"হেথা হতে যাও পুরাতন
হেথায় নূতন খেলা আরম্ভ হয়েছে"।
পুরনো দিনের কথায় আমি নিজে বড্ডো স্মৃতিকাতর হয়ে যাই। কত কথাই ঘুরপাক খায় মনের ভেতর। কথাগুলো বলার জন্য বারবার মোচড় মারে মনের অন্দরমহলে। নীরবে বলি, অপেক্ষা করো। সময় হয়নি সব গল্প বলার। তার চেয়ে তাকিয়ে দেখো ফেলে আসা বর্ণালী দিনগুলোর কথা।
হঠাৎ আজকে খুব ছোটবেলার রোদেলা বৃস্টির বিকেল বেলার কথা মনে পড়ছে। ফেলে আসা স্মৃতি আর চোখের সামনের পদর্ার সচল ছবির মধ্যে একটা অদৃশ্য যোগসূএ খুঁজে পাই। খুব মনে পড়ছিল, এক পশলা বৃস্টি হয়ে রৌদ্রস্নাত বিকেলে রংধনুর বিচিএ আলোর সিঁড়ির দিকে তন্ময় হয়ে থাকতো আমার দৃস্টি। অবাক বিস্ময়ে তাকিয়ে দেখতাম সেই সিঁড়ি করে বোধহয় রূপকথার রাজ্যে যাওয়া যায়। সকল ভাবনা রংধনুকে আবৃত করে থাকতো। আবার এতো বছর পর মনে হয় রংধনু দেখছি। মনে হয়, এবার বোধ হয় সন্ধ্যা আসবে না। বিকেল ফুরোবে না। এরকম আলোতে চলতে থাকবে আমাদের পথচলা। এরকম ভাবতে ভাবতে একসময় সন্ধ্যা চলে আসতো। বাসায় ফিরে যাওয়ার তাড়া শুনতাম। ব্যস্ত কিশোররা ত্রস্ত হাতে নাটাই টেনে ঘুঁড়ি নিয়ে আসতো হাতে। সাঙ্গ হতো খেলা। শেষ হতো সকল আনন্দ আর ব্যস্ততা। পরের দিনের পড়ার হিসেব মিলাতে মিলাতে রাত হয়ে যেত। অংক না মেলার কস্ট ও আতঙ্ক মুখাবয়বে ফুটে উঠতো। সেই ভয়ার্ত চেহারা এড়াতো না অভিভাবকদের সতর্ক দৃস্টি। একসময় তাদের শাসনও মনে হতো দু:শাসন!!!
অবসন্ন বিকেল বেলায় জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে দেখি, মাঠটা আগের মতোই সবুজ। ব্যস্ত শিশু কিশোরদের ভীঁড়। তাদের চঞ্চল ছুটোছুটি। একদিন এদেরকেও এই মাঠ ছেড়ে দিতে হবে নতুনদের জন্য। রবি ঠাকুর আবারও উদ্ধার করবে পুরনোদের। কবি, মুছে দিতে চান পুরনোদের নাম। সেখানে যোগ দিবে নতুন নতুন নাম। কবিরা কি সত্যি ভবিষ্যত দ্রস্টা? রবি ঠাকুর নবীনদের বন্দনায় পংক্তি সাজান:
"আয় রে নূতন, আয়, সঙ্গে করে নিয়ে আয়
তোর সুখ তোর হাসি গান।
ফোটা নব ফুলচয়, ওঠো নব কিশলয়,
নবীন বসন্ত আয় নিয়ে।
যে যায় সে চলে যাক _ সব তার নিয়ে যাক,
নাম তার যাক মুছে দিয়ে"
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০