somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বেনাপোল থেকে ওয়াগা-শেষ পর্ব

২০ শে এপ্রিল, ২০০৭ বিকাল ৩:৪০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সকাল সকাল নাস্তা করে আমরা ট্রেইন ধরলাম;যথারীতি জগজিৎ আমাদের ট্রেইনে ঊঠিয়ে দিল আর আমরাও তার উপযুক্ত পাওনা মিটিয়ে দিলাম। ঘন্টাখানেকের মধ্যেই আমরা পৌছে গেলাম আটারি বর্ডার। এখান থেকে চেপে বসতে হবে লাহোরের ট্রেইনে। ইমিগ্রেশন ক্লিয়ার করাতে গেলাম;ওখানে কর্মকর্তা আমাদের পাসপোর্ট দেখে বললেন “আপনাদের একটু সমস্যা আছে,আপনারা একটু অপেক্ষা করুন”। আমরা তো ভয়ে অস্থির;আল্লাহর নাম নিতে শুরু করেছি। ওই ইমিগ্রেশ্ন অফিসার একটু পরে একজন ছোটখাট আকৃতির লোককে নিয়ে হাজির হলেন।লোকটা বললেন “আপনাদের সাথে কথা আছে”। আমরা অনুমান করলাম,ইনি গোয়েন্দা হবেন।আমরা ভয়ে ভয়ে কথা বলছি উনার সাথে। তৌহিদের পরনে ছিল রবীন্দ্র নাথ ঠাকুরের ছবিওয়ালা টি-শার্ট।লোকটা বললেন “oh you like TAGORE? Good, very good".” উনার সাথে ইংরেজিতেই কথা হচ্ছিল হঠাৎ করে হিন্দিতে কথা বলতে শুরু করলেন আবার বারবার জিজ্ঞেসও করছেন, হিন্দি বুঝতে সমস্যা হচ্ছে কিনা? না আমরা বললাম না আমরা বুঝতে পারছি। এভাবে কথা চলছিল, এক সময় উনি আমাদের বললেন বাংলায় কথা বলতে; আমরা বললাম-আপনি বুঝতে পারবেন না। তারপরও উনি বারবার রিকোয়েস্ট করে যাচ্ছেন। আমি বললাম ঠিক আছে-কিছু গালি দেয়া যাক। আমি আর তৌহিদ কতক্ষণ মুখ দিয়ে গালির ঘুর্ণিঝড় ঘটালাম। হঠাৎ করে উনি বললেন “আমি তোমাকে ভাল্বাসি” একেবারে স্পষ্ট বাংলায়; আমরা দু’জন তো হতভম্ব। আমরা জিজ্ঞেস করলাম-আপনি কি বাঙালী? উনি হিন্দিতেই কথা বলে যাচ্ছেন। এভাবে কথা বলতে বলতেই এক সময় উনি বললেন “দেশে গিয়ে পদ্মার ইলিশ খেয়েছো?” স্পষ্ট বাংলায়। এবার তো আর কোন সন্দেহ রইলো না যে, উনি বাঙালী। অবশেষে উনি স্বীকার করতে বাধ্য হলেন যে উনি বাঙালী,কলকাতার লোক, এখানে ইমিগ্রেশন অফিসার হিসেবে কাজ করছেন। এরপর উনার সাথে বাংলায় আমাদের আলাপ শুরু হল।ইতোমধ্যেই আমাদের ইমিগ্রেশনের কাজ শেষ হয়ে গেছে তারপর আমরা কাস্টমস ক্লিয়ার করলাম। এরপর কলকাতার সেই দাদার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আমরা উঠে পড়লাম “সমঝোতা এক্সপ্রেস” এ। দুপুর ২টায় ট্রেইন ছাড়লো। মন্থর গতিতে ট্রেইন চলছে। সামনে কাঁটাতারের বেড়া-তার মানে ভারত্যীয় সীমান্ত শেষ। ট্রেইন থেকে ভারতীয় সৈন্য নেমে গেলো। ওখান্টায় ইংরেজিআর হিন্দিতে লেখা ধন্যবাদ। সামনের কিছুটা অংশ নো ম্যানস ল্যান্ড-না পাকিস্তানের না ভারতের। ট্রেইন চলছে মন্থর গতিতে,সামনে আরেকটি কাঁটাতারের বেড়া,পাকিস্তান সীমান্ত-ওয়াগা। আমরা পৌঁছে গেলাম পাকিস্তানে,এখানেও এক ইশাল সাইনবোর্ড আমাদের স্বাগতম জানাচ্ছে “খোশ আমদেদ””welcome” । আবার ইমিগ্রেশন-কাস্টমস ক্লিয়ার করে চেপে বসলাম ট্রেইনে। সন্ধ্যা ৭.০০টায় আমরা পৌঁছলাম লাহোর রেলস্টেশনে। অসাধারণ একটা ভ্রমণ।

