somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ফ্লপ ফোর্থ অ্যাম্পায়ার

১৮ ই মার্চ, ২০০৭ রাত ৩:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

রাসেল ভাই ঝলমলে অবস্থায় বান্ধবীরে লইয়া সিনেমা দেখে, মাশরাফি সকালে আয়নার সামনে গিয়ে চমকে উঠে কিংবা রাজীব ভাই অটোগ্রাফ দিতে গিয়ে চোখ কচলায়। পেসার হান্ট প্রোগ্রামের বিজ্ঞাপন। এর বাইরে অনেকদিন বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের খেলা টিভি স্ক্রীনে দেখার সুযোগ হয়নি। গতকাল প্রায় দু'বছর পর টিভি পর্দায় বাংলাদেশ দলের খেলা দেখলাম ইন্ডিয়ান দূরদর্শন ন্যাশনালের সৌজন্যে।

বাংলাদেশ জিতবেই - অমনটা খুব জোর করে বলতে পারছিলাম না। কিন্তু মনের ভেতর থেকে টের পাচ্ছিলাম ভালো করবে বাংলাদেশ। এর মাঝে ডিডি ন্যাশনালের 'ফোর্থ অ্যাম্পয়ার' প্রোগ্রাম শুরু হলো। উপস্থাপকের পাশাপাশি বিশেষজ্ঞ বিশ্লেষক হিসেবে ছিল - চেতন শর্মা, শ্রীকান্ত, আঞ্জুম চোপড়া। ইন্ডিয়া এবার বিশ্বকাপ জিতবেই - এমন মনোভাব তাদের। ব্যাটিং অর্ডারকে কীভাবে সাজানো যায় সেটা নিয়ে প্ল্যান চলছিল। কার কেমন পারফরম্যান্স দরকার ওটা নিয়েও মহাতুলকালাম। শ্রীকান্ত তার সহজাত মাত্রাতিরিক্ত বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দিয়ে চোখ পাকিয়ে এমনভাবে কথা বলছিল - মনে হচ্ছে - ইন্ডিয়া মাঠে যা খেলবে তার চেয়ে তিনিই বেশী খেলিয়ে দিবেন। উথাপা প্রসংগ এলে জানলাম - এবার ইন্ডিয়া যদি বিশ্বকাপ জিততে চায় তবে মূল খেলাটা উথাপাকেই খেলতে হবে! মাঝে বারবার উঠে আসছিল আগের ম্যাচে গিবসের ছয় ছককার বিষয়টি।

এরমাঝে ক্যামেরা চলে গেল বাইরে। 'জন্তা' কী বলে। পাবলিক ওপিনিয়ন। এক তরুণকে জিজ্ঞেস করা হলো - 'আগের ম্যাচে গিবস এক ওভারে ছয় ছককা মেরেছে। আজ ইন্ডিয়া কী করবে?' হাসি মুখে তরুণটি জবাব দিল - আজ ধোনি এক ওভারে সাত ছককা মারবে! কীভাবে? বাংলাদেশ একটা এক্সট্রা নো বল করবে, ওটাও ছককা হবে!

