somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

*** কোয়ান্টাম মেকানিক্স ও জ্যোতির্বিজ্ঞান ***

২১ শে জানুয়ারি, ২০১৩ রাত ২:২৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

আজ কথা বলি কোয়ান্টাম মেকানিক্স এবং জ্যোতির্বিজ্ঞান নিয়ে, এর কিছু সাধারন বিষয় নিয়ে, যার একটি হল "ব্ল্যাক হোল বা কৃষ্ণ গহবর"।

ব্ল্যাক হোল কি?

এমন কিছু তারকা বা নক্ষত্র আছে, যাদের অস্বাভাবিক আকার, ভর ও ঘনত্ব থাকে, আর এর জন্যে এই সব তারকা থেকে নির্গত আলো বাইরে আসতে পারে না বলে তারকা টি কে কালো দেখায় বলে আমরা একে কৃষ্ণ গহ্বর বা ব্ল্যাক হোল বলে চিনি।



সহজ ভাষায় বলতে গেলে - ব্ল্যাক হোল মহাশূন্যে এমন একটি জায়গা যেখানে যার অভিকর্ষ শক্তি এতই প্রবল যে আলো ওখান থেকে বের হতে পারে না। এই অভিকর্ষীয় শক্তির প্রভাবে বস্তু বা ম্যাটার অই জায়গায় খুব সংকুচিত হয়ে একটি ক্ষুদ্র জায়গায় অবস্থান করে! আর এই ঘটনা তখনই ঘটে যখন একটি তারকার জীবন কাল শেষ হয়ে যায়।
যেহেতু অই জায়গা থেকে কোন আলো বের হতে পারে না, তাই আমরাও ব্ল্যাক হোল কে দেখতে পারি না। তা অদৃশ্য। কিছু বিশেষ স্পেস টেলিস্কোপ ব্ল্যাক হোল কে খুঁজে বের করতে পারে। যখন কোন তারকা এমন ভাবে আচরন করে অর্থাৎ তার আয়ুকাল শেষ হয়ে আসে এবং ব্ল্যাক হলে পরিনত হতে যাচ্ছে, তখন এই বিশেষ যন্ত্রপাতি সম্বলিত টেলিস্কোপ তাকে চিহ্নিত করতে সক্ষম হয়।


কতো বড় এই ব্ল্যাক হোল?

ব্ল্যাক হোল ছোট হতে পারে আবার বড়ও হতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে ক্ষুদ্রতম ব্ল্যাক হোল একটি পরমাণুর সমান হতে পারে। এই জাতিও ব্ল্যাক হোল গুলো অনেক ক্ষুদ্র কিন্তু তাদের এক একটার ভর হতে পারে বিশাল কোন পর্বতের সমান। ভর হচ্ছে বস্তুর পরিমান অথবা একটি অবজেক্ট এ অবস্থিত মোট পদার্থ বা বস্তুর উপাদান।



অন্য এক ধরনের ব্ল্যাক হোল কে বলা হয় "স্টেলার" বা "নাক্ষত্রিক"। এর ভর আমাদের সূর্যের ভর এর চেয়েও ২০ গুন বেশি হতে পারে। খুব সম্ভবত অনেক অনেক বেশি ভরের ও নক্ষত্র রয়েছে পৃথিবীর ছায়াপথে। আর পৃথিবীর এই ছায়াপথ কে বলা হয় "মিল্কি ওয়ে"।
সব চেয়ে বৃহৎ ব্ল্যাক হোল কে বলা হয় "সুপারমেসিভ"। এই জাতিয় ব্ল্যাক হলের ভর হয় ১ বিলিয়ন সূর্যের ভর এর ও অধিক। জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেন যে প্রতি টি বৃহৎ গ্যালাক্সি বা ছায়াপথের কেন্দ্রে এই রকম একটি সুপারমেসিভ ব্ল্যাক হোল থাকে। আর যে সব ছায়াপথের কেন্দ্রস্থলে এই ব্ল্যাক হোল থাকে তাকে বলা হয় "Sagittarius A" । এর ভর প্রায় ৪ বিলিয়ন সূর্যের ভরের সমান এবং একে একটি সুবিশাল বল এর ভিতর সেট করা যাবে, এমন বল যা প্রায় আমাদের পৃথিবীর মতো কয়েক মিলিয়ন প্রিথিবি ধারন করতে সক্ষম।


