somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

আধেক ঘুমে নয়ন চুমে স্বপন দিয়ে যায়!

২২ শে ফেব্রুয়ারি, ২০০৭ রাত ১:০৪
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :

সে কি এলো
সে কি এলো না
বোঝা গেল না , গেল না , না
ও কি মায়া , কি স্বপন ছায়া !
ও কি ছলনা! [ রবি ঠাকুর]

এই রকমই লাগে প্রতিবার । কেন দেখতে পাই না? কেন দেখতে দেয় না?

চেষ্টাটা অনেক পুরানো। ঠিক সচেতন চেষ্টা বলা যাবে না। অনেকটা কৌতূহল ।

আমার তো আবার "শার্লক হোমস " দারুন পছন্দ। সব কটা বই মুখস্থ ছিল। সে জন্যই কি জানতে মন আঁকু পাকু করে?

ছেলেটার অস্তিস্ত প্রথম টের পাই 92 সালে। সেবার সাগর সৈকতে বসে ছিলাম। গভীর রাত। মেঘ ভাঙা জোৎস্না । থেকে থেকে আঁধারে ঢেকে যায় বিশ্ব চরাচর। আমি শাড়ির আঁচল সামলে কুল পাই না। খালি উড়ে উড়ে যায় । চুল গুলো লবনাক্ত বাতাসে বাঁধন হারা।

ছেলেটা আমার থেকে একটু দূরেই , আমার পিছনে বসে থাকে । আঁধার পর্দা টানে , আমি দেখতে পাই না , কে সে?

তার পর ফের দেখা হলো এই তো সেদিন। মাঝে হয়ত দেখা হলেও হতে পারে । কখনো বাসে, কখনো মার্কেটে । কোন কোন দিন হয়ত পরীক্ষার হলেও ! বন্ধুদের আড্ডায় দেখেছি মনে হয় কয়েক বার। কখনো কথা হয়নি। আমি ডাকতে গেলে মনে পড়ে যায়, "আরে নামই তো জানি না"!

যতবার কাছে গিয়ে দাঁড়াতে চাই। আমার কেবলই দেরী হয়ে যায়!

তো সেদিন আমি বাড়ির পিছনে বাগানে বসে আছি । কেয়ারীতে ফুল ফুটেছে নতুন। অনেক কষ্টে পোকা মাকড়ের আগ্রাসন বাঁচিয়ে ফোটাতে পেরেছি । খুব আনন্দে ছিলাম কয়দিন। কে জানতো !!!! এখানে হরিণ থাকে!

কিছু বলাও যাবে না। বন ও পশু সম্পদ রক্ষা সংস্থায় কাজ করে নাদিম । পই পই করে বলে দিয়েছে । মনে রাখবেন , " হরিণ গুলো আপনার বাগানে ঢুকে পড়েনি । বরং আপনিই নির্লজ্জ ভাবে কেড়ে নিয়েছেন তার আবাস স্থলে তার অবাধ বিচরন! সুতরাং সাবধান! কোন ঝামেলা করবেন না।"

তা আমার মানতে অসুবিধা কি? আমি শান্তিপ্রিয় মানুষ। এমন কি পিপড়া , কালোই হোক আর লাল, কামড়ে দিলেও আলতো ছাড়িয়ে নিয়ে সরিয়ে দেই .........অন্যদের মত পিষে মারি না।

কিন্তু ফুল গুলো যে খেয়ে ফেলছে! হরিণের চলাচলে বাধা সৃষ্টি করে "বেড়া" নাকি দেওয়া যাবে না! রে বাবা! একি শৃঙ্খলা !

