somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

বাংলার বাঘ পর্ব-2

১৫ ই মার্চ, ২০০৭ ভোর ৫:১৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


রয়াল বেঙ্গল টাইগার
-হাসনাত হাওড়ী
অদ্ভুত এক প্রাণী বাঘ। অদ্ভুত তার জীবনাচরণ। কিছুটা দাম্ভিক, উদ্ধত। কিন্তু তাতে কি, রাজকীয় আচরণ, শক্তি, সাহস আর সৌন্দর্যের জন্যই তো তারা এতো আকর্ষণীয়। এ আকর্ষণ হারিয়ে গেলে জীববৈচিত্র্য হারিয়ে ধ্বংস হবে সুন্দরবন। সৃষ্টি হবে প্রাকৃতিক বিপর্যয়। তাই রয়াল বেঙ্গল টাইগারকে বিলুপ্তির হাত থেকে বাচানো এখন আমাদের জাতীয় দায়িত্ব।

বাঘ শুমারি
সুন্দরবনের বাঘের সঠিক সংখ্যা নিরূপণের জন্য বিভিন্ন সময় বিভিন্ন সংস্থা বা ব্যক্তির উদ্যোগ অবৈজ্ঞানিক (2004 সালের আগ পর্যনত্দ) পদ্ধতিতে জরিপ করা হয় এবং সর্বশেষ 2004 সালে টঘউচ-র অর্থায়নে প্রথমবারের মতো বিজ্ঞানভিত্তিক বাংলাদেশ-ইনডিয়া যৌথ বাঘ শুমারি 2004 সালের 26 ফেব্রম্নয়ারি থেকে 3 মার্চ অনুষ্ঠিত হয়। শুমারিতে মোট 32টি দল অংশ নেয়। দলগুলো সুন্দরবনে ছড়িয়ে থাকা ছোট খালের ধার দিয়ে খাল অতিক্রমকারী বাঘের ছাপ পর্যবেৰণ করে। প্রতিটি দলে একজন ডেপুটি রেঞ্জার, একজন বনপ্রহরী দু'জন নৌকা চালক, একজন এনজিও প্রতিনিধি। বিনসিসির একজন সদস্য ও দু'জন শ্রমিককে অনত্দর্ভুক্ত করা হয়। এছাড়া সুন্দরবনের 4টি রেঞ্জের বিভাগীয় বন কর্মকর্তারা 4টি মনিটরিং সেলের মাধ্যমে সার্বৰণিক শুমারি কাজ তদারক করেন। 9 অক্টোবর 2004 উক্ত শুমারির রেজাল্ট ঘোষণা করা হয়।

বাঘের সংখ্যা নিরূপণ পদ্ধতি সংগৃহীত বাঘের পায়ের ছাপগুলো সংগ্রহ করা হয় 'পস্নাস্টার অফ প্যারিস'-এ। এরপর ল্যাবরেটরিতে সেগুলো ট্রেসিংয়ে তোলা হয়। ট্রেসিং করা ছাপগুলোর বিভিন্ন জ্যামিতিক চিত্র একে মোট 18টি মাপকাঠি (প্যারামিটার) নির্ণয় করে কম্পিউটারে একটি ডেটাবেজ তৈরি করা হয়। এ ডেটাবেজের ভিত্তিতে 8টি মাপকাঠি বাঘের সংখ্যা নিরূপণের সহায়ক হিসেবে গ্রহণ করা হয়। এর মধ্যে পায়ের দৈর্ঘ্য, প্রস্থ, প্যাড এলাকা, আঙুলের ছাপ, ভৌগোলিক অবস্থান, পদৰেপ, দু'পায়ের মধ্যে ফাক, মাটির প্রকৃতি প্রভৃতি বিশেস্নষণ করে বাঘের সংখ্যা স্ত্রী-পুরম্নষ বাচ্চা, বনের কোন অঞ্চলে কতোটি বাঘের অবস্থান ইত্যাদি নিরূপণ করা হয়েছে। এ পদ্ধতিকে বলা হয় 'পাগমার্ক' পদ্ধতি।