যাত্রাটার কথা চিন্তা করলেই আমি শিহরিত হই,পুলকিত হই আর ভাবি বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান এর মাঝে যেমন সম্পর্কই হোক না কেন, আমি এই তিনটি দেশকে একই মালায় গেঁথেছি। বেনাপোল থেকে ওয়াগা কী অপূর্ব এক সেতুবন্ধন!
২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যে ভ্রমণটি ইতিহাস হয়ে আছে

লিখেছেন কাছের-মানুষ, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১:০৮

ঘটনাটি বেশ পুরনো। কোরিয়া থেকে পড়াশুনা শেষ করে দেশে ফিরেছি খুব বেশী দিন হয়নি! আমি অবিবাহিত থেকে উজ্জীবিত (বিবাহিত) হয়েছি সবে, দেশে থিতু হবার চেষ্টা করছি। হঠাৎ মুঠোফোনটা বেশ কিছুক্ষণ... ...বাকিটুকু পড়ুন

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।

লিখেছেন মঞ্জুর চৌধুরী, ১৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:২৬

আবারও রাফসান দা ছোট ভাই প্রসঙ্গ।
প্রথমত বলে দেই, না আমি তার ভক্ত, না ফলোয়ার, না মুরিদ, না হেটার। দেশি ফুড রিভিউয়ারদের ঘোড়ার আন্ডা রিভিউ দেখতে ভাল লাগেনা। তারপরে যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

মসজিদ না কী মার্কেট!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৯

চলুন প্রথমেই মেশকাত শরীফের একটা হাদীস শুনি৷

আবু উমামাহ্ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, ইহুদীদের একজন বুদ্ধিজীবী রাসুল দ. -কে জিজ্ঞেস করলেন, কোন জায়গা সবচেয়ে উত্তম? রাসুল দ. নীরব রইলেন। বললেন,... ...বাকিটুকু পড়ুন

আকুতি

লিখেছেন অধীতি, ১৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৩০

দেবোলীনা!
হাত রাখো হাতে।
আঙ্গুলে আঙ্গুল ছুঁয়ে বিষাদ নেমে আসুক।
ঝড়াপাতার গন্ধে বসন্ত পাখি ডেকে উঠুক।
বিকেলের কমলা রঙের রোদ তুলে নাও আঁচল জুড়ে।
সন্ধেবেলা শুকতারার সাথে কথা বলো,
অকৃত্রিম আলোয় মেশাও দেহ,
উষ্ণতা ছড়াও কোমল শরীরে,
বহুদিন... ...বাকিটুকু পড়ুন

স্প্রিং মোল্লার কোরআন পাঠ : সূরা নং - ২ : আল-বাকারা : আয়াত নং - ১

লিখেছেন মরুভূমির জলদস্যু, ১৮ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:১৬

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
আল্লাহর নামের সাথে যিনি একমাত্র দাতা একমাত্র দয়ালু

২-১ : আলিফ-লাম-মীম


আল-বাকারা (গাভী) সূরাটি কোরআনের দ্বিতীয় এবং বৃহত্তম সূরা। সূরাটি শুরু হয়েছে আলিফ, লাম, মীম হরফ তিনটি দিয়ে।
... ...বাকিটুকু পড়ুন

×