somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

ইমেল-বৃত্তান্ত

০৪ ঠা মার্চ, ২০০৭ রাত ১:২০
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :


আমেরিকার এক বিশাল করপোরেশনের প্রধান নির্বাহীর সাক্ষাৎকার পড়েছিলাম কয়েক বছর আগে। ভদ্রলোক ইমেল সংস্কৃতির ঘোর বিরোধী। বলেছিলেন, মাত্র দশ হাত দূরে বসা একজনকে ইমেল পাঠানোর কোনো মানে হয়! নিজে উঠে গিয়ে বার্তাটি দিতে অসুবিধা কোথায়, তাতে অন্তত মানবিক স্পর্শটি বজায় থাকে। আর যে কথা মুখেই বলা যায়, তা ইমেলে জানানোর দরকার কি? তাঁর মতে ইমেল অলসদের জন্যে এবং তা অপ্রয়োজনীয়, একটি অপচয়বিশেষ।

এই ক'বছরে কর্মকর্তাটি মত বদলেছেন কি না জানি না। না হলেও কিছু এসে যায় না। আজকের পৃথিবীর অনেক মানুষই তাঁর সঙ্গে একমত হবেন না, এ বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া চলে। কর্মক্ষেত্রের কথা মনে রেখেই তিনি কথাগুলি বলেছিলেন বলে ধারণা করি, কারণ এ দেশে এই ধরনের মানুষরা কর্মক্ষেত্র ছাড়া আর কিছু বোঝেন না, বোঝার চেষ্টাও থাকে না।

ইমেলে মানবিক স্পর্শ অনুপস্থিত, এই যুক্তি মানা যায় না। বার্তার প্রেরক এবং গ্রহীতা যন্ত্র বটে। লেখক কিন্তু একজন রক্তমংাসের জ্যান্ত মানুষ এবং প্রত্যেক মানুষই নিজস্ব ভঙ্গি ও ভাষায় বার্তাটি রচনা করেন। ফলে ব্যক্তিমানুষের আলাদা প্রতিচ্ছবি তাতে অবধারিতভাবে থাকে। দ্বিতীয়ত, কর্মক্ষেত্রে মুখের কথার চেয়ে লিখিত বার্তার প্রয়োজন ও গুরুত্ব অনেক বেশি। লিখিত হলে তা নথি হিসেবে সংরক্ষণ করা চলে, ভবিষ্যতে কোনো প্রয়োজনে তাকে উদ্ধার করে আনা যায়। মৌখিক কথোপকথনে তা কীভাবে সম্ভব?

বড়ো কোম্পানির বড়ো কর্তা পছন্দ না করলেও ইমেলের ব্যবহার কিছুমাত্র কমছে না, ক্রমাগত প্রসারিত হচ্ছে তার সীমানা। অদূর ভবিষ্যতে এর দাপট কমার কোনো সম্ভাবনা নেই, যদি না নতুন কোনো প্রযুক্তি তার স্থলাভিষিক্ত হয়। তা অবশ্য হতেই পারে। খুব বেশিদিন আগের কথা নয় যখন ডাকবিভাগ ছাড়া চিঠিপত্র দেওয়া-নেওয়ার আর উপায় কি ছিলো? হাতে হাতে পাঠানো বা বইয়ের পাতার ভাঁজে লুকিয়ে প্রেমপত্র আদান-প্রদানের কথা অবশ্য আলাদা। এখন তার জায়গাও নিয়ে নিচ্ছে ইমেল। দুরু দুরু বুকের সেই রোমাঞ্চ ইমেলে পাওয়া যাচ্ছে কি না, তা আমার পক্ষে জানা সম্ভব নয়। সে বয়স কবেই পেরিয়ে এসেছি। এখন ভাবি, আহা আমাদের সময়ে যদি ইমেল থাকতো! শুনতে পাই, আজকাল এসএমএস কমবয়সীদের খুবই পছন্দের, কিন্তু তা-ও ইমেলের আরেক রূপ।