2004 সালের বাঘশুমারির সারসংৰেপ
সর্বমোট সংগৃহীত বাঘের পায়ের ছাপের সংখ্যা 1,546টি। এর মধ্যে বাচ্চা বাঘের পায়ের ছাপ ছিল 34টি।
সবচেয়ে বেশি পায়ের ছাপ খুলনা রেঞ্জে 493টি। যা মোট প্রাপ্ত বাঘের ছাপের শতকরা 31.89 অংশ।
সুন্দরবনের ইনডিয়া অংশে রয়েছে 274টি পূর্ণবয়স্ক বাঘ। এর মধ্যে পুরম্নষ বাঘ 249টি ও স্ত্রী বাঘ 25টি।
সুন্দরবনে বাংলাদেশ অংশে রয়েছে 419টি পূর্ণবয়স্ক ভাগ। এর মধ্যে পুরম্নষ 121টি, স্ত্রী বাঘ 298টি এবং বাচ্চা বাঘের সংখ্যা 21টি।
সুন্দরবনের বাংলাদেশ অংশের 4টি রেঞ্জের মধ্যে রয়েছে_

খুলনা রেঞ্জ : 147টি বাঘ ও 6টি বাচ্চা বাঘ
সাতৰীরা রেঞ্জ : 112টি বাঘ ও 6টি বাচ্চা বাঘ
শরণখোলা রেঞ্জ : 97টি বাঘ ও 3টি বাচ্চা বাঘ
চাদপই রেঞ্জ : 63টি বাঘ ও 6টি বাচ্চা বাঘ


ছাপ পদ্ধতিতে বাঘ গণনা
2004 সালের বাঘ শুমারি করা হয় ছাপ পদ্ধদিতে। পদ্ধতিতে প্রতিটি বাঘ গণনা করতে খরচ হয় 4,500 টাকা প্রায়। সুন্দরবনের 59টি কম্পার্টমেন্টে 32টি গণনাকারী দল বাঘ শুমারিতে অংশ নেয়। এ পদ্ধতিতে প্রতি 8 সদস্যের একটি বাঘ গণনাকারী দল প্রথমে তাদের নির্ধারিত এলাকায় নরম মাটিতে বাঘের পায়ের ছাপ খুজে বের করে। তারা পায়ের ছাপ সংগ্রহের ৰেত্রে বাঘের পেছনের বাম পাটিকেই চিহ্নিত করে। কারণ পেছনের বাম পায়ের উপরেই বাঘ সবচেয়ে বেশি ভর দিয়ে হাটে। একই বাঘ যেখান দিয়ে হেটে কিংবা দৌড়ে যায় তার সারি থেকে কেবল একটি ছাপই নেয়া হয়। মা বাঘিনীর সঙ্গে তার বাচ্চা থাকলে সেটির পায়ের ছাপও নেয়া হয় একইভাবে। স্থানটি নিরাপদ করতে প্রথমে পটকা ফুটিয়ে বাঘকে দূরে সরিয়ে দেয়া হয়। বাম পায়ের ছাপের চারদিকে প্রথমে 6 ইঞ্চি একটি কাঠের ফ্রেম বসানো হয়। তারপর ওই ফ্রেমের মধ্যে সাদা সিমেন্ট গুলে 3 ইঞ্চি পুরম্ন করে টেলে দেয়া হয়। মিনিট দশেক পরে সিমেন্ট শুকিয়ে গেলে তা তুলে নিয়ে তার অপর পিঠে ছাপ সংখ্যা গ্রম্নপ নাম্বার কম্পার্টমেন্ট নাম্বার, সাল ইত্যাদি খোদাই করে একটি ফেসাস কার্ডও পূরণ করা হয়। একই সঙ্গে রিমোট কন্ট্রোলের মতো একটি ৰুদ্র যন্ত্রের সাহায্যে স্যাটেলাইটের মাধ্যমে সেটটির গেস্নাবাল পজিশনিং সিসটেম (এচঝ) রিডিংও নেয়া হয়। বাঘের পায়ের ছাপ পাওয়া মাত্র সঙ্গে সঙ্গে সেখানকার অৰাংশ, দ্রাঘিমাংশ ডিপিএস-এর মাধ্যমে লিপিবদ্ধ করা হয়। এরপর ছাপ নেয়া সিমেন্ট খ-টিকে বাঘের পায়ের অবিকল ছাপটির ওপর একটি কাচের শিট বসিয়ে এবং তার ওপর ট্রেসিং পেপার রেখে ছাপটির স্কেচ নিয়ে তা দেয়া হয় কম্পিউপারে বিশেস্নষণের জন্য। এর ফলে কম্পিউটার বাঘের একাধিক ছাপ হলে তা ধরে ফেলে এবং একটি মৌলিক ছাপই গ্রহণ করে। তাই এ পদ্ধতিটি বেশি যুক্তিযুক্ত এবং গ্রহণযোগ্য।

