somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

অতীত

১৯ শে এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১১:৫৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমার সাথে আমলাতন্ত্রের সম্পর্ক বরাবরই শীতল। তেমন ভাবে দাপ্তরিক কাজে অংশগ্রহন করতে হয় নি কোনো সময়ই। সব সময়ই কেউ না কেউ সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে ধন্য করেছে।

স্কুলের দপ্তরের কাজ ছিলো হেডুর অফিসের পাশে- সেখানেই টিচার্স রেস্ট রুম- মাঝে মাঝে অদ্ভুত অদৃশ্য সব ব্যথ্যার অজুহাতে ছুটি চাইতে যাওয়া ছাড়া অন্য কোনো কাজে সে ঘরে যেতে হয় নি।

কলেজেও সব দাপ্তরিক কাজ হতো যৌথ প্রযোজনায়- কেউ একজন সবার সব কিছু নিয়ে জমা দিয়ে আসতো- সুতরাং আমাকে কখনই এই ঝামেলায় জড়াতে হয় নি-
অবশ্য জীবন এক তালে চলে না- বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির পর যাবতীয় আমলাতন্ত্র এক ধাক্কায় হজম করতে হলো- ভর্তির সুযোগ পাওয়ার আগে পর্যন্ত আমাকে শুধু কষ্ট করে পরীক্ষা দিতে হয়েছে-

মৌখিক পরীক্ষার সময় দেওয়া আছে- স্থান ডিনের অফিস- কার্জন হলের অসংখ্য উঁচু উঁচু দালানের অলিতে গলিতে ঘুরছি- কোনো ভাবেই খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না- লাল দালানের আশে পাশে হাঁটতে হাঁটতে সিগারেট টানি আর তখনই নিজের পর্যবেক্ষণ শক্তির প্রশংসায় নিজেই মাতোয়ারা হলাম- চিন্তার কিছু নাই-

হাতে বিভিন্ন রংয়ের ফাইল হাতে ইতঃস্তত ঘুরে বেড়ানো মানুষের দলে ভীরে গেলেই হবে- সব নদীই মোহনায় যায়- সব রাস্তাই রোমে যায় আর এইসব ৩২ রংএর ফাইল হাতের ছেলেমেয়েরা সবাই যায় ডীন অফিস।
এমন একটা দলের সাথে মিশে গিয়ে গড্ডালিকা প্রবাহে চলে আসলাম ডীন অফিস- বুঝলাম কেনো খুঁজে পাই নি- উপরে লেখা বিজ্ঞান কারখানা- তার একপাশে লেখা ডীন অফিস- রোল নাম্বার মিলিয়ে ডাকলো- কি প্রশ্ন করবে ভাবতে ভাবতে ঢুকলাম- কিছুই প্রশ্ন করলো না- কোন সাবজেক্ট নিবা?
পদার্থ বিজ্ঞান
হবে না- সিট খালি নাই-
মনটা বিষন্ন হয়ে যায়- শালার- খালি আছে বোটানি- জুলজী জিওলজী- জিওগ্রাফি- আমার জিওগ্রাফি তখন ভচকে গেছে- শালার জিওলজিতে যাই- মাইগ্রেশনের ফর্ম নিয়ে লিখলাম প্রথম পছন্দ পদার্থ বিজ্ঞান-

এর পর আসল যন্ত্রনা শুরু হলো- আমলাতান্ত্রিক গোলক ধাঁধায় পড়লাম- জিওলজি ভবন খুঁজে পাওয়া গেলো- সেখানের অফিস থেকে পাঠালো শহীদুল্লাহ হল- শহীদুল্লাহ হলে কাগজ জমা দিয়ে আরও একটা ফর্ম- সেখানে নানাবিধ টাকার অঙ্ক লেখা- সে অনুযায়ী ফর্ম পুরণ করে টি এস সি- গন্তব্য জনতা ব্যাংক।

একটা ছোটো লাইনের পেছনে গিয়ে দাঁড়ালাম- কাউন্টারেও পৌঁছালাম- বেধরক ঝাড়ি খেলাম- এটা জসিমুদ্দিনের লাইন- আপনি শহীদুল্লাহের লাইনে দাঁড়ান।
ঠিকই- কাউন্টারের উপরে একটা ফলক ঝুলানো আছে- ওটা জসিমুদ্দিনই- বাজপাখীর মতো এ দিকে ও দিকে তাকাই- অনির্দিষ্ট আঙ্গুলের ইশারায় এদিকে অদিকে নড়াচড়া করি- তবে শহীদুল্লাহ ঠিক চোখে পড়ছে না-