চিঠি লেখায় আমার ভয়াবহ অনীহার কারণে একদা আমার পিতামাতা ও আর সব পরিচিতজনের প্রবল অনুযোগ ছিলো। তখন আমার মন খারাপের খবর দিয়ে ঢাকা থেকে বগুড়ায় লেখা একটি চিঠি ডাকবাঙ্ েফেলে তার উত্তরের জন্যে অপেক্ষা করতে হতো অন্তত দুই সপ্তাহ। ফলে, আমার মন খারাপে বন্ধুর প্রতিক্রিয়া যখন জানা গেলো ততোদিনে হয়তো আমার মন আর একটুও খারাপ নেই।

সাধারণ ডাকের চিঠিকে আজকাল বলা হচ্ছে স্নেইলমেল (বাংলায় শম্বুক ডাক বলা যায় কি?) বিদু্যৎগতির ডাক, ইলেকট্রনিক মেল বা ইমেল কিন্তু এই অবস্থাটি দূর করে দিয়েছে। এখন ইমেল পাঠিয়ে দিনে দিনে এমনকি তৎক্ষণাৎ উত্তর পাওয়া যাচ্ছে।

মনে আছে, আমেরিকা থেকে 96 সালে আমার পিতাকে প্রথম ইমেল (তাঁর নিজের ইমেল ছিলো না, সেটি ঢাকায় আমার ছোটো ভাইয়ের) পাঠালে তিনি খুবই চমৎকৃত হয়েছিলেন। ইতিহাস বইয়ে পড়েছিলাম, সেই ষোড়শ শতাব্দীতে শেরশাহ ভারতবর্ষে ঘোড়ার ডাক (কেউ রসিকতা করে বলেছিলেন, তার আগে কি ঘোড়া ডাকতো না?) চালু করেছিলেন। দীর্ঘকাল ধরে প্রচলিত ওই শম্বুক ডাক ছিলো বলে 'পোস্টমাস্টার'-এর মতো গল্প রবীন্দ্রনাথের হাতে পাওয়া গিয়েছিলো। পোস্টমাস্টারবাবুটি রতনকে যেমন বলেছিলেন, আজকের ইমেলের জয়যাত্রা রুখতে গেলেও বলা সম্ভব 'তা কী করে হবে'?

ইমেল অনেক ক্ষেত্রে আসক্তির মতো হয়ে ওঠে। এ দেশে এই আসক্তদের বলা হয় ইমেল জাঙ্কি। কী সব লক্ষণ থাকলে কাউকে ইমেল জাঙ্কি বলা যাবে তার একটি তালিকা একবার পেয়েছিলাম, বলা বাহুল্য ইমেলেই। কয়েকটি এখানে তুলে দেওয়া যাক :

1. রাত দুটোর সময় ঘুম থেকে উঠে বাথরুম সেরে বিছানায় ফেরার পথে যখন তোমাকে নতুন ইমেল আছে কি না দেখতে হচ্ছে
2. যখন তুমি ছেলেমেয়েদের নাম রাখছো ইউডোরা (কী আশ্চর্য, আমার মেয়ের নাম ডোরা), মোজিলা বা ডটকম
3. ইন্টারনেটের মোডেম বন্ধ করে দিলে যখন খুব প্রিয়জনের জীবনরক্ষাকারী অঙ্েিজনের প্লাগ খুলে দেওয়ার অনুভূতি হচ্ছে
4. যখন বিমানযাত্রার অর্ধেকটা সময় তুমি ল্যাপটপ নিয়ে ব্যস্ত থাকছো অথচ শিশুপুত্রটিকে তুলে রেখেছো ওভারহেড কম্পার্টমেন্টে
5. বিনা পয়সায় ইন্টারনেট ব্যবহারের সুবিধা পাওয়ার আশায় যখন তুমি আরো বছর দুয়েক বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে যাওয়ার কথা ভাবছো
6. ডায়াল-আপ ইন্টারনেট এখনো যারা ব্যবহার করছে তাদের জন্যে করুণা বোধ করছো
7. যখন প্রতিটি ইংরেজি বাক্যের শেষে ফুলস্টপ দিয়ে নিজের অজান্তেই কম শব্দটি টাইপ হয়ে তাকে ডটকম-এ পরিণত করে দিচ্ছো
8. তোমার কাছে যখন বাথরুমে যাওয়া মানেই ডাউনলোড করা
9. নতুন ইমেল নেই দেখেও তুমি পরমুহূর্তেই আবার ইমেল চেক করছো
10. কোনো ইমেল মেসেজ পাঠ করামাত্র তা তুমি পাঠিয়ে দিচ্ছো কোনো বন্ধুকে।