টেরেসে বসে এই সব সাত পাঁচ ভাবছিলাম। হঠাৎ দরজার ঘন্টি বেজে উঠলো। খুলে আমি চিনতে পারি না । অপরিচিত যুবক এত সাবলীল ভাবে ,
"কেমন আছ? " বলে পৃথিবীর সবচেয়ে আন্তরিক হাসিটা দিলো [ এমন শুধু প্রেমিক হাসতে পারে ভালোবাসার মানুষটিকে দেখে] , আমি লজ্জায় শুধাইতে পারি না তার পরিচয়!

মন বলে আমি চিনি । প্রাণ বলে আমি জানি একে। চোখ শুধু ধোঁকা খায়!

বাইরে বাগানে গিয়ে বসি । এ কথা , সে কথা । কেমন চলছে কাজ, লেখা লেখি , গান! [ এত কিছু জানে কি ভাবে!!!!]

গল্পে গল্পে বৃষ্টি নামে । এ অঞ্চলে বৃষ্টি হয় খুব কম ! আমি ভিজবো বলে ছটফট করছি কিন্তু মেহমানে র সামনে এই পাগলামি করি কি করে? মনটা খারাপই হয়ে যায়। কি বলছে কানে ঢোকে না আর । কতক্ষন পরে কে জানে, হঠাৎই সম্বিত ফেরে।
" এই যে , মানবী , আমি যদি একটু বৃষ্টিতে ভিজি, আপনার কি আপত্তি আছে? "
টের পাই , এটা সে করছে ইচ্ছে করে । আমার ইচ্ছে টুকু পূরণের পথ করে দেওয়ার জন্য ।
আমি হেসেই জানাই, "রীতিমত সঙ্গ দেব"।

অনেক্ষন ভিজি আমরা দুজন। ঝম ঝমে বাদল ধারা । আকাশ দিশে হারা। ফোটায় ফোটায় জীবন কাব্য । আমি ঘুরে ঘুরে তাকে দেখাই বাগান , ঘাস মাড়ানো পথ, বনের পথে পথে সুগন্ধী গাছ। এক সময় নিজের অজান্তেই আমরা হাত ধরি ! কি যেন কারন ছিল? পিছলে গিয়েছিলাম বোধ হয়!
মুহূর্তটা মনে নেই, স্পর্শটা মনে আছে । উফ, বিদু্যৎ!

ফিরে এসে পর খুব ঠান্ডা লাগছিলো । আমি শুকনো কিছু কাপড় তাকে দিয়ে দোতলায় পাঠিয়ে দেই । নিজে শাড়িটা বদলে নেই। আমার প্রিয় গোলাপী রঙ , সাদা সাদা ফুল তোলা আর সোনালী লতাপাতা। রান্নাঘরের জানালা দিয়ে টেরেসে পাতা চেয়ার দুটো দেখা যায়। সামনে কেয়ারী টপকে বনের গাছগুলো ঠায় দাঁড়িয়ে আমাকে দেখে। ঐ খানে বসেই কফি খাবো । দুপুরে কি খিচুড়ি করবো? আমি চাল ধুয়ে পানি চড়াই। ইলিশ মাছের টুকরো গুলোতে লবন-হলুদ মাখিয়ে রাখি । আচারের বয়োমটা জানি কই রেখেছি?

"আমি ভালো পিয়াজ কাটতে পারি "- শুনে চমকে পিছনে তাকিয়ে দেখি, আশ্চর্য সুন্দর । গোসলের পরে নারীকে যদি লাগে মোহনীয় , তাহলে এই পুরুষকে কি বলা যায়? চোখ ফেরানো দায় হয়ে যাচ্ছে ! চশমা পরা ছিলো বলে এতক্ষণ টের পাইনি , অকল্পনীয় সুন্দর এক জোড়া চোখ!

"পিয়াজ কাটতে হবে না। আমি কফি বানাচ্ছি , আপত্তি নেই তো?"

ঘন হয়ে আসে কাছে অপরিচিত , খুব আপন কেউ। নাম জানি না, কিন্তু চিনি বহুকাল!

