somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

শকুনের জায়গা চিরদিনই ভাগাড়ে

০৬ ই মার্চ, ২০০৭ বিকাল ৫:১৫
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমরা কি ভাগাড়ের শকুন নাকি সৃষ্টির সেরা প্রাণী মানুষ? কারো বাড়ীতে আগুন লাগলে বা কোন দুর্ঘটনা ঘটলে আমরা কি ধেই ধেই করে নাচবো আর শকুনের মতো অপেক্ষা করবো কখন পোড়া মাংশে ভাগ বসানো যায়! অনেকেই হয়তো তার জন্যেই অপেক্ষা করে। আত্মার উৎকর্ষতায় তারা উপরে ওঠার চাবিকাঠি খোজে না, আত্মসমালোচনার ধারে কাছেও তাদের চোখ পড়ে না। তারা অন্যের ঘাড়ে ভর দিয়েই ওঠে দাড়ানোর পথ খোঁজে। তাদের নির্লজ্জতা দেখে অবাক হতে হয়, ওদের মানবতা বোধের প্রতি ঘৃণা জন্মায় আমার।

কথাটি বল্লাম এই ব্লগেরই কিছু ব্লগারদের চিন্তাভাবনার বহর দেখে। এরা ধরে বসে আছে, পাশচাত্য দেশগুলো সভ্যতা নানা কারণে ধ্বংসের মুখে। এ ধ্বংসের একটা কাল্পনিক ছবি একে তারা এখন পাছার কাপড় তুলে নর্তন কুন্দন শুরু করেছেন। অচিরেই তারা ধীরে ধীরে ইউরোপ দখল করবেন, আমেরিকা দখল করবেন। একসময় ইওরোপ, আমেরিকা বাংলাদেশ হবে, আফগানিস্তান হবে, ইরান হবে। ওনারা সেই দেশে বসে বসে ধর্মপ্রচার করবেন। না না ধর্ম প্রচারের কথা হয়তো ভুল বললাম। তখন তো আর ধর্মপ্রচার বাহুল্য মাত্র! তখন তো সারা পৃথিবীই মুসলিম। তখন ধর্মপ্রচার লাগবে না, ওনারা তখন কোমর বেধে ধর্মের উৎকর্ষে মনযোগী হবেন, পাছায় কাপড় থাকুক বা না থাকুক। শকুনদের পাছায় কাপড় লাগে নাকি? মাথায় টুপি থাকলেই হলো।

ওনারা পড়শোনা করেছেন। কম্পিউটর নিয়ে কাজকর্ম করেন। ইউরোপ আমেরিকা থেকে যেসব প্রোগ্রামগুলো আসে, তার চোরাই কপি করে নিজেদের বিদ্যা শানিত করেন। ওনাদের কথা কি ফেলে দেয়া যায়? তাই ওনাদের পয়েন্টগুলো নিয়ে একটু একটু আলোচনায় আসছি।

শকুনদের দর্শানো কারণ ১:
পাশ্চাত্য বিশ্বে শিশুজন্মের হার কমে যাচ্ছে। বিবাহিত বা অবিবাহিত দম্পতিরা সহজে আর সন্তানের বাবা মা হতে চাননা। সুতরাং জনসংখ্যা কমে যাচ্ছে। তাতে ধ্বংসের মুখোমুখি তাদের সভ্যতা, সমাজ আর সমাজ গড়ার কারিগর। সে সুযোগে একদিন ওনারা গিয়ে সে সমাজ দখল করবেন। সে দেশগুলো দখল করে ইউরোপ আমেরিকার উপর ছড়ি ঘোরাবেন। সে আশায় তারা এখনই হাতপালিশ, নাকপালিশ, দাঁতপালিশ শুরু করেছেন।
মানুষের উত্তর ১:
এটা সত্য, পাশ্চাত্য দেশে জন্মহার আমাদের দেশের চেয়ে কম। সাধারণভাবে এরা যখন একটি শিশুর জন্ম দেয়, তার আগে ভেবে নেয়, সে শিশুটিকে পৃথিবীর আলো দেখানোর আগে তারা মানসিক ও আর্থিকভাবে কতটুকু প্রস্তুত। আঠারো বছর অবধি অনেক যত্ন, অনেক সহনশীলতা দিয়ে সে শিশুটিকে ধীরে ধীরে বড় করে তোলে তারা। এরই মাঝে বাবা-মায়ের প্রত্যক্ষ সহযোগীতায় আত্মিক, সামাজিক ও আর্থিক প্রস্তুতির অনেকগুলো পথ পেরুতে হয় শিশুটিকে। তারপর বাবামায়ের সহযোগীতা প্রতক্ষ্য থেকে পরোক্ষ্য রূপ নিতে থাকে। এরই মাঝে শিশুটি একজন পূর্নবয়স্ক মানুষ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার সমাজকে কিছু দেবার ক্ষমতা অর্জন করে।