ব্ল্যাক হোল-এর জন্মঃ

বিজ্ঞানিদের মতে- সব চেয়ে ছোট ব্ল্যাক হোল টির জন্ম ঠিক এই মহাবিশ্বের জন্মের সময়।
আর স্টেলার ব্ল্যাক হোলের গঠিত হয়ে যখন বিশাল একটি তারকার কেন্দ্র নিজে থেকেই তার উপর পতিত হয় বা আপনা আপনি সঙ্কুচিত হতে থাকে। আর এই পর্যায়ে তার থেকে জন্ম নেয় "সুপারনোভা"। "সুপারনোভা" হলো বিস্ফোরিত তারার একটি অংশ যা মহাশূন্যে ভেঙ্গে পড়ে।



আর সহজ করে বলি- একটি নক্ষত্রের নির্দিষ্ট জালানি নিঃশেষ হয়ে গেলে এর মৃত্যু ঘটে। যতক্ষণ পর্যন্ত এর আভ্যন্ত্যরিন হাইড্রোজেন গ্যাস অবশিষ্ট থাকে, ততক্ষণ পর্যন্ত এর ভিতরে নিউক্লিয়ার বিক্রিয়া চলতে থাকে। হাইড্রোজেন শেষ হয়ে গেলে এর কেন্দ্রিও মূল বস্তু সঙ্কুচিত হতে থাকে। কিন্তু এর বাহ্যিক অংশ তখনও প্রসারিত হতে থাকে। এমন পর্যায়ে যখন নক্ষত্রটির ভর পাঁচ সৌর ভর এর মধ্যে থাকে, তখন সঙ্কোচন এর সময় এর বহিঃস্থ আস্তরন ছুড়ে ফেলে অত্তাধিক উজ্জ্বল হয়ে উঠে। যাকে আমরা "সুপারনোভা" বলে চিনি।
ধারনা করা হয়- ছাপথের জন্মের সময় এই সুপারনোভার সৃষ্টি।


ব্ল্যাক হোল যদি ব্ল্যাক অর্থাৎ কালো হয়, তাহলে বিজ্ঞানিরা কিভাবে তা দেখতে পান?

সাধারন ভাবে একটি ব্ল্যাক হোল কে দেখা প্রায় অসম্ভব কারন এর অতি শক্তিশালী অভিকর্ষীয় শক্তি এর সব টুকু আলো এর কেন্দ্রের দিকে টানে। কিন্তু এর আসেপাশের তারকা এবং গ্যাস কিভাবে এর দ্বারা প্রভাবিত হয় বা হচ্ছে বিজ্ঞানীরা এটা দেখতে পারেন। যে সব তারকারা ব্ল্যাক হোল কে ঘিরে উড্ডয়মান অথবা ঘূর্ণ্যমান, গবেষক রা সেই সব তারকাদের উপর স্টাডি করতে পারেন।
যখন একটি ব্ল্যাক হোল ও তারকা পরস্পরের খুব কাছাকাছি আসে, তখন অনেক উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন আলো উৎপন্ন হয়। এই ধরনের আলো মানব চক্ষে দেখা যায় না। বিজ্ঞানীরা স্যাটেলাইট এবং কিছু বিশেষ ক্ষমতা সম্পন্ন টেলিস্কোপ ব্যবহার করেন এই উচ্চ ক্ষমতার আলো কে পর্যবেক্ষণ করতে।


ব্ল্যাক হোল কি পৃথিবী তে বিপর্যয় বা ধ্বংস সৃষ্টি করতে পারে?

