না!





আমাদের রাজ কুমার দের কথা কিছু বলা দরকার। জন্মের পর থেকে এরা কোন কাজ করে না, বসে বসে শরীরে চর্বী জমায়, আর পাখায় শান দেয়। বয়সকালের প্রথম বৃষ্টি হলেই এরা আদরের জন্য হা পিত্যেস শুরু করে। আর সত্যি কথা বলতে আমরা রাজকন্যা পিঁপড়েরাও তো ওই জন্যই অপেক্ষা করতে থাকি। কবে বৃষ্টি হবে, কবে রাজ কুমারেরা আকাশে উড়বে, আর আমরা তাদের পিছু পিছু আকাশে উড়াল দেবো। সেখানে যে বেশি কামেল শক্তিশালী, সেই শুধু আদর করার ক্ষমতা পাবে, বাকীরা কুহু সুরে মনের আগুন জ্বালিয়ে নিজেরাই ঝরে পড়ে। জীবন যৌবন সব থেকে। তবে রাজকুমারদের মুরুদ আমাদের আদর করা পর্যন্তই, এর পরে এরা এতো এতো ক্লান্ত হয় যে, এক এক ভাবে এক এক জন মারা যায়। আমরা কিন্তু একে তৃপ্ত নই, আকাশে উড়ে উড়ে বেশ কজন কামেল রাজকুমারের আদর নিই। এর পরে শুরু হয় আমাদের জীবন গড়া, মাঠিতে নেমে এসে ঘর বানানোর জন্য জায়গা খুঁজা। আরও ভালো দেখে দু চার দশজন রানী পিপড়ার সাথে সন্ধি করে, তবে গর্ত করা শুরু করি আমরা। তবে অনেকেই আছে যারা কারো সাথে মিলতে পারে না, তখন নিজেরা নিজেরা মারামারি করে মরে যায়। তোমাদের মানুষের মতো হিংসুটে, অহংকারী। হিংসুটে অহংকারীরা কোন প্রাণী প্রজাতিতেই ঠিকতে পারে না। মাটির ঘর আমরা এমন ভাবে বানাই যেনো শেল্টার টা সব সময় সব ভাবে আমাদের অনুকূলে থাকে। তোমরা মানুষ চাড়াও আমাদের শত্রুর অভাব নেই। পিপড়া সিংহ নাম নেয়া এক অতি কুটিল চালের প্রাণী আমাদের খাবার জন্য ফাঁদ পেতে রাখে। সেই ফাঁদে আমাদের অনেক শ্রমিক মেয়ে পিপড়া মারা যায়।

তোমরা যখন দেখো, দুটো পিপড়া মুখের পাশে মুখ এনে কি যেনো করে, ভাবো চুমু খেলো বুঝি সকাল বিকেল হর হামেশা। না এতোটা লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে আমরা চলি না। আসলে এক জনের পাকস্থলী থেকে অন্যকে খাবার তুলে দিই। যে দুর্বল যার খাবারের প্রয়োজন হয়, তাকে এভাবে খাইয়ে দেই। তাছাড়া আমরা রানী পিঁপড়েরা আমাদের কমান্ড দিতে গেলেও মুখের পাশে মুখ নিয়ে শিখিয়ে দিই কি করতে হবে এখন। আমার মতো রানী পিপড়ারা ৩০ বছরের মতো বাচে। তবে আমরা যখন অসুস্থ হয়ে যাই, সে এক নিদারুণ ঘটনা ঘটে আমাদের সাথে। তোমাদের মতো এম বি বি এস পাস দেয়া ডাক্তার আমরা এখনো বানাতে পারি নি। তাই সেই কষ্ট থেকে মুক্তি পেতে মৃত্যুকে বরন করে নি। আমাদের মৃত্যু টাকে বৃথা যেতে দেই না। আমাদের সন্তানেরাই সারা শরীর জুড়ে এসিড ছুড়ে দিয়ে অবশ করে ফেলে রানীকে। তারপর সবাই মিলে টুকরো টুকরো করে ছিঁড়ে ফেলে শরীরটা আর সব লাভ্রা কে এনে সেই শরীর খাইয়ে দেয়। মরে গিয়েও মিশে থাকি নিজ সন্তানদের মাঝে।