খুঁজলে ভগবান মিলে এইটা একটা টাকা দেওয়ার কাউন্টার- দেখা গেলো অবশেষে- সামনে বিশাল লাইন- মাথায় মাথায় লুকিয়ে ছিলো শহীদুল্লাহ, টাকাও জমা দিলাম- আবারও হলের অফিসে ফিরে আসলাম- নিবন্ধিত হয়ে- এ যাবত কালের যাবতীয় অর্জন বলতে ২টা নম্বর পত্র সেগুলোকে তাদের জিম্মায় রেখে কাজ শেষ করে পরের দিন বাসায়।

আমলাতন্ত্রের ফাঁদে পড়ে আমার চেহারার নির্বোধ ভাবটা আরও প্রকট হয়েছে নিশ্চিত ভাবেই- তার প্রমাণ পেলাম হাতে নাতে পরের দিন ভোরেই- দিনাজপুর ছেড়েছি তাও মাত্র ১০ দিন হবে- ১৬ ঘন্টা পরে ট্রেন এসে থামলো দিনাজপুরে-স্টেশনে নেমে হাঁটতে ইচ্ছা করছিলো না- তাই রিকশা ডাকলাম-
এমনিতে স্টেশন থেকেই আমাদের বাসায় যাওয়ার গলি দেখা যায়-
উঠলাম রিকশায়- রিকশা স্টেশনের গেট পার হয়েই ডাইনে মোচড় দিলো-
কই যাও? আমি শঙ্কিত হয়ে বললাম
এইটাই সোজা রাস্তা- রিকশাওয়ালার উত্তরে আমি স্তম্ভিত।
ডানে গিয়ে জেলা স্কুল মোড়- জেলা স্কুল মোড়ে বামে মোচড় খেয়ে সোজা গেলো হাসপাতাল মোড়- হাসপাতাল মোড় হয়ে সোজা গেলো গনেশতলা- সেখান থেকে বামে গিয়ে মডার্ণ মোড়- এখান থেকে আবার বামে মোচড়- নাহ হেঁটে আসতে ৫ মিনিট লাগে যেখানে সেখানে আমি রিকশা চেপে আসলাম ১৫ মিনিট পরে-
তখনও ১ টাকা রিকশা ভাড়া দেওয়ার প্রচলন ছিলো- ৫ মিনিটের হাঁটা পথের ভাড়া ১ টাকার বেশী হয় না- এর পরও তার উদ্ভাবন কুশীলতায় মুগ্ধ হয়ে তাকে ২ টাকা দিবো ঠিক করলাম।

এইটা কি ল্যায্য বিচার হইলো?
কি অপরাধ হইলো আমার বিবেচনার আমিও জানতে উৎসুক-
এত ঘুরপথ আপনাকে সহজ করে নিয়ে আসলাম, ল্যায্য ভাড়া ১০ টাকা- আপনি কত দিবেন সেটা আপনার বিচার-
আমি যুগপৎ বাক্যাহত এবং বাক্যহৃত-বাংলা আমার মাতৃভাষা বলেই এ ধাক্কা সামলে প্রায় বিলুপ্ত শব্দ গুলো খঁজে পেলাম- পরপর সাজালাম-
ঘুরা পথে আসলা কেনো?
রাগের পারদ চড়ে- তরতর করে শব্দ আসে জিহ্বার ডগায়-
এই খান থেকে বের হয়ে ডাইনে গেলে স্টেশনের দরজা দেখা যায়

রিকশাওয়ালা ঢাকইয়া রিকশাওয়ালার মতো রসিক হলে অন্য রকম উত্তর দিতে পারতো-
এক কুট্টি আইস্যাই রিকশায় উইঠ্যা বলে চলো- সামনে যাবো
রিকশা চলছে লোকটা একটু দুরে গিয়ে নামলো- ওই মিয়া কত হইছে?
রিকশাওয়ালা বললো ১০ টাকা দেন।
এইটা কেমুন কথা কইল্যা- ওই তো খালি চোখে দেহা যায় যেইহানতে আইছি-
খালি চোখেতে আসমানের চাঁদভি দেখা যায়- যাইবার পারবেন ১০ টাকায়?

তাই রিকশাওয়ালা চুপ থাকে- তাকে বললাম ভাই আমি এই শহর ছেড়ে ঢাকায় গেছি ১০ দিন হবে- এর ভিতরে এত বেড়ে যাওয়ার কোনো কারণ নেই ভাড়া।
তুমি আমাকে এইখানে কেনো ঘুরাইয়া আনলা আগি জানি না-তবে ওখান থেকে এখানের ভাড়া ২ টাকার বেশী হবে না।
রিকশাওয়ালা বললো এত ঘুরাইয়া আনলাম কিছু দিবেন না।

