somewhere in... blog
x
ফোনেটিক ইউনিজয় বিজয়

গল্পঃ ব্লাড গ্রুপ AB-

১৫ ই সেপ্টেম্বর, ২০১৩ রাত ১:৫২
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :



আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেলের মধ্যে সুরিদ সব চেয়ে সাহসী। শুধু দুটি বিষয় ছাড়া। একটা হচ্ছে রক্ত। রক্তকে সে ভয় পায়। আরেকটির কথা পরে বলব।
২০১০ এর দিকে আমরা একটা ছোট সামাজিক কাজ শুরু করছি। তা হচ্ছে এলাকায় রক্ত দিতে পারে এমন এবং আগ্রহীদের একটা লিস্ট তৈরি করেছি। তাদের নাম, ঠিকানা এবং মোবাইল নাম্বার দিয়ে। ঐ লিস্টে সবার নাম থাকলেও সুরিদের নাম নেই। যেখানে আমাদের টীমে সেও কাজ করে। কারন সে রক্ত দিতে ভয় পায়। তবে অন্য যে কোন কাজ সে কোন প্রশ্ন ছাড়াই করে দেয়।
কারো যদি রক্তের দরকার হয় তাহলে তা জানাতে হয় মেহেদীর কাছে। মেহেদী পরে কে রক্ত দিতে পারবে, কে সব চেয়ে কাছে আছে এসব চিন্তা করে ঠিক করে।
কাজ আরো সহজ করার জন্য সবাই বলল আমাদের লিস্টটা ডিজিটালাইজ করে দিতে। সে দায়িত্ব পড়ল আমার উপর। আমাদের লিস্ট নিয়ে একটা ছোট্ট সফটওয়ার তৈরি করলাম। কাস্টম সার্চ এর মাধ্যমে এখন সহজেই রক্তদান কারীদের খুজে বের করা যায়।

