somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

চকলেট মা (পর্ব দুই)

২৬ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ ভোর ৫:০৩
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

বিশ্বজিৎ আমার ক্লাসমেট। দুজনেই নবাবপুর থাকতাম। আমার বাড়ির বারান্দা থেকে ওদের ছোট উঠানটি দেখা যেতো। মাঝে মধ্যেই ওদের বাড়ি যেতাম আমি। পলেস্তরা খসে পড়া পুরানো বাড়ির সদর দরজা ঠেলে এগোলেই ছোট একটা মাঠ, যেখানে সারাক্ষণ চলতো কানামাছি, ছোয়াছুয়ি, সাতচারা সহ বিচিত্র ধরনের খেলা। ছোট মাঠটি পার হলেই বিশ্বজিতের ঘর। সরু একটা সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠলেই দেখা যেতো মেঝেতে বসে দুই তিন জন মহিলা চকলেটে কাগজে মুড়ছেন।
প্রথম যেদিন ওদের বাড়ি গেলাম সেদিন ওর মা আমাকে দেখে আচঁলে হাত মুছতে মুছতে উঠে এলেন। আমার হাতে গুটিকতক চকলেট তুলে দিয়ে বললেন, খাও।
ভেতরের ঘরে দেয়ালে টাঙ্গানো দেবদেবীর ছবি। ঘরের অন্যান্য আসবাবপত্র দেখে মনে হয় আর্থিক ভাবে ওরা ততোটা সচ্ছল নয়। প্রকৃত পক্ষে খুব কষ্টে দিন কাটতো তাদের।বাড়ির সামনেই ছিলো ওদের নিজস্ব একটা মুদি দোকান। ওই দোকানের আয়ে চলতো ওরা।বিশ্বজিতের মাথার চুল লম্বা ছিলো। ক্লাসে শিক্ষকরা এই নিয়ে প্রশ্ন করলে বিশ্বজিৎ বলতো, স্যার মানতি (মানত) করছি।
শিক্ষকরা বেত উচাতে উচাতে বলতেন, এগুলো হবে না, চুল কাটাতে হবে।
আমরা কখনো জানতে পারিনি বিশ্বজিৎ কিসের জন্য মানত করেছিলো। শিক্ষকদের ভয়ে বেশির ভাগ দিন গুলো ও ক্লাসে অনুপস্থিত থাকতো।
সে সময় চারিদিকে গুজব ছড়াতে লাগলো, ভারতে হিন্দুরা অযোধ্যায় বাবরী মসজিদ ভেঙ্গে ফেলছে। পথে পথে নেমে গেল মিছিল- মসজিদ ভাঙ্গলে, মন্দির ভাঙ্গবে।
ক্রমেক্রমে শুরু হলো তান্ডব। হিন্দুদের বাড়িতে ইট ,স্যান্ডাল শুরু হলো। বাবা আমাকে স্কুলে যেতে দিলেন না। বারান্দায় গিয়ে ভীত চিত্তে দেখতে লাগলাম মানুষের তান্ডব।
বিশ্বজিৎদের বাড়ির ভেতর ঢুকে গেছে ক্ষুব্ধ লোকজন। রাস্তায় ছুড়ে মারছে হাড়ি পাতিল, আসবাবপত্র। কেউ কেউ ওদের দোকান ভেঙ্গে লুট করে নিয়ে যাচ্ছে দোকানের পণ্য, টাকা। বারান্দায় দাঁড়িয়ে শুনতে পাচ্ছিলাম- বিশ্বজিৎদের ও হিন্দু বাড়ির আর্তনাদ!
মনের ভেতর তখন একটি কথাই বার বার উচ্চারিত হচ্ছিলো, বিশ্বজিৎরা তো কোনো দোষ করেনি। তোমরা ওদের ছেড়ে দাও। কে আর শোনে এই অক্ষমের কথা। মুহূর্তে শ্রীহীন হয়ে পড়লো বিশ্বজিৎদের ঘর। বিধ্বস্ত হয়ে পড়লো আশেপাশের সব হিন্দু বাড়ি।