বাঘ শিকার সংক্রানত্দ আইন ও নীতিমালা




বিলুপ্ত প্রায় অন্যান্য বন্যপ্রাণীর মতো বাঘ সংরৰণের জন্য বিশ্বব্যাপী আওয়াজ উঠেছে। আনত্দর্জাতিক বাণিজ্য কনভেনশন (ঈওঞঊঝ) বিধিমালার 1 নাম্বার পরিশিষ্টে এবং বাংলাদেশ বন্যপ্রাণী সংরৰণ (সংশোধন) বিধির [ইড (চ) (অ) অ] 1974-এ এই ব্যাপারে আইন প্রণয়ন করা হয়েছে। 1992 সালে সরকার বন ও পরিবেশ সংক্রানত্দ নতুন আইন প্রণয়ন করে। বাংলাদেশে প্রণীত বন্যপ্রাণী বিধি অনুসারে নিম্নলিখিত কার্যাবলি অপরাধী হিসেবে গণ্য হবে_

1. বিনা অনুমতিতে বাংলাদেশের যে কোনো বন্যপ্রাণী ধরা
2. বিনা অনুমতিতে বন্যপ্রাণী শিকার করা
3. বন্যপ্রাণী বিষ প্রয়োগে হত্যা করা
4. বিনা অনুমতিতে বন্যপ্রাণী পোষা উক্ত বিধি অমান্যের জন্য নিম্নবর্ণিত শাসত্দি হতে পারে_
1. কমপৰে ছয় মাসের জেল
2. ছয় মাসের জেলসহ দুই হাজার টাকা জরিমানা
3. ঊধের্্ব দুই বছরের জেল।উক্ত আইন বন্যপ্রাণী তথা মূল্যবান ব্যঘ্র সম্পদ রৰায় যথেষ্ট নয়। কেননা একটি প্রাণীর জীবন রৰার জন্য ছয় মাসের জেল খুবই নগণ্য। সরকারের উচিত আরো কঠোর আইন প্রণয়ন এবং আইনের যথাযথ বাসত্দবায়ন এবং ব্যাপক গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।

বিশ্ব বাঘ সংরৰণ আন্দোলন ও প্রয়োজনীয়তা




বাঘ জাতিকে সংরৰণ করার জন্য বর্তমানে আনত্দর্জাতিকভাবে সচেতনতা লৰ্য করা যাচ্ছে। বাঘের দেহের উপাদান থেকে পণ্য বা ওষুধ তৈরি সর্বোপরি বাঘ হত্যা নিষিদ্ধ করে আইন পাস করেছে আমেরিকান কংগ্রেস। বিশ্বের প্রায় 14টি দেশ মিলে লন্ডনে টাইগার মিশন নামে একটি বাঘ সংরৰণ আন্দোলন শুরম্ন করেছে। এ দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইনডিয়া, আমেরিকা, কানাডা, নেপাল, নেদারল্যান্ডস, জাপান, রাশিয়া, চায়না, মিয়ানমার, কম্বোডিয়া, ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া ও মালয়শিয়া। ওয়াইল্ড লাইফ ইন্সটিটিউট অফ ইনডিয়া, ইনডিয়ার রণথম্বোর ফাউন্ডেশন, ওয়ার্ল্ড নেচার ইন্সটিটিউট প্রভৃতি সংগঠন বাঘ সংরৰণের জন্য সামাজিক সচেতনতা আন্দোলন ও প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছে। ইকোসিসটেম, ফুড ওয়েব এবং পিরামিডের শীর্ষে অবস্থানের কারণে বনের প্রাকৃতিক পরিবেশ এবং ভারসাম্য রৰার উপযোগী পরিবেশ রীতি বজায় রাখার ৰেত্রে বাঘের ভূমিকা অত্যনত্দ গুরম্নত্বপূর্ণ। দুনিয়া জুড়ে বাঘের সংখ্যা অতি দ্রম্নত কমে যাওয়ায় বাঘ অধু্যষিত দেশগুলো তাদের নিজ নিজ দেশে বাঘ সংরৰণ বিষয়ে ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ সরকারও এ বিষয়ে প্রাথমিক কিছু কর্ম উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বাঘকে প্রাকৃতিক পরিবেশ ভারসাম্য রৰার সহায়ক এক ধ্বজাধারী বা পতাকাবাহী প্রজাতি (ঋষধমংযরঢ় ঝঢ়বপরবং) হিসেবে দেখা হয়। সেই জন্য বাঘ সংরৰণের অর্থ কেবল একক প্রজাতি ব্যবস্থাপনা নয়; বাঘ ফ্ল্যাগশিপ প্রজাতি বিধায় ওই প্রতিবেশের অপরাপার সব প্রজাতি এবং তাদের আবাস, চারণ, খাদ্য এবং প্রজনন ৰেত্র সংরৰণের যোগফলই হচ্ছে বাঘ সংরৰণ।

