somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আয়না !

২৩ শে এপ্রিল, ২০০৭ বিকাল ৩:০০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

প্রিয় বান্ধবীর শিশুটিকে বুকে করে বসে আছি । সাদা কাপড়ে মুড়িয়ে , বেশ আগলে ধরে , বুকের ওমের ভিতরে চেপে বসে আছি । একদিন মাত্র বয়স। ওর গরম লাগছে না ঠান্ডা , বুঝতে পারি না । আমার কোন বাচচা নেই ।

বান্ধবীর আছে । স্বামীও আছে। আমি যে ঘরের বারান্দায় বসে আছি , সেই ঘরের ভিতরেই আছে । আমি তাকাতে পারছি না। পর পুরুষের প্রায় অসহায় রূপ দেখা , ইসলামে নিষেধ । আমি তাই বারান্দায়।

অনেক্ষন হয়ে গেলো বান্ধবী শিশুটিকে বুকে নেয়নি । ওর সেইদিকে খেয়ালও নেই। সে উথাল পাথাল করে ভাঙছে ঘরের জিনিস পত্র । বোন চায়নার সেট । আফ্রিকা , ইউক্রেইন , ইউরোপ চষে আনা অসাধারন শিল্পকর্ম। একে একে চুর চুর হয়ে ছড়িয়ে যাচ্ছে তার প্রিয় ফুল গাছ । ফুলের গাছ গুলোকে ও সন্তানের মতই যত্ন করতো! টবের ভাঙা টুকরো গুলো ছিটকে আসতে পারে । আমি আরেকটু ঘুরে বসি ।

জোছনার আলো এসে পড়ে ছোট্ট মুখটায় । কি নিষ্পাপ , সুন্দর! টুকটুকে গোলাপি মুখের কুটকুটে চোখ দুটোকে বুঝে কি নিশ্চিন্তে আছে আমার বুকে ! আমার বুড়ো আঙ্গুলে মাথার সমান এক জোড়া ঠোঁট। হঠাৎ পিপড়ের কামড়ে ফুলে ওঠা ফুস্কুঁড়ির মত একটা নাক ! রোয়া রোয়া চুল ! মা গো , আমার নিয়ে নিতে ইচ্ছে করে এই দেবশিশুকে । বান্ধবী দেবে?

ভেতর থেকে বর্নার গালির শব্দ ভেসে আসে । অকথ্য , অশ্রাব্য ভাষায় ও গালি দিয়ে চলেছে । মেডিকেলে পড়তে পড়তে আমি আর বর্না একবার " বাংলা ভাষায় গালি ও তার নৃতাত্ত্বিক গুরুত্ব " নামে একটা গবেষনা করেছিলাম। তখন একেবারেই অনভ্যস্ত আমার গালির প্রথম এবং পুংখানুপুংখ পাঠ হয়েছে ।

আমি লক্ষ্য করি , সে বাংলার ব্রাত্যজনের গালির সাথে , প্রভুর ভাষা ইংরেজি আর বনেদী কলোনিয়াল ভাষা ফ্রেনচে গালি দিয়ে চলেছে । রেগে গেলে বর্না আর আমি দুজনেই ইংরেজি , হিন্দী , উর্দু , আরবী , আরও কি কি সব ভাষা মিশিয়ে গালাই । বাংলা আমাদের কাছে মায়ের মত পবিত্র । এই ভাষায় গালি দিতে , কেন যেন, অস্বস্তি হয় । বর্না মনে হয় একটু বেশিই রেগেছে । ব , ঠ আর চ বর্গীয় কোন গালিই বাদ পড়ছে না আজ!

আমার খারাপ লাগে । ধুর ! তার চেয়ে বাচচার দিকে মন দেই , ভারি সুন্দর ! ভিতর থেকে অপু ভাইয়ের ডাকে আমার সম্বিত ফিরে !

উঠে যাই ভিতরে। অপু ভাইয়ের শার্ট ছেড়া । হাত , বুক, পিঠ , গলা ক্ষত বিক্ষত বর্নার নখের আঁচড়ে । বর্না এক কোনায় বসে সাপের মত ফুসছে । ভঙ্গীটা তীব্র আক্রমনাত্মক । আমাকে দেখার সাথে সাথে গালির তুবড়ি ছুটে । আমার কানে কিছু ঢোকে না। আমি বুকের শিশুর কান দুটোকে চেপে ধরে আরেকটু ভিতরে নেই । বাচচা মানুষ! এই সব শুনতে নেই ।

অপু ভাই আমাকে গাড়িতে একাই চলে যেতে বলেন । আর কেউ বর্নাকে সামলাতে পারবে না। আমি জানি সেটা । বুঝিও । কাল সাপিনী সামলানো সম্ভব , বর্নাকে নয়! আমি না হলে অপু । কাউকে থাকতে হবে ।

আমি গাড়িতে উঠি । আর কে কে , কি কি যেন বলে , করে । আমার কানে কিছুই ঢোকে না । আমি আমার বুকের হিমটুকু নিয়েই ব্যস্ত । অপলক তাকিয়ে থাকি ছোট্ট মুখটায় । হওয়ার আগেই লন্ডনে , বামরুনগ্রাদে কত ছবি তোলা হলো !
কে বলবে , এই স্বর্গীয় মুখটার পিছনে কোন অসুখ লুকিয়ে আছে ! এত সুন্দর, এত শান্ত , এত নিখুঁত ! কে বলবে , এই ছোট্ট নাকটা মাত্র ঘন্টা খানেক আগে নিঃশ্বাস ফেলা বন্ধ করে দিয়েছে , আমাদের পৃথিবী জোড়া বাতাস ও নেয়নি ওর নিষ্কলুষ ফুসফুসে।

ধানমন্ডি থেকে বনানী কবরস্থান । পথের আলো আঁধারিতে আমার হঠাৎই মনে হয় , আমার সামনে একটা আয়না । আমার সমস্ত বুক জুড়ে আয়না। আমার কোল জুড়ে আয়না। বিম্বিত ছায়াটুকু বড্ড ধুসর!
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৫৬
১৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি

লিখেছেন বিষাদ সময়, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:১৬





মাসের আধিক কাল ধরে দাবদাহে মানব প্রাণ ওষ্ঠাগত। সেই যে অগ্নি স্নানে ধরা শুচি হওয়া শুরু হলো, তো হলোই। ধরা ম্লান হয়ে, শুষ্ক হয়, মুমূর্ষ হয়ে গেল... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

সমস্যা মিয়ার সমস্যা

লিখেছেন রিয়াদ( শেষ রাতের আঁধার ), ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৭

সমস্যা মিয়ার সিঙ্গারা সমুচার দোকানে প্রতিদিন আমরা এসে জমায়েত হই, যখন বিকালের বিষণ্ন রোদ গড়িয়ে গড়িয়ে সন্ধ্যা নামে, সন্ধ্যা পেরিয়ে আকাশের রঙিন আলোর আভা মিলিয়ে যেতে শুরু করে। সন্ধ্যা সাড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

এই মুহূর্তে তারেক জিয়ার দরকার নিজেকে আরও উন্মুক্ত করে দেওয়া।

লিখেছেন নূর আলম হিরণ, ০৬ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৬:২৬


তারেক জিয়া ও বিএনপির নেতৃত্ব নিয়ে আমি ব্লগে অনেকবারই পোস্ট দিয়েছি এবং বিএনপি'র নেতৃত্ব সংকটের কথা খুব স্পষ্টভাবে দেখিয়েছি ও বলেছি। এটার জন্য বিএনপিকে সমর্থন করে কিংবা বিএনপি'র প্রতি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×