ব্যক্তিগতভাবে আমার কাছে ইমেলের ক্ষতিকর একটি দিক আছে। কখনো কখনো এমন দিনও যায়, ইমেল বাঙ্ েএকটিও নতুন বার্তা অপেক্ষায় থাকে না। কোনো বন্ধুকে লেখা ইমেলের জবাবটি সময়মতো আসছে না। সেইসব সময়ে নিজেকে কেন যেন খুব অপাংক্তেয়, উপেক্ষিত মনে হয়। মন খারাপ লাগে না! কে বুঝবে?
সর্বশেষ এডিট : ০৪ ঠা মার্চ, ২০০৭ রাত ১:২৬
৮টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

যেকোন বাংগালীর ইন্টারভিউর সময়, 'লাই-ডিটেক্টটর' যোগ করে ইন্টারভিউ নেয়ার দরকার।

লিখেছেন সোনাগাজী, ০৫ ই মে, ২০২৪ বিকাল ৫:০৭



আপনার এনলাকার এমপি, প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী কামাল সাহেব, যেকোন সেক্রেটারী, যেকোন মেয়র, বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান, বিএনপি'র রিজভী, আওয়ামী লীগের ওয়ায়দুল কাদের, আপনার থানার ওসি, সীমান্তের একজন বিজিবি সদস্য, ঢাকার... ...বাকিটুকু পড়ুন

ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করা সকলের দায়িত্ব।

লিখেছেন নাহল তরকারি, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৮:৩৮



এগুলো আমার একান্ত মতামত। এই ব্লগ কাউকে ছোট করার জন্য লেখি নাই। শুধু আমার মনে জমে থাকা দুঃখ প্রকাশ করলাম। এতে আপনারা কষ্ট পেয়ে থাকলে আমি দায়ী না। এখনে... ...বাকিটুকু পড়ুন

তাবলীগ এর ভয়ে ফরজ নামাজ পড়ে দৌড় দিয়েছেন কখনো?

লিখেছেন লেখার খাতা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ৯:২৬


আমাদের দেশের অনেক মসজিদে তাবলীগ এর ভাইরা দ্বীন ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকেন। তাবলীগ এর সাদামাটাভাবে জীবনযাপন খারাপ কিছু মনে হয়না। জামাত শেষ হলে তাদের একজন দাঁড়িয়ে বলেন - °নামাজের... ...বাকিটুকু পড়ুন

এখনো নদীপারে ঝড় বয়ে যায় || নতুন গান

লিখেছেন সোনাবীজ; অথবা ধুলোবালিছাই, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১০:২০

এ গানের লিরিক আমাকে অনেক যন্ত্রণা দিয়েছে। ২৪ বা ২৫ এপ্রিল ২০২৪-এ সুর ও গানের প্রথম কয়েক লাইন তৈরি হয়ে যায়। এরপর ব্যস্ত হয়ে পড়ি অন্য একটা গান নিয়ে। সে... ...বাকিটুকু পড়ুন

ফেতনার সময় জামায়াত বদ্ধ ইসলামী আন্দোলন ফরজ নয়

লিখেছেন মহাজাগতিক চিন্তা, ০৫ ই মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৮



সূরাঃ ৩ আলে-ইমরান, ১০৩ নং আয়াতের অনুবাদ-
১০৩। তোমরা একত্রে আল্লাহর রজ্জু দৃঢ়ভাবে ধর! আর বিচ্ছিন্ন হবে না। তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর।যখন তোমরা শত্রু ছিলে তখন তিনি... ...বাকিটুকু পড়ুন

×