somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

হালালিকাঃ ভিনদেশী হালাল

২৭ শে মার্চ, ২০০৭ সকাল ৯:৫৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আমাদের ব্লগারুরা অনেকেই দেশ ছেড়ে এদিক সেদিক ছিটকে পড়েছেন, বা বিদেশে থাকতেই ব্লগের নেশা ধরেছেন। তাই প্রায়শঃই দেশ আর বিদেশের সংস্কৃতি, খাদ্যাভ্যাস, রাজনীতি, ধর্মীয় সীমানা ইত্যাদি আলোচনায় চলে আসে। এর মাঝে একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল হালাল আর হারামের সমস্যা। যারা দেশ ছেড়ে ইউরোপ, আমেরিকা বা অস্ট্রেলিয়াতে পাড়ি জমিয়েছেন তাদের জন্য বিষয়টা অনেক সময়েই কনফিউজিং, হতাশাজনক, বিব্রতকর। আমি আমার নিজের পক্ষ থেকে অল্প কিছু শেয়ার করতে পারি।

আমাদের ডাইল আর ফেন্সী জেনারেশনের অনেকেই আছে যারা খাওয়াদাওয়ার বিষয়ে অত্যান্ত উদার। যাহাই রসনায় রুচে তাহাই স্বাগত। এছাড়াও এক দুই পার্সেন্ট আছেন যারা হালালের বাউন্ডারী একটু প্রশস্ত করার জন্য বেশ চেষ্টা করেন, তাদের বাদ দিলে বাকি সাধারণ জনগণের জন্য এই পোস্ট।

আমার পছন্দের মাংস (গরু,ছাগল,মুরগী) বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবর বলে জবাই করে কেটেকুটে দিবে আমার হালাল মাংসের চাহিদা বলতে গেলে মোটামোটি এইটুকুই। দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি যে, সাবধান না হলে দেশেও মরা মুরগী, ছাগলের নামে ভেড়া ছাড়া অন্য কিছু বা কলেমা না পড়েই জবাই করা মাংস নিয়ে ধরা খাবার ভাল সম্ভাবনা আছে। তাই পরিচিত দোকান বা নিজে সামনে দাঁড়িয়ে জবাই করানো গোশত কিনতেই বেশী স্বচ্ছন্দ্য বোধ করি।

বিদেশে হালাল গোশতের চাহিদা দুই রকমের হতে পারে। একটা হল অফিসে বা ভ্রমণের সময়ে অন দা গো রেডীফুড আর দ্বিতীয়টা হল বাড়িতে রান্না করার জন্য সাধারণ গ্রোসারীর মিট।

প্রথম প্রয়োজনের জন্য এবং সাধারণ ভাবেই আমার কাছে মনে হয় পশ্চিমা দেশে বসবাসকারী মুসলিমদের জন্য প্রধান বন্ধু হল ভেজিটেরিয়ান মুভমেন্ট। অল্প কিছু আধপাগলা পাবলিকের হাউকাউয়ের চোটে এখন যেকোন দোকানে বা সুপারমার্কেটে গেলে একগাদা ভেজিটেরিয়ান লেবেল দেয়া খাবার পাওয়া যায়। আর এদেশে চেকিংএর ব্যাপারে বেশ কড়াকড়ি করা হয় বলে আশা করা যায় যে, ভেজিটেরিয়ান লেবেল দিলে সেখানে প্রাণীজ প্রোটিন বা ফ্যাট থাকবে না। অতএব নিশ্চিন্তে কামড় বসাই। এছাড়া এগ ক্রীস স্যান্ডউইচ বা টুনা সুইটকর্ণ স্যান্ডউইচ আরামসে খেয়ে নেয়া যায়।

দ্বিতীয় ধরণের প্রয়োজন হল নিয়মিত এবং সাধারণত বড়মাপের, কারণ রোজ বাজার করার মত বিলাসিতা করা যায় না অনেক সময়েই। আর ভিনদেশী হয়ে হটাৎ ভাল হালাল দোকান বোঝা মুশকিল। একশ কোটির ওপর মুসলিম জনগোষ্ঠীর খাদ্যচাহিদার বাজারের আয়তন অবিশ্বাস্য রকমের বড়। এখানে ভাগ বসানোর জন্য যেকেউ মহানন্দে এগিয়ে আসবে তাতে অবাক হবার কিছুই নাই। তাই সবখানেই আজকাল অসংখ্য হালাল ফুড, হালাল দোকান গজিয়ে উঠেছে। তাই আমি ব্যাক্তিগত ভাবে কাছের মসজিদ বা মুসলিম সেন্টার খুঁজে বের করার চেষ্টা করি। তারপর সেখানে একটু খোঁচাখুচি করে জেনে নেই কোনগুলো বিশ্বাসযোগ্য। এমি যেই এলাকায় থাকি, সেখানে বেশকিছু হালাল ফাস্টফুড শপ আছে, চিকেন চিপস আর ডোনার কাবাবের। পরে খবর নেয়ার পর, এখন এক দুইটা ছাড়া বাকিগুলো থেকে আর কিছু কেনা হয় না।

ইংল্যান্ডের বিশাল মুসলিম জনগোষ্ঠীর চাহিদা মেটানোর জন্য সারাদেশে অসংখ্য হালাল ফাস্টফুড আর মাংসের দোকানে ভর্তি। তার একটা বড় অংশেই চলে হালালের নামে হাবিজাবি বিক্রি। এরা হয়ত পুরোপুরি নিয়ম ভাঙ্গে না কিন্তু হালালের সাথে যদি কিছু এদিক সেদিকও হয়ে যায়, সেটাও চালিয়ে দেয়া হয়। সাবধানী ক্রেতারা, ভন্ড বিক্রেতাদের চাপে ত্যাক্ত হতে হতে শেষ পর্যন্ত এইচএমসি র জন্ম। মোটামুটি সবগুলো হালাল দোকানেই বিদঘুটে আরবীতে লেখা সার্টিফিকেট দেখা যায় যার উৎস বা নির্ভরযোগ্যতা সম্পর্কে কোন গ্যারান্টি নাই। সেদিক থেকে এইচ এম সি অনেক স্ট্রিক্ট। এক দুই লাইন লিখছি তার সম্পর্কে।

হালা মনিটরিং কমিটি বা এইচ এম সির সদস্য হতে গেলে একটা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ ফী দিয়ে হতে হয়। এবং এই কমিটির সদস্য হিসাবে থাকতে চাইলে প্রতিমাসে সদস্যপদ নবায়ন করতে হয়। ফলে সদস্য হবার সময়ে ঠিকঠাক মত থেকে পরে ওই সার্টিফিকেট বেচে ২০ বছর পার করে দেবার উপায় নাই।

কমিটির পক্ষ থকে প্রতি ১-২ দিন পরে পরে মূল জবাইখানায় ইন্সপেকশন করা হয়। এবং কখনো অনিয়ম পেলে সাথে সাথেই সদস্যপদ বাতিল করা হয়, এবং দোকান থেকে সার্টিফিকেট সরিয়ে ফেলা হয়। আমিও দেখেছি এক দুইটারে ধরা খাইতে।

কমিটির ব্যাবস্থাপনায় সদস্যদের বেশিরভাগই ওলামায়ে কেরাম এবং তারা সব সময়েই উৎসাহিত করেন ক্রেতাদের মাঝে মধ্যে শহর থেকে দূরে হলেও জবাইখানায় গিয়ে নিজে অবস্থা যাচাই করার জন্য। আমি নিজেও এক দুইজনকে চিনি যারা পরিদর্শক হিসাবে কাজ করেছেন বা এখনো করছেন।

কমিটির ওয়েবসাইটে বেশ দরকারী অনেক তথ্যই আছে, এবং সবচেয়ে ভাল হল, অনলাইনেই আপনার এলাকার আশেপাশে কোন দোকানে নির্ভরযোগ্য গোশত পাওয়া যাবে তা খুঁজে বের করা যায়।

যদিও এই সার্টিফিকেশন ওয়ালা দোকানের মাংস অনেক সময়েই অন্যান্য দোকানের চেয়ে কিছুটা দামী হয় কিন্তু নিশ্চিন্তে কিনে ফেলা যায়। নিচে ওদের ওয়েবসাইটের ঠিকানা দিলাম। অন্যান্য দেশে কি অবস্থা কমেন্টে বা সম্পুরক পোস্টে জানাতে পারেন।

!@@!590506 !@@!590507 !@@!590508 !@@!590509

আমাদের এলাকার একটা হালাল দোকানের সীল আর খাবারের ছবি খুঁজে পেলাম। লোভ লাগলে কি হবে। কিনতে পয়সা লাগেঃ(
সর্বশেষ এডিট : ২৭ শে মার্চ, ২০০৭ সকাল ১০:০৮
১৩টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

আমার অন্যরকম আমি এবং কিছু মুক্তকথা

লিখেছেন জানা, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:০৬



২০১৯, ডিসেম্বরের একটি লেখা যা ড্রাফটে ছিল এতদিন। নানা কারণে যা পোস্ট করা হয়নি। আজ হঠাৎ চোখে পড়ায় প্রকাশ করতে ইচ্ছে হলো। আমার এই ভিডিওটাও ঐ বছরের মাঝামাঝি সময়ের।... ...বাকিটুকু পড়ুন

যেভাবে শরণার্থীরা একটি দেশের মালিক হয়ে গেলো!

লিখেছেন মাঈনউদ্দিন মইনুল, ১৫ ই মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:২৬



এবার একটি সেমিনারে প্রথমবারের মতো একজন জর্ডানির সাথে পরিচয় হয়। রাসেম আল-গুল। ঘনকালো মাথার চুল, বলিষ্ট দেহ, উজ্জ্বল বর্ণ, দাড়ি-গোঁফ সবই আছে। না খাটো, না লম্বা। বন্ধুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। প্রতিটি সেশন... ...বাকিটুকু পড়ুন

নিউ ইয়র্কের পথে.... ২

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০২


Almost at half distance, on flight CX830.

পূর্বের পর্ব এখানেঃ নিউ ইয়র্কের পথে.... ১

হংকং আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্লেন থেকে বোর্ডিং ব্রীজে নেমেই কানেক্টিং ফ্লাইট ধরার জন্য যাত্রীদের মাঝে নাভিশ্বাস উঠে গেল।... ...বাকিটুকু পড়ুন

সামুতে আপনার হিট কত?

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:০৩



প্রথমে মনে হল বর্তমান ব্লগাদের হিটের সংখ্যা নিয়ে একটা পোস্ট করা যাক । তারপর মনে পড়ল আমাদের ব্লগের পরিসংখ্যানবিদ ব্লগার আমি তুমি আমরা এমন পোস্ট আগেই দিয়ে দিয়েছেন ।... ...বাকিটুকু পড়ুন

ল অব অ্যাট্রাকশন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৬ ই মে, ২০২৪ সকাল ৮:৪৫

জ্যাক ক্যান ফিল্ডের ঘটনা দিয়ে লেখাটা শুরু করছি। জ্যাক ক্যানফিল্ড একজন আমেরিকান লেখক ও মোটিভেশনাল স্পিকার। জীবনের প্রথম দিকে তিনি হতাশ হয়ে পড়েছিলেন। আয় রোজগার ছিলনা। ব্যাংক অ্যাকাউন্টে অর্থ ছিলনা।... ...বাকিটুকু পড়ুন

×