সুন্দরবনের বাঘের সংখ্যা নিরূপণে যেসব গণনা হয়েছে তার বিবরণ




গণনার বছর সংস্থা/লেখক সংখ্যা মনত্দব্য




1971 জার্মান বিজ্ঞানী 350 এ রেকর্ড হচ্ছে বন অফিস ও




হেন্ডরিখ (ঐবহফৎরপযং) স্থানীয় লোকদের তথ্য মতে




3 মাস সুন্দরবনে কাজ করেন




1971 বন বিভাগ 320




1982 বন বিভাগ ও প্রাণিবিদ্যা 450 পায়ের ছাপ দেখে দৰিণ বণ্যপ্রাণী




বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অভয়ারণ্যের 111 বর্গ কিলোমিটার




এলাকায় 15টি বাঘ গণনা করা হয়েছে




1992 বন বিভাগ 359 সুন্দরবনে যারা কাজ করে তাদের তথ্য মতে




1993 ড. কিরতিম তামার 362 350 বর্গ কিলোমিটার জায়গায় পায়ের ছাপ




ঋঅঙ/টঘউচ প্রজেক্ট দেখে সংখ্যা নিরূপিত




ইএউ/84/056




2004 টঘউচ প্রজেক্ট বন 419টি প্রথমবারের মতো বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে




ও পরিবেশ মন্ত্রণালয়ের বাংলাদেশ ও ইনডিয়া একসঙ্গে জরিপ




'বায়োডাইভার্সিটি স্ট্র্যাটোজিক কাজ চালায় যা নির্ভরযোগ্য রিপোর্ট।




অ্যাকশন পস্ন্যানের আওতায়









গেস্নাবাল টাইগার ফোরাম




বিশ্বব্যাপী বাঘের বিপন্নতা লৰ্য করে, বাঘ বিলুপ্তি রোধকল্পে 1994 সালের মার্চ মাসে ইনডিয়ার রাজধানী দিলস্নীতে 'গেস্নাবাল টাইগার ফোরাম' প্রতিষ্ঠিত হয়। এ জিটিএফ বা গেস্নাবাল টাইগার ফোরাম হচ্ছে বাঘ অধু্যষিত এবং বাঘ সংরৰণ বিষয়ে সহায়তাদানকারী দেশগুলোর আনত্দর্জাতিক সংস্থা। এ ফোরাম 4 ধরনের সদস্যপদ প্রদান করেছে :




ক. বাঘ অধু্যষিত দেশ যেমন বাংলাদেশ, ভুটান, কাম্বোডিয়া, চায়না, ইনডিয়া, ইন্দোনেশিয়া, লাওস, মিয়ানমার, নেপাল, উত্তর কোরিয়া, থাইল্যান্ড এবং ভিয়েতনাম।




খ. যে দেশে প্রাকৃতিকভাবে বাঘ বিচরণ করে না, অথচ দেশটি বাঘ সংরৰণ কার্যক্রমে আগ্রহী এবং সহায়তা প্রদান করতে ইচ্ছুক।




গ. বেসরকারি, জাতীয় বা আনত্দর্জাতিক সংস্থা, যারা বাঘ সংরৰণে গুরম্নত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে এবং অবদান রাখছে।




