somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গুনাহ থেকে বেঁচে থাকার ১০টি সহজ উপায়

১৪ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ বিকাল ৩:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

শাহওয়াত (মানুষের কামনা, বাসনা ইত্যাদি) দ্বারা জাহান্নামকে ঘিরে রাখা হয়েছে এবং মাকারিন (যা মানুষ অপছন্দ করে) দ্বারা জান্নাতকে ঘিরে রাখা হয়েছে। অতএব, জান্নাতে যাওয়ার জন্য আমাদেরকে নানা ধরনের বাঁধা-বিপত্তির সম্মুখীন হতে হবে কেননা জান্নাতের পানে গমনের রাস্তা ফুল বিছানো নয়! অন্যদিকে, আমাদের চারিত্রিক বৈশিষ্টের অন্যতম দিক হচ্ছে, যা কিছু মন্দ-নিষিদ্ধ তা করতে আমাদের ভালো লাগে। সুতরাং, আমরা যদি আমাদের প্রবৃত্তির অনুসরন করি তবে আমাদের গন্তব্য হবে জাহান্নাম।

আবু হুরাইরা রাদিয়াল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
“জাহান্নাম কে ঘিরে রাখা হয়েছে আকর্ষনীয় কাজকর্ম দিয়ে আর জান্নাত কে ঘিরে রাখা হয়েছে নিরস কাজকর্ম দিয়ে।“ (বুখারী ৭: ২৪৫৫)

গুনাহ থেকে বাঁচার জন্য অনেকগুলো উপায় থাকলেও এর মধ্য থেকে সহজ ১০টি উপায় ইনশাআল্লাহ্‌ তুলে ধরার চেষ্টা করা হবে নিম্নোক্ত বর্ননায়।

১. সাদদুদ দারিয়াঃ
সাধারন অর্থেঃ "সাদদুদ দারিয়া হচ্ছে" কোন কাজের মাধ্যম, উপকরন না উসিলা। ইসলামিক পরিভাষায়ঃ এর অর্থ হচ্ছে কোন গুনাহ’র সম্ভাব্য পথ বন্ধ করে দেয়া। আমাদের সমাজে, সাধারনভাবে চলতে গেলে ইচ্ছা-অনিচ্ছায় আমাদেরকে বিভিন্ন ধরনের গুনাহের সম্মুখীন হতে হয়। সুতরাং, আমরা যদি এসব গুনাহ থেকে বেঁচে থাকতে চাই তবে আমাদেরকে গুনাহ’র পথ(সমূহ)কে বন্ধ করে দিতে হবে।

“আর তারা আল্লাহ্‌কে ছেড়ে দিয়ে যাদের উপাসনা করে তাদের গালি দিও না, পাছে তারাও শত্রুতাবশতঃ আল্লাহ্‌কে গালি দেয় জ্ঞানহীনতার জন্য। এইভাবে প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্য তাদের ক্রিয়াকলাপ আমরা চিত্তাকর্ষক করেছি। তারপর তাদের প্রভুর কাছেই হচ্ছে তাদের প্রত্যাবর্তন, তখন তিনি তাদের জানিয়ে দেবেন কি তারা করতো। “ (সূরা আন’আমঃ ১০৮)

আমরা সবাই একটা প্রবাদ জানিঃ “খাল কেটে কুমির কুমির আনা”।
কিন্ত গুনাহের ক্ষেত্রে, এমন করা যাবেনা অর্থ্যাৎ কুমির আসার সম্ভাবনা থাকলে খাল কাটা থেকে বিরত থাকতে হবে।

আল্লাহ্‌ ক্বুর’আনুল ক্বারীমের মাধ্যমে যখন ব্যাভিচারকে নিষেধ করলেন তখন তিঁনি সরাসরি ব্যাভিচার বন্ধ করার কথা না বলে, আমাদের দৃষ্টিকে সংযত করার কথা বলেছেন। লজ্জাস্থানকে হেফাযত করা অনেক সহজ দৃষ্টিকে হেফাযত করা থেকে। আর, এটাকে হেফাজত করতে পারলে, সহজেই দৃষ্টিকে হেফাজত করা যাবে এবং ব্যাভিচারের পথও বন্ধ হয়ে যাবে।

“মুমিনদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টি নত রাখে এবং তাদের যৌনাঙ্গর হেফাযত করে। এতে তাদের জন্য খুব পবিত্রতা আছে। নিশ্চয় তারা যা করে আল্লাহ তা অবহিত আছেন। ঈমানদার নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে নত রাখে এবং তাদের যৌন অঙ্গের হেফাযত করে। তারা যেন যা সাধারণতঃ প্রকাশমান, তা ছাড়া তাদের সৌন্দর্য প্রদর্শন না করে এবং তারা যেন তাদের মাথার ওড়না বক্ষ দেশে ফেলে রাখে এবং তারা যেন তাদের স্বামী, পিতা, শ্বশুর, পুত্র, স্বামীর পুত্র, ভ্রাতা, ভ্রাতুস্পুত্র, ভগ্নিপুত্র, স্ত্রীলোক অধিকারভুক্ত বাঁদী, যৌনকামনামুক্ত পুরুষ, ও বালক, যারা নারীদের গোপন অঙ্গ সম্পর্কে অজ্ঞ, তাদের ব্যতীত কারো আছে তাদের সৌন্দর্য প্রকাশ না করে, তারা যেন তাদের গোপন সাজ-সজ্জা প্রকাশ করার জন্য জোরে পদচারণা না করে। মুমিনগণ, তোমরা সবাই আল্লাহর সামনে তওবা কর, যাতে তোমরা সফলকাম হও।“ (আন-নুর ৩০-৩১)

একজন গায়েরে মাহরাম পুরুষ ও নারী নির্জনে মিলিত হলে সেখানে তৃতীয় আরেকজন থাকে এবং সে হচ্ছে শয়তান। দাওয়া দেয়ার অজুহাতেও নারী-পুরুষের অবাধ মেলামেশা করা যাবে না! আমরা স্বাভাবিকভাবেই দুর্বল, তাই শয়তানকে কোনভাবেই সুযোগ দেয়া যাবেনা নয়তো শয়তান আমাদেরকে হারামের পথে নিয়ে যাবে। জনসম্মুখে দাওয়া দেয়া পুরুষের কাজ, নারীদের নয়। আর, মিশ্র পরিবেশে দাওয়া না দেয়াই উত্তম কেননা আগে নিজেকে রক্ষা করতে হবে এরপর দাওয়াতী কাজ করতে হবে।

হযরত ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) ইরশাদ করেছেন,
“যখনই কোন পুরুষ পর নারীর সাথে নির্জনে দেখা করে তখনই শয়তান সেখানে তৃতীয় ব্যক্তি হিসেবে উপস্থিত হয় ।“ (সুনানে তিরমিযী, হাদিস নং-২১৬৫, সহীহ ইবনে হিব্বান, হাদিস নং-৫৫৮৬)

