somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

সত্যিকারের গণজাগরণ কবে হবে ?

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ বিকাল ৫:১৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিসমিল্লাহির রাহমানের রাহীম।

নয়াদিল্লির গণধর্ষণকান্ডে জনগনের যে প্রতিবাদ তাকে অনেকেই গণজাগরণ বলে অভিহিত করছেন। আমি খুবই সন্দিহান যে গণজাগরণ আদৌ হয়েছে কিনা । তা না হলে দিল্লির ঘটনার ২৩ দিন পর পাঞ্জাবে এক বিবাহিত নারীকে ঠিক একই ভাবে সাত পাষন্ড নির্যাতন করে কিভাবে? যেখানে পুরো দুনিয়া এখন মিডিয়ার কল্যাণে এর সোচ্চার প্রতিবাদ জানাচ্ছে, সেখানে কিভাবে তাদের সাহস হয় এই নির্যাতন করার ?

বিভিন্ন পত্রিকা , সাময়িকি, ব্লগ ও ফেসবুকে এই ব্যাপারে প্রশ্ন, মতামত, সব পড়ে যাচ্ছি। লেখাগুলো পড়ে আমার মনে হচ্ছে যে, সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি ও চিন্তা ভাবনা বদলানো খুব জরুরী হয়ে গিয়েছে।

অনেকেই বলেন যে নারীরা যদি শালীন কাপড় পরে চলাফেরা করতো, পর্দা করে চলতো তাহলে এই সমস্যা হতো না। নারীর দোষটাকেই বড় করে দেখছেন অনেকে। তাহলে তিন বছরের বাচ্চাকে যখন গণধর্ষণ করা হয় তখন কি সেই বাচ্চা অশালীন পোষাকের কারণে ধর্ষিত হয় ? অনেক মহিলারাও তার কাছের মানুষের কাছেও নির্যাতিত হয়, সে পর্দা করুক বা না করুক। ভয়ে, লজ্জায় অনেকেই তা প্রকাশ করে না। সে ক্ষেত্রে কি বলা হবে তখন?

আমি অবশ্যই মানি যে, যখন কোন নারী অশালীন পোষাক পরে ঘুরে বেড়ায় বা শরীরিক সৌন্দর্য প্রকাশ করে ঘুরে বেড়ায় তখন বেশীরভাগ ছেলেই তার দিকে তাকাবেই তাকাবে। কারণ আল্লাহ্‌ মানুষকে বিপরীত লিঙ্গের প্রতি আকৃষ্ট হওয়ার অনুভূতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সেটা মেয়েদের বেলাতেও প্রযোজ্য। সুন্দর ও হ্যান্ডসাম ছেলে দেখলে তো অনেক মেয়ের মাথা খারাপ অবস্থাও হয়ে যায়। মেয়েরাও যে কত ছেলেকে ফাঁদে ফেলে সেটা তো অজানা নয়।

আমার কথা হচ্ছে যে, শুধু পর্দা বা হিজাব সবসময় নারীকে ধর্ষনের হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে না। তার মানে এই না যে নারীর পর্দার দরকার নেই। পর্দা করা তো বাধ্যতামুলক। সেই সাথে পুরুষেরও পর্দার প্রয়োজন। তাকেও অনেক সংযত হতে হবে। মনে আল্লাহ্‌র ভয় থাকাটা খুব খুবই জরুরী। নারীর জন্য পর্দার বিধান দেওয়ারও আগে পুরুষদের নজরকেই কঠোরভাবে নত করতে বলা হয়েছে । নারী ও পুরুষের পর্দা সমাজ কে অনেকখানি পরিচ্ছন্ন রাখতে সুবিধা করে দেয়।