আমাদের পাশের বাড়ির নিজাম আংকেল কয়েক দিন থেকে অসুস্থ। উনার হার্টে বিশাল ব্লক ধরা পড়ছে। অপারেশন করতে হবে। অল্প সল্প সমস্যা হলে এখন মেশিনের মাধ্যমে কাটা কুটি ছাড়াই ব্লক রিমুভ করা যায়। কিন্তু উনারটা কন্ট্রোলের বাহিরে চলে গেছে।। দরকার রক্তের।
মেহেদীর কাছে ফোন আসছে। উনার ব্লাড গ্রুপ AB-। রেয়ার ব্লাড গ্রুপ। আমাদের এলকায় মাত্র ৩ জন রয়েছে যাদের ব্লাড গ্রুপ AB-. এদের একজন কয়েকদিন আগে রক্ত দিয়েছে একবার। এখন আর রক্ত দিতে পারবে না। বাকি দুইজন এলাকায় নেই।
মেহেদী ফোন দিল আমাকে। আমি চিন্তা করলাম আমাদের সুরিদকে নিয়ে। তার রক্তের গ্রুপ ও AB-
আমরা দুই জনই জানি সুরিদ রাজি হবে না। তবে একটু চেষ্টা করলে কাজ হবে। কারণ আমাদের এলাকার ছেলেদের হার্টথ্রুব মেয়ে হচ্ছে লাইজু। আর তার বাবা হচ্ছে নিজামী আংকেল। লাইজুর কথা শুনলে সুরিদ এমনিতে গলে যাবে। পরে রক্ত না শুধু হার্ট খুলে দিতে বললেও মনে হয় দিয়ে দিবে।
আমি নিজেই ফোন দিলাম সুরিদকে। বললাম দ্রুত আসতে, জরুরী কাজ আছে। রিক্সায় করে চলে গেলাম হাসপাতালে।
সুরিদ জিজ্ঞেস করল এখানে কেন? আমি বললাম আয়। রক্ত নেওয়ার রুমে নিয়ে ওকে বললাম হাতা গুছিয়ে নে, তোকে রক্ত দিতে হবে।
শুরিদের মাথায় যেন আকাশ ভেঙ্গে পড়ল। জিজ্ঞেস করল আমি রক্ত দিব?
আমি বললাম হ্যা। কাকে রক্ত দিতে যাচ্ছিস তা শুনলে তোর হার্ট ও খুলে দিতে পারিস।
সুরিদ জিজ্ঞেস করল কাকে?
আমি বললাম লাইজুর আব্বুকে।
এদিকে মেহেদী গিয়ে লাইজুর আম্মুকে বলল রক্ত জোগাড় হয়েছে। ডাক্তারকে যেন বলে অপারেশন থিয়েটার রেডি করতে।
কে রক্ত দিচ্ছে তা দেখার জন্য লাইজু আসছে।
রক্ত দেওয়ার পর মানুষ এমনিতেই একটু দুর্বল থাকে। আর প্রথম বার হলে তো একটু বেশিই দুর্বল হয়। সুরিদ বিছানায় তখনো শুয়ে ছিল। লাইজু আসার সাথে সাথেই বসে পড়ল।
লাইজু সুরিদকে ধন্যবাদ দিল। এর পর সুরিদ যে ভাবে লাইজুর সাথে কথা বলল আমরা তা কেউই চিন্তা করতে পারি নি।
সুরিদ লাইজুকে জিজ্ঞেস করল, তোমার আব্বুর রক্তের গ্রুপের সাথে তোমার রক্তের গ্রুপের মিল থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। তোমার রক্তের গ্রুপও কি AB-?
লাইজু বলল, হ্যা।
আমারও AB- তা মনে হয় আর বলতে হবে না। তুমি তো সাইন্সে পড়ো তাই না?
লাইজু বলল হ্যা।
Rh ফ্যাক্টর সম্পর্কে জানো?
লাইজু বলল হ্যা, একটু একটু।
তাহলে মনে হয় এটাও জানো যে, Rh- কোন মেয়ের সাথে Rh+ কোন ছেলের বিয়ে হলে তাদের সন্তানের রক্ত রসে অ্যান্টি Rh ফ্যাক্টর (আন্টিবডি) উৎপন্ন হবে এবং ঐ সন্তানদের দেহে প্রচন্ড রক্ত স্বল্পতা দেখা দেবে। এরিথ্রব্লাস্টোসিস ফিটালিস রোগ হবে।
তাই বলছিলাম কি তোমার ভবিশ্যতের কথা চিন্তা করতে। তোমাকে আর Rh- রক্ত যুক্ত কাউকে খুজে নিতে হবে না। বিয়ের আগে ছেলের রক্ত পরীক্ষা করাও কেমন বেমানান দেখায় তাই না? তাই বলছিলাম কি...

সুরিদ তার কথা শেষ করতে পারে নি। তার আগেই লাইজু লজ্জা পেয়ে রুম থেকে বের হয়ে গিয়েছে।
আমরা অবাক হয়েছি এ জন্য যে সুরিদ যেখানে কোন দিন লাইজুর সাথে কথাই বলে নি। যে কোন মেয়ের সাথে গেলেই কথা বলতে আটকে যায় এবং একটু ভয় ও পায়, সে সুরিদ কিভাবে এত কথা বলল আজ?
আমাদের অভাক আরো হতে হবে তাও আমরা ঐ দিন ভাবতে পারি নি। মেয়েদের ভয় পাওয়া ছেলেটিকে এর পর প্রতিদিনই একবার না একবার লাইজুর সাথে আড্ডা দিতে দেখা যেতো।। আর তাদের ফ্যামিলি?? হ্যা, লাইজুদের ফ্যামিলিতে সুরিদ তো একটা নায়ক।
১০টি মন্তব্য ১০টি উত্তর