আমরা আমাদের দেশে বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই কোন চিন্তাভাবনা না করেই একটি শিশুর জন্ম দিই। শিশুটির আত্মিক, সামাজিক ও আর্থিক প্রস্তুতির সিংহভাগ (প্রায় একশোভাগ) নির্ভর করে বাবা মায়ের আর্থিক ক্ষমতার উপর। যাদের জন্ম বস্তিতে, কোন অলৌকিক কিছু না ঘটলে তাদেরকে বাকী জীবন বস্তিতেই কাটাতে হয়। বস্তিবাসীদের শিক্ষার প্রথম পাঠ আস্তাকুড়ে ময়লা কুড়োনো দিয়ে শুরু হয়। আর সোনার চামচ মুখে যাদের জন্ম, তারাও সে অনুযায়ীই বড় হয়।

তারপরও বড় হওয়ার পথে দুই সমাজেই ভাল মন্দ দুটো দিকই থাকে। সেটা আমরা যারা উচু মধ্যবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত ঘরে জন্ম নিয়েছি, তারাই বিচার করার ক্ষমতা রাখি। নিম্নবিত্তদের জন্যে আমাদের সমাজে মন্দ দিক ছাড়া আর কোন খোলা পথ আছে বলে আমার জানা নেই। তবে অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা ও পরিকল্পনার মাঝে পাশ্চাত্যের একটি শিশুর বড় হবার কারণে অনেক সময়েই ওদের মাঝে এক যান্ত্রিকতার প্রভাব পড়ে, যা আমার ভাল লাগে না। তবে তা একটা জাতির ধ্বংসের কারণ হতে পারে, এমনটি ভাবার মতো বুদ্ধিহীন বোধ আমার ভেতরে আসে নি। এখানে যাটের দশকে হিপ্পি আন্দোলনের সময় শিশুজন্মহার কমে যায় বেশ। তার প্রভাব এখন আর না থাকাতে শিশুজন্মহার বেড়েছে অনেকখানি।

এখানে বাবা মায়েদের শিশুদের জন্যে একটা বিশেষ বয়েস অবধি শিশুদের জন্যে অনুদান দেয়া হয়। এর পেছনে জন্মহার বাড়ানোর জন্যে সরকারের দাতার ভুমিকা যতখানি, তারচেয়ে অনেক বেশী সরকারের অর্থনৈতিক দ্বায়িত্ববোধ। প্রতিটি কর্মজীবিকেই বিভিন্ন খাতে বেশ বিরাট অংকের ট্যাক্স দিতে হয় সরকারকে। এর বিরাট একটা অংশ ব্যাবহার করা হয় সমাজের সুবিধাহীন সদস্যদের নুন্যতম সুবিধাভোগীদের আওতায় আনা। এর সুবাদে অনেক গরীব বাবামায়ের সন্তানসন্ততিরাও তাদের শিক্ষার সুযোগে সমাজে প্রতিষ্ঠিত হবার সুযোগ পায়। আমাদের দেশের মতো বস্তিতে জন্ম নিয়ে সারাজীবন বস্তিতে কাটাতে হয়না। তাছাড়া আজকের শিশুরাই হবে আগামী দিনের বৃদ্ধদের পেনশনের উৎস। সেজন্যে যাতে এখনকার শিশুরা যাতে ভবিস্যতে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তারই এক পরিকল্পিত পথে এগুতে চায় এখানকার অর্থনীতি। যারা বেকার, তাদের জন্যে এই ট্যাক্স থেকেই বেকার ভাতা দেয়া হয়। তার অর্থ কি এই যে, বেকারত্বে উৎসাহ দেবার জন্যেই এই ভাতার ব্যাবস্থা করা হয়েছে?

তারপরও বলা যেতে পারে, যতোটা প্রয়োজন তারচেয়ে কম এই জন্মের হার। এর পেছনেও বাবা মায়ের সুদুরপ্রসারী চিন্তা কাজ করে। অনেকেই এই যুদ্ধবিগ্রগবিদ্ধস্ত পৃথিবীতে তাদের সন্তানদের দেখতে চাননা। অনেকে মনে করেন, যথেষ্ট মানুষ রয়েছে এই পৃথিবীতে। তাদের জায়গা করে দেবার জন্যেও নিজেরা বাবা মা হওয়া থেকে বিরত থাকেন। অনেকেই রয়েছেন, যারা নিজেদের জীবনকে উপভোগই করতে চান। তাতে ও সেইসাথে এখানকার শিল্পোন্নতি ও প্রসারের সাথে সাথে হয়তো সুযোগ বেড়েছে আমাদের মতো গরীব দেশের মানুষদের। কিন্তু আমি এতে কোন সমপ্রসারণবাদী চিন্তা না দেখে, এমনি এক ইউরোপীয় সমাজ দেখি, যার সদস্যদের গায়ের রঙ সাদাই নয়, কালো কিংবা পীতও হতে পারে, যাদের ধর্ম শুধুমাত্র খ্রীষ্টানই নয়, মুসলিম, হিন্দু বা ইহুদী, যে কোন ধর্মের হতে পারে।