অপর হাদিসে বলা হয়েছেঃ কুতাইবা ইবন সাঈদ (রহঃ)....ইবন আব্বাস (রাঃ) সূত্রে নাবী (সাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
কোন পুরুষ যেন অপর কোন মহিলার সাথে নির্জনে অবস্থান না করে, কোন স্ত্রীলোক যেন কোন মাহরাম সঙ্গী ব্যতীত সফর না করে। এক ব্যক্তি দাঁড়িয়ে বলল, ইয়া রসূল (সাঃ)! অমুক অমুক যুদ্ধের জন্য আমার নাম তালিকাভূক্ত করা হয়েছে। কিন্তু আমর স্ত্রী হাজ্জে যাবে। তখন রসূল (সাঃ) বললেন, ‘তবে যাও নিজ স্ত্রীর সঙ্গে হাজ্জ কর’। (ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি | অধ্যায়ঃ ৪৮/ জিহাদ | হাদিস নাম্বার: ২৭৯৮)

ক) ইন্টারনেটঃ
আজকের পৃথিবীর অন্যতম জীবন ঘনিষ্ঠ যোগাযোগের মাধ্যম হচ্ছে ইন্টারনেট। আর, এই ইন্টারনেটের মাধ্যমে অন্যায় বা গুনাহের অনেকগুলো পথ খুলে গিয়েছে। বর্তমানে, আমরা আমাদের মোবাইল ফোন, ট্যাবলেট, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ইন্টারনেট টিভির মাধ্যমে সহজেই ইন্টারনেটের অসীম নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হয়ে অনেক গর্হিত কাজের সাথে জড়িয়ে পড়ছি। আর, এটা যে শুধুমাত্র পাপাচারীর মধ্যেই সীমাবদ্ধ তা কিন্তু নয়, বরং মুসলিম সমাজের অনেকেই এর করাল গ্রাস থেকে নিজেকে মুক্ত করতে ব্যার্থ হয়ে ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় এর জালে জড়িয়ে যাচ্ছে। এই ইন্টারনেটের অন্যতম সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট, ফেসবুকের মাধ্যমে দাওয়াতি কাজের উসিলায় ভাই-বোনদের মধ্যে অনেক সম্পর্ক তৈরী হয় এবং শয়তান ধাপে ধাপে এই সম্পর্কের সুত্র ধরে নানা অন্যায় করিয়ে নেয়।

আল্লাহ্‌ ক্বুর’আনে বলেন,
“আর ঈমানদার পুরুষ ও ঈমানদার নারী একে অপরের ওয়ালি/অভিভাবক/সহায়ক। তারা ভাল কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ থেকে বিরত রাখে। সলাত প্রতিষ্ঠা করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবন যাপন করে। এদেরই উপর আল্লাহ তা’আলা দয়া করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশীল, সুকৌশলী।“ (সূরা তওবাঃ ৭১)

বর্তমানে সময়ে আমাদের মধ্যে যারা এসব প্রযুক্তিতে অভ্যস্ত (বিশেষ করে শিক্ষিত সমাজ), তারা এগুলোর ব্যাবহার থেকে নিজেদেরকে বিরত রাখতে পারেন না বিভিন্ন প্রয়োজনের তাগিদেই। আর, এগুলোর ব্যাবহার থেকে নিজেকে সম্পুর্নভাবে দূরে রাখা যেমন অবাস্তব ধারনা তেমনি এদের বাঁধহীন ব্যাবহার করে পাপাচার থেকে নিজেকে বিরত রাখাও অমূলক বৈ অন্য কিছু নয়।

আগে আমাদেরকে ভেবে দেখতে হবে, 1 mbps বা 2 mbps গতির ইন্টারনেট আমাদের কেন প্রয়োজন? যদি সত্যিই আমাদের উচ্চ গতির ইন্টারনেট না লাগে, তবে ইন্টারনেটের স্পিড কমিয়ে 128 kbps বা 256 kbps গতির নিলে যথেচ্ছ ভিডিও দেখা তথা হারাম কাজের সুযোগ থেকে আমাদের অনেকাংশে বিরত রাখবে। ফিতনা থেকে বেঁচে থাকার জন্য আমরা Online ক্লাশরুমের পরিবর্তে Live ক্লাশে অংশগ্রহন করতে পারি, Recorded Lecture সংগ্রহ করে দেখতে পারি এবং বাসায় বা লাইব্রেরীতে বই পড়ে জ্ঞানার্জন করতে পারি - আর এটাই উত্তম হবে।

আরেকটা বিষয় নিয়ে আমরা চিন্তা করতে পারি, গত একবছরে Randomly ইন্টারনেট তথা সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইট (যেমন ফেসবুক), ব্লগ ও অন্যান্য সাইট ব্যাবহার করে এর থেকে কতটুকু জ্ঞান অর্জন করতে পেরেছি? এর উত্তর থেকেই, আমরা আমাদের ইন্টারনেটের ব্যাবহারকে সীমিত করার ব্যাপারে একটি দিক নির্দেশনা পেতে পারি।

অন্যদিকে, ইসলামী জ্ঞানার্জনের মাধ্যম সীমিত হওয়া অধিক জরুরী কেননা অসীম উৎস থেকে বিশুদ্ধ ইসলামী জ্ঞানার্জন মোটেই সম্ভব নয় বরং এর দ্বারা বিভ্রান্তিমূলক অনেক কিছুরই আমাদের মধ্যে অনুপ্রবেশ ঘটবে যার সংস্পর্শে আমরা নানাভাবে বিভ্রান্ত হতে পারি কেননা আমাদের অনেকেরই বিশুদ্ধ জ্ঞান যাচাই করার মত জ্ঞান নেই।

ইন্টারনেটের ফিতনা থেকে দূরে থাকার জন্য আমরা আরো কিছু কাজ কররে পারিঃ
- খোলা জায়গায় ব্যাবহার করা
- অভিভাবকের তত্ত্বাবধানে থেকে ব্যাবহার করা
- শুধুমাত্র কর্মস্থলে বা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ব্যাবহার করা
- কোন ওয়েবসাইট থেকে কি জ্ঞান আহরন করব তা নির্ধারন করে শুধুমাত্র তার জন্যই সময় ব্যায় করা

খ) টেলিভিশনঃ
বিভিন্ন ইসলামী চ্যানেলে (যেমন পিস টিভি) ইসলামী অনুষ্ঠানমালা দেখার জন্য টিভি ক্রয় এবং স্যাটেলাইট ক্যাবল সংযোগ না নেয়াই উত্তম। এটা এজন্য যে, দেখা যাবে শয়তানের ধোঁকায় আমরা আধা ঘন্টা ইসলামিক অনুষ্ঠান দেখলে ২ ঘন্টাই ইসলাম বিরোধী অনুষ্ঠানে মগ্ন থাকব। আমাদের অনেকেরই মনে এই কথা উঁকি দেয় যে, “আরে! মন্দটা না দেখলে ভালো আর মন্দের পার্থক্য করব কিভাবে!?” - এই ধরনের মন মানসিকতা ভুলেও লালন করা যাবেনা।

গ) হারাম চাকুরীঃ
“কয়েকদিন বা কিছু সময় সুদ, ঘুষ বা কোন হারাম উপার্জনের সাথে থাকি তারপর আবার হালাল পথে ফিরে আসব” – এমন নীতি মানা যাবেনা কেননা এতে আমাদের মনে সম্পদ ও ভোগ-বিলাসের লোভ ঢুকে পড়তে পারে এবং এর থেকে বেরিয়ে আসা বা পরবর্তীতে এই ভুল শুদ্রানোর সুযোগ না-ও পাওয়া যেতে পেরে।