আপনার মন্তব্য লিখুন

ছবি সংযুক্ত করতে এখানে ড্রাগ করে আনুন অথবা কম্পিউটারের নির্ধারিত স্থান থেকে সংযুক্ত করুন (সর্বোচ্চ ইমেজ সাইজঃ ১০ মেগাবাইট)
Shore O Shore A Hrosho I Dirgho I Hrosho U Dirgho U Ri E OI O OU Ka Kha Ga Gha Uma Cha Chha Ja Jha Yon To TTho Do Dho MurdhonNo TTo Tho DDo DDho No Po Fo Bo Vo Mo Ontoshto Zo Ro Lo Talobyo Sho Murdhonyo So Dontyo So Ho Zukto Kho Doye Bindu Ro Dhoye Bindu Ro Ontosthyo Yo Khondo Tto Uniswor Bisworgo Chondro Bindu A Kar E Kar O Kar Hrosho I Kar Dirgho I Kar Hrosho U Kar Dirgho U Kar Ou Kar Oi Kar Joiner Ro Fola Zo Fola Ref Ri Kar Hoshonto Doi Bo Dari SpaceBar
এই পোস্টটি শেয়ার করতে চাইলে :
আলোচিত ব্লগ

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে...

লিখেছেন খায়রুল আহসান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ সকাল ১১:০৯

ছিঁচকাঁদুনে ছেলে আর চোখ মোছানো মেয়ে,
পড়তো তারা প্লে গ্রুপে এক প্রিপারেটরি স্কুলে।
রোজ সকালে মা তাদের বিছানা থেকে তুলে,
টেনে টুনে রেডি করাতেন মহা হুলস্থূলে।

মেয়ের মুখে থাকতো হাসি, ছেলের চোখে... ...বাকিটুকু পড়ুন

হার জিত চ্যাপ্টার ৩০

লিখেছেন স্প্যানকড, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৩৩



তোমার হুটহাট
চলে আসার অপেক্ষায় থাকি
কি যে এক ছটফটানি
তোমার ফিরে আসা
যেন প্রিয় কারো সনে
কোথাও ঘুরতে যাবার মতো আনন্দ
বারবার ঘড়ি দেখা
বারবার অস্থির হতে হতে
ঘুম ছুটে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জীবনাস্ত

লিখেছেন মায়াস্পর্শ, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ দুপুর ১:৪৪



ভোরবেলা তুমি নিশ্চুপ হয়ে গেলে একদম,
তোমার বাম হাত আমার গলায় পেঁচিয়ে নেই,
ভাবলাম,তুমি অতিনিদ্রায় আচ্ছন্ন ,
কিন্তু এমন তো কখনো হয়নি
তুমি বরফ জমা নিথর হয়ে আছ ,
আমি... ...বাকিটুকু পড়ুন

যে দেশে সকাল শুরু হয় দুর্ঘটনার খবর দেখে

লিখেছেন এম ডি মুসা, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ৮:১১

প্রতি মিনিটে দুর্ঘটনার খবর দেখে অভ্যস্ত। প্রতিনিয়ত বন্যা জলোচ্ছ্বাস আসে না, প্রতিনিয়ত দুর্ঘটনার খবর আসে। আগে খুব ভোরে হকার এসে বাসায় পত্রিকা দিয়ে যেত। বর্তমানেও প্রচলিত আছে তবে... ...বাকিটুকু পড়ুন

জেনে নিন আপনি স্বাভাবিক মানুষ নাকি সাইকো?

লিখেছেন মোহাম্মদ গোফরান, ১৮ ই এপ্রিল, ২০২৪ রাত ১১:১৮


আপনার কি কারো ভালো সহ্য হয়না? আপনার পোস্ট কেউ পড়েনা কিন্তু আরিফ আর হুসাইন এর পোস্ট সবাই পড়ে তাই বলে আরিফ ভাইকে হিংসা হয়?কেউ একজন মানুষকে হাসাতে পারে, মানুষ তাকে... ...বাকিটুকু পড়ুন

×