সেজন্যেই ত্রিভুজের গত পোষ্টে লিখেছিলাম, এত সহজ সাদা কলমে কালিলেপন করে পর্যালোচনা তৈরী করা যায় না। আরো অনেক বেশী ভাবনা তার পেছনে থাকা দরকার। কিন্তু ত্রিভুজ তার স্বভাবশুলভ জায়গায় স্থির দাঁড়িয়ে। ভদ্রলোক তার নিজের জায়গায় ঠ্যায় দাঁড়িয়ে সামান্যও না নড়ে চড়ে খোলা আলোচনা চালিয়ে যেত চান। তারপর আলোচনা খোলে না বলে অন্যদের অভিসম্পাত করেন। কি আর করা! ত্রিভুজের তালগাছ ত্রিভুজেরই থাকুক।

তারপরও শকুনদের উদ্দেশ্যে একটা কঠিন বক্তব্য না রেখে পারছি না। যাই ঘটুক কেন প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যের সমাজে, শকুন জায়গা চিরদিন ভাগাড়েই থাকবে। এর অন্যথা আজ অবধি হয়নি।

শকুনদের দর্শানো অন্যান্য কারণ ধরে আমার উত্তরে এই লেখার আরো কিছু পর্ব আসবে।
চলবে....।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
১১টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

প্রজাতির শেষ জীবিত প্রাণ !

লিখেছেন অপু তানভীর, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১০:৫১



বিবিসির একটা খবর চোখে এল সেদিন । উত্তরাঞ্চলীয় সাদা গন্ডার প্রজাতির শেষ পুরুষ গন্ডারটি মারা গেছে । তার নাম ছিল সুদান । মৃত্যুর সময় তার বয়স ৪৫। বিবিসির সংবাদটা... ...বাকিটুকু পড়ুন

বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটর মধ্যে সে একজন ।।

লিখেছেন সেলিনা জাহান প্রিয়া, ১৩ ই মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৯



আপনারা কতজন Umma Kulsum Popi চেনেন, আমি ঠিক জানি না। আমার পর্যবেক্ষণ মতে, বাংলাদেশে সবচেয়ে ক্রিয়েটিভ এবং পরিমার্জিত কনটেন্ট ক্রিয়েটরদের একজন হলেন উনি। যদি বলি দেশের সেরা পাঁচজন কনটেন্ট... ...বাকিটুকু পড়ুন

হাদিস অস্বীকার করে রাসূলের (সা.) আনুগত্য সম্ভব

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ১৩ ই মে, ২০২৪ দুপুর ২:৪৯



সূরাঃ ৪ নিসা, ৫৯ নং আয়াতের অনুবাদ-
৫৯। হে মুমিনগণ! যদি তোমরা আল্লাহ ও আখিরাতে বিশ্বাস কর তবে তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, আর আনুগত্য কর রাসুলের, আর যারা তোমাদের... ...বাকিটুকু পড়ুন

=কবিতাগুলো যেনো এক একটি মধুমঞ্জুরী ফুল=

লিখেছেন কাজী ফাতেমা ছবি, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৪:২০



©কাজী ফাতেমা ছবি
মনের মাধুরী মিশিয়ে যে কবিতা লিখি
কবিতাগুলো যেনো আমার এক একটি মঞ্জুরী লতা ফুল,
মনের ডালে ডালে রঙবাহারী রূপ নিয়ে
ঝুলে থাকে কবিতা দিবানিশি
যে কবিতার সাথে নিত্য বাস,
তাদের আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০, কিংবা ২/১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, বুঝবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

লিখেছেন সোনাগাজী, ১৩ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:২৭



আপনার পোষ্ট যদি ক্রমাগতভাবে ০ কিংবা ১'টি মন্তব্য পেতে থাকে, তখন খোঁজ নিলে দেখবেন যে, সোনাগাজী সেমি-ব্যানে আছে!

কোন বিষয়ের উপর অনেক মানসম্পন্ন পোষ্ট লিখলেও সামুতে আপনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×