ক্যামেরা আবার স্টুডিওতে ফিরে আসতেই সাত ছককা নিয়ে হাসাহাসি। শ্রীকান্তের ভাবভঙ্গী এমন যেন - সাত ছককা না মেরে আজ উপায় নেই। পাবলিক ডিমান্ড। আলোচনায় প্রসংগ এলো - আজকের খেলায় বাংলাদেশ কোনো আপসেট ঘটাবে কী না। শ্রীকান্ত তুড়ি মেরে উড়িয়ে দিলো। অসম্ভব! ভারতের এ ব্যাটিং লাইন আপের সাথে বাংলাদেশ টিকতেই পারবে না। পাশে বসে থাকা আঞ্জুম অনেকটা ডিসেন্ট - কোন অপোনেন্টকেই ছোট করে দেখা উচিৎ হবে না, তাছাড়া বাংলাদেশ প্রস্তুতিমূলক ম্যাচে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়েছে। তবে আজকে ইন্ডিয়ার সাথে আপসেট ঘটানোর সম্ভবনা খুব কম, নেই বললেই চলে...।
আঞ্জুমের কথা কেড়ে নিয়ে শ্রীকান্ত জোশ পেয়ে যায়, বলে - বাংলাদেশ নিউজিল্যান্ডকে ওয়ার্মআপ ম্যাচে হারিয়েছে, এটা করেছে ওটা করেছে - এসবই রাবিশ। বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার তফাৎ অনেক বেশী। বাংলাদেশ লড়তেই পারবে না। তাছাড়া ইন্ডিয়া এসেছে বিশ্বকাপ জিততে, এখন আজকের ম্যাচে বাংলাদেশের কাছে হারলে ইন্ডিয়ার উচিৎ হবে আগামীকালের ফ্লাইটে রিটার্ন করা।
শুনে সবাই হো হো করে হাসে। চেতন শর্মার মতে - বাংলাদেশকে এতো কেয়ার করার দরকার নেই। বাংলাদেশকে এতো সমীহ করলে ইন্ডিয়ার বিশ্বকাপ খেলতেই যাওয়া উচিৎ না।
শেষে মতামত এলো - আঞ্জুম 100% কনফার্ম ইন্ডিয়া জিতবে, শ্রীকান্তও 100%, চেতন শর্মা 100%, উপস্থাপক 100%, ইন্ডিয়ান সাপোর্টার 100% - - - সবাই মিলে 500% কনফিডেন্ট ইন্ডিয়া জিতবে, অফ যা বাংলাদেশ; এমন অবস্থা!!!

ইন্ডিয়া ব্যাটিং করলো। 191 তে অল আউট। লাঞ্চ ব্রেকে আবার 'ফোর্থ অ্যাম্পায়ার' শুরু হলো। শ্রীকান্ত নিজেই আপসেট। এটা কী খেললো ইন্ডিয়া? বারবার উঠে আসছিল মাশরাফির কথা। মাশরাফি চার উইকেট নিয়েছে। কিন্তু শ্রীকান্ত তখন মাশরাফির বদলে স্পিনারদের কৃতিত্বটাই বড় করে দেখলেন। কয়েক মিনিটের মাথায় কমেন্ট করলেন - এই পিচে স্পিনারদের কিছু করার নাই, বাংলাদেশ যা আউট করেছে সব ইন্ডিয়ান ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতা!!! তবুও চেতন শর্মা আশাবাদী - বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার অতোটা স্ট্রং না। কুম্বলেকে খুব মিস করলো তারা। ইন্ডিয়া যদি উইকেট টু উইকেট বল করে তবে ম্যাচ জেতা অসম্ভব কোন ব্যাপার না। তবে শ্রীকান্ত তখনো অনড় - বাংলাদেশের সাথে হারলে ইন্ডিয়ার উচিৎ হবে পরেরদিন দেশে ব্যাক করা। আহারে পিচ্চি বাংলাদেশ!!!