তাছাড়া আমরা সবাই জানি, হালাল মাল ইবাদাত কবুলের অন্যতম শর্ত। সাহাবায়ে কেরামগন যাদের উপার্জন হালাল হবার ব্যাপারে সন্দিহান ছিলেন তাদের জন্য দু’আ করতেও অসম্মতি জানাতেন।

প্রখ্যাত সাহাবী আবদুল্লাহ ইবনু উমার (রাঃ) বসরার প্রশাসক ও আমীর আবদুল্লাহ ইবনে আমীরকে তার অসুস্থ অবস্থায় দেখতে যান। ইবনু আমির বলেনঃ ইবনু উমার, আপনি আমার জন্য একটু দু’আ করুন না! ইবনু উমার তার জন্য দু’আ করতে অসম্মত হন। কারন তিনি ছিলেন আঞ্চলিক প্রশাসক। আর এ ধরনের মানুষের জন্য হারাম, অবৈধ, জুলুম, অতিরিক্ত কর, সরকারি সম্পদের অবৈধ ব্যবহার ইত্যাদির মধ্যে নিপতিত হওয়া সম্ভব। এ কারনে ইবনু উমার (রাঃ) উক্ত আমীরের জন্য দু’আ করতে অস্বীকার করে বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (সাঃ)কে বলতে শুনেছিঃ “ওজু গোসল ছাড়া কোন সলাত কবুল হয় না, আর ফাঁকি, ধোঁকা ও অবৈধ সম্পদের কোন দান কবুল হয় না”। আর আপনি তো বসরার গভর্নর ছিলেন। (সহীহ মুসলিম ১/২০৪, নং ২২৪)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
হে মানুষেরা, আল্লাহ পবিত্র। তিনি পবিত্র (বৈধ) ছাড়া কোন কিছুই কবুল করেন না। আল্লাহ মুমিনগনকে সেই নির্দেশ দিয়েছেন যে নির্দেশ তিনি নবী ও রসূলগনকে দিয়েছেন(বৈধ ও পবিত্র উপার্জন ভক্ষন করা)। তিনি (রসূলগনকে নির্দেশ দিয়ে) বলেছেনঃ হে রসূলগন, তোমরা পবিত্র উপার্জন থেকে ভক্ষন কর এবং সৎকর্ম কর, নিশ্চয় তোমরা যা কিছু কর তা আমি জানি।(আল মুমিনূন-৫১) (আর তিনি মুমিনগনকে একই নির্দেশ দিয়ে বলেছেন) হে মুমিনগন, আমি তোমাদের যে রিযিক প্রদান করেছি তা থেকে পবিত্র রিযিক ভক্ষন কর(সূরা বাকারা-১৭২)। এরপর তিনি একজন মানুষের কথা উল্লেখ করেন, যে ব্যক্তি (হজ্জ, উমরা ইত্যাদি পালনের জন্য, আল্লাহর পথে) দীর্ঘ সফরে রত থাকে, ধূলি ধূসরিত দেহ ও এলোমেলো চুল, তার হাত দুটি আকাশের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে সে দু’আ করতে থাকে, হে প্রভু! হে প্রভু!! কিন্তু তার খাদ্য হারাম, তার পোশাক হারাম, তার পানীয় হারাম এবং হারাম উপার্জনের জীবিকাতেই তার রক্তমাংস গড়ে উঠেছে। তার দু’আ কিভাবে কবুল হবে! (সহীহ মুসলিম ২/৭০৩, নং ১০১৫)

আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেছেন,
বৈধ ও হালাল জীবিকার ইবাদত ছাড়া কোন প্রকার ইবাদত আল্লাহর নিকট উঠানো হয় না। (সহীহ বুখারী ২/৫১১,নং ১৩৪৪; ৬/২৭০২, নং ৬৯৯৩ এবং সহীহ মুসলিম ২/৭০২, নং ১০১৪)

হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) বলেন,
“মানুষের মধ্যে এমন এক সময় আসবে, যখন মানুষ নির্বিচারে যা পাবে তাই গ্রহণ করবে। হালাল সম্পদ গ্রহণ করছে না হারাম সম্পদ গ্রহণ করছে তা বিবেচনা করবে না”। (সহীহ বুখারী ২/৭২৬, নং- ১৯৫৪)

আরেক হাদীসে হযরত আবু হুরাইরা (রাঃ) বলেন, রসূলুল্লাহ (সাঃ) বললেন,
“তোমরা কি জান কপর্দকহীন অসহায় দরিদ্র কে?” আমরা বললামঃ “আমাদের মধ্যে যার কোন অর্থ সম্পদ নেই সেই কপর্দকহীন দরিদ্র”। তিনি বললেনঃ “সত্যিকারের কপর্দকহীন দরিদ্র আমার উম্মতের ঐ ব্যক্তি যে কিয়ামতের দিন সলাত, সিয়াম, যাকাত ইত্যাদি নেককর্ম নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু সে কাউকে গালি দিয়েছে, কাউকে অপবাদ দিয়েছে, কারো সম্পদ বা অর্থ অবৈধভাবে গ্রহণ করেছে, কাউকে আঘাত করেছে, কারো রক্তপাত করেছে। তখন তার সকল নেককর্ম এদেরকে দেয়া হবে। যদি হক আদায়ের পূর্বেই নেককর্ম শেষ হয়ে যায়, তাহলে উক্ত ব্যক্তিদের পাপ তার কাঁধে চাপিয়ে দেয়া হবে, এরপর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে। (সহীহ মুসলিম ৪/১৯৯৭, নং ২৫৮১)

২. আমাদের প্রাতাহিক রুটিন ঠিক করাঃ
বর্তমানে আমাদের সমাজ ব্যাবস্থ্য বা আমাদের দেহঘড়ি এমন হয়ে গেছে যে, আমরা দিনে ঘুমাই আর রাত জেগে পড়াশুনা, গবেষনা বা অন্যান্য কাজকর্ম করে থাকি যা কিনা মোটেই ঠিক নয়। আমাদের কারো ক্ষেত্রে এমন হলে, এটাকে মহাবিপদ চিহ্ন হিসেবে ধরে নিতে হবে কেননা অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এর দ্বারা আমাদের ফজরের সলাত বাদ যেতে পারে এবং সকাল বেলার যে বরকত তা থেকেও আমরা বঞ্চিত হতে পারি।

আবু হুরায়রা বর্ণিত, নবী বলেছেন,
“মুনাফিকের জন্য ফজর আর এশার সলাত যত কষ্টকর অন্য আর কোন সলাত অনুরূপ কষ্টকর নয়, তারা যদি এ দুটি সালাতের সওয়াব সম্পর্কে জানতো, তাহলে নিতম্বে ভর করে হলেও এ দুই সালাতে উপস্থিত হত।“ (সহিহ বোখারিঃ ৫৮০)

ইবনে ওমর (রাঃ) বলেন,
“আমরা যখন দেখতাম কোন লোক ফজর ও এশার নামাজে অনুপস্থিত তখন তার প্রতি আমরা খারাপ ধারণা করতাম।“ (ইবনু আবী শাইবা)