" আপত্তি মানে ? রীতিমত সঙ্গ দেব। "

দূরত্ব কমতে থাকে ক্রমশ। কত কাল অপেক্ষা করে আছি তুমি আসবে বলে? বছর, যুগ? সহস্রাব্দি ? প্রতিটা স্পর্শকে মনে হয় চেনা । আগে পাইনি , কিন্তু যেন জানতাম, এই রকমই হবে অনুভব। আনন্দের কণা গুলো স্বর্নরেণু হয়ে বয়ে যায় । বাইরে একটা হরিণ তখন ফুল খেতে এসেছে । জানালায় কি যেন দেখে ভারি লজ্জা পেয়ে পালালো।

আমি শেষবারের মত চেষ্টা করি দেখতে , কুয়াশা চোখে সবটাই আবছা ঠেকে !

কে ছেলেটা?
সর্বশেষ এডিট : ০৫ ই ডিসেম্বর, ২০০৮ রাত ৯:৩৪
২০টি মন্তব্য ০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

কুরসি নাশিন

লিখেছেন সায়েমুজজ্জামান, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:১৫


সুলতানি বা মোগল আমলে এদেশে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়েছিল৷ আশরাফ ও আতরাফ৷ একমাত্র আশরাফরাই সুলতান বা মোগলদের সাথে উঠতে বসতে পারতেন৷ এই আশরাফ নির্ধারণ করা হতো উপাধি... ...বাকিটুকু পড়ুন

বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন আর আদর্শ কতটুকু বাস্তবায়ন হচ্ছে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৯ শে মে, ২০২৪ সকাল ১১:৩৭

তার বিশেষ কিছু উক্তিঃ

১)বঙ্গবন্ধু বলেছেন, সোনার মানুষ যদি পয়দা করতে পারি আমি দেখে না যেতে পারি, আমার এ দেশ সোনার বাংলা হবেই একদিন ইনশাল্লাহ।
২) স্বাধীনতা বৃথা হয়ে যাবে যদি... ...বাকিটুকু পড়ুন

কৃষ্ণচূড়া আড্ডার কথা

লিখেছেন নীলসাধু, ১৯ শে মে, ২০২৪ দুপুর ১:০২



গতকাল পূর্ব নির্ধারিত কৃষ্ণচূড়ায় আড্ডায় মিলিত হয়েছিলাম আমরা।
বছরের একটি দিন আমরা গ্রীষ্মের এই ফুলটির প্রতি ভালোবাসা জানিয়ে প্রকৃতির সাথে থাকি। শিশুদের নিয়ে গাছগাছালি দেখা, ফুল লতা পাতা চেনাসহ-... ...বাকিটুকু পড়ুন

সকাতরে ঐ কাঁদিছে সকলে

লিখেছেন হাসান মাহবুব, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৩:২৯

সকাতরে ওই কাঁদিছে সকলে, শোনো শোনো পিতা।

কহো কানে কানে, শুনাও প্রাণে প্রাণে মঙ্গলবারতা।।

ক্ষুদ্র আশা নিয়ে রয়েছে বাঁচিয়ে, সদাই ভাবনা।

যা-কিছু পায় হারায়ে যায়,... ...বাকিটুকু পড়ুন

বসন্ত বিলাসিতা! ফুল বিলাসিতা! ঘ্রাণ বিলাসিতা!

লিখেছেন নাজনীন১, ১৯ শে মে, ২০২৪ বিকাল ৪:০৯


যদিও আমাদের দেশে বসন্ত এর বর্ণ হলুদ! হলুদ গাঁদা দেখেই পহেলা ফাল্গুন পালন করা হয়।

কিন্তু প্রকৃতিতে বসন্ত আসে আরো পরে! রাধাচূড়া, কৃষ্ণচূড়া এদের হাত ধরে রক্তিম বসন্ত এই বাংলার!

ঠান্ডার দেশগুলো... ...বাকিটুকু পড়ুন

×