somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আমার ইরানবেলা (কয়েন সংগ্রহের নেশা 1)

১১ ই মার্চ, ২০০৭ সকাল ৮:০৯
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

যে সময়টার কথা বলছি তখন অনেক সুবোধ ছিলাম , নিয়ম মেনে প্রতিদিন চার ওয়াক্ত নামাজ পড়তাম ,একটা মিথ্যা বলার আগে পাচ বার ভাবতাম, শেষমেষ হয়তো আর বলাই হতো না । বয়েসটাও কম ছিল , সাত পার হয়নি ।মাঝেমাঝেই নতুন নতুন শখ জেকে বসতো, সেসবের পেছনে আমার সবকিছু উজাড় করে দিতে কার্পণ্য ছিল না , বাবার ভয়ে বেশির ভাগ স্বপ্নডানা মেলতো না । থাকতাম পাহাড় ঘেরা Hospital এর Quarter এ , ইরাক ঘেষে থাকা ইরানের Kermanshah province এ

এর মাঝে হঠাৎ একদিন দেশ থেকে ছোটো চাচার চিঠি , চিঠির নিচে staple করা দোয়েল পাখির ছবি সহ একটা দুই টাকার নোট । ইরানি নোটগুলোতে রঙের দেখা পাওয়া যেত কম, কমলা গোলাপী মেশানো নোট টা হাতে নিয়ে খুশির অন্ত ছিল না , যত্ন করে নোট টা রেখে দিতাম ।

নতুন নেশাটা ভালভাবেই আষ্টেপৃষ্ঠে আমাকে বেধে ফেলেছে ।পুজি বলতে দুই টাকার একটা নোট , আর আমার চোখে সব কটা দেশের নোট , কয়েন জমানোর স্বপ্ন। বনধুদের অনেকেই তখন আমার কাছ থেকে নোটটা নেবার চেষ্টা করছে। আমাদের একটা চাবির রিং ছিল । শক্ত plastic এর কয়েকটা কুয়েতী নোট এর replica । একদিন সবার অগোচরে সব গুলো নোট রিং থেকে খুলে নিলাম । আমার চেয়ে বয়েসে বড় কয়েকটা ছেলেকে দেখানোর পর বুঝলাম নোট গুলো ভাল বিকোবে ।

হঠাৎ করে যুধেধর ডামাডোল বেজে উঠলো , উপসাগরীয় যুধধ । ইরানীরা বলতো তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ । একদিকে ইরাক , অন্যদিকে 34 দেশের alliance । সীমান্ত পাড় হয়ে ইরাকী কুর্দী শরণার্থী রা আসতে শুরু করলো । এর মাঝে একদিন আমার ছোট ভাইয়ের খেলার সাথীর কাছে একটা ইরাকী কয়েন দেখলাম । ছেলেটি আমার চাইতেও 1 বছর ছোট । সারা বিকেল ছেলেটাকে পটানোর পর কয়েনটা আমার হাতে আসল , বিনিময়ে দিলাম তিতাফ( সুস্বাদু এক ধরণের কেক ) কেনার জন্য আমার জমানো 5 তুমান । আমাদের district টা বিদেশীদের দিয়ে ভরে গেছে ......একদিকে ইরাকীরা তো আছেই , অন্যদিকে স্পেন , জার্মানী, ফ্রান্স , ডেনমার্ক , হাংগেরীয় , বেলজীয় , ডাচ আর নরওয়েজীয় ত্রাণ নিয়ে ডাক্তার , নার্স,volunteer রা ( আমাদের দেশের বিপর্যয়ে এত মহাযগঞ কখনও কি আমরা দেখেছি ?? )। হসপিটালে প্রতিদিন ইউরোপীয়দের ভীড় লেগেই থাকত ।কথা বলব , বলব করেও সাহস পাচ্ছিলাম না । একদিন সাহস করে কথা বললাম , বুঝলাম লোকটা english জানে না , ইশারা ইংগিতে জানলাম ইটালী থেকে এসেছে । তখন নিজেকে অনেক বড় মনে হত , কিন্তু এখন ভাবি 7 বছরের এক বিদেশী পুচকের সাথে লোকটা ইশারা ইংগিতে এতক্ষণ সময় কি ভেবে যে দিয়েছিল ? আমার plan ছিল একটা কয়েন চাইবো , কিন্তু লোকটা ভাষা বুঝেনা , শখের কথাটাও বুঝানো যাবে না , হয়ত ভেবে বসবে ভিক্ষা চাইছি , হসপিটালের ডাক্তারের ছেলে হয়ে এমনটা করলে আব্বুর মাথা কাটা যাবে । এরপর অনেকদিন আর কারো সাথে কথা বলতে সাহসে কুলোয়নি । এক বিকেলে খেলতে গিয়ে দেখি আব্বুর সাথে এক বিদেশী ইংরেজীতে কথা বলছে , আব্বু চলে আসার পর গিয়ে বললাম "আপনি কোন দেশ থেকে এসেছেন ?" ......... ফ্রান্স , ডাক্তারের ছেলে পরিচয় পেয়ে চকলেট দিতে যাচ্ছিল , সুযোগ পেয়ে সাহস করে একটা কয়েন চাইলাম ........ মানিব্যাগ থেকে একটা এমিরেটসের 1 দিরহাম বের করে দিল , ফ্রাংকের বদলে দিরহাম পেয়ে একটু কম খুশি হলাম , তারপরও সেই রাতটা কয়েন দেখতে দেখতেই কেটে গেল ......

আম্মু একদিন ব্যাগ খুলে দেখল ........ চাবির রিং থেকে কুয়েতী দিনারের রেপ্ললিকা গুলো খুলে নিয়েছে কেউ , আমার কাছে জানতে চাইতেই স্বীকার করে নিলাম , কিন্তু এর মাঝেই এক ছেলে ইসরায়েলী টাকা দেবে বলে , আমার কাছ থেকে নোটগুলো নিয়ে ঘুরাচ্ছে । কত বিকেলের খেলা মিস করে ইসরায়েলী টাকার সন্ধানে গিয়েছি , সেদিন বিকেলে গিয়ে বললাম ,......লাগবে না টাকা , আমার নোট ফেরত দাও । লোভ দেখাল পরের দিনই হাতে পেয়ে যাব , কিন্তু বাসার কথা ভেবে ফেরত নিয়ে আসতে চাইলাম । আমার স্মৃতি রাখতে চায় ............এমন কিছু আবেগময় কথা বলে একটা নোট রেখে দিল । মাঝে মাঝে মনে হয় কি বোকা ছিলাম , ইরানে বসে ইসরায়েলী টাকা সংগ্রহ করা তো অসম্ভব , আমার চাইতে 2/3 বছরের বড় হয়ে কি ধোকাই না দিয়েছিল ........ আবার রাগ হয় ..........কতগুলো মূল্যবান বিকেল খেলা ছেড়ে , এ কাজে নষ্ট করেছি .............. আবার ভাবি ........ তবুও ভাল , আরেকবার যদি দিন গুলো ফিরে পেতাম ..............
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্টে যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×