বন্ধ হয়ে থাকা স্কুল অনেকদিন পর খুললো। বিশ্বজিৎ আর এলোনা। আমাকে সবাই জিজ্ঞেস করে, কিরে ওর খবর কি?
আমি কিছুই বলতে পারলাম না। কি করে বলি, এটা কি কোনো মজাদার গল্প! আমরা তাঁর সন্তানতুল্য ছেলেরা সেদিন পাঁচ টাকা, দশ টাকা, বিশ টাকার নোট তুলে দিয়ে ছিলাম তাঁর হাতে।

একদিন হঠাৎ করেই গিয়েছিলাম ওদের বাড়িতে। বিশ্বজিৎ বাড়িতে নেই। চাকরিতে আছে। খুব ইচ্ছা করছিলো ওর মা কে একনজর দেখে আসি। কিন্তু কি করে দাঁড়াই ওনার সামনে! কিই বা বলি। তিনি কি আগের মতো আমার হাতে চকলেট তুলে দেবেন? বিষন্ন মন নিয়ে বাড়ি ফিরে এলাম।
এখনো খুব জানতে ইচ্ছা করে কোথায়, কেমন আছে আমার বন্ধু, আমার চকলেট মা!

বিঃদ্রঃ গল্পটি যাযাদি(07/09/99) তে লেখক আতিকুল ইসলাম আনন নামে প্রকাশিত হয়ে ছিলো। গল্পটি প্রকাশিত হওয়ার ছ'মাসের মাথায় আমি আমার হারানো বন্ধু ও চকলেট মাকে খুঁজে পেয়ে ছিলাম।
সর্বশেষ এডিট : ৩১ শে ডিসেম্বর, ১৯৬৯ সন্ধ্যা ৭:০০
৪টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

অলীক সুখ পর্ব ৪

লিখেছেন স্প্যানকড, ২৮ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৫:৪৫

ছবি নেট

শরীর থেকে হৃদয় কে বিচ্ছিন্ন করে দেখতে চেয়েছি
তুমি কোথায় বাস করো?
জানতে চেয়েছি বারবার
দেহে ,
না,
হৃদয়ে?
টের পাই
দুই জায়গাতে সমান উপস্থিতি তোমার।

তোমার শায়িত শরীরে... ...বাকিটুকু পড়ুন

পজ থেকে প্লে : কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়

লিখেছেন বন্ধু শুভ, ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:১৫


.
একটা বালক সর্বদা স্বপ্ন দেখতো সুন্দর একটা পৃথিবীর। একজন মানুষের জন্য একটা পৃথিবী কতটুকু? উত্তর হচ্ছে পুরো পৃথিবী; কিন্তু যতটা জুড়ে তার সরব উপস্থিতি ততটা- নির্দিষ্ট করে বললে। তো, বালক... ...বাকিটুকু পড়ুন

শিরোনামে ভুল থাকলে মেজাজ ঠিক থাকে?

লিখেছেন অনিকেত বৈরাগী তূর্য্য , ২৮ শে মে, ২০২৪ রাত ১১:৫৫


বেইলি রোডে এক রেস্তোরাঁয় অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে একজন একটা পোস্ট দিয়েছিলেন; পোস্টের শিরোনামঃ চুরান্ত অব্যবস্থাপনার কারনে সৃষ্ট অগ্নিকান্ডকে দূর্ঘটনা বলা যায় না। ভালোভাবে দেখুন চারটা বানান ভুল। যিনি পোস্ট দিয়েছেন... ...বাকিটুকু পড়ুন

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় জেনে নেই!

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ৯:৫১

চলুন দেশকে কীভাবে দিতে হয় তা জেনে নেই৷ এবার আপনাদের সাথে দক্ষিণ কোরিয়ার একটি ঘটনা শেয়ার করবো৷ আমি কোরিয়ান অর্থনীতি পড়েছি৷ দেশটি অর্থনৈতিক উন্নয়নে ১৯৭০ সালের পর থেকে প্রায় আকাশে... ...বাকিটুকু পড়ুন

প্রতিদিন একটি করে গল্প তৈরি হয়-৩৮

লিখেছেন মোঃ মাইদুল সরকার, ২৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১০:৪৪


আজকের গল্প হেয়ার স্টাইল ও কাগজের মোবাইল।






সেদিন সন্ধ্যার আগে বাহিরে যাব, মেয়েও বায়না ধরল সেও যাবে। তাকে বললাম চুল বেধে আসো। সে ঝটপট সুন্দর পরিপাটি করে চুল... ...বাকিটুকু পড়ুন

×