ঘ. সম্মানিত সদস্য, ব্যক্তি বা দলগত পর্যায়ে যারা বাঘ সংরৰণে উলেস্নখযোগ্য অবদান রাখছে।




ইতিমধ্যে বাঘ অধু্যষিত 14টি দেশের প্রায় সবাই এ ফোরামের সদস্যপদ গ্রহণ করেছে। বৃটেন, অস্ট্রেলিয়া, ও আমেরিকার কিছু সংস্থা জিটিএফ বা গেস্নাবাল টাইগার ফোরামে সহায়তাদানকারী দেশ হিসেবে শরিক হয়েছে।




বিশ্ব বন্যপ্রাণী তহবিল (ডড়ৎষফ ডরষফষরভব ঋঁহফ - ডডঋ) এ ফোরামের এক গুরম্নত্বপূর্ণ সদস্য।




বাংলাদেশে বাঘ সংক্রানত্দ গবেষণা




বাংলাদেশে বাঘ সংক্রানত্দ বিষয়ে গবেষণা যা পরীৰা-নিরীৰা এখনো একেবারে প্রাথমিক পর্যায়ে রয়েছে। মূলত ইউনিভার্সিটির ডিগ্রি অর্জনের নিমিত্তে স্বল্প সময়ে মাঠ পর্যবেৰণের নামে কিছু কিছু তথ্য মাঝে-মধ্যে সংগৃহীত হয়েছে। কয়েকবার বাঘের সংখ্যা নির্ণয়েরও উদ্যোগ নেয়া হয়। কিন্তু নিতানত্দই অপ্রতুল সেসব জরিপ বরং ভ্রানত্দ ধারণারই জন্ম দিয়েছে। অপরদিকে, বাঘ শিকারিরা তাদের শিৰার অভিজ্ঞতা বর্ণনার মাধ্যমে আপন দোষ, নৃশংসতা মোচন করে সংরৰণবাদী হয়ে যাওয়ার অপচেষ্টা করে। বাঘ নেই এমন দেশের (যেমন : বৃটেন, আমেরিকা, ইটালি) কিছু সংখ্যক গবেষক ও শিৰক বর্তমানে বাংলাদেশে স্বেচ্ছাসেবক বা ছাত্রের মাধ্যমে তথ্য সংগ্রহের চেষ্টা চালাচ্ছে।




1999 সালের জানুয়ারি মাস থেকে 2000 সালের মার্চ মাস পর্যনত্দ সুন্দরবনে বাঘের বাস্তু সংস্থান (ঊপড়ষড়মু) বিষয়ে একটি গবেষণা কর্মকা- পরিচালনা করা হয়। সুন্দরবনের পূর্ব বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে অবস্থিত কটকা-কচিখালি এলাকায় (20 বর্গ কিলোমিটার) এ গবেষণা চালানো হয়। বাঘের সংখ্যা, পছন্দসই বাসস্থান, খাদ্যাভ্যাস এবং শিকারযোগ্য প্রাণীর বর্তমান অবস্থা যাচাই করাই ছিল উক্ত প্রকল্পের মূল লৰ্য। 'পায়ের ছাপ' পদ্ধতি প্রয়োগে প্রায় 20 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় মোট 4টি বাঘের উপস্থিতি চিহ্নিত করা হয়। ফলে সুন্দরবনের প্রতি 100 বর্গ কিলোমিটার এলাকায় 20টি বাঘের অসত্দিত্ব রয়েছে বলে ধরে নেয়া হয়।




কটকা-কচিখালি এলাকায় বাঘের বাসস্থানকে 6টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। দেখা গেছে, চলাচলের পথ এবং অন্যান্য চিহ্নের ওপর ভিত্তি করে বাঘের পছন্দসই বাসস্থান নিরূপণ করা হয়। শতকরা 42 ভাগ সময় এরা মিঠাপানির কাছাকাছি এলাকায় বাস করে। বাঘের খাদ্যাভ্যাস পরীৰা করার জন্য 'মল বিশেস্নষণ' পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়। সর্বমোট 52টি মূল নমুনা পরীৰা করা হয়। পরীৰার রেজাল্ট থেকে জানা যায়, বাঘের খাবারের শতকরা 70 ভাগ আসে চিত্রা হরিণ থেকে, 15 ভাগ আসে বন্য শূকর থেকে এবং 5 ভাগ বানর থেকে। প্রতি বর্গ কিলোমিটার এলাকায় শিকারযোগ্য প্রাণীর প্রকৃত ঘনত্ব নির্ণয় করা হয় যথাক্রমে 70, 8 ও 16টি চিত্রা হরিণ, বন্যশূকর ও বানর। এছাড়া শিকারযোগ্য প্রাণীর দলীয় সংখ্যা দলীয় ঘনত্ব ও দেহের ওজন (নরড়সধংং) নির্ণয় করা হয়।