রসূল (সাঃ) বলেন,
“যে ব্যক্তি ফজরের সলাত জামাতে আদায় করে, সে আল্লাহর জিম্মায়-দায়িত্বেই থাকে, আর যে ব্যক্তি আল্লাহর জিম্মা-দায়িত্ব বিনষ্ট করে আল্লাহ তাকে উপুড় করে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবেন।“ (তিবরানী )

ফজর ও এশার সলাত বাদ দেওয়া নিফাকের একটি লক্ষন। শরীয়তের পরিভাষায়, নিফাকের অর্থ হল ভেতরে কুফুরী ও খারাবী লুকিয়ে রেখে বাহিরে ইসলাম জাহির করা। একে নিফাক নামকরণের কারণ হলো, সে এক দরজা দিয়ে শরীয়তে প্রবেশ করে অন্য দরজা দিয়ে বের হয়ে যায়।

ইবনে আবি মুলাইকা বলেন,
“আমি রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ত্রিশজন সাহাবীর দেখা পেয়েছি যারা প্রত্যেকেই নিজের ব্যাপারে নিফাকে পতিত হবার ভয় করতেন।“

মুনাফিকের আরেকটি লক্ষন হচ্ছে, সলাতে আলস্য নিয়ে দাঁড়ানো। রাতজাগা তখনই বৈধ হবে যদি ফজরের সলাত বাদ না যায়, যথাযথভাবে আদায় করা সম্ভব হয়। কিন্ত রসূল (সঃ) সকালের যাবতীয় কর্মকান্ডে বরকত দেয়ার জন্য আল্লাহ্‌র কাছে দুয়া করেছিলেন অর্থ্যাৎ আমরা যদি সকালে দিকে ঘুমিয়ে থাকি তবে এই বরকত থেকে বঞ্চিত হব। রসূল (সঃ) কোন সাহাবীকে কোন মিশনে পাঠালে দিনের অগ্রভাগে প্রেরন করতেন। আর, সাহাবীদের যারা অতি সকালে ব্যাবসা-বানিজ্য শুরু করতেন, তারা অতি দ্রুতই সম্পদশালী হয়ে উঠেছিলেন।

রাত জেগে ২-৩ ঘন্টা পড়লে যে বরকত পাওয়া যাবে, ইনশাআল্লাহ্‌ সকালে ১/২ - ১ ঘন্টা পড়লেই সে বরকত পাওয়া যাবে। তাছাড়া, যিনি রাত ১০ টার দিকে কম্পিউটার, ইন্টারনেট নিয়ে বসবেন তার ফিত্নার আশংকা অনেক অনেক বেশী তার থেকে যিনি সকালে কম্পিউটার, ইন্টারনেট নিয়ে বসবেন। আমাদের সবার রুটিন ঠিক হলে সমাজ থেকে অন্যায় কাজ অনেকাংশে কমে যেত।

ফজরের সলাতের পর উত্তম কাজ হচ্ছেঃ
- ক্বুর’আন তেলাওয়াত করা
- হাদীস পাঠ করা
- দুয়া-দুরুদ, জিকির-আযকার পাঠ করা
- জ্ঞানার্জন করা
- আত্নীয়দের খোঁজ-খবর করা
- বাবা-মায়ের খোঁজ খবর নেয়া
- খেলাধুলা করা
- সলাতুল দোহা আদায় করা ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ ও তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ঐ আমল, যা নিয়মিত করা হয়।

আয়েশা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী (সাঃ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো,
“আল্লাহ্‌ তা’আলার কাছে সবচেয়ে প্রিয় আমল কি? তিনি বললেনঃ যে আমল নিয়মিত করা হয়। যদিও তা অল্প হোক। তিনি আরোও বললেন, তোমরা সাধ্যমত আমল করে যাও।“ (বুখারী, ৬০২১)

আয়েশা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“যে আমল আমলকারী নিয়মিত করে সেই আমল রসূল (সাঃ) এর কাছে সবচেয়ে প্রিয় ছিলো।“ (বুখারী, ৬০১৮)

আল্লাহ্‌র রসূল (সঃ) এশার সলাতের আগে ঘুমাতে অপছন্দ করতেন এবং এশার সলাতের পর জেগে থাকা অপছন্দ করতেন।

প্রতিদিনের রুটিন ঠিক করা সম্পর্কিত অসাধারণ একটি লেকচার আছেঃ
Scheduling Our Day: http://www.youtube.com/watch?v=-_g9tO3r8Zg

৩. গুনাহকে ভালো কাজের সাথে মিশ্রিত না করাঃ
কেয়ামতের দিন হাশরের ময়দানে সর্বশ্রেষ্ঠ নিক্তি, মীযানে ভালো ও মন্দের পরিমাপ করে, আমাদের স্থান হবে জান্নাত অথবা জাহান্নাম। সুতরাং, “ভালো কাজের পাশাপাশি/সাথে সাথে কিছু মন্দ কাজ করে নিলেও কোন সমস্যা নেই কেননা ভালোর পরিমান বেশী হলেইও তো আমরা জান্নাতে প্রবেশ করতে পারব“ – এই নীতি কোনভাবেই অনুসরন করা যাবেনা। কেননা এটা শয়তানের পক্ষ থেকে একধরনের কুমন্ত্রনা। উদাহরন হিসেবে বলা যেতে পারেঃ অর্ধেক রাত অন্যায়, পাপাচারে মগ্ন থেকে বাকি অর্ধেক রাত তাহাজ্জুদ পড়ে কাটাব – তাহলেই তো ভালো ও মন্দের কাটাকাটি হয়ে যাবে। কিন্তু অধিকাংশ ক্ষেত্রেই দেখা যায়, অন্যায় বা পাপাচারের পর ভালো কাজ বা ইবাদত করার মত আগ্রহ থাকেনা এবং ভালো কাজ বা ইবাদত করা হলেও এর মধ্যে একাগ্রতা ও আন্তরিকতা থাকেনা অতএব কবুল হওয়ার সম্ভাবনা একবারে কমে যায় বা থাকেনা। আর, এটা এক ধরনের জুয়া খেলার মত এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহ্‌র হেদায়েত থেকেও বঞ্চিত হতে পারি।

তাকওয়া বা আন্তরিকতাবিহীন কোন কাজই সফলতা বয়ে আনে না। যে কোন কাজের প্রাণ হল তাকওয়া। বিশেষ করে ইবাদত হিসাবে যা কিছু করা হয় তা আল্লাহ্‌র কাছে গ্রহণীয় হওয়ার জন্য তাকওয়া একান্ত প্রয়োজন।

কারণ, আল্লাহ্‌ বলেন,
“আল্লাহ কেবল মুত্তাকীদের কুরবানীই গ্রহণ করে থাকে।“ (সূরা আল মা’ঈদা: ২৭)

অন্যত্র বলা হয়েছে,
“আল্লাহর কাছে পৌঁছায় না এগুলোর (কুরবানীর পশুর) গোশত এবং রক্ত, বরং তাঁর কাছে পৌঁছায় তোমাদের তাকওয়া-মনের একাগ্রতা।“ (সূরা আল-হাজ্জ্ব: ৩৭)

