somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা এবং ব্যর্থ কিছু 'কমিটমেন্ট'

০৭ ই মে, ২০০৭ রাত ৩:৫৭
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


সময়টা আসলেই খারাপ, খুব খারাপ। এতো চেষ্টা করে যাচ্ছি কিছুতেই কিছু হচ্ছে না। এরকম 'হা-ভাত' অবস্থায়তো পড়তে হয়নি কখনোই। সবসময়ই একটা সচল, ঝরঝরে অবস্থার মধ্য দিয়ে যেতে পেরেছি, তেমন কোন ঝামেলা ছাড়াই- কিন্তু এখন!

বলছিলাম লেখার সম্ভাবনা নিয়ে। আগের মতো সাবলীল ভাবটা যেনো হাওয়া হয়ে গেছে। ব্লগের পাতা খুললেই মনে হতো লিখে ভাসিয়ে দিই। আর এখন ঠিক উল্টো। আলসেমী একটা কারণ হলেও প্রধান কারণ যেনো অন্যকিছু। অন্য কোন কারণে, অন্য কোনখানে, অন্য কোন প্রয়োজনে, অন্য কিছু করে যাচ্ছি, অন্য ভাবে বুনে যাচ্ছি সময়ের সূতা।

ইদানিং একটা সিরিয়াল নিয়ে বুঁদ হয়ে থাকি। সারারাত জেগে দেখতেও ক্লান্তি জাগে না। অদ্ভুত এক ঘোর নিয়ে আটকে থাকি। "এলিয়াস" এ সিআইএর নানা দুর্ধর্ষ কর্মকাণ্ডের মাঝেও বিভিন্ন সম্পর্কের প্রতি কমিটমেন্টটা সুদারুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছে কলাকুশলীরা। এজেন্ট সিডনী ব্রিস্টো আঘাতে জ্ঞান হারিয়ে পুনরায় জ্ঞান ফিরে পাওয়ার মাঝখানে যখন কেটে যায় দুটো বছর, এলএ থেকে নিজেকে আবিষ্কার করে হংকং-এ, সেইফহাউজে দেখা হয় সহকর্মী ভন এর সাথে- সবকিছুই কেমন খাপছাড়া লাগে।

ফিরে আসার পরে সিডনীর জানা হয় ভন এর সম্পর্কের প্রতি শ্রদ্ধার গভীরতা। ছয়মাস দেশের বাইরে কাটানোর পর এনএসএ-র একজন অফিসারের সাথে পরিণয়, সিআইএ ছেড়ে ফ্রেঞ্চ শিক্ষক হিসেবে আত্মনিয়োগ, এসবই ছিলো দুবছর আগের প্রাপ্ত উপাত্তের ডিএনএ পরীক্ষায় সিডনীর মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর, তাঁর স্মৃতি জাগানিয়া জায়গা গুলো থেকে নিজেকে গুটিয়ে নিতে ভন এর এরূপ আচরণ।

সাজানো সেট, সাজানো কাহিনী হলেও কেমন একটা ধাক্কা মারার মতো অবস্থা। বুঝতে পারি, মন খারাপ করার কোন মানে হয় না। তথাপি কোথায় যেনো কি বেজে ওঠে, কোথায় যেনো নি:শব্দেই 'একটু খারাপ লাগা' ডুকরে উঠে। শরত বাবুর কথার মতো একেবারে গলা পর্যন্ত ফেনাইয়া উঠে...!