জানুয়ারি 1999 জুন 2001 এ সময়ে বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্বের ওপর একটি সমীৰা চালানো হয়। 1999-2000 সালে মোট 6টি বাঘ নিহত হয়। গবেষণায় প্রাপ্ত তথ্য থেকে জানা যায়, বাঘ-মানুষের দ্বন্দ্ব বুড়িগোয়ালিনী এবং স্মরণখোলা বন রেঞ্জ এলাকায় সবচেয়ে বেশি। নিহতদের মধ্যে 44% মৎসজীবী, 36% কাঠুরিয়া এবং 18%, মৌয়াল ছিল।




বাঘ সংরৰণে করণীয়




বাঘ সংরৰণ করার জন্য সরকারের উচিত দীর্ঘমেয়াদি এবং ফলপ্রসূ পদৰেপ গ্রহণ করা। না হয় কয়েক দশকের ভেতরেই বাঘ বলে বাংলাদেশে কোনো প্রাণী থাকবে না। আর বাঘ না থাকলে সুন্দরবনও রৰা করা দুরূহ হয়ে পড়বে। সরকারের যেসব পদৰেপ নেয়া উচিত সেই সঙ্গে সাধারণ জনগণ, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এবং বনরৰা কমর্ীদের করণীয় কাজগুলো এ রকম হতে পারে :




0 বাঘ সংরৰণের জন্য কঠোর আইন প্রণয়ন এবং বাসত্দবায়ন করা। সেই সঙ্গে গণসচেতনতা সৃষ্টি করা।




0 বাঘ অধু্যষিত এলাকার পরিবেশের জন্য ৰতিকর সব কর্মকা- রহিত করা, প্রাকৃতিক সম্পদ আহরণ সীমিত করণ ও বাঘের খাদ্য সংগ্রহে সম্ভাব্য বাধা বা সমস্যাদি লাঘব করা।




0 বাঘের ওপর গবেষণা করার জন্য বিভিন্ন শিৰা প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থার এগিয়ে আসা উচিত।




0 নিয়মিত গবেষণা ও বাঘ শুমারি থেকে প্রাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে সমস্যা সমাধান এবং বাঘ সুষ্ঠুভাবে বেচে থাকার ৰেত্র সৃষ্টি করা।




0 বনজ সম্পদ আহরণ, বৃৰ নিধন, বৃৰ রোপণ, বন্যপ্রাণী শিকার ও পর্যটনের এলাকা আদালাভাবে চিহ্নিত করে সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় পরিচালনা করা।




0 বন্যপ্রাণী রৰায় প্রহরী নিত্যদিনের একটি গুরম্নত্বপূর্ণ কাজ। তাই প্রহরী কর্মসূচি তৈরি, অনুমোদন এবং সেটির যথাযথ বাসত্দবায়ন অত্যনত্দ যত্নের সঙ্গে করা বাঞ্ছনীয়।




0 ডিউটি বই, প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি, অর্থ, অস্ত্র, লোকবল, আয়োজন, বণ্টন এবং সময়সূচি প্রণয়ন। সেই সঙ্গে বনরৰীদের প্রশিৰণের ব্যবস্থা করা।




এসব বিষয়গুলোর ওপর গুরম্নত্বারোপ করলে বাঘের (রয়াল বেঙ্গল টাইগার) অসত্দিত্ব টিকিয়ে রাখা সম্ভব।