বাংলাদেশের ব্যাটিং শুরু হলো। ইন্ডিয়ান বোলাররা তেমন সুবিধা আদায় করতে পারছে না। ধারাভাষ্যে আতাহার আলী খান এলে ডিডি ন্যাশনাল হিন্দি কমেন্ট্রি দেয়া শুরু করে। রাজেন্দ্র আর গুর্পীত মিলে ইন্ডিয়াকে জেতানোর জন্য যতগুলো পসিবল অপশন আছে সব প্রেডিক্ট করতে থাকে। কাজ হয় না! শেষে বাংলাদেশ 5 উইকেটে জয়ী। ভীষণ আমোদ নিয়ে অপেক্ষা করছিলাম - শ্রীকান্ত-চেতন বিশেষজ্ঞদ্্বয় কী বলে! 'ফোর্থ আম্পায়ার' শুরু হলো। দেখি - শ্রীকান্ত-চেতন নেই। আঞ্জুম আছে। আঞ্জুম তার প্রাথমিক সমীহসুলভ আচরণ বজায় রেখে টুকটাক বিশ্লেষণ করলো। খুব জানতে ইচ্ছে করছিল বাকী দুই জ্ঞানী ওস্তাদ কোথায় গেলো? শ্রীকান্ত যদি ইন্ডিয়ান টীমের রিটার্ণ টিকিট কনফার্ম করতে ইন্ডিয়ান এয়ারলাইন্স অফিসে যান তবে আপত্তি নেই, শুধু বিনয়ের সাথে বলবো - আমাদের আতাহার আলী খানের বিশ্লেষণ শুনে নিবেন প্লিজ! আপনাদের মতো ঝলমলে রেকর্ড ক্যারিয়ার হয়তো তাঁর নেই, তবে স্পোর্টসে প্রতিপক্ষকে কীভাবে সম্মান করে কথা বলতে হয় তা তিঁনি আপনাদের চেয়ে ভালো জানেন।
'ফোর্থ অ্যাম্পায়ার'-এর শেষে উপস্থাপক আঞ্জুম চোপড়াকে জিজ্ঞেস করলো - 'তাহলে ইন্ডিয়া-শ্রীলংকা ম্যাচ খুব ভাইটাল হয়ে গেলো?'
আঞ্জুম চমকে দিয়ে বললো - 'মে বি। হয়তো শ্রীলংকাকে হারিয়ে বাংলাদেশ আরেকটি আপসেটের জন্ম দিবে, যেটা ইন্ডিয়ার জন্য ভালো হবে'।
ওয়াওওও!!! কমপ্লিট ইউ-টার্ণ!!!!!!
আঞ্জুম চোপড়া, ভালোই হলো! শ্রীলংকার সাথে ম্যাচে বাংলাদেশের সমর্থক একজন বাড়লো। থ্যাংকস্! শুধু একটা কথা - বাংলাদেশকে খুব আকাশে কিংবা একেবারে মাটিতে নামাবেন না প্লিজ! বাংলাদেশ যা, তা-ই বলবেন। টিভি সেটের সামনে আপনাদের তুচ্ছ তাচ্ছিল্য শুনে কিছু বলতে পারিনি। দু'প্যাকেট বাদাম আর কয়েক কাপ কফি শেষ করেছি। দারুণ উত্তেজনা নিয়ে খেলা শেষ পর্যন্ত দেখে বন্ধুদের এসএমএস পাঠিয়েছি - আমরাও পারি, শাব্বাশ বাংলাদেশ - অবাক পৃথিবী, অবাক তাকিয়ে রয়...!

[গাঢ়]ফেয়ারওয়েল কিস ফর পাকিস্তান:[/গাঢ়]
পোলাও-কোর্মা-রেজালা খেতে খুব ভালো লাগে। সাথে বুরহানী হলে কথাই নেই। আমার ভীষণ পছন্দের খাবার। কিন্তু সমস্যা হলো - যথাসময়ে বুরহানী পাওয়া যায় না। কোক-সপ্রাইট খেয়ে চুপ থাকতে হয়। কিন্তু এবার বুরহানী স্বাদ এনে দিলো আয়ারল্যান্ড। বাংলাদেশের জয়ের সাথে সাথে পাকিদের পরাজয়! দারুণ একটি দিন। থ্রি চিয়ার্চ ফর আয়ারল্যান্ড। এসি বোথা আট ওভার বল করে চার মেডেনে দুই উইকেট নিয়েছে মাত্র পাঁচ রানের বিনিময়ে! অসাধারণ বোলিং! পাকিস্তানকে ফেয়ারওয়েল কিস দিয়ে দেশে পাঠানোর জন্য আয়ারল্যান্ডকে অভিনন্দন-শুভেচ্ছা!