মজার কথা হচ্ছে তোমাদের মানুষের মতো করে আমাদের ও নিজ রাজ্য রক্ষার্থে যুদ্ধ করতে হয় অবিরত। যুদ্ধের আবার দুটো নিয়ম আমাদের। হয় রানী পাশের দেশ আক্রমণ করে পাশের দেশের রানীকে ধন্ধ যুদ্ধে ডাকে, রানীতে রানীতে যুদ্ধে যে জিতে যায় তার ঘরের বাকী সব ডিম, লাভ্রা, মেয়ে শ্রমিক, সবাই জিতে যাওয়া রানীর আনুগত্য স্বীকার করে নেয়। আর না হলে একেবারে লাঠালাঠি যুদ্ধ লাগে সব আর্মি আর্মি তে। যারা আক্রমণ কারী তারা আগে থেকে শিউর থাকে যে তারা জিতবেই সেই জন্য বেছে বেছে ছোট দেখে রাজ্য আক্রমণ করে। অই কলোনির সব পিপড়াকে বন্ধী করে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে আসে নিজ রাজত্বে। তাদের মৃতদেহ খাবার হয়ে উঠে রানীর, আর বাকী লাভ্রা গুলোর। রাজকুমারী থাকা অবস্থায় রাজ কুমার দের মতো পিপড়াদের কোন কাজ করতে হয় না। শ্রমিক মেয়ে পিপড়ারা অবিরত পার্লারের দায়িত্ব নিয়ে রাজকুমারীদের সাজিয়ে রাখে। পাখা সুন্দর করে রাখা, শরীরে একটু শক্তি সঞ্চয় করা, মোটামোটি জিরো ফিগার এর আশা ছেড়ে দিয়ে সবাই শক্তির কথাই ভাবে!

মজার কথা হচ্ছে আমাদের মাঝে লিফ কাঠার নামে একদল পিপড়া আছে এরা জন্ম থেকে লেসবিয়ান। এরা ছেলে পিপড়া দেখতে পারে না, তাই ছেলে পিপড়ার জন্ম ও দেয় না। নিজেদের ডিএনএ কপি করে করে এরা নতুন বাচ্চা জন্ম দেয়। আদর সোহাগ ছাড়া। কি বিতিকিচ্ছিরি তাই না? আমার বাপু এমন জীবনে নিকুচি করি? অদের আবার রানী টানিও নেই সবাই রানী, ইতর এক একটা বলা যায়!

আমাদের শক্তির হিসাব করলে তোমরা মানুষের থেকে আমরা অনেক বেশি শক্তিশালী। আমাদের মাঝে অনেক প্রজাতি তার নিজ ওজনের ১০০ গুন বেশি ওজন তূলে ফেলতে পারি। না তোমাদের মতো জিমে গিয়ে শক্তি বানাতে হয় না, আমাদের সিস্টেম টাই এমন যে, আমাদের পায়ের এক বিশেষ ধরনের গড়োনের কারণে, আমরা এটা এমনি এমনি পেরে যাই। তোমরা মানুষেরা এটা নিয়ে অনেক গবেষণা করছো, যদি জেনে যাও কিভাবে? তবে তোমরাও এক সময় দেয়াল দিয়ে হাঁটবে। আমাদের মতো আর টান দিয়ে একজন এক একটা ট্রাক তুলে নেবে দুই হাত দিয়ে। তবে অসব হবে বলে মনে হয়, তোমরা ব্যস্ত আছো পরমাণু, নিউক্লিয়ার,মঙ্গলের মাটি, চাদের ঘাটি নিয়ে। আচ্ছা অতো দূরে না গিয়ে যদি আরও অনেক আগে থেকে আমাদের দিকে তাকাতে, কত কিছু তোমাদের শিখিয়ে দিতাম আমরা।





ছবি গুলো সংগ্রহীত ইন্টার নেট থেকে।
এই লেখা হয়তো চলছে। ধন্যবাদ সবাইকে।
আমি পিপড়া বলছি-২
সর্বশেষ এডিট : ২৯ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৩:০৭
১৪টি মন্তব্য ১৩টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×