ইমাম ইবনুল কায়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“আন্তরিকতাবিহীন আমল হচ্ছে পরিষ্কার পানিতে ময়লা মিশিয়ে বয়ে নিয়ে যাবার মত। এটা বহনকারীকে শুধু ভার অনুভব করাবে আর কোন উপকারে আসবে না।”

সুতরাং তাকওয়া ছাড়া ঈমান পরিপূর্ণ নয়। আল্লাহর হক ও বান্দার হক উভয়টির মহত্ব ও গুরুত্ব বুঝানোর জন্য সূরা আন- নিসার প্রথম আয়াতটি শুরু করা হয়েছে তাকওয়া অবলম্বনের নির্দেশ দিয়ে এবং শেষও করা হয়েছে তাকওয়ার মাধ্যমে পরস্পরিক লেন-দেন সম্পন্ন করার নির্দেশ দিয়ে। সুতরাং মানুষের উচিত জীবনের সকল ক্ষেত্রে তাকওয়া অবরম্বন করা। (মুহাম্মদ আল আস-সাবুনী, রাওয়ায়িউল কায়ান তাফসীর আয়াত আল আহকাম নিম আল কুরআন, সৌদি আরব, খণ্ড ১. পৃ,৪১৯)

রসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন,
“বান্দা যখন কোন গোনাহর কাজ করে তখন তার অন্তরে এক ধরনের কালো দাগ পড়ে যায়। যদি ইস্তেগফার করে তাহলে এই দাগ দূরীভূত করে তার অন্তর সূচালু, ধারালো ও পরিশীলিত হবে। আর এই দাগের কথা কুরআনেই আছে, খবরদার! তাদের অন্তরে দাগ রয়েছে যা তারা কামাই করেছে।” (জামে তিরমিযি ,খ ৫, পৃ ৪৩৪, হাদীস নং ৩৩৩৪।)

এ বিষয়ে সাহাবী ও তাবেয়ীগন একমত যে জুলুম, অত্যাচার, দুর্নীতি, ফাঁকি বা অন্য কোন প্রকার অবৈধ উপার্জনের অর্থ দিয়ে বা বৈধ সম্পদের মধ্যে এরুপ অবৈধ সম্পদ সংমিশ্রিত করে তা দিয়ে যদি কেউ হজ্জ, উমরা, দান, মসজিদ নির্মান, মাদ্রাসা নির্মান, জনকল্যানমূলক কর্ম, আত্মীয়স্বজন ও অভাবী মানুষদের সাহায্য ইত্যাদি নেক কর্ম করে তাহলে তাতে তার পাপই বৃদ্ধি হবে। কোন প্রকার সাওয়াবের অধিকারী সে হবে না। এমনকি এ ধরনের জুলুম প্রবঞ্চনা, দুর্নীতি বা অবৈধ উপার্জনের অর্থে তৈরী কোন মসজিদ, মাদ্রাসা, মুসাফিরখানা ব্যবহার করতেও তাঁরা নিষেধ করেছেন। (মুসান্নাফু আব্দুর রাজ্জাক৫/২০। ইবনু রাজাব, জামিউল উলুম ওয়াল হিকাম, পৃষ্ঠা ১২৩-১২৯। রাহে বেলায়াত, পৃষ্ঠা ৯০)

গুনাহ সম্পর্কে জানা উচিত সেটা ছোট বা বড় (সগীরা বা কবীরা) যা-ই হোক না কেন এবং সর্বদা চেষ্টা করতে হবে ছোট ছোট গুনাহ থেকেও বেঁচে থাকার জন্য।

গুনাহ/পাপের অপকারিতাঃ
ইবনু কাইয়্যিম আল-জওযিয়্যাহ (রহ) তার প্রণীত ‘আদ-দা ওয়াদ দাওয়া’ পুস্তকে বর্ণনা করেন, গুনাহর ক্ষতি অনেক। নিম্নে এর কয়েকটি বর্ণনা করা হলো।
- জ্ঞান থেকে বঞ্চনা
- ইবাদত/আনুগত্য থেকে বঞ্চনা
- নেক কাজের কম সৌভাগ্য হওয়া
- গুনাহকারীর মর্যাদা লোপ পাওয়া
- মন থেকে হায়া লজ্জা দূর হওয়া
- বরকত চলে যাওয়া।
- বক্ষ সংকুচিত হওয়া
- অন্তরে মোহর পড়া
- অপদস্ততা নেমে আসা
- অশুভ পরিণতি হওয়া
- আখেরাতে আযাবের সম্মুখীন হওয়া

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ আরো বলেন,
“আমাদের পুর্ব প্রজন্মের একজন মানুষ বলেছিলেন, খারাপ কাজের একটি শাস্তি হলো আরো খারাপ কাজ হওয়া এবং ভালো কাজের একটি পুরষ্কার হলো আরো ভালো কাজ হওয়া।” (আল-জাওয়াব আল-কাফি, পৃ ৩৬)

তিনি আরো বলেন,
“প্রতিটি পাপ আরো অনেক পাপের জন্ম দেয়, একটি পাপ আরেকটি পাপের দিকে নিয়ে যেতে থাকে যতক্ষণ না পর্যন্ত সেই পাপরাশি মানুষটিকে এমনভাবে কাবু করে ফেলে যে কৃত পাপগুলোর জন্য তাওবা করাকে তার কাছে কঠিন বলে মনে হয়।”

আরো বলেন,
“একজন পাপাচারী লোক তার পাপের জন্য অনুতপ্ত হয়না। কারণ তার অন্তর ইতোমধ্যেই মরে গেছে।”

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“পাপ হলো শেকলের মতন যা পাপকারীকে আটকে রাখে যেন সে তাওহীদের বিশাল বাগানে বিচরণ করতে এবং সেখানকার ফল সৎকর্মসমূহকে সংগ্রহ করতে না পারে।” (মাজমু-আল-ফাতাওয়া, ১৪/৪৯)

ইমাম সুফিয়ান আস-সাওরি (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“মানুষকে তার করা (ভালো) কাজগুলোর অনুপাতে ভালোবাসো। যখন তোমাকে কোন ভালো কাজ করার জন্য আহবান করা হয় তখন বিনয়ী এবং নমনীয় হও এবং যখন কোন পাপকাজ করতে ডাকা হয় তখন কঠোর এবং বেপরোয়া হও।”

ইবনে শুবরুমাহ (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“আমি সেই মানুষগুলোকে দেখে বিস্মিত হই যারা মৃত্যুকে ভয় পেয়ে তা থেকে রক্ষা পেতে খাবার খায়। অথচ জাহান্নামের আগুনের ভয়ে তা থেকে রক্ষা পেতে নিজেদেরকে পাপসমূহ থেকে বিরত রাখে না।” (সিয়ার আ'লাম আন-নুবালা, ভলিউম ৬, পৃষ্ঠা ৩৪৮)

এছাড়াও, আল্লাহ্‌ আমাদের যে সকল গুনাহকে গোপন করেছেন তথা মানুষের কাছ থেকে আড়াল করেছেন সে সমস্ত গুনাহ’র কথা জনে জনে বলে বেড়ানো অবশ্যই ঠিক হবে না কেননা এতে নিজের মর্যাদার সাথে সাথে আল্লাহ্‌র মর্যাদাও ক্ষুন্ন করা হবে।

