সেদিন তারেক বলছিল, ওর দেড় বছরের ছেলে এখনও পানি কি চিনে না। বিল, ঝিল, পুল যা দেখে, সেই টলটলে পানিতে নেমে পড়ার জন্য খুব লাফালাফি করে। আকাশ, গাছগাছালি আর পাখিদের ছায়া দেখে ও হয়তো আপ্লুত হয়, ভাবে টিভির মতই কোন পর্দা। ছুঁয়ে দিলেও কিছু হবে না। তো, সেই একবার, যখন ওকে আর সামলানো গেল না, তখন তারেক ওকে সুইমিং পুলে নিয়ে গেল। সুইমিং পুল দেখতেই পিচকি খুব উল্লাসে পানির দিকে ছুটে গেল। ঠিক যেভাবে কংক্রিটের রাস্তা থেকে বাচ্চারা ঘাসে নামে। ওর কাছে পুরো ব্যাপারটাই সমতল ভূমি ছিল, শুধু রং পালটিয়েছে। ছুটে দৌঁড়ে পানিতে একদম দ্্বিধাহীন চিত্তে পা ফেলতেই... যা হওয়ার তাই হলো। ও তলিয়ে গিয়ে হাবুডুবু খেল।
ও এখন আর পানিতে নামে না।
আমিও চিনেছি পানি। হাবু ডুব ুখেয়েছি। অচেতন সময় কাটিয়েছি, নাকে মুখে বুকে পানি নিয়ে। এখন আর তাই দেঁৗড়ে নামতে পারি না। কেউ ডাকলে দুরুদুরু বুকে অনেক দ্্বিধা, অনেক প্রশ্ন, অনেক হিসেব কিতাব চলে। বেহিসেবী হতে পারি না। লোভ হলেও দ্্বিধাটা তার চেয়ে অনেক বড়। আড়ষ্ট আমি পানির ধারে বসে থাকি, অপরাধী।
মাঝে মাঝে মনে হয়, এখনও পানি চিনি নি। চিনলে কি আর আজলা ভরা পানি দুই হাতে অনেকটা সময় নিয়ে ধরে রাখার আশায় বুক বাঁধি? সর সর করে পড়ে যায় পানি। খুব চেপে চেপে, নিজেকে ধমকে, সতর্ক করে রাখলে পানি সর সর করে পড়ে না। কিন্তু একটু একটু করে চুঁইয়ে পড়ে হাত একদম ফাঁকা হয়ে যায় ক্ষনিকেই। কি অধ্যাবস্যায়ী আমি! কিছুই মানতে পারি না, এ হওয়ার না। এ হওয়ার না।
বড় বোকা মেয়ে সন্ধ্যা। একটু সাধারন হও। পৃথিবীর সাধারন নিয়মে চলো মেয়ে। আর সবার মত ভাব, চাও, বলো।
তাহলে, সারা রাত ঘুম হবে। ঘুম ঘুম চোখে হাঁটতে গিয়ে পা মচকাবে না।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০