ব্ল্যাক হোল মোটেও স্পেস বা মহাশুন্যে ভ্রমন করে না কোন তারকা, চাঁদ বা গ্রহ কে তার শিকার বানাতে। আর পৃথিবীও কোন দিন ব্ল্যাক হলে গিয়ে পতিত হবে না কারন, কোন ব্ল্যাক হোল কিন্তু পৃথিবীর সৌরজগতের এত টা কাছাকাছি নয়।
যদি একটি সূর্যের সমান ভরের একটি ব্ল্যাক হোল সূর্যের জায়গায় প্রতিস্তাপিত হয়, তবুও নয়। কোন কোন ব্ল্যাক হলের ভর সূর্যের সমতুল্য হতে পারে। তখনও কিন্তু পৃথিবী এবং অন্যান্য গ্রহ গুলো ও কিন্তু ওই ব্ল্যাক হলে কে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান থাকবে, যেমন টা থাকতো পৃথিবী কে কেন্দ্র করে।
আর সব চেয়ে মজার কথা হল, আমাদের সূর্য কিন্তু কখনই একটি ব্ল্যাক হলে পরিণত হবে না।
কেন?
কারন সূর্য তত টা বিশাল নয় যত টা প্রয়োজন হয় একটি তারকার ব্ল্যাক হলে পরিণত হতে।


-------------------------------------------------------------------------------------

আজ এ পর্যন্তই।
ভালো থাকা হোক সবার, নিরন্তর!

সর্বশেষ এডিট : ০৩ রা মার্চ, ২০১৩ ভোর ৪:১২
৫টি মন্তব্য ৫টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

শাহ সাহেবের ডায়রি ।। সমাধান দিন

লিখেছেন শাহ আজিজ, ১৯ শে মে, ২০২৪ সন্ধ্যা ৭:৩১




সকালে কন্যা বলল তার কলিগরা ছবি দিচ্ছে রিকশাবিহীন রাস্তায় শিশু আর গার্জেনরা পায়ে হেটে যাচ্ছে । একটু বাদেই আবাসিক মোড় থেকে মিছিলের আওয়াজ । আজ রিকশাযাত্রীদের বেশ দুর্ভোগ পোয়াতে... ...বাকিটুকু পড়ুন

=নিছক স্বপ্ন=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ৯:৪৮



©কাজী ফাতেমা ছবি
তারপর তুমি আমি ঘুম থেকে জেগে উঠব
চোখ খুলে স্মিত হাসি তোমার ঠোঁটে
তুমি ভুলেই যাবে পিছনে ফেলে আসা সব গল্প,
সাদা পথে হেঁটে যাব আমরা কত সভ্যতা পিছনে ফেলে
কত সহজ... ...বাকিটুকু পড়ুন

একদম চুপ. দেশে আওয়ামী উন্নয়ন হচ্ছে তো?

লিখেছেন তানভির জুমার, ১৯ শে মে, ২০২৪ রাত ১০:৫৯



টাকার দাম কমবে যতো ততোই এটিএম বুথে গ্রাহকরা বেশি টাকা তোলার লিমিট পাবে।
এরপর দেখা যাবে দু তিন জন গ্রাহক‍কেই চাহিদা মতো টাকা দিতে গেলে এটিএম খালি। সকলেই লাখ টাকা তুলবে।
তখন... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে গরু দুধ দেয় সেই গরু লাথি মারলেও ভাল।

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ২০ শে মে, ২০২৪ রাত ১২:১৮


০,০,০,২,৩,৫,১৬, ৭,৮,৮,০,৩,৭,৮ কি ভাবছেন? এগুলো কিসের সংখ্যা জানেন কি? দু:খজনক হলেও সত্য যে, এগুলো আজকে ব্লগে আসা প্রথম পাতার ১৪ টি পোস্টের মন্তব্য। ৮,২৭,৯,১২,২২,৪০,৭১,৭১,১২১,৬৭,৯৪,১৯,৬৮, ৯৫,৯৯ এগুলো বিগত ২৪ ঘণ্টায়... ...বাকিটুকু পড়ুন

ইরানের প্রেসিডেন্ট কি ইসরায়েলি হামলার শিকার? নাকি এর পিছে অতৃপ্ত আত্মা?

লিখেছেন ...নিপুণ কথন..., ২০ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯


ইরানের প্রেসিডেন্ট হেলিকপ্টার বিধ্বস্ত হয়ে নিহত!?

বাঙালি মুমিনরা যেমন সারাদিন ইহুদিদের গালি দেয়, তাও আবার ইহুদির ফেসবুকে এসেই! ইসরায়েল আর।আমেরিকাকে হুমকি দেয়া ইরানের প্রেসিডেন্টও তেমন ৪৫+ বছরের পুরাতন আমেরিকান হেলিকপ্টারে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×