৪. বিকল্প নেয়াঃ
সব হারামের (কাজ/খাদ্য/পানীয়ের) হালাল বিকল্প আছে এবং আমাদেরকে যেসব হালাল উৎসের সন্ধান করতে হবে। আল্লাহ্‌ হাতে গোনা কয়েকটি মাত্র খাবার, পানীয় ও কর্মকান্ডকে হারাম করেছেন। সুতরাং, আমাদেরকে সেসব বস্তু ও কাজ থেকে নিজেকে বিরত রাখতে হবে। যেমনঃ

- ব্যাভিচারের বিপরীতে বিয়েকে বেছে নিতে হবে। আর, এক্ষেত্রে আমাদের অভিভাবকদের এগিয়ে আসতে হবে। যথাসময়ে ছেলেকে বিয়ে দিয়ে, ছেলের বাবাকে ছেলের স্ত্রীকে ভরন-পোষনের ক্ষেত্রে এগিয়ে আসতে হবে। অন্যদিকে, মেয়ের বাবাও মেয়েকে বিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে সুপ্রতিষ্ঠিত পাত্রের সন্ধান না করে যোগ্য ও দ্বীনদার পাত্রের হাতে মেয়েকে সঁপে দিতে হবে। আর, এতেই সবার তথা সমাজের মঙ্গল নিহিত।
- বৈধ খেলাধুলা, শরীরচর্চা, মেধার চর্চা ইত্যাদি ক্ষেত্রে সবাইকে স্বপ্রণোদিতভাবে অংশগ্রহন করতে হবে।
- হারাম সিনেমা না দেখে বাজনাবিহীন ও শিক্ষামূলক Documentary এবং ইসলামিক সিনেমা (যদি থাকে) দেখার কাজে অগ্রগামী হতে হবে। তবে, যাদের সিনেমা দেখার অভ্যেস নেই তাদেরকে আর নতুন করে এতে অভ্যস্থ হওয়া বা এর বিকল্প না খোঁজাই উত্তম।
- আক্বীদা বিরোধী নয় এবং সংগীতবিহীন, এমন কার্টুন ও দেখা যেতে পারে।

৫. নিয়মিত জিকির-আযকার করাঃ
পানি ছাড়া যেমন প্রাণ বাঁচে না, তেমনই আল্লাহ তায়ালার যিকির ভিন্ন মানব মনের খোরাক ও সঞ্জীবনী শক্তি আর কিছুতেই নাই। শয়তানকে দূরে রাখার জন্য নিয়মিত জিকির-আযকার করা অতীব জরুরী। যেমনঃ
- কোন কাজ শুরু করার পূর্বে “বিসমিল্লাহ” বলে শুরু করা,
- ঘর থেকে বের হওয়ার সময় “সালাম” দিয়ে এবং “বিসমিল্লাহি তায়াক্কালতু 'আলাল্লাহ” বলে বের হওয়া,
- ঘরে প্রবেশের সময় “সালাম” দিয়ে প্রবেশ করা,
- ঘুমানোর সময় “আয়াতুল ক্বুরসী” পাঠ করে ঘুমানো ইত্যাদি।

আল্লাহ্‌ বলেন,
"জেনে রাখ, আল্লাহর যিকির দ্বারাই অন্তর সমূহ শান্তি পায়।" (সূরা রা'দঃ ২৮)

“অতএব তোমরা আমাকেই স্মরণ কর, আমিও তোমাদেরকে স্মরণে রাখব এবং তোমরা আমার নিকট কৃতজ্ঞ হও এবং অবিশ্বাসী হয়োনা”। (সুর বাকারাঃ ১৫২)

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“পবিত্রতা ইমানের অর্ধেক আর আলহামদুলিল্লাহ পাল্লাকে সম্পূর্ণ করে, সুবহানাল্লাহ ও আলহামদুলিল্লাহ আসমান ও জমিনের মধ্যবর্তী স্থানকে পূর্ণ করে। সলাত নূর-আলো। দান খয়রাত প্রমাণ স্বরূপ। ধৈর্য উজ্জলতা আর কোরআন তোমার পক্ষে প্রমাণ অথবা তোমার বিপক্ষে প্রমাণ।“ (মুসলিমঃ ৩২৭)

৬. পরিমিত কথাবার্তা বলা ও খাওয়া-দাওয়া করাঃ
- অপ্রাসঙ্গিক বিষয় নিয়ে ব্যাস্ত না থাকা
- কথাবার্তা বলার ক্ষেত্রে প্রয়োজনের অতিরিক্ত/অনর্থক কথা থেকে বিরত থাকা
- সবার সাথে সব বিষয়ে কথা না বলা
- না জেনে কথা না বলা
- জ্ঞানার্জনের ক্ষেত্রে বাহুল্য তথ্য/প্রয়োজনহীন তথ্য দিয়ে মাথা বোঝাই না করা
- পরিমিত আহার করা
- বন্ধু নির্বাচনের ক্ষেত্রে সতর্ক থাকা কেননা একজন ব্যাক্তি তার সঙ্গীর দ্বীনের উপর থাকে (অর্থ্যাৎ বন্ধুর আচার আচরন দ্বারা প্রভাবিত হয়)।

রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
"যে ব্যক্তি আল্লাহ্‌ এবং কিয়ামত দিবসে বিশ্বাস রাখে, সে যেন উত্তম কথা বলে, নয়তো চুপ থাকে।" (বুখারী; খণ্ড : ৮, অধ্যায় : ৭৬, হাদীস : ৪৮২)

ইবনুল কাইয়ুম রাহিমাহুল্লাহ বলেন, যে ব্যক্তি চতুষ্টয়কে সংরক্ষণ করল সে তার দ্বীনকে নিরাপদ করল, সে গুলো হলঃ
- মুহূর্ত ও সময়
- ক্ষতিকারক বস্তু সমূহ
- বাকশক্তি এবং
- পদক্ষেপ সমূহ।

অতএব, এই চারটি দরজায় নিজের পাহারাদার নিযুক্ত করা উচিত। এই গুলোর প্রাচীরসমূহে নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যবস্থা সৃষ্টি করবে। কেননা, এগুলোর মাধ্যমেই শত্র প্রবেশ করে তাকে। অতঃপর সে গোটা ভূমিকে গ্রাস করে নেয় এবং প্রবল পরাক্রম হয়ে বিস্তার লাভ করে। মানুষের কাছে অধিকাংশ গুনাহ এই চারটি পথেই প্রবেশ করে তাকে।

সুতরাং, গুনাহের উপকরণ এবং যে সব প্রবেশপথে গুনাহ বিস্তার লাভ করে থাকে সে গুলো সম্পর্কে সম্যক অবগতি লাভ করা মানুষের জন্য গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। যেন সে সেসব থেকে বেঁচে থাকতে পারে।

৭. নিয়মিত ক্বুর’আন চর্চা করাঃ
ক্বুর’আনের অর্থ ও ব্যাখ্যাসহ নিয়মিত ক্বুর’আনের চর্চা করা। অভ্যেস না থাকলে, প্রতিদিন (একেবারে শুরুতে) অন্ততঃ ৫/১০ মিনিট করে তেলাওয়াত শুরু করা এবং আস্তে আস্তে এই সময়কে বাড়ানো। আর দিনের যে সময়ে সবচেয়ে বেশী শারীরিক ও মানসিক শক্তি বিদ্যমান থাকে, সে সময়ে চর্চা করা। যেমনঃ দিনের অগ্রভাগ তথা ভোরে।