বাঘ সংরৰণ করতে না পারলে সুন্দরবনে শুধু মাটিই থাকবে সব গাছপালা স্বল্প সময়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বিশ্বের অন্যতম ম্যানগ্রোভ এবং পৃথিবীর একটি বিশ্ব ঐতিহ্য (ডড়ৎষফ ঐবৎরঃধমব ঝরঃব) বাংলাদেশ থেকে বিদায় নেবে। সুন্দরবনের বাঘ আমাদের জীববৈচিত্র্য সংরৰণ এবং অর্থনৈতিক উন্নতির চাবিকাঠি হতে পারে। একে কেন্দ্র করে অত্যনত্দ আকর্ষণীয় ইকোটুরিজম প্রকল্প গড়ে তোলা যেতে পারে। তাই বাঘ সংরৰণ এবং দেশের ঐতিহ্যকে রৰার জন্য আমাদের এখন থেকেই ভাবা উচিত।




তথ্যসূত্র :




01. বাংলাপিডিয়া ষষ্ঠ খ-, এশিয়াটিক সোসাইটি বাংলাদেশ, 2000।




02. বাংলার বাঘ, আইইউসিএন_ দি ওয়ার্ল্ড কনজারভেশন ইউনিয়ন, বাংলাদেশ কান্টৃ অফিস, 2003।




03. প্রফেসরস কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, নভেম্বর, 2004।




04. বাঘ শুমারি বিষয়ে প্রকাশিত সংবাদপত্র ডেটা ও নিবন্ধ।










সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কর কাজ নাহি লাজ

লিখেছেন বাকপ্রবাস, ১৬ ই মে, ২০২৪ দুপুর ১২:৩৪


রাফসান দা ছোট ভাই
ছোট সে আর নাই
গাড়ি বাড়ি কিনে সে হয়ে গেছে ধন্য
অনন্য, সে এখন অনন্য।

হিংসেয় পুড়ে কার?
পুড়েপুড়ে ছারখার
কেন পুড়ে গা জুড়ে
পুড়ে কী জন্য?

নেমে পড় সাধনায়
মিছে মর... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাঁর বোতলে আটকে আছে বিরোধী দল

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



সেই ২০০৯ সালে তিনি যে ক্ষমতার মসনদে বসলেন তারপর থেকে কেউ তাঁকে মসনদ থেকে ঠেলে ফেলতে পারেনি। যারা তাঁকে ঠেলে ফেলবে তাদের বড়টাকে তিনি বোতল বন্দ্বি করেছেন।... ...বাকিটুকু পড়ুন

নতুন গঙ্গা পানি চুক্তি- কখন হবে, গ্যারান্টি ক্লজহীন চুক্তি নবায়ন হবে কিংবা তিস্তার মোট ঝুলে যাবে?

লিখেছেন এক নিরুদ্দেশ পথিক, ১৬ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৬


১৬ মে ঐতিহাসিক ফারাক্কা দিবস। ফারাক্কা বাঁধ শুষ্ক মৌসুমে বাংলাদেশে খরা ও মরুকরণ তীব্র করে, বর্ষায় হঠাৎ বন্যা তৈরি করে কৃষক ও পরিবেশের মরণফাঁদ হয়ে উঠেছে। পানি বঞ্চনা এবং... ...বাকিটুকু পড়ুন

কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?

লিখেছেন জিএম হারুন -অর -রশিদ, ১৬ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:৩৪



কেউ কি আমার বন্ধু শাহেদের ঠিকানা জানেন?
আমার খুবই জরুরি তার ঠিকানাটা জানা,
আমি অনেক চেষ্টা করেও ওর ঠিকানা জোগাড় করতে পারছিনা।

আমি অনেক দিন যাবত ওকে খুঁজে বেড়াচ্ছি,
এই ধরুণ, বিশ-একুশ বছর।
আশ্চর্য্য... ...বাকিটুকু পড়ুন

আজকের ব্লগার ভাবনা:কথায় কথায় বয়কট এর ডাক দেয়া পিনাকীদের আইডি/পেইজ/চ্যানেল বাংলাদেশে হাইড করা উচিত কি? ব্লগাররা কি ভাবছেন?

লিখেছেন লেখার খাতা, ১৭ ই মে, ২০২৪ রাত ১২:১৩



অপূর্ব একজন চমৎকার অভিনেতা। ছোট পর্দার এই জনপ্রিয় মুখকে চেনেনা এমন কেউ নেই। সাধারণত অভিনেতা অভিনেত্রীদের রুজিরোজগার এর একটি মাধ্যম হইল বিজ্ঞাপনে মডেল হওয়া। বাংলাদেশের কোন তারকা যদি বিদেশী... ...বাকিটুকু পড়ুন

×