প্রতি বছরের মে মাসের প্রথম শনিবার রাইন ল্যাণ্ডের অধিবাসীরা এক অদ্ভুত উৎসব করে। "রাইন আম ফ্লামেন"- আতশবাজির আলোতে রাইন নদী। বিশ্বের নামকরা সঙ্গীতের মূর্ছনার সাথে নদীর উপরের আকাশে খেলা করে নানা রকমের আতশবাজি। বিয়ার-মদের মহোৎসব হয়, চিৎকার, চেঁচামেচি, কোলাহল সব কিছুতেই ভরে থাকে চারদিক।

একবারই গিয়েছিলাম, প্রথমবার। তারপর থেকে আর যাওয়া হয় নি। ইচ্ছে করেনি এমন না, কিন্তু ঐ যে কমিটমেন্ট। নিজের সাথে কিছু কমিটমেন্টের কারণে খুব প্রিয় একটা বিনোদন থেকে স্বেচ্ছায় গুটায়ন।

হ্যামিলন, শহরটা খুব বেশী দূরে নয়! জুনের প্রথম সপ্তাহ থেকে শুরু হয়ে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি পর্যন্ত প্রতি সপ্তাহান্তেই চলে "মিউজিক্যাল র্যাট" উৎসব। যেদিন থেকে জানলাম ছোটবেলায় জানা হ্যামিলন শহরটার খুব কাছেই আছি, সেই থেকেই একেক করে দিন গুনি হ্যামিলনের বাঁশিওয়ালা হয়ে কবে আমার কমিটমেন্ট পূরণ হবে, কবে আমি শতশত ইঁদুরের মাড়ানো রাস্তায় পা ফেলবো, কবে আমি সেই পাহাড়টি একটু ছুঁয়ে দেখবো যে পাহাড়টির ওপাশে হারিয়ে গেছে একদল কিশোর ভবিষ্যতের কমিটমেন্ট নিয়ে।

ইনস্ট্রুমেন্টালের দিকে ঝোঁক নতুন না। খুব ভেতর থেকে নাড়িয়ে যায় এমন ইনস্ট্রুমেন্টালের ভক্ত আমি বরাবরই। জুবায়ের এর বাশীর এই ইনস্ট্রুমেন্টালটা যখন শুনলাম ভালো লাগাতে সময় লাগে নি খুব বেশী।

রাতে বিছানায় শুয়ে কানে হেডফোন লাগিয়ে বাঁশীর সুরের সাথে মিশে যাওয়ার সময় খেয়াল করলাম, আমি দাঁড়িয়ে আছি সবুজ ঘাসের একটা খোলা মাঠে। ঝুম করে সূক্ষ্ণ ধারায় বৃষ্টি নেমেছে, বোতাম খোলা সাদা পাতলা শার্টের শরীর ও হাতা নিয়ে বৃষ্টি ও বাতাস কাড়াকাড়ি করছে, আমি শুনছি ইনস্ট্রুমেন্টটা, চুল বেয়ে, কানের ধার বেয়ে, গাল বেয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে... এক অজানা কমিটমেন্ট নিয়ে!

২৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

মোজো ইদানীং কম পাওয়া যাচ্ছে কেন?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৭


শুনলাম বাজারে নাকি বয়কটিদের প্রিয় মোজোর সাপ্লাই কমে গেছে! কিন্তু কেন? যে হারে আল্লামা পিনাকী ভাট ভাঁওতাবাজিদেরকে টাকা দিয়ে 'কোকের বিকল্প'-এর নামে 'অখাদ্য' খাওয়ানো হচ্ছিলো, আর কোককেই বয়কটের ডাক... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৫৮

আজ (১০ মে ২০২৪) রাত দুইটা দশ মিনিটে নিউ ইয়র্কের পথে আমাদের যাত্রা শুরু হবার কথা। এর আগেও পশ্চিমের দেশ আমেরিকা ও কানাডায় গিয়েছি, কিন্তু সে দু’বারে গিয়েছিলাম যথারীতি পশ্চিমের... ...বাকিটুকু পড়ুন

জমিদার বাড়ি দর্শন : ০০৮ : পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১২ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২৪


পাকুটিয়া জমিদার বাড়ি

বিশেষ ঘোষণা : এই পোস্টে ৪৪টি ছবি সংযুক্ত হয়েছে যার অল্প কিছু ছবি আমার বন্ধু ইশ্রাফীল তুলেছে, বাকিগুলি আমার তোলা। ৪৪টি ছবির সাইজ ছোট করে ১৮ মেগাবাইটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

×