হুদ্‌বাত ইব্‌ন খালিদ (রহঃ)..... হযরত আবূ মূসা আশআরী (রাঃ) সূত্রে রসূল (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“যে ব্যক্তি কুরআন তেলাওয়াত করে, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ লেবুর ন্যায় সুস্বাদু এবং সুগন্ধযুক্ত। আর যে ব্যক্তি (মু’মিন) কুরআন পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে এমন খেজুরের মত, যা সুগন্ধহীন, কিন্তু খেতে সুস্বাদু। আর ফাসিক-ফাজির ব্যক্তি যে কুরআন পাঠ করে, তার উদাহরণ হচ্ছে রায়হান জাতীয় গুল্মের মত, যার সুগন্ধ আছে, কিন্তু খেতে বিস্বাদযুক্ত (তিক্ত)। আর ঐ ফাসিক যে কুরআন একেবারে পাঠ করে না, তার উদাহরণ হচ্ছে ঐ মাকাল ফলের মত, যা খেতেও বিস্বাদ (তিক্ত) এবং যার কোনো সুঘ্রানও নেই।“ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি | অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন | হাদিস নাম্বার: ৪৬৫০)

হাজ্জাজ ইব্‌ন মিনহাল (রহঃ)....... উস্‌মান (রাঃ) সূত্রে রসূল (সাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন,
“তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সর্বোত্তম যে কুরআন শিখে এবং অন্যকে শিখায়।“ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি | অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন | হাদিস নাম্বার: ৪৬৫৭)

আবদুল্লাহ্ ইব্‌ন ইউসুফ (রহঃ)...... হযরত ইব্‌ন উমর (রাঃ) থেকে বর্ণিত, রসূল (সাঃ) বলেছেন,
“যে ব্যক্তি অন্তরে কুরআন গেঁথে (মুখস্থ) রাখে তার উদাহরন হচ্ছে ঐ মালিকের ন্যায়, যে উট বেঁধে রাখে। যদি সে উট বেঁধে রাখে, তবে সে উট তার নিয়ন্ত্রণে থাকে, কিন্তু যদি সে বন্ধন খুলে দেয়, তবে তা আয়ত্তের বাইরে চলে যায়।“ (ইসলামিক ফাউন্ডেশন | সহীহ বুখারি | অধ্যায়ঃ ৫৩/ ফাজায়ীলুল কুরআন | হাদিস নাম্বার : ৪৬৬১)

ওস্তাদ খুররম জাহ মুরাদ বলেন,
“কেউ যদি কুরআনের শরণাপন্ন হওয়া সত্ত্বেও অন্তরে সংস্পর্শ না লাগে, হৃদয় আলোড়িত না হয়, জীবন অপরিবর্তিত থেকে যায়,খালি হাতে ফিরেন, যেভাবে এসেছিলেন ঠিক সেভাবেই প্রত্যাবর্তন করেন, তাহলে তার চেয়ে মর্মান্তিক দুর্ভাগ্য আর কি হতে পারে?”

৮. সলাতকে সুন্দর করাঃ
মূলতঃ প্রকৃত মুমিনের জন্য সলাত এমন, মাছের জন্য পানি যেমন। মাছ পানি ছাড়া বাঁচতেই পারে না। অপর দিকে মুনাফেক দুর্বল ইমানদার সে সালাতে খাঁচায় আবদ্ধ পাখির মত, যে কোন উপায়ে সে তা হতে মুক্তি চায়। একাগ্রতা সহকারে সলাত আদায় করা তাহলেই সলাত কবুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেকগুন বেড়ে যাবে এবং সলাতের মধ্যে লুকিয়ে থাকা রহমত, বরকত ও প্রশান্তি পাওয়া যাবে।

আল্লাহ্‌ এ ব্যাপারে বলেন,
“মুমিনগণ সফলকাম, যারা তাদের সলাতে নম্রতা ও ভীতির সাথে দণ্ডায়মান হয়।“ (সূরা মু’মিনুনঃ ১-২)

অতঃপর বলেন,
“আর যারা তাদের সলাতে যত্নবান, তারাই জান্নাতের ওয়ারিশ-যারা ফিরদাউসের ওয়ারিশ হবে এবং তথায় তারা চিরকাল থাকবে।“ (সূরা মু’মিনুনঃ ৯, ১০, ১১)

রসূল সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন,
“যে কোন মুসলমানের জন্য যখন ফরজ সালাতের সময় উপস্থিত হয়, অতঃপর সে সুন্দরভাবে ওজু করে এবং সুন্দরভাবে রুকু সেজদা করে, এতে তার অতীতের সকল গুনাহ মাফ হয়ে যায়। যদি সে কোন কবিরা গুনাহ না করে, আর এভাবে সর্বদা চলতে থাকে।“ (মুসলিমঃ ৩৩৫)

নবী (সাঃ) বলেন,
“মুসলিম বান্দা যখন একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টির উদ্দেশ্যে সলাত আদায় করে তখন তার গুনাহ এমনভাবে ঝরে পড়তে থাকে যেমন এই বৃক্ষের পাতা ঝরে পড়ে।“ (আহমদঃ ২০৫৭৬)

নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামবলেন,
“কেয়ামতের দিন সর্বপ্রথম বান্দার সলাতের হিসাব হবে। যদি সলাত ঠিক হয় তবে তার সকল আমল সঠিক বিবেচিত হবে। আর যদি সলাত বিনষ্ট হয় তবে তার সকল আমলই বিনষ্ট বিবেচিত হবে।“ (তিরমিযিঃ ২৭৮)

ইমাম ইবনুল কাইইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“বান্দা আল্লাহর সামনে দু’বার হাজির হয়ঃ প্রথমবার, যখন সে সালাতে দাঁড়ায়। আর দ্বিতীয়বার, যখন কিয়ামতে হাশরের ময়দানে দাঁড়াবে। যে ব্যক্তি প্রথমবার দাঁড়ানোর হক যথাযথভাবে আদায় করতে পারবে, তার জন্য দ্বিতীয়বার দাঁড়ানো সহজ হবে । আর যে ব্যক্তি প্রথমবারেরটা সহজ ভেবে পূর্ণ গুরুত্ব দিবে না, তার জন্য দ্বিতীয়বারের দাঁড়ানোটা কঠিন।“ (আল ফাওয়া’ঈদ)

মনে রাখতে হবে, সলাত যেহেতু আল্লাহর নিকট সবচেয়ে প্রিয় আমল আল্লাহর নৈকট্য লাভের ও মর্যাদা বৃদ্ধির কারণ; সালাতের হেফাজত করলে মুক্তি, অন্যথায় ধ্বংস ইত্যাদি। তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় যে সলাত একটি মহান কাজ যার গুরুত্ব দেয়া অতীব জরুরি। আর তা বাস্তবায়িত হয় সলাত, তার বিধানাবলী তথা রুকন ও ওয়াজিবসমূহ শিক্ষা, সালাতে একাগ্রতা ও পবিত্রতা অর্জনের মাধ্যমেই।

৯. আল্লাহ্‌র সাহায্য প্রার্থনা করাঃ
যেকোন কাজে আল্লাহ্‌র সাহায্য চাওয়া একান্ত প্রয়োজন। ইউসুফ আলাইহি ওয়া সাল্লামকে যখন ব্যাভিচারের আহ্বান জানানো হলো, তখন তিনি সর্বপ্রথম আল্লাহ্‌র দরবারে প্রার্থনা করে এর থেকে মুক্তি চেয়েছিলেন এবং আল্লাহ্‌ তার সেই ডাকে সাড়া দিয়ে তাকে সেখান থেকে মুক্তি দান করেছিলেন। অতএব, যেকোন বিপদ-আপদে দিশেহারা না হয়ে বিনীতভাবে আল্লাহ্‌র কাছে প্রার্থনা করতে হবে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ বলেন,
“এবং তোমরা ধৈর্য ও সালাতের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা কর। অবশ্যই তা কঠিন কিন্তু বিনীতগণের জন্যে নয়। যারা ধারণা করে যে নিশ্চয় তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে মিলিত হবে এবং তারা তারই দিকে প্রতিগমন করবে।“ (সুরা বাকারাহঃ ৪৫, ৪৬)

১০. ধৈর্যের চর্চা করাঃ
যে ধৈর্যের চর্চা করে সে-ই ধৈর্যশালী হয়। মানুষকে যত ধরনের গুন দেওয়া হয়েছে এর মধ্যে অন্যতম ও উত্তম হচ্ছে ধৈর্য। সুতরাং, এর চর্চা করতে হবে - নিজেকে সংযত রাখা, অন্যকে গালি না দেয়া, মার না দেয়া, সহিষ্ণুতা অর্জন ইত্যাদির মাধ্যমে।

আলী ইবনে আবু তালিব (রাদিয়াল্লাহু আনহু) বলেন,
“যে ব্যক্তি ধৈর্যধারণ করতে পারবে, সে কখনো সফলতা থেকে বঞ্চিত হবেনা। হয়তবা সফল হবার জন্য তার একটু বেশি সময় লাগতে পারে।”

ইমাম ইবনে তাইমিয়া (রহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“জ্ঞানার্জন ছাড়া দিক-নির্দেশনা অর্জন করা যায় না। আর ধৈর্যধারণ ছাড়া সঠিক পথের দিশা অর্জন করা যায়না।” (মাজমু'আল ফাতাওয়া : ভলিউম ১০/৪০)

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম (রাহিমাহুল্লাহ) বলেন,
“দু’টি অংশের সমন্বয়ে ঈমান; একটি অংশ ধৈর্য (সবর) এবং অপরটি কৃতজ্ঞ হওয়া (শোকর)।”

তিনি আরো বলেন,
“সবর (ধৈর্য) তো সেটাই যখন কারো তাকদীরে যা নির্ধারিত হয়েছে তাতে অন্তর কোন রাগ অনুভব করেনা এবং মুখ সে ব্যাপারে কোন অভিযোগ করে না।”

সর্বশেষে,
রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শয়তানের ষড়যন্ত্র ও তা হতে মুক্তির পদ্ধতি সম্পর্কে বলেন,
“নিশ্চয় ছাগলের জন্য যেমন বাঘ রয়েছে, তেমনিভাবে মানুষের জন্যও বাঘ রয়েছে। আর মানুষের বাঘ হল শয়তান। বাঘ বকরির পাল হতে বিচ্যুত ও বিচ্ছিন্নটিকেই আক্রমণ করে। সাবধান ! তোমরা বিচ্ছিন্ন হওয়া থেকে বিরত থাক। তোমরা জামাতবদ্ব থাক, মুসলমানদের দলভুক্ত হও এবং মসজিদ মুখী হও।“ (আহমদঃ ২১০২০)

ইমাম ইবনুল কাইয়্যিম আল-জাওযিয়্যাহ বলেন,
“নিজের জন্য কেনাকাটা করুন (ভালো কাজ করার মাধ্যমে) যতদিন আপনার জন্য বাজার রয়েছে এবং আপনার কেনাকাটার সামর্থ্য আছে।


কৃতজ্ঞতাঃ
1. http://www.tanzil.net/#trans/bn.bengali
2. http://www.hadithbd.com
3. http://www.islamicambit.com/tune-id/2354
4. http://www.islamicquotesbangla.wordpress.com
5. http://www.salimview.wordpress.com
6. http://www.quraneralo.com
7. Click This Link
8. Click This Link

_______________________________________________________________________
এটি OIEP আয়োজিত সাপ্তাহিক হালাকা বা আলোচনার সারমর্ম (০৬/০৯/২০১৩ ঈসায়ী) + বাড়তি ক্বুর’আনের আয়াত, হাদিস ও ইসলামিক মনীষীদের কথামালাসহ

ক্লাশে উপস্থিত থেকে, আলোচনা থেকে নিজের জন্য সংগ্রহকৃত চুম্বক অংশ (কিছু নিজের কথা এবং বাড়তি ক্বর’আনের আয়াত, হাদিস ও ইসলামিক মনীষীদের কথামালাসহ) এবং এখানের ভুল-ত্রুটি একান্ত অনিচ্ছাপ্রসূতঃ । যদি কোন প্রকার ভুল-ত্রুটি কিংবা কমতির হয় তার জন্য আমি বৈ অন্য কেউ দায়ী নয় এবং এর জন্য আপনাদের কাছে ও মহান আল্লাহ্‌র কাছে বিনীতভাবে ক্ষমা আহ্বান করছি । আল্লাহ আমাদের সকলকে তার সন্তোষমূলক কাজ করার তাওফীক দান করুন এবং সকলকে হেদায়াতের উপর ইস্তেখামাত থাকার তাওফীক দান করুন । আমীন

[ ফেসবুকের বড় স্ট্যাটাসগুলো ও নোটসমূহ (ইসলামিক কবিতা ও অন্যান্য) আমার ব্যাক্তিগত ব্লগ http://www.tanin87.blog.com এ ইনশাআল্লাহ্‌ যেকোন সময় পাবেন ]
৪টি মন্তব্য ২টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নীল আকাশের প্রান্ত ছুঁয়ে-৭ (আকাশ ভালোবেসে)=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ০৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:১৯

০১।



=আকাশের মন খারাপ আজ, অথচ ফুলেরা হাসে=
আকাশের মন খারাপ, মেঘ কাজল চোখ তার,
কেঁদে দিলেই লেপ্টে যাবে চোখের কাজল,
আকাশের বুকে বিষাদের ছাউনি,
ধ্বস নামলেই ডুবে যাবে মাটি!
================================================
অনেক দিন পর আকাশের ছবি নিয়ে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পানি জলে ধর্ম দ্বন্দ

লিখেছেন প্রামানিক, ০৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:৫২


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

জল পানিতে দ্বন্দ লেগে
ভাগ হলোরে বঙ্গ দেশ
এপার ওপার দুই পারেতে
বাঙালিদের জীবন শেষ।

পানি বললে জাত থাকে না
ঈমান থাকে না জলে
এইটা নিয়েই দুই বাংলাতে
রেষারেষি চলে।

জল বললে কয় নাউযুবিল্লাহ
পানি বললে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×