বিবেচনা করতেই হয়- দিলাম ৫ টাকা- তবে রিকশাওয়ালার মনপুত হলো না-

সেয়ানার হোগা বাতাসে মারে কথাটা মিথ্যা না-
আরও ২ টাকা দেন।
আমার বিবেচনা বোধ তখন লুপ্ত- বললাম তুমি আমারে ৩ টাকা ফেরত দিবা আমি তোমারে ২ টাকাই দিবো।
মামা তখন বাসা থেকে বের হচ্ছিলো- আমার গলা শুনে বললো কি হইচে- কোথা থেকে আসলি?
স্টেশন
কত দিলি
২ টাকা
রিকশাওয়ালা তখনও টাকা ফেরত না দিয়ে গজরাচ্ছে- গরীবরে ঠকান

মামার হাত চলে- একটু বেশীই চলে- শার্টের হাতা গুটাতে গুটাতে তিনি ময়দানে নামলেন-
তো মিয়া তোমারে কত দিবে? ১০০ টাকা? স্টেশন থেকে এইখানে ২ টাকার বেশী তোর কোন বাপ দিবে?
বাপের কথা তুলবেন না। রিকশাওয়ালারও আত্মসম্মানে লাগে-
মামা গম্ভীর হয়ে বললো- তুমি ওর টাকা ফেরত দাও আমি ভাড়া দিবো তোমাকে-
আমি ৫ টাকা হাতে নিয়ে বাসায় যাচ্ছি- মামার স্বর তখন সপ্তমে-
তোকে আমি ১ টাকা দিবো- নিলে নিবি না নিলে ভাগ

থাপ্পড়ের আওয়াজ শুনে কষ্ট লাগলো- তখন মনে হচ্ছিলো বোধ হয় আরও ২ টাকা বেশী দিলেই হতো - সে রাস্তায় নিয়ে এসেছে আমাকে- এমনি গেলে ঐ সবগুলো রাস্তা যেতে লাগতো ৮ টাকা-
এখন মনে হচ্ছে আসলে ২ টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্তটাই সঠিক ছিলো- কেউ অন্যায় করলে তাকে কোনো মানবিক কারণে সমর্থনের কোনো প্রয়োজন নেই।
৯টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

রাজত্ব আল্লাহ দিলে রাষ্ট্রে দ্বীন কায়েম আমাদেরকে করতে হবে কেন?

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৮ ই মে, ২০২৪ ভোর ৬:০৬



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ২৬ নং আয়াতের অনুবাদ-
২৬। বল হে সার্বভৈৗম শক্তির (রাজত্বের) মালিক আল্লাহ! তুমি যাকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) প্রদান কর এবং যার থেকে ইচ্ছা ক্ষমতা (রাজত্ব) কেড়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

মুক্তির কোরাস দল

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:২৫



ঘুমিয়ে যেও না !
দরজা বন্ধ করো না -
বিশ্বাস রাখো বিপ্লবীরা ফিরে আসবেই
বন্যা ঝড় তুফান , বজ্র কণ্ঠে কোরাস করে
একদিন তারা ঠিক ফিরবে তোমার শহরে।
-
হয়তো... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাইডেন ইহুদী চক্তান্ত থেকে বের হয়েছে, মনে হয়!

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৮ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৮



নেতানিয়াহু ও তার ওয়ার-ক্যাবিনেট বাইডেনকে ইরান আক্রমণের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলো; বাইডেন সেই চক্রান্ত থেকে বের হয়েছে; ইহুদীরা ষড়যন্ত্রকারী, কিন্তু আমেরিকানরা বুদ্ধিমান। নেতানিয়াহু রাফাতে বোমা ফেলাতে, আজকে সকাল থেকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজ ২৫শে বৈশাখ। ১৬৩তম রবীন্দ্র জন্মজয়ন্তী উপলক্ষে আমার গাওয়া কয়েকটি রবীন্দ্রসঙ্গীত শেয়ার করলাম। খুব সাধারণ মানের গায়কী

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:০৫

আপনারা জানেন, আমি কোনো প্রফেশনাল সিঙ্গার না, গলাও ভালো না, কিন্তু গান আমি খুব ভালোবাসি। গান বা সুরই পৃথিবীতে একমাত্র হিরন্ময় প্রেম। এই সুরের মধ্যে ডুবতে ডুবতে একসময় নিজেই সুর... ...বাকিটুকু পড়ুন

বিশ্ব কবি

লিখেছেন সাইদুর রহমান, ০৮ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৭

বৈশাখেরি পঁচিশ তারিখ
কবি তোমার জনম
দিন,
বহু বছর পার হয়েছে
আজও হৃদে, হও নি
লীন।

কবিতা আর গল্প ছড়া
পড়ি সবাই, জুড়ায়
প্রাণ,
খ্যাতি পেলে বিশ্ব জুড়ে
পেলে নভেল, পেলে
মান।

সবার ঘরেই গীতাঞ্জলী
পড়ে সবাই তৃপ্তি
পাই,
আজকে তুমি নেই জগতে
তোমার লেখায় খুঁজি
তাই।

যখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

×