[রং=669999][গাঢ়]একজন মানজারুল ইসলাম রানা:[/গাঢ়][/রং]
ক্রিকেট ইতিহাসে অনেকদিন পর ঘটনাটি ঘটেছিল। পাঁচ ম্যাচ সিরিজে 2-0তে পিছিয়ে থেকেও 3-2-এ সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। 2004-05 সালে জিম্বাবুয়ের সাদামাটা দলটির বিপক্ষে gvbRviyj Bmjvg ivbv চমৎকার নৈপূণ্য দেখিয়ে বাংলাদেশ দলকে সিরিজে ফিরিয়েছিলেন। আনন্দে মেতেছিল বাংলাদেশ। মাত্র 22 বছর বয়সে গত পরশু রোড অ্যাক্সিডেন্টে পৃথিবী থেকে বিদায় নিলেন তিনি। বিধাতার নিষ্ঠুর নিয়ম! ইন্ডিয়ার সাথে গতকালের জয়টি ডেডিকেট করা হয়েছে রানার স্মৃতির উদ্দেশ্যে। রানার জন্য রইলো আমাদের অপরিসীম শ্রদ্ধা, ভালোবাসা...।

---------------
সংযুক্তি: ব্লগার কৌশিক'দা-র [link|http://www.somewhereinblog.net/kowshikblog/post/28702629|
সর্বশেষ এডিট : ০৬ ই এপ্রিল, ২০০৭ সকাল ১১:৪১
৭১টি মন্তব্য ০টি উত্তর পূর্বের ৫০টি মন্তব্য দেখুন

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

একাত্তরের এই দিনে

লিখেছেন প্রামানিক, ০১ লা মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৩৬


শহীদুল ইসলাম প্রামানিক

আজ মে মাসের এক তারিখ অর্থাৎ মে দিবস। ১৯৭১ সালের মে মাসের এই দিনটির কথা মনে পড়লে এখনো গা শিউরে উঠে। এই দিনে আমার গ্রামের... ...বাকিটুকু পড়ুন

হুজুররা প্রেমিক হলে বাংলাদেশ বদলে যাবে

লিখেছেন মিশু মিলন, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ৯:২০



তখন প্রথম বর্ষের ছাত্র। আমরা কয়েকজন বন্ধু মিলে আমাদের আরেক বন্ধুর জন্মদিনের উপহার কিনতে গেছি মৌচাক মার্কেটের পিছনে, আনারকলি মার্কেটের সামনের ক্রাফটের দোকানগুলোতে। একটা নারীর ভাস্কর্য দেখে আমার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইসলামের বিধান হতে হলে কোন কথা হাদিসে থাকতেই হবে এটা জরুরী না

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০১ লা মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৫



সূরাঃ ৫ মায়িদাহ, ৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
৩। তোমাদের জন্য হারাম করা হয়েছে মৃত, রক্ত, শূকরমাংস, আল্লাহ ব্যতীত অপরের নামে যবেহকৃত পশু, আর শ্বাসরোধে মৃত জন্তু, প্রহারে মৃত... ...বাকিটুকু পড়ুন

লবণ্যময়ী হাসি দিয়ে ভাইরাল হওয়া পিয়া জান্নাতুল কে নিয়ে কিছু কথা

লিখেছেন সম্রাট সাদ্দাম, ০২ রা মে, ২০২৪ রাত ১:৫৪

ব্যারিস্টার সুমনের পেছনে দাঁড়িয়ে কয়েকদিন আগে মুচকি হাসি দিয়ে রাতারাতি ভাইরাল হয়েছিল শোবিজ অঙ্গনে আলোচিত মুখ পিয়া জান্নাতুল। যিনি একাধারে একজন আইনজীবি, অভিনেত্রী, মডেল ও একজন মা।



মুচকি হাসি ভাইরাল... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবন চলবেই ... কারো জন্য থেমে থাকবে না

লিখেছেন অপু তানভীর, ০২ রা মে, ২০২৪ সকাল ১০:০৪



নাইমদের বাসার ঠিক সামনেই ছিল দোকানটা । দোকানের মাথার উপরে একটা সাইনবোর্ডে লেখা থাকতও ওয়ান টু নাইন্টি নাইন সপ ! তবে মূলত সেটা ছিল একটা ডিপার্টমেন্টাল স্টোর। প্রায়ই... ...বাকিটুকু পড়ুন

×