আগে আমরা শুধু ধর্ষণের কথা শুনতাম। আর এখন একের পর এক শুনছি গণধর্ষণের খবর। ধর্ষণের শাস্তি প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হলে মানুষ অনেকটাই ভয় পাবে। গত ২৮ ডিসেম্বর ২০১২ সালে অর্থাৎ দিল্লির ঘটনার দশ দিনের মাথায় ভারতের মহারাষ্ট্রে একটি শিশুকে ধর্ষণ করে ৩২ বছরের এক যুবক। এর আগে এই যুবক এক তরুণীকে ধর্ষণ করে হত্যা করে জেলে যায়। তার শাস্তি হয় ১৭ বছর। ভাল ব্যবহারের জন্য তাকে ১০ বছর পর মুক্তি দেওয়া হয়। জেল থেকে বের হয়েই সে এই শিশুকে নির্যাতন করে। মানুষের বানানো আইনেতো কোন সুফল পাওয়া গেল না। আল্লাহ্‌র আইন অনুযায়ী যদি মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত তাহলে দ্বিতীয়বার এই কাজ করার কোন সুযোগ পেতো না সে। আমাদের দেশেও যদি প্রকাশ্যে মৃত্যুদন্ড দেওয়া হতো তাহলে কেউ আর ‘সেঞ্চুরিয়ান’ উপাধি পেত না, আর উপাধি পাওয়ার খুশিতে কেউ মিষ্টি বিলাতেও পারতো না।

যে কোন ধর্মেরই নারী-পুরুষ প্রত্যেকেই যদি তাদের ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলেন তাহলে এই সমস্যা খুব তাড়াতাড়িই সমাধান করা যাবে। মূল্যবোধ, নৈতিকতা, আত্মসম্মানবোধ এই বিষয়গুলো মানুষের ভেতর থেকেই আসতে হয়। আর এসব মানবীয় ব্যাপারগুলো বৃদ্ধি পায় ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলার মাধ্যমেই। জন সচেতনতাও বাড়ানো দরকার। তা না হলে ধর্ষকদের মৃত্যুদণ্ড হবে কিন্তু ধর্ষণ বন্ধ হবেনা।

একজন নারী হয়ে আর এক নারীকে পালাক্রমে ধর্ষণের সহায়তা করে, তা এক বিস্ময়কর ঘটনা। একটি সন্তানকে তার মায়ের কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে ধর্ষণ করে, সেই ধর্ষণের সিডি ওই মেয়ের বাবা-মাকে পাঠানোর মত এত নীচ, জঘণ্য আর হৃদয় বিদারক ঘটনা ঘটতে পারে না। কিন্তু তাই ঘটছে। এসব এখন আর কোন বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়। এটা সামাজিক অবক্ষয়ের বহিঃপ্রকাশ।

ধর্ষণের সমাধান ধর্ষক বানানো বন্ধ করা আর এমন পরিবেশ সৃষ্টি করা যেখানে ধর্ষক আর ধর্ষক থাকবে না, মানুষ হবে। একদিকে সমাজ ধর্ষক উৎপাদন অব্যাহত রাখবে আর অন্যদিকে ধর্ষিতার জন্য আহাজারি করবে, তাতে কি ধর্ষণ বন্ধ হবে ? লিভটুগেদার কে অনৈতিকতা হিসাবে দেখা হয় না,আবার সেখানে ধর্ষণ প্রতিরোধের আহ্বান জানানো হয়। অথবা সুপারস্টার তৈরীর যে মহা উৎসব চলছে , তা কি সুপারস্টার নাকি পর্নোস্টার তৈরীর কারখানা ? এসব জায়গায় বাবা মায়েরা নিজের ছেলে মেয়েদের কি জেনে বুঝে পাঠাচ্ছেন তথাকথিত স্মার্ট আর উন্নতির হওয়ার লক্ষ্যে? মুসলিম দেশে মদ খাওয়া ও বিক্রির লাইসেন্স দেওয়া, পতিতাপল্লীগুলো কে বৈধ করা কি নৈতিকতার মধ্যে পরে? বর্তমানে শুধু মাত্র ঢাকা শহরে একদিনে বিক্রি হয় ১,২৪,০০০ পিস ইয়াবা। খুবই নাকি স্মার্ট মাদক। কেউ জানবে না , বুঝবে না, সহজে বহনযোগ্য। ধিক্, এই আধুনিক জড়বাদী সভ্যতার অশ্লীল অসভ্যতাকে।

কয়েকদিন আগে এক মেয়ে তার ছেলে বন্ধুদের সাথে ঘুরতে গিয়ে একজনের ফ্ল্যাটে যায় এবং সেখানে তার বন্ধুরা তাকে নির্যাতন করে এবং ভিডিও করে। পরবর্তিতে সেই মেয়ে পুলিশের কাছে গেলে ছেলে বন্ধুরা ধরা পরে। এখন কথা হচ্ছে এই মেয়ে এখানে কেনো এভাবে গেল ? তার হিজাব কোথায় গেল? ছেলে গুলো কেন এভাবে নির্যাতন করলো। হিজাব না করলেই নির্যাতন করতে হবে? হারাম সম্পর্কে কেন জড়ালো তারা? ইত্যাদি নানা প্রশ্ন আসতে পারে এবং প্রতিটি নির্যাতনের ঘটনার পর এ ধরনের প্রশ্ন আসতে পারে। তখন কি বলতে পারি আমরা? একটা ঘটনার জন্য অনেক কিছুই দায়ী থাকে। ব্যাপারটা অনেকটা ফর্মূলার মত। এইটা করলে ঐটা হবে। আমরা এই ফর্মূলাটাই মানতে চাই না।

সমাজে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটতে পারে, সেজন্যই আইন তৈরী হয়। তবে ঘটনা যেনো মহামারী আকারে না ছড়ায়। আমাদের বর্তমান সমাজ ব্যবস্থা উগ্রতা, উশৃঙ্খল, বেহায়াপনা ও ব্যাভিচারকে উস্কে দিচ্ছে। যেকোনো ঘটনার পিছনে কারণ রয়েছে। মাদক দ্রব্যের প্রতি আসক্তি, অশিক্ষার প্রভাব, উচ্ছৃংখল জীবন যাপন, অশ্লীল সিনেমা ও নাটক, ধর্মীয় অনুশাসনের অভাব, ছেলেমেয়েদের উপর পরিবারের নিয়ন্ত্রণহীনতা এখন সমাজের অংশ। শুধু এখন ভোগ করার লালসা। কে, কিভাবে, কি ভোগ করছে সেদিকে কারো নজর নেই। সবচেয়ে অবাক লাগে যে আমাদের এই মুসলিম প্রধান দেশে যদি অর্ধেক মানুষও তার ইসলাম ধর্মটাকে সত্যিকারভাবে পালন করতো তাহলে এত অনাচার থাকতে পারতো না।

আমি ঘুমাতে পারি না। আমার পরবর্তি প্রজন্মের জন্য আমি এমন সমাজ চাই না। যে সমাজে প্রকাশ্যে খুন করে ফেলার পরেও জনগন রাস্তায় নেমে বাধা দেয় না, যেখানে হিজাব পরিহিত নারীদের অন্যায়ভাবে আটক করার পরেও জনগন ভয়ে থাকে নিশ্চুপ, যেখানে পরিমলদের শাস্তি না হওয়ার জন্য জনগন কোন কথা বলে না, এমন হাজারটা অন্যায়ের প্রতিবাদে যেখানে জনগন থাকে নিশ্চুপ, সেখানে গণজাগরণ এর দরকার। জনগনের এই ভোগবাদী ভাবলেশহীন অবস্থা যেমন একদিনে আসেনি, তেমনি সত্যিকারের গণজাগরণ একদিনে আসবেও না। সে পরিবেশ সৃষ্টি করাই আমাদের কাম্য।

আমি আশাহীন হতে চাই না। কিছু সচেতন নাগরিকের ছোট ছোট কর্মকাণ্ড আমাকে আশার আলো দেখায়।
সর্বশেষ এডিট : ২৪ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ৮:৪৬
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

কোরআন কী পোড়ানো যায়!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৩৮

আমি বেশ কয়েকজন আরবীভাষী সহপাঠি পেয়েছি । তাদের মধ্যে দু'এক জন আবার নাস্তিক। একজনের সাথে কোরআন নিয়ে কথা হয়েছিল। সে আমাকে জানালো, কোরআনে অনেক ভুল আছে। তাকে বললাম, দেখাও কোথায় কোথায় ভুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×