somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

জাপানের ডায়েরি-1

২২ শে মার্চ, ২০০৭ সকাল ৮:৪৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

10ই অক্টোবর, 2005। আজ রমজানের তৃতীয় দিন। প্রথম দুই রোজা রাখতে পারিনি। একেতো সব কিছুই নতুন, তার উপর খাবার এবং রান্নার কোন জিনিস পত্র মেনেজ করা হয়ে ওঠেনি। গতকাল ও খুব কষ্ট করে রান্না করতে হয়েছে। তবে আজ মোটামুটি সবই মেনেজ করতে পেরেছি। গত পাঁচ দিনে আমি মোট পয়ত্রিশ হাজার ইয়েন খরচ করেছি জরুরি কিছু জিনিস পত্র কিনতে। এখানে জিনিস পত্রের দাম দেখে মাথা খারাপ হওয়ার জোগার। পাঁচ পিছ আলুর দাম একশত আশি ইয়েন (প্রায় একশত টাকা), ছয় পিছ কলা একশত চলি্লশ ইয়েন (প্রায় আশি টাকা), বড় সাইজের একটা মুলার দাম পড়ে একশত আশি ইয়েন এবং দশ কেজি চালের দাম দুই হাজার পাঁচ শত থেকে সারে তিন হাজার ইয়েন পর্যন্ত (প্রায় দেড় থেকে দুই হাজার টাকা)।

যদিও ল্যাব-এ কাছ শুরু করিনি, তবু প্রতিদিন যেতে হয়। আমি যেখানে থাকি সেখান থেকে ইউনি তে যেতে পঁচিশ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। বাসে যেতে একশত সত্তুর ইয়েন (প্রায় একশত টাকা) ভাড়া লাগে। হেটে যেতে অবশ্য তেমন খারাপ লাগে না। ঠান্ডা বাতাস এবং রোদেলা আকাশ। কাছে যারা থাকে, তারা প্রায় সবাই সাইকেলে চড়ে ইউনি তে আসে। তবে যারা একটু দূরের, তাদের প্রত্যেকেরই গাড়ি আছে। কিছু ছেলে-মেয়ে আছে যারা বাসে আসে। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই অল্প।

আমি আসার ঠিক আগের বছর আমার ল্যাব নতুন ক্যাম্পাসে সিফ্ট করেছে। পাহাড় কেটে তৈরি করা হয়েছে ছয়তলা সমান উচু আমাদের এই আধুনিক ফেকাল্টি। আমার ল্যাব পাঁচ তলায়। আমার রুমটাতে বসে সামনের দিকে তাকালে দেখা যায় সারি সারি পাহাড়। পাহাড়গুলো সবুজ গাছে মোড়ানো। এখন অবশ্য গাছের পাতার রং ফিকে হতে শুরু করেছে। ঢেউ খেলানো পাহাড়গুলোতে কোথাও রং সবুজ, কোথাও হলদে আবার কোথাও লালচে। শীতের আগমনের শুরুতে গাছের পাতার রং এমনই হয়ে যায়। তখন ভীষণ সুন্দর দেখায় দূর থেকে। পাহাড়গুলো থেকে বেশ কয়েকটা রাস্তা একে বেঁকে নেমে এসে উপত্যকার ঠিক মাঝখানটাতে যেখানে পরস্পরের সাথে মিশেছে, সেখানে আমাদের ইউনি। সেখান থেকে বড় রাস্তাটা সোজা চলে গেছে শহরের দিকে। বেশ প্রসস্ত রাস্তা। দুই পাশে উচু পাহাড় এবং পায় চলার পথ। কোন ধুলো নেই রাস্তায়। সব যেন ছবির মত। আমি প্রায়ই জানালা দিয়ে দূরের সারি সারি পাহাড় গুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। কি শান্ত সুন্দর। মন ভাল হয়ে যায়।

এই সময়টাতে কানাজাওয়ার আবহাওয়া বড়ই বিচিত্র হয়ে ওঠে। একদিন বৃষ্টি তো পরের দু'দিন টানা রোদ। গতকাল খুব সুন্দর মিষ্টি রোদের দিন ছিল। আজ সেই সকাল থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। তাই লেপের উষ্ণতা ছেড়ে ওঠতে মন চাচ্ছিল না। উইক-এন্ডে আমি কখনোই ল্যাব-এ যাইনা। তাই আজো যাওয়া হলনা। সকাল তখন দশটা বাজে। ডঃ রমেশ আমাকে ঘুম থেকে ডেকে তুল্লেন। গতকালেরই প্লান ছিল আজ মার্কেটে যাব কেনাকাটা করতে। আমাদের এপার্টমেন্টের পাশেই জাসকো। বিশাল মার্কেট। এমন কিছু নেই যা এখানে পাওয়া যায়না। কিন্তু আজ আমরা কেনাকাটা করতে যাব এখান থেকে একটু দুরে। ছোট একটা দোকান আছে যেখানে খুব সস্তায় সবজি পাওয়া যায়। ওই দোকানে যেতে একটা পাহাড় ডিঙ্গিয়ে যেতে হয়। পঁচিশ থেকে ত্রিশ মিনিটের পায়ে হাটা পথ। হালকা বৃষ্টি হচ্ছিল। তাই ছাতা নিয়ে বের হলাম। যে পাহাড়টা পেড়িয়ে সেই দোকানে যেতে হবে, তার উপর অনেকগুলো বাড়ি আছে। সুন্দর রাস্তা। দুই পাশে সারি সারি ডুপ্লেঙ্ বাড়ি। প্রায়ই সবই কাঠের তৈরি। তবে নতুন যে বাড়িগুলো তৈরি হচ্ছে, তার সবই আধুনিক বিল্ডিং মেটারিয়েল্স-এর। মাঝে মাঝে তিন বা চার তলা বাড়ি ও আছে। তবে তাদের সংখ্যা নিতান্তই হাতেগোনা।

এথানে কিছু মার্কেট আছে যা "হিয়াকু ইয়েন সপ্" বলে। এখানে সব জিনিসের দামই একশত ইয়েন। সুঁই-সুতা থেকে শুরু করে হাড়িপাতিল সবই পাওয়া যায় এখানে। জাপানের নিম্ন আয়ের মানুষরাই এসব দোকানের নিয়মিত গ্রাহক। কেনাকাটা সেরে রুমে ফিরতে ফিরতে দুইটা বেজে গেল। ওযু করে নামাজ পড়লাম। তারপর ঘুম। যখন ওালাম, তখন চারটা বেজে গেছে।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১২টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×