somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

মার্ক টোয়েন (পর্ব ৩৪)

১৫ ই এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ৮:৫১
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

অনেকে ভাবতে পারে যে এবারে মার্ক টোয়েনের আক্কেল হয়েছে । এবারে আর কোনো বিদঘুটে প্রজেক্টে পয়সা খাটাবেন না তিনি । কিন্তু পরের মাসেই তিনি এক অস্ট্রিয়ান কার্পেট প্রস্তুত কারকের কার্পেট বোনার যন্ত্রে লগ্নি করার কথা ভাবতে লাগলেন । কিন্তু এই 'যাদুর কার্পেট' প্রজেক্ট থেকে স্ট্যান্ডার্ড অয়েলের হেনরি রজার্স টোয়েনকে নিরস্ত করলেন ।

প্রচুর ম্যাগাজিন আর্টিকল লিখেছেন তিনি এ সময় । এর বেশ কিছু পরে 'ক্রিশ্চিয়ান সায়েন্স' নামে সংকলিত হয়েছে । কিন্তু আমরা একধরনের তিক্ততা দেখতে পাই টোয়েনের লেখার মধ্যে । হতে পারে হারানো সময়ের জন্য মনস্তাপ থেকেই হয়েছিল এটা ।

প্রাব নয় বছর ধরে ইউরোপে থাকছেন তাঁরা । এমন সময় বাহাত্তর বছর বয়সে মার্ক টোয়েনের বড়ভাই ওরাইওন ক্লিমেন্সের মৃত্যু হলো কেওকুকে । কোনো অসুখ বিসুখ ছিল না ওরাইওনের, এক সকালে মৃত্যু এসে স্রেফ কড়া নেড়ে ছিল তাঁর দুয়ারে ।

মার্ক টোয়েন এসময়ে ভিয়েনার হোটেল ক্রানৎসে থাকতেন । তাঁর স্যুইটটাকে বলা হতো 'সেকেন্ড এমব্যাসি' । কারন তখন অস্ট্রিয়ার (তখন অস্ট্রো-হাঙ্গারিয়ান সাম্রাজ্যে ) সবচেয়ে পরিচিত ও খ্যাতিমান আমেরিকান ছিলেন টোয়েন ।

কাজে অকাজে কারনে -অকারনে লোকে দেখা করতে আসতো টোয়েনের সাথে । যদিও নিজে ধুমপান করতেন তাহলেও দশ হাজার ডলারের বিনিময়ে একটা তামাকের বিজ্ঞাপনে তাঁর নাম ব্যাবহার করতে দিতে আপত্তি জানালেন তিনি । আরেকবার দশটা লেকচারের বিনিময় দশ হাজার ডলার প্রস্তাবও প্রত্যাখান করলেন, যদিও টাকার খুব দরকার ছিল তখন । এরকম ভাবে টাকা কামালে আত্মসন্মান বিক্রি হয় বলেই ধারনা ছিল তাঁর ।

১৮৯৯ সালের গ্রীস্ম কালে ভিয়েনা ছাড়লেন তাঁরা । জিনের অসুখের কারনে গ্রীস্মকালটা সুইডেনে যাত্রাবিরতি করলেন । তারপরে শীত কাটানোর জন্য ৩০, ওয়েলিং কোর্ট লন্ডনে, যাত্রা বিরতি করলেন ক্লিমেন্স পরিবার । পরের গ্রীস্মে লন্ডনের ঠিক বাইরে ডলিস হিলে উঠলেন, যেখানে প্রধান মন্ত্রী গ্ল্যাডস্টোন থাকতেন অনেক সময় । জায়গাটার এখনকার নাম গ্ল্যাডস্টোন পার্ক ।

অক্টোবরের ৬ তারিখ ১৯০০ সালে, পঁয়ষট্টি বছর বয়সে আমেরিকায় ফিরে এলেন মার্ক টোয়েন ।
লন্ডন, ভিয়েনার থেকে নিউ ইয়র্কের পত্রিকাগুলো মার্ক টোয়েনকে অভিনন্দনে কম যায়নি । মার্ক টোয়েনের বিশাল ঋণ ও সেসব শোধের গল্প এখন লোকের মুখে মুখে । লোকে তাঁকে স্যার ওয়াল্টার স্কটের সাথে তুলনা করছে ।

কারন স্কটও লিখে বিশাল ঋণ শোধ দিয়েছিলেন । ক্লাব আর সমিতি গুলো হামলে পড়ল বক্তৃতা দেয়ার জন্য । কাগজগুলো এসে বলল প্রতিটা শব্দ এক ডলার এই হারে তাঁকে পারিশ্রমিক দেবে তারা । কিন্তু তেমন সাড়া দিলেন না টোয়েন ।

লেকচারে রুচি ছিল না আর তাঁর । মাঝে মাঝে এখানে সেখানে এক আধটা লেকচার দিতেন কোনো ডিনার পার্টিতে । অল্প কিছু পত্রিকাতে লিখতেন । হার্পার ব্রাদার্স তাঁর সমস্ত লেখা একত্রে ছাপার বন্দোবস্ত করছে । নিরিবিলি থাকতেই থাকতেই বেশি পছন্দ করতেন ক্লিমেন্স ।

মানুষ এখন মার্ক টোয়েনের কথার মধ্যে একটা অন্য সিরিয়াস সুর শুনতে পাচ্ছিল । হ্যাঁ, এখনো মাঝে মাঝে হাসাতে পারতেন তিনি । কিন্তু আগের চেয়ে অনেক সিরিয়াস হচ্ছিলেন তিনি কথার মধ্যে । তাঁর অন্যতম বিষয় ছিল দেশপ্রেম । তবে সেটা ঠিক অন্য লোকের দেশপ্রেম নয় ।

দেশকে যদি ভালবাসতে হয়, তবে পতাকাকে পবিত্র রাখতে হবে । সবাই যে কথা বলে সেটাই সঠিক মেনে নিলে দেশপ্রেমের অর্থ থাকে না । 'রাজতন্ত্রেও দেশপ্রেম নিয়ে কথা বলা হয় । আমাদের দেশপ্রেম কী সেরকম হবে?' "মাই কান্ট্রি রাইট অর রং" ধাঁচের অন্ধ দেশপ্রেমে অরুচি ছিল টোয়েনের ।
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

---অভিনন্দন চট্টগ্রামের বাবর আলী পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে এভারেস্ট জয়ী---

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ২:৫৫





পঞ্চম বাংলাদেশি হিসেবে বিশ্বের সর্বোচ্চ শৃঙ্গ মাউন্ট এভারেস্ট জয় করেছেন বাবর আলী। আজ বাংলাদেশ সময় সকাল সাড়ে ৮টায় এভারেস্টের চূড়ায় ওঠেন তিনি।

রোববার বেসক্যাম্প টিমের